Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৪০; জিয়াউল হক।

 
           দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৪০
                    ★★★★★★

  আমরা আগেই বলেছি, মা আমিনা সন্তানকে নিজের কাছে পেয়ে নিজেদের বাড়ি ও পরিবার, তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে সন্তানকে পরিচয় করে দেবেন ও দিয়েছেন, সেটাই স্বাভাবিক। তিনি তাঁর শিশু সন্তানকে সঙ্গত কারণেই তার জীবনের সবেেচয় আপনজন, এই বয়সে যার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল; সেই বাবার কথা বলেছেন। নি:সন্দেহে কাজটা তাঁর জন্য খুব মানসিক কষ্টের ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নাই।

    ইতেমাধ্যেই দেখতে দেখতে প্রায় একটি বছর পেরিয়ে গেলো। শিশু মুহাম্মদ তাঁর মায়ের কাছে মক্কায় ফিরে এসেছেন। এখন তার বয়স প্রায় ছয় বছর হতে চললো। বিবি আমিনা বিগত একটা বছর সন্তানকে নিয়ে মক্কায় চমৎকার দিন কাটিয়েছেন। শিশুটিও মা, চাচা দাদা, চাচাতো ভাইবোন সহ অন্যন্যা সকল আত্মীয় স্বজনের সাথে অত্যন্ত চমৎকারভাবে মানিয়ে নিয়েছে।

     এবারে বিবি আমিনা শিশুটিকে নিয়ে তার নিজের মায়ের বাড়ি ইয়াসরিবে যাবার পরিকল্পনা করলেন। স্বামী মারা গেছেন এবং তাকে সেই ইয়াসরিবেই তার বাবার মহল্লাতেই দাফন করা হয়েছে। স্বামীর ইন্তেকালের পর চার বা সাড়ে চার মাস পরে শিশুপুত্রের জন্ম। পুত্রের বয়স যখন আট দিন, তখন তাকে দুধ মা হালিমার কাছে দেয়া হয়, তায়েফে।

     এর পরে প্রতি ছয় মাস পর পর একবার শিশুটিকে কয়েকদিনের জন্য কাছে পেয়ে দেখা মিললেও সে তাঁর কাছে স্থায়ীভাবে বসবাস করেনি। এই দীর্ঘ সময়কালে বিবি আমিনা কোন সুযোগ ও সময় করে ইয়াসরিবে বাবার বাড়ি গিয়েছেন কি না, বিশেষ করে, তার মৃত স্বামীর কবর জিয়ারত করেছেন কি না, সে রকম কোন ঐতিহাসিক তথ্য আমাদের সামনে নেই। 

     তবে যেহেতু তখনও তাঁর বাবা ওয়াহাব যুহরি ও মা ফাতেমা বেঁচে ছিলেন, ধরেই নেয়া যায় যে, স্বামীর ইন্তেকালের অব্যাবহতি পরে সুযোগ না পেলেও পরবর্তিতে সুযোগ সময়মতো বিবি আমিনা বাবার বাড়ি গিয়ে থাকবেন। অপরদিকে ওয়াহাব যুহরি ও ফাতেমা দম্পতিও হয়তো মক্কা সফর করেছেন মেয়ে আমিনাকে দেখতে। বিশেষ করে, হজ্জের সময় তারা এসে থাকবেন হয়তো, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও একইসাথে নিজেদের মেয়েকে দেখে যাবার জন্য। 

     বিবি আমিনা ছেলেকে তাঁর মৃত বাবার কবর দেখানোর জন্য মদিনায় যাবার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু করলেন। বাবার কবরটা দেখালে, কবরের কাছে নিয়ে গেলে বাবাকে নিয়ে এতোদিন বলা কথাগুলো সন্তানের কাছে আরও জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠবে বোধ হয়! সন্তান অন্তত জানবে, এইখানে, এই মাটিতে তার বাবা শুয়ে আছেন। বাবার সাথে, বাবার নাম ও তার স্মুতির সাথে আত্মিক ও মানসিক বন্ধন তৈরি হবে! 

    একইসাথে তিনি তার নিকটাত্মীয় স্বজনদের সাথে, তথা, জীবনে প্রথমবারের মতো নানা-নানী, মামা-মামী, খালা ও অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পরিকল্পনা করলেন তিনি। স্বামীহারা বিধবা একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সেটাই স্বাভাবিক ও তার বুকে পুষে রাখা আবেগের স্বত:স্বিদ্ধ বহিপ্রকাশও বটে। তবে তাঁর এই পরিকল্পনায় বাধা দেবার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরই প্রিয় দাসী বারাকাহ উম্মে আইমান এবং বৃদ্ধ শ্বশুর আব্দুল মুত্তালিব 

    কিন্তু বিবি আমিনা কারো বাধা, বারণই শোনেননি। তিনি অনড় ছিলেন ইয়াসরিবে যাবার ব্যাপারে। তার অটলতা দেখে শেষ পর্যন্ত আব্দুল মুত্তালিব সিরিয়াগামী একটা কাফেলার সাথে বড়ো সড়ো ও দ্রুতগামী একটা উটের পিঠে প্রয়োজনীয় রসদ’সহ তুলে দিলেন। একটানা দশদিনের সফর শেষে তারা ইয়াসরিবে পৌছুলেন। 

   ইয়াসরিব, বিবি আমিনার বাবার বাড়ি, নিজের জন্মস্থান। চারিদিকে তাঁর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবী আর পরিচিতজনদের বাড়ি ঘর। এ জনপদ তাঁর পরিচিত। কিন্তু এটা তাঁর জীবনের প্রথম বিশেষ বৈশিষ্ঠমন্ডিত ও তাৎপর্যময় হয়ে থাকবে। জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর নিজ গর্ভজাত সন্তান নিয়ে এসেছেন মায়ের বাড়ি। নিজের সন্তানকে তাঁর জন্মদাতা পিতার কবর দেখাতে নিয়ে এসেছেন। তাঁর সন্তানও জীবনে প্রথমবারের মতো এসেছে তাঁর সাথে এতো দীর্ঘ এক সফরে।

   সন্তানকে নিয়ে মা আমিনা ইয়াসরিবে এলেন। তাকে তার নানা, মামার বাড়ি দেখালেন, বাবার কবর দেখালেন। এই প্রথম বাবার কবরের পাশে এতিম ছেলেটা এসে দাঁড়ালো। তখন তার বয়স পাঁচ বসর।  

    বালক মুহাম্মদ মায়ের সাথে এই প্রথম কোথাও, দূরের কোন যাত্রাপথে সফরে গেলেন। মায়ের আদর, যতœ আর ত্বত্তবধানে সফর করার অনূভূতিই আলাদা ধরনের রোমাঞ্চকর হয়ে থাকে প্রতিটি সন্তাানের জন্য। বালক মুহাম্মদ নিশ্চয়ই সেরকমই এক অনূভুতিতে উচ্ছল ছিলেন। 

   তা ছাড়া মক্কার পাথুরে পাহাড়ে ঘেরা রুক্ষ শুস্ক আবহাওয়া থেকে মদীনার সবুজে ঘেরা পরিবেশে তিনি জীবনে প্রথম গেলেন, নানা-মামা ও অনান্য আত্মীয়রাও এতিম এ বালককে জীবনে প্রথমবার কাছে পেলেন। তাঁরা বোন আমিনাকে তো বটেই ভাগ্নে মুহাম্মদকেও আদরে আপ্যায়নে আপ্যায়িত করেছেন নিশ্চয়ই। বালক মুহাম্মদের কাছে মায়ের উপস্থিতি ও সাহচর্যের সাথে এই আদর আপ্যায়ন যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল সব মিলিয়ে! মায়ের সাহচর্য মানেই যেন এরকম আদর আপ্যায়ন, আলাদা আতিথেয়তা!

   আমরা জানি না মা আমেনা যখন নিজ স্বামীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বালক মুহাম্মদকে তাঁর মরহুম বাবার কবরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তখন মুহাম্মদ সা: এঁর চেহারাটায় কী সুগভীর বেদনার ছাপ ফুটে উঠেছিল! 
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখতে পাই, মা আমিনা ইয়াসরিবে বাবার বাড়িতে থাকাবস্থায় প্রতিদিনই মৃত স্বামী আব্দুল্লাহর কবরে যেতেন জিয়ারতে। যে ক’টা সপ্তাহ তিনি সেখানে ছিলেন এ ধারা অব্যহত ছিলো। আর প্রত্যেকবারই তিনি বেদনায় একেবারে মুষড়ে পড়তেন। 
(ভাবলেই আমার কান্না পায়😭😭)

   আন্দাজ করতে পারি কেবল মা আমিনার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু আর তাঁর করুণ মুখ জুড়ে কী গভীর বেদনার চিহ্ন উপচে পড়ছিল! ক্রন্দনরতা মায়ের মুখখানা আর মা কর্তৃক দেখিয়ে দেয়া বাবার পাথুরে কবর, শিশু মুহাম্মদের মনের ভেতরে কতটা গভীর ছাপ ফেলেছে! 😭😭

Post a Comment

0 Comments