Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৩৭; জিয়াউল হক।

 
  দ্যা য়ে ইজ রস- ৩৭
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে) 
   ★★★★★★★
 
কুসাই দ্যা চেঞ্জমেকার:
কিনানা ছিল আদনানী আরবদের একটা গোত্র। ৩৫০ খৃষ্টাব্দের দিকে তারা হেজাজে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শক্তিশালী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ গোত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী কুরাইশ বংশেরই এক সন্তান ছিলেন কুসাই, বাবার নাম ছিল কিলাব, মা ছিলেন জিদারা গোষ্ঠীর মেয়ে ফাতেমা।  

মক্কায় ৩০০ খৃষ্টাব্দের দিকে এক ভয়াবহ বন্যায় কাবা ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হলে ওমর আল জারুদ নামক এক ব্যক্তি কাবা ঘরটি মেরামত করে দেন। সেই থেকে ওমর আল জারুদের সম্মান ও খ্যাতি আরবদের কাছে, বিশেষ করে, মক্কাবাসীর কাছে বেড়ে যায়। তার নামেই আলাদা বংশধারা; জিদারা বংশ পরিচয় চালু হয়। তার সন্তানদেরই জিদারা হিসেবে ডাকা হয়। এই বংশেরই মেয়ে ফাতেমার সাথে কুসাইয়ের বাবা কিলাবের বিয়ে হয়েছিল।

স্বামী কিলাবের অকাল মৃত্যু হলে রাবিয়া বিন হারাম বিন জিব্বা’র সাথে ফাতেমার দ্বিতীয়বার বিয়ে হয় দুই পুত্রসন্তান; যোহরা ও  যায়েদ’সহ। যোহরা তখন সাবালক হলেও যায়েদ ছিলেন শিশু। ফলে স্বামী রাবিয়া স্ত্রী ফাতেমাকে নিজের এলাকায় (উত্তরের নাবাতিয়ান সাম্রাজ্যে, আধুনিক সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায়) নিয়ে যাবার সময় শিশুপুত্র যায়েদকেও নিয়ে যান এবং যায়েদ সেখানেই মা ফাতেমা ও তার স্বামী রাবিয়ার ত্বত্তাবধানে বেড়ে উঠেন। এই যায়েদের নামই পরবর্তিতে কুসাই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যায়। (কুসাই মানে হলো; ‘জন্ম হতেই দুরে অবস্থানকারী’)।

প্রাপ্তবয়স্ক হলে কুসাই জানতে পারেন যে, তার জন্মস্থান মক্কা এবং তিনি মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ বংশের সন্তান। একসময় যায়েদ মায়ের অনুমতি নিয়েই ফিরে আসেন জন্মভূমি, পিতৃঠিকানা; মক্কায়। বড় ভাই যোহরা অন্ধ হয়ে গেলেও তখনও বেঁচে ছিলেন। 

কুরাইশ বংশ প্রভাবশালী হলেও মক্কায় তখন তাদের তেমন কোন ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ছিল না। বরং সেখানে খোজা’আ গোত্রের শাসন চলছিল। তাদেরই এক গোত্রপতি হুলাইলের মেয়ে হুব্বাকে সুদর্শন যুবক কুসাই বিয়ে করেন। হুলাইল মৃত্যুবরণ করার আগে বায়তুল্লাহ, তথা, কাবা ঘর দেখা শোনার অধিকার তার কন্যা হুব্বাকে দেন। 

ওদিকে হুব্বা নারী হিসেবে এ সকল কাজ সামাল দেয়া তার পক্ষে কষ্টকর হলে তিনি নিজের পক্ষ থেকে এ দায়িত্ব আবু গুবমান নামক এক প্রতিনিধিকে দেন। এই আবু গুবমান ছিল মদ্যপ। মাত্র এক পেয়ালা মদ ও একটা উটের বিনিমেয় সে দায়িত্বভারটি কুসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়।
 
কুসাইয়ের হাতে কাবা ঘর দেখা শোনা ও ত্বত্তবাধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ায় তার সম্মান ও অধিকার, ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তি দ্রুত বেড়ে যায় মক্কা’সহ আরব সমাজে। এটা তাকে নিজের বা নিজের পরিবার ও গোত্রের জন্য, সেই সাথে মক্কাবাসীর জন্য বড়ো কিছু একটা করার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।

অপ্রত্যাশিতভাবে এই সুযোগ আসার পাশাপাশি কুসাইয়ের নিজের ব্যক্তিগত যোগ্যতাও ছিল অনেক বেশি, সে বাস্তবতাও স্বিকার করতেই হবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মক্কার চেয়ে অনেক গুণে উন্নত ও অগ্রগামী নাবাতিয় সাম্রাজ্যে শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠা ও বাস করার কারণে কুসাইয়ের ভেতরে জ্ঞান-বুদ্ধি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটেছিল পুরোমাত্রায়।

এর আগে, দীর্ঘ সময় বাস্তব কারণেই কুসাইয়ের পূর্বপুরুষগণ আদনানী আরবদের একটা গোত্র (কুরাইশ) হয়েও নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলেছে কিংবা চলতে বাধ্য হয়েছে। মক্কার শাসনক্ষমতা অধিকার করার চেষ্টা প্রচেষ্টা করার মতো কোনরকম সামরিক বা বৈষয়িক যোগ্যতা, শক্তি ও জনবল কোনটাই তাদের ছিল না। ফলে তারা কাবার কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদমান কোন পক্ষের উপরেই নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করার মতো কোন উপায় বের করতে পারেনি।

এর মধ্যে ৪৩০ বা ৪৫০ খৃষ্টাব্দের দিকে (Foundations of Islam; The Making of a World Faith গ্রন্থের লেখক Benjamin Walker এর মতে ৪৫০ খৃষ্টাব্দ এবং Mecca: The Sacred City বইয়ের লেখক Ziauddin Sardar এর মতে ৪০০ খৃষ্টাব্দ। আমার মতে উভয়ের মাঝামাঝি সময়ে, সম্ভবত ৪৩০ খৃষ্টাব্দ ) খোদ কাবার আশে পাশে, তথা, মক্কার প্রাণকেন্দ্রে কুসাই তার বংশধরদের একত্রিত করার মাধ্যমে নিজের ও নিজের গোত্রের প্রভাবকে সংহত করার উদ্যোগ নেন।

এ লক্ষ্যে কুসাই হেজাজের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার বংশীয় লোকদেরকে মক্কায় এসে বসতি স্থাপন করতে বলায় তারা এসে জড়ো হবার ফলে তার প্রভাবও দিনে দিনে বেড়ে যায়। তিনি নিজেকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধে মক্কার রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের আসনে আসীন করেন সফলতার সাথে এবং পুরো পরিস্থিতিকে তার ও তার গোত্রের অনুকূলে বদলে দেন। পুরো কুরাইশ বংশের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে এ সময়কাল থেকেই।

ব্যক্তিজীবনে কুসাই ছিলেন অত্যন্ত সদাচারী এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক, সংগঠক এবং জনহিতৈষীও। ফলে তার জনপ্রিয়তা গগণচুুম্বি রুপ ধারণ করে অল্প সময়ের মধ্যেই।

তিনি মক্কার সামাজিক ও প্রাশাসনিক সংস্কারও করেন। কুসাই এককভাবে কোন স্বিদ্ধান্ত নেবার বদলে অন্যান্য গোত্রপ্রধানদের সাথে পরামর্শ করে, তাদের মতামত শুনে তারপরে স্বিদ্ধান্ত নিতেন। তার এ কর্মপদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। কুসাই সকল গোত্র প্রধানদের নিয়ে যেখানে শলাপরামর্শ করতেন, সেটাই হলো; ‘দার উন নাদওয়া’। অর্থাৎ মক্কার ইতিহাসখ্যাত ‘দার উন নাদওয়া’র প্রতিষ্ঠিাতাও কুসাই। এই দারুন নাদওয়া পরবর্তিতে ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এ ছাড়া খাজনা আদায় ও বন্টনের সুব্যবস্থা, হাজীদের পানি পান করানো’সহ অন্যান সেবা প্রদান সহজকরা’সহ নানান প্রজাহিতেষী কাজ করেন। এসব কাজে তিনি বিভিন্ন গোত্র ও গোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করেন। সরকারবিহীন আরব সমাজে কুরাইশ বংশ যেন সরকার ও প্রশাসন হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে কুসাইয়ের হাত ধরে। (সংক্ষেপকৃত ও চলবে)
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments