Recent Tube

আপনারও দিন বদলাবে, যদি-। জিয়াউল হক।

আপনারও দিন বদলাবে, যদি-
---------------------------------- 
  কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক প্রায় দুইশত আয়াতে জীব জন্তু’র আলোচনা আর মোট ছয়টি সুরা'র নামকরণই করেছেন জীব-জন্তুর নামে । তিনিই ভালো জানেন কেন এবং কি উদ্দেশ্যে মানুষের জন্য নাজিলকৃত কুরআনে মশা-মাছি, উট-গরু, পিপিলিকা থেকে শুরু করে বাঘ-হাতি, কুকুর, মাকড়শা এরকম পশু-পাখির উল্লেখ করেছেন।

  অবশ্যই এর মধ্যে মানুষের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ (সুরা ইউসুফ-১১১)। কারণ কুরআন এসেছে একমাত্র মানুষের জন্য। মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণের জন্য (সুরা বাকারা-১৮৫, ইসরা:৮৯, হাদিদ-৯)। আমাদের উচিৎ, এ থেকে কী শিক্ষা নিতে পারি, সেটি দেখা।

   কুরআনে উল্লেখকৃত ৩৫টি জীব জন্তুর মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়েছে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে দূর্বল; মশার কথা (বাক্বারা- ২৬)। আর সবশেষে; হাতি ( ১০৫ নম্বর সুরা) প্রাণীকুলের মধ্যে শারিরীক দিক বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী এ প্রাণীটিকেই কুরআনে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে।

  অনেকের ধারণা মশা মানুষ এবং জীব জন্তুর রক্ত পান করেই বেঁচে থাকে। এটা ঠিক নয়। মশা ফুলের রস খেয়ে জীবন ধারণ করে। তার রক্ত পান করার দরকার হয়. কারণ রক্তের মাধ্যমে সে প্রোটিন পায়, এই প্রোটিন প্রজণনের জন্য তার দরকার। তাই কেবলমাত্র স্ত্রী মশাই মানুষকে কামড়ায়। মশা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও নগণ্য প্রাণী, আমরা হাতের নাগালে পেলেই পিষে মারি!

  নগণ্য এই প্রাণীটি কিন্তু আসলেই বিস্ময়কর। একটা পুরুষ মশা ১০ থেকে ২০ দিন এবং স্ত্রী মশা ৩ হতে ১০০ দিন পর্যন্ত বাঁচে। এর রয়েছে তিনটা পরিপূর্ণ হৃৎপিন্ড, একশত চোখ, ছয়টা পাখা, ছয়টা ধারালো সুঁড়, আটচল্লিশটা দাঁত।

  মশার শরীরে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন রয়েছে যা  দ্বারা সে রাতের আঁধারে প্রায় আঠারো ফুট দূর থেকেও শিকার সনাক্ত করতে পারে। তার শরীরে রয়েছে লোকাল এন্যাস্থেশিয়া করার মত বিশেষ ভ্যাকসিন, যা সে শিকারের শরীরে প্রবেশ করিয়ে জায়গাটিকে আগে অবশ করে নেয়, তারপরে হুল ফুটায়! শিকারের রক্ত টেষ্ট করার ব্যবস্থাও আছে, কারণ সে সব group এর রক্ত পছন্দ করে না, তাই আগে টেষ্ট করে জেনে নেয় রক্তের group কী!

   প্রতিটি মশার মাথার উপরে আরও একটি স্বতন্ত্র, ক্ষুদ্র মাইক্রোস্কোপিক প্রাণী (যা অনূবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখাই যায় না!) বাস করে। সুরা বাকারার ২৬নম্বর আয়াতে 'মশা বা তদুর্ধ্ব' বাক্যটিতে 'তদুর্ধ্ব' শব্দটিকে লক্ষ্য করুন। এই প্রাণীটি মশার চেয়েও আরও বেশি ক্ষুদ্র, নগণ্য!

  নাম না জানা এ নগণ্য প্রাণটিকেও আল্লাহ পাক কুরআনে উল্লেখ করেছেন! এর কাজ কী? সে কী করে? কেনই বা মশার মাথার উপরে বাস করে? বিজ্ঞান হয়ত একদিন সেটাও আমাদের জানাবে।

   ইতিহাস এবং বিজ্ঞান বলে; বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে যে প্রাণী; সেটা মশা। এ জন্য ক্ষুদ্র হিসেবে কাউকেই অবজ্ঞা করতে নেই, তার শক্তি ও সামর্থ সন্মন্ধ্যে উদাসীন হতে নেই। অতি ক্ষুদ্র প্রাণীও ধ্বংসের জন্য ভয়ংকর শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। (নমরুদ কিন্তু মশার দাপট টের পেয়েছিল!)

   একদিন প্রচন্ড প্রতাপশালী যে আবু জেহেল আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা:) এঁর মত ক্রীতদাসকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে তাঁর সাথে কথা বলতেও অপমানিত বোধ করেছে, সেই তাকেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা: এর পদতলে, তাঁরই তরবারীর আঘাতে নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে; ছোট, নিম্ন সমাজভূক্ত দাস, দাসের সন্তান ও দু:স্থ গরীব বলে কাউকে অবজ্ঞা করতে নেই। কারণ দিন ঠিকই বদলায়!

    কুরআনে সর্বশেষ উল্লিখিত জন্তুটি; হাতি। (কুরআন- ১০৫)। প্রাণীকূলের মধ্যে শারীরিক শক্তি ও সক্ষমতা বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী, ধ্বংস ও তান্ডবের প্রতীক। কুরআনে জন্তু জানোয়ারের উল্লেখের ধারাবাহিকতা ক্ষুদ্র মশা হতে শুরু হয়ে প্রচন্ড শক্তিশালী হাতি'তে এসে ঠেকেছে। এটা স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল কুরআনকে আঁকড়ে ধরলে অতি ক্ষুদ্রও শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে!

     পৃথিবীতে ক্ষুদ্র ও অনূল্লেখ্য কোনো জাতি, দূর্বল অসহায়, পরনির্ভরশীল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীও যদি কুরআনকে আঁকড়ে ধরে তবে সে বা তারাও বিশ্বের শক্তিশালী জাতিসত্তার উপরে নিজেদের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

    এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোন বিষয়টি প্রয়োজন? কুরআনের সর্বপ্রথম অক্ষর আরবি 'বা' এবং সর্বশেষ অক্ষর 'সিন'। এই 'বা' আর 'সিন' দিয়ে সবচেয়ে সহজ যে শব্দটি তৈরি হয় তা হলো 'ব্যাস'! বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী, সক্ষম, জ্ঞানী ও সবচেয়ে সফল হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চান? আন্তরিকতার সাথে কুরআনের অনূবর্তি হয়ে যান, ব্যাস। কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

    কুরআনটাকে বুঝে পড়ুন আর পড়ে বুঝুন। কুরআন বুঝতে যে সাবজেক্টেরই দরকার হোক না কেন, সেটাও পড়ুন। পড়ুন আর ভাবুন। মাত্র একটি বসর যদি প্রাকটিসটা চালু রাখতে পারেন, তবে নিজের মধ্যেই দেখবেন বিস্ময়কর পরিবর্তন! সবার আগে নিজেই তা টের পাবেন। বিশ্বাস না হয় একবার চেষ্টা করেই দেখুন না! দিন বদলে যাবে। কারণ, দিন বদলের জন্যই কুরআনের আগমণ! আপনারও দিন বদলাবে। (সংক্ষেপকৃত)

Post a Comment

0 Comments