Recent Tube

মাসলা মাসায়েল।

ঈমানের ৭৭ টি শাখা : চেক করে দেখি আমার ঈমান কতটুকু বিস্তৃত!

নবী করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, ঈমানের শাখা-প্রশাখা ৭০ এর চেয়ে বেশী, তন্মধ্যে প্রধান শাখা কালিমা ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সবচেয়ে ছোট শাখা, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু (ইট,পাটকেল,কাঁটা,নাপাক ইত্যাদি) সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি প্রধান শাখা (বুখারী ও মুসলিম)।
ঈমানের আভিধানিক অর্থ নিরাপত্তা প্রদান করা,মুমিন অর্থ নিরাপত্তা প্রদানকারী। মু’মিন ঈমান এনে নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান বলা হয়, নবী করিম (সাঃ) থেকে যে সব বিষয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সে সব বিষয় দিলের দ্বারা বিশ্বাস করা ও মান্য করা। দ্বীনের মূল হল ঈমান। এ ঈমানের ফযিলতের ওয়ায সর্বদাই চলছে। অথচ কিসে ঈমান আনতে হবে তা অনেকেরই জানা নেই, শুধু ফাযায়েলের বয়ানেই ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। এ ঈমানের শাখা প্রশাখা কুরআন হাদীসের বিভিন্ন স্থানে চড়িয়ে রয়েছে। সীমাহীন চেষ্টার মাধ্যমে মুহাদ্দিছীনে কেরাম সেগুলো একত্রিত করেছেন। তাঁদের হিসেব মত এর শাখা প্রশাখার সংখ্যা ৭৭। ছহী হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ঈমানের সমস্ত শাখাগুলো যার মধ্যে পাওয়া যাবে তিনিই পূর্ণ ঈমানদার হবেন। আর যার মধ্যে এক বা একাধিক শাখা থাকবে না, সে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেনা। তার ঈমান অপূর্ণ রয়ে যাবে। যার ঈমান আছে –আখেরাতে তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ সফলকাম মানুষ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহান দৌলত জান্নাতের অধিকারী। একবিন্দু পরিমাণ ঈমান যদিও কারো থাকে, একদিন না একদিন সে জান্নাতে যাবেই। বান্দার উপর সর্ব প্রথম ফরয হল ঈমান আনা। আখেরাতে নাজাত পাওয়ার সর্ব প্রধান এবং সর্বশেষ সম্বল হল ঈমান। কাজেই সকলেরই প্রাণপণে চেষ্টা করা দরকার যাতে ঈমানের একটি শাখাও কারো মধ্যে অনুপস্থিত না থাকে; বরং সবগুলো শাখাই তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে। সর্বদা আমাদের নযরে থাকবে এ আশায় ও এ নিয়তে অত্র শাখাগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ-
ঈমানের ৭৭ টি শাখার মধ্যে ৩০ টি দিলের সাথে ,৭ টি যবানের সাথে এবং ৪০ টি হাত –পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ঈমানের ৩০ টি শাখা যা দিলের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
০১. আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশক্তিমান,সবকিছুর স্রষ্টা,অনাদি অনন্ত তাঁর সত্তা, চিরকাল আছেন ও চিরকাল থাকবেন।তাঁর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনি সকলেরই সৃষ্টিকর্তা, স্বয়ং সম্পূর্ণ।
০২. সৃষ্টিকূলের ক্ষণস্থায়ীত্বে বিশ্বাস করা যে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সব জিনিসের কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। এক আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং অস্তিত্ব দান করেছেন।
০৩. তাঁর ফেরেস্তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।
০৪. আসমানী কিতাব সমূহে বিশ্বাস করা(অবশ্যই বর্তমানে আলকুরআন ছাড়া অন্যান্য কিতাবের হুকুম বিদ্যমান নেই)।
০৫. সকল নবী এবং রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করা যে, তাঁরা সবাই সত্য, আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত।কুরআন ও ছহী হাদীসে তাঁদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার উপর ঈমান আনা জরুরী নয়।অবশ্যই এখন শুধু হুযুর (সাঃ) এর তরিকায় চলার আদেশ বিদ্যমান আছে। কারণ তিনিই খাতামুন নাবীয়্যীন বা শেষ নবী-তাঁর পরে কোন নবী আসবেনা।
০৬. তাকদীরে বিশ্বাস যে, জগতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে বা হবে সবই আল্লাহ তায়ালা আদিকাল হতেই জানেন এবং সে হিসেবে নির্ধারিত। তাঁর জানার বা ইচ্ছার বিপরীত কোন কিছুই হয় না।
০৭. কিয়ামত ও পুনরুত্থান নিশ্চয়ই হবে।পুনরায় সকলকে জীবিত হয়ে সমস্ত জীবনের পাপ পুণ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে হবে।
০৮. বেহেস্ত আছে,নেকের পুরস্কার স্বরূপ বেহেস্ত হবে।
০৯. দোযখ আছে,পাপের শাস্তি স্বরূপ দোযখ হবে।
১০. আল্লাহ তায়ালার প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি এবং অকৃত্রিম ভালবাসা রাখা।
১১. রাসূলূল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি মহব্বত রাখা।
১২.কারও সাথে দোস্তী বা দুশমনি রাখলে শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্যই রাখা।
১৩. ইখলাছ- প্রত্যেক কাজ শুধু আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য এবং সন্তুষ্টির জন্য করা।
১৪. তওবা- কোন গুনাহের কাজ হয়ে গেলে তার জন্য অন্তরে কষ্ট অনুভব করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।
১৫. আল্লাহকে ভয় করা (আল্লাহর আযাবের ভয় করা)।
১৬. সর্বদা আল্লাহ তায়ালার রহমতের আশা করা ,আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া কুফরীর শামিল।
১৭. লজ্জা করা- আল্লাহ ও রাসূলের নীতির বিরূদ্ধ কাজে সংকোচবোধ করে তা পরিত্যাগ করা।
১৮. আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের শোকর আদায় করা।
১৯. বৈধ ওয়াদা পালন করা।
২০. আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে কোন বালা-মুছিবত,রোগ-শোক আসলে ধৈর্য্য ধারণ করা।
২১. বিনয়ী হওয়া- নিজেকে অপর হতে ছোট মনে করা।
২২. সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া করা।
২৩. আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে যা কিছু হয় তাতে সন্তুষ্ট থাকা।
২৪. তাওয়াক্কুল করা- প্রত্যেক কাজের ফলাফল যে আল্লাহ তায়ালার হাতে তা বিশ্বাস করে তার ফলাফলের জন্য আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করা।
২৫. আত্মগরিমা না করা- নিজের গুণে গর্বিত না হয়ে নিজের গুণগুলি আল্লাহর দান মনে করা।
২৬. কারো সাথে মনোমালিন্য না রাখা।
২৭. হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করা- অন্যের ভাল সহ্য করতে না পারা-মনের এভাব বর্জন করা।
২৮. রাগ দমন করা।
২৯. কারও অমঙ্গল কামনা না করা।
৩০. দুনিয়ার ধন দৌলত ও প্রভুত্ব ইত্যাদির প্রতি মহব্বত না রাখা।
ঈমানের ৭ টি শাখা যা যবানের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
৩১. লা –ইলাহা ইল্লাল্লাহ( আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এ কথা মুখে স্বীকার করা।
৩২. আল কুরআন তিলাওয়াত করা। আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করি না ঈমানের একটা শাখায় আমাদের আমল হয় না। তাহলে যারা মোটেই কুরআন শিখল না তাদের অবস্থা কেমন হবে?
৩৩. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা,আমরা যারা নিজেরা ইলমে দ্বীন শিখছিনা;নিজেদের সন্তানদেরকেও শিখাচ্ছিনা তাদের কি অবস্থা?
৩৪. দ্বীনি এলম শিক্ষা দেয়া।
৩৫. দু’য়া করা -আল্লাহ তায়ালার কাছে দুনিয়া এবং আখেরাতের মাকছুদগুলির জন্য ফরিয়াদ করা।
৩৬. আল্লাহ তায়ালার যিকির করা।
৩৭.বেহুদা কথা বা গুণাহের কাজ হতে বেচেঁ থাকা যেমন পরনিন্দা,গালি,বদদু’য়া ,লানত করা ইত্যাদি।
৪০টি শাখা শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
৩৮. পাক পবিত্রতা অর্জন করা-ওযু করা,ফরয গোসল করা, কাপড় পাকছাফ রাখা ইত্যাদি।
৩৯. নামাযের পাবন্দ থাকা।
৪০. মালের যাকাত ও ছদকা ফিৎরা আদায় করা।
৪১. রমযানের রোযা রাখা।
৪২. হজ্ব পালন করা(ওমরা হজ্বেরই অন্তর্গত)
৪৩. রমযানের শেষ দশদিন এতেকাফ করা(শবে কদর তালাশ করা এতেকাফের অন্তর্গত)।
৪৪. হিজরত করা-যে পরিবেশ বা যে দেশ থেকে ঈমান রক্ষা করা ও দ্বীন ইসলাম পালন করা সম্ভব হয় না, সে পরিবেশ এবং সে ত্যাগ করে উপযুক্ত স্থানে চলে যাওয়া।
৪৫. আল্লাহ তায়ালার নামে মান্নত করলে তা পূরণ করা।
৪৬. আল্লাহর নাম নিয়ে কোন জায়েয কাজে কসম করলে তা যদি গুণাহের কাজ না হয় তবে তা পূরণ করা।
৪৭. আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে ভংগ করলে তার কাফফারা আদায় করা।
৪৮. ছতর ঢাকা পুরুষের ছতর নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের ছতর মাথা হতে পা পর্যন্ত অথচ ঈমানদার দাবী করে আমাদের নারীগণ কিভাবে পেট,পিঠ,মাথা এমনকি হাটু পর্যন্ত খোলা রেখে চলতে পারে?
৪৯. ঈদুল আযহার কুরবানী করা।
৫০. মৃত ব্যক্তির কাফন দাফন করা।
৫১. ঋণ পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা রাখা।
৫২. ব্যবসা-বাণিজ্যে,কাজকারবারের ধোকা না দেয়া,শরীয়তের খেলাপ কাজ হতে বেচেঁ থাকা- যেমন দিবার সময় মাপে কম দেয়া ও নিবার সময় বেশি নেওয়া, ভেজাল দেওয়া,সুদ,ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি।
৫৩. সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা।
৫৪. কাম রিপু প্রবল হলে বিয়ে করা।
৫৫. অধিনস্থ পরিবার-পরিজন,চাকর-নওকর প্রভৃতির হক আদায় করা,মেয়েদের সম্পত্তির অংশ হতে বঞ্চিত না করা,স্ত্রীর মুহরের টাকায় ফাঁকি না দেয়া এর মধ্যে গণ্য।
৫৬. মাতা – পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা,কোমল আচরণ করা।
৫৭. সন্তানের লালন পালন করা(ইসলামী জ্ঞান,আদব-কায়দা,হালাল গ্রহণ ও হারাম বর্জন ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া)।
৫৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা(ফুফু,খালা,বোন,ভাগ্নেয়,শ্বশুর শাশুড়ীর ইত্যাদিও সাথে সদাচার করা)।
৫৯. মনিবের আনুগত্যে করা(চাকর-নওকর হলে)।
৬০. ন্যায় বিচার করা।
৬১. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসরণ করা।
৬২. মুসলিম বাদশা বা নেতার আদেশের (যতক্ষণ তা শরীয়ত বিরোধ না হয়) আনুগত্য করা।
৬৩. ঝগড়া বিবাধের মীমাংসা করে দেওয়া।
৬৪. নেক কাজে সহায়তা করা।
৬৫. সাধ্যমত সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করা।
৬৬. ইসলামী হুকুমত কায়েম করে ”হদ”অর্থাৎ শরীয়ত অনুযায়ী শাস্তির বিধান যারী করা-যেমন অপবাদ দিলে ও মদ পান করলে আশি কোড়া ,চুরি করলে হাত কেটে দেয়া,ডাকাতি করলে হাত পা কেটে দেওয়া, খুনের বদলে খুন -কেসাস,মিথ্যা সাক্ষ্য,সুদ- ঘুষ বন্ধ করা,যিনা করলে একশ কোড়া মারা অথবা ছাঙ্গেছার করা।
৬৭. জিহাদ করা(আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য এবং ইসলামের দুশমনদের প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান)।
৬৮. আমানত যথাযথভাবে আদায় করা।
৬৯. অভাবী বা ঋণগ্রস্তকে ঋণ দেওয়া(সচ্ছল ব্যক্তির জন্য)।
৭০. পাড়া প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা,বিপদে সাহায্যে ও সমবেদনা প্রকাশ করা।
৭১. হালাল উপায়ে রুজি অর্জন করা।
৭২. শরীয়তের বিধান অনুযায়ী খরচ করা।হালাল উপায়ে আয় করে ও হারাম স্থানে ব্যয় করলে ঈমানের এ শাখাটির সর্বনাশ করা হয়।
৭৩. সালামের উত্তর শুনায়ে দেয়া (মুসলমান ভাইকে দেখলে চেনা হোক বা অচেনা হোক আস্সালামু আলাইকুম বলে সালাম দেওয়া,কোন মুসলমান সালাম দিলে ওয়াআলাইকুমুস সালাম বলে তার উত্তর দেয়া)
৭৪. কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে ইয়ার হামুকাল্লাহ বলে উত্তর দেওয়া।
৭৫. অনর্থক কাউকে কষ্ট না দেয়া বা কারও ক্ষতি না করা।
৭৬. অবৈধ খেলা ধূলা,রং তামাশা, তাস,কেরাম বোর্ড, পাশা, হকি, সিনেমা, নাটক, থিয়েটার, ভিসিআর, ব্লুফিল্ম, ফুটবল, দাবা ইত্যাদি হতে বেঁচে থাকা।
৭৭. রাস্তা হতে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা(ইট,পাটকেল,পাথর,নাপাক বস্তু,কলার ছোলা,তরমুজের খোসা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত)।, এই ৭৭ প্রকার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ঈমান পূর্ণ হবে। আর একটি বাকি থাকলে ঈমান অসম্পূর্ণ থাকবে; আখেরাতে এর জন্য বড় রকমের খেসারত দিতে হবে।
আমরা দৈনিক একবার,নইলে সপ্তাহে একবার ,নইলে মাসে একবার,হলেও পড়ি আর যাচাই করি আমার মধ্যে এর কয়টি আছে আর কয়টি নেই।
সূত্রঃ -পাঁচ শত হাদীস ও ঈমানের সাতাত্তর অংশ
সংগ্রহিতঈমানের ৭৭ টি শাখা; চেক করুন আমার ও আপনার ঈমান কত বিস্তৃত!

নবী করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, ঈমানের শাখা-প্রশাখা ৭০ এর চেয়ে বেশী, তন্মধ্যে প্রধান শাখা কালিমা ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সবচেয়ে ছোট শাখা, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু (ইট,পাটকেল,কাঁটা,নাপাক ইত্যাদি) সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি প্রধান শাখা (বুখারী ও মুসলিম)।
ঈমানের আভিধানিক অর্থ নিরাপত্তা প্রদান করা,মুমিন অর্থ নিরাপত্তা প্রদানকারী। মু’মিন ঈমান এনে নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান বলা হয়, নবী করিম (সাঃ) থেকে যে সব বিষয় অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সে সব বিষয় দিলের দ্বারা বিশ্বাস করা ও মান্য করা। দ্বীনের মূল হল ঈমান। এ ঈমানের ফযিলতের ওয়ায সর্বদাই চলছে। অথচ কিসে ঈমান আনতে হবে তা অনেকেরই জানা নেই, শুধু ফাযায়েলের বয়ানেই ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। এ ঈমানের শাখা প্রশাখা কুরআন হাদীসের বিভিন্ন স্থানে চড়িয়ে রয়েছে। সীমাহীন চেষ্টার মাধ্যমে মুহাদ্দিছীনে কেরাম সেগুলো একত্রিত করেছেন। তাঁদের হিসেব মত এর শাখা প্রশাখার সংখ্যা ৭৭। ছহী হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ঈমানের সমস্ত শাখাগুলো যার মধ্যে পাওয়া যাবে তিনিই পূর্ণ ঈমানদার হবেন। আর যার মধ্যে এক বা একাধিক শাখা থাকবে না, সে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেনা। তার ঈমান অপূর্ণ রয়ে যাবে। যার ঈমান আছে –আখেরাতে তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ সফলকাম মানুষ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহান দৌলত জান্নাতের অধিকারী। একবিন্দু পরিমাণ ঈমান যদিও কারো থাকে, একদিন না একদিন সে জান্নাতে যাবেই। বান্দার উপর সর্ব প্রথম ফরয হল ঈমান আনা। আখেরাতে নাজাত পাওয়ার সর্ব প্রধান এবং সর্বশেষ সম্বল হল ঈমান। কাজেই সকলেরই প্রাণপণে চেষ্টা করা দরকার যাতে ঈমানের একটি শাখাও কারো মধ্যে অনুপস্থিত না থাকে; বরং সবগুলো শাখাই তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে। সর্বদা আমাদের নযরে থাকবে এ আশায় ও এ নিয়তে অত্র শাখাগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ-
ঈমানের ৭৭ টি শাখার মধ্যে ৩০ টি দিলের সাথে ,৭ টি যবানের সাথে এবং ৪০ টি হাত –পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ঈমানের ৩০ টি শাখা যা দিলের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
০১. আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশক্তিমান,সবকিছুর স্রষ্টা,অনাদি অনন্ত তাঁর সত্তা, চিরকাল আছেন ও চিরকাল থাকবেন।তাঁর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনি সকলেরই সৃষ্টিকর্তা, স্বয়ং সম্পূর্ণ।
০২. সৃষ্টিকূলের ক্ষণস্থায়ীত্বে বিশ্বাস করা যে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সব জিনিসের কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। এক আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং অস্তিত্ব দান করেছেন।
০৩. তাঁর ফেরেস্তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।
০৪. আসমানী কিতাব সমূহে বিশ্বাস করা(অবশ্যই বর্তমানে আলকুরআন ছাড়া অন্যান্য কিতাবের হুকুম বিদ্যমান নেই)।
০৫. সকল নবী এবং রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করা যে, তাঁরা সবাই সত্য, আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের হেদায়েতের জন্য প্রেরিত।কুরআন ও ছহী হাদীসে তাঁদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার উপর ঈমান আনা জরুরী নয়।অবশ্যই এখন শুধু হুযুর (সাঃ) এর তরিকায় চলার আদেশ বিদ্যমান আছে। কারণ তিনিই খাতামুন নাবীয়্যীন বা শেষ নবী-তাঁর পরে কোন নবী আসবেনা।
০৬. তাকদীরে বিশ্বাস যে, জগতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে বা হবে সবই আল্লাহ তায়ালা আদিকাল হতেই জানেন এবং সে হিসেবে নির্ধারিত। তাঁর জানার বা ইচ্ছার বিপরীত কোন কিছুই হয় না।
০৭. কিয়ামত ও পুনরুত্থান নিশ্চয়ই হবে।পুনরায় সকলকে জীবিত হয়ে সমস্ত জীবনের পাপ পুণ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে হবে।
০৮. বেহেস্ত আছে,নেকের পুরস্কার স্বরূপ বেহেস্ত হবে।
০৯. দোযখ আছে,পাপের শাস্তি স্বরূপ দোযখ হবে।
১০. আল্লাহ তায়ালার প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি এবং অকৃত্রিম ভালবাসা রাখা।
১১. রাসূলূল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি মহব্বত রাখা।
১২.কারও সাথে দোস্তী বা দুশমনি রাখলে শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্যই রাখা।
১৩. ইখলাছ- প্রত্যেক কাজ শুধু আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য এবং সন্তুষ্টির জন্য করা।
১৪. তওবা- কোন গুনাহের কাজ হয়ে গেলে তার জন্য অন্তরে কষ্ট অনুভব করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।
১৫. আল্লাহকে ভয় করা (আল্লাহর আযাবের ভয় করা)।
১৬. সর্বদা আল্লাহ তায়ালার রহমতের আশা করা ,আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া কুফরীর শামিল।
১৭. লজ্জা করা- আল্লাহ ও রাসূলের নীতির বিরূদ্ধ কাজে সংকোচবোধ করে তা পরিত্যাগ করা।
১৮. আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের শোকর আদায় করা।
১৯. বৈধ ওয়াদা পালন করা।
২০. আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে কোন বালা-মুছিবত,রোগ-শোক আসলে ধৈর্য্য ধারণ করা।
২১. বিনয়ী হওয়া- নিজেকে অপর হতে ছোট মনে করা।
২২. সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া করা।
২৩. আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে যা কিছু হয় তাতে সন্তুষ্ট থাকা।
২৪. তাওয়াক্কুল করা- প্রত্যেক কাজের ফলাফল যে আল্লাহ তায়ালার হাতে তা বিশ্বাস করে তার ফলাফলের জন্য আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করা।
২৫. আত্মগরিমা না করা- নিজের গুণে গর্বিত না হয়ে নিজের গুণগুলি আল্লাহর দান মনে করা।
২৬. কারো সাথে মনোমালিন্য না রাখা।
২৭. হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করা- অন্যের ভাল সহ্য করতে না পারা-মনের এভাব বর্জন করা।
২৮. রাগ দমন করা।
২৯. কারও অমঙ্গল কামনা না করা।
৩০. দুনিয়ার ধন দৌলত ও প্রভুত্ব ইত্যাদির প্রতি মহব্বত না রাখা।
ঈমানের ৭ টি শাখা যা যবানের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
৩১. লা –ইলাহা ইল্লাল্লাহ( আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এ কথা মুখে স্বীকার করা।
৩২. আল কুরআন তিলাওয়াত করা। আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করি না ঈমানের একটা শাখায় আমাদের আমল হয় না। তাহলে যারা মোটেই কুরআন শিখল না তাদের অবস্থা কেমন হবে?
৩৩. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা,আমরা যারা নিজেরা ইলমে দ্বীন শিখছিনা;নিজেদের সন্তানদেরকেও শিখাচ্ছিনা তাদের কি অবস্থা?
৩৪. দ্বীনি এলম শিক্ষা দেয়া।
৩৫. দু’য়া করা -আল্লাহ তায়ালার কাছে দুনিয়া এবং আখেরাতের মাকছুদগুলির জন্য ফরিয়াদ করা।
৩৬. আল্লাহ তায়ালার যিকির করা।
৩৭.বেহুদা কথা বা গুণাহের কাজ হতে বেচেঁ থাকা যেমন পরনিন্দা,গালি,বদদু’য়া ,লানত করা ইত্যাদি।
৪০টি শাখা শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের সাথে সংশ্লিষ্টঃ
৩৮. পাক পবিত্রতা অর্জন করা-ওযু করা,ফরয গোসল করা, কাপড় পাকছাফ রাখা ইত্যাদি।
৩৯. নামাযের পাবন্দ থাকা।
৪০. মালের যাকাত ও ছদকা ফিৎরা আদায় করা।
৪১. রমযানের রোযা রাখা।
৪২. হজ্ব পালন করা(ওমরা হজ্বেরই অন্তর্গত)
৪৩. রমযানের শেষ দশদিন এতেকাফ করা(শবে কদর তালাশ করা এতেকাফের অন্তর্গত)।
৪৪. হিজরত করা-যে পরিবেশ বা যে দেশ থেকে ঈমান রক্ষা করা ও দ্বীন ইসলাম পালন করা সম্ভব হয় না, সে পরিবেশ এবং সে ত্যাগ করে উপযুক্ত স্থানে চলে যাওয়া।
৪৫. আল্লাহ তায়ালার নামে মান্নত করলে তা পূরণ করা।
৪৬. আল্লাহর নাম নিয়ে কোন জায়েয কাজে কসম করলে তা যদি গুণাহের কাজ না হয় তবে তা পূরণ করা।
৪৭. আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে ভংগ করলে তার কাফফারা আদায় করা।
৪৮. ছতর ঢাকা পুরুষের ছতর নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের ছতর মাথা হতে পা পর্যন্ত অথচ ঈমানদার দাবী করে আমাদের নারীগণ কিভাবে পেট,পিঠ,মাথা এমনকি হাটু পর্যন্ত খোলা রেখে চলতে পারে?
৪৯. ঈদুল আযহার কুরবানী করা।
৫০. মৃত ব্যক্তির কাফন দাফন করা।
৫১. ঋণ পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা রাখা।
৫২. ব্যবসা-বাণিজ্যে,কাজকারবারের ধোকা না দেয়া,শরীয়তের খেলাপ কাজ হতে বেচেঁ থাকা- যেমন দিবার সময় মাপে কম দেয়া ও নিবার সময় বেশি নেওয়া, ভেজাল দেওয়া,সুদ,ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি।
৫৩. সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা।
৫৪. কাম রিপু প্রবল হলে বিয়ে করা।
৫৫. অধিনস্থ পরিবার-পরিজন,চাকর-নওকর প্রভৃতির হক আদায় করা,মেয়েদের সম্পত্তির অংশ হতে বঞ্চিত না করা,স্ত্রীর মুহরের টাকায় ফাঁকি না দেয়া এর মধ্যে গণ্য।
৫৬. মাতা – পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা,কোমল আচরণ করা।
৫৭. সন্তানের লালন পালন করা(ইসলামী জ্ঞান,আদব-কায়দা,হালাল গ্রহণ ও হারাম বর্জন ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া)।
৫৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা(ফুফু,খালা,বোন,ভাগ্নেয়,শ্বশুর শাশুড়ীর ইত্যাদিও সাথে সদাচার করা)।
৫৯. মনিবের আনুগত্যে করা(চাকর-নওকর হলে)।
৬০. ন্যায় বিচার করা।
৬১. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসরণ করা।
৬২. মুসলিম বাদশা বা নেতার আদেশের (যতক্ষণ তা শরীয়ত বিরোধ না হয়) আনুগত্য করা।
৬৩. ঝগড়া বিবাধের মীমাংসা করে দেওয়া।
৬৪. নেক কাজে সহায়তা করা।
৬৫. সাধ্যমত সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করা।
৬৬. ইসলামী হুকুমত কায়েম করে ”হদ”অর্থাৎ শরীয়ত অনুযায়ী শাস্তির বিধান যারী করা-যেমন অপবাদ দিলে ও মদ পান করলে আশি কোড়া ,চুরি করলে হাত কেটে দেয়া,ডাকাতি করলে হাত পা কেটে দেওয়া, খুনের বদলে খুন -কেসাস,মিথ্যা সাক্ষ্য,সুদ- ঘুষ বন্ধ করা,যিনা করলে একশ কোড়া মারা অথবা ছাঙ্গেছার করা।
৬৭. জিহাদ করা(আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য এবং ইসলামের দুশমনদের প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান)।
৬৮. আমানত যথাযথভাবে আদায় করা।
৬৯. অভাবী বা ঋণগ্রস্তকে ঋণ দেওয়া(সচ্ছল ব্যক্তির জন্য)।
৭০. পাড়া প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা,বিপদে সাহায্যে ও সমবেদনা প্রকাশ করা।
৭১. হালাল উপায়ে রুজি অর্জন করা।
৭২. শরীয়তের বিধান অনুযায়ী খরচ করা।হালাল উপায়ে আয় করে ও হারাম স্থানে ব্যয় করলে ঈমানের এ শাখাটির সর্বনাশ করা হয়।
৭৩. সালামের উত্তর শুনায়ে দেয়া (মুসলমান ভাইকে দেখলে চেনা হোক বা অচেনা হোক আস্সালামু আলাইকুম বলে সালাম দেওয়া,কোন মুসলমান সালাম দিলে ওয়াআলাইকুমুস সালাম বলে তার উত্তর দেয়া)
৭৪. কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে ইয়ার হামুকাল্লাহ বলে উত্তর দেওয়া।
৭৫. অনর্থক কাউকে কষ্ট না দেয়া বা কারও ক্ষতি না করা।
৭৬. অবৈধ খেলা ধূলা,রং তামাশা, তাস,কেরাম বোর্ড, পাশা, হকি, সিনেমা, নাটক, থিয়েটার, ভিসিআর, ব্লুফিল্ম, ফুটবল, দাবা ইত্যাদি হতে বেঁচে থাকা।
৭৭. রাস্তা হতে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা(ইট,পাটকেল,পাথর,নাপাক বস্তু,কলার ছোলা,তরমুজের খোসা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত)।, এই ৭৭ প্রকার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারলে ইনশাআল্লাহ ঈমান পূর্ণ হবে। আর একটি বাকি থাকলে ঈমান অসম্পূর্ণ থাকবে; আখেরাতে এর জন্য বড় রকমের খেসারত দিতে হবে।
আমরা দৈনিক একবার,নইলে সপ্তাহে একবার ,নইলে মাসে একবার,হলেও পড়ি আর যাচাই করি আমার মধ্যে এর কয়টি আছে আর কয়টি নেই।

সূত্রঃ -পাঁচ শত হাদীস ও ঈমানের সাতাত্তর অংশ
(সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments