Recent Tube

শেষ জামানার বুদ্ধিজীবী, ‏মিথ্যুক মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ সম্পর্কে মহানবী ‎ﷺ-এর ভবিষ্যত বাণী; ‏--- ‏শামীম ‎আজাদ ‎।

  শেষ জামানার বুদ্ধিজীবী, মিথ্যুক মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ সম্পর্কে মহানবী ﷺ-এর ভবিষ্যত বাণী
    ============================

হযরত আবু হুরায়রাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-

سيَأتي علَى النَّاسِ سنواتٌ خدَّاعاتُ يصدَّقُ فيها الكاذِبُ ويُكَذَّبُ فيها الصَّادِقُ ويُؤتَمنُ فيها الخائنُ ويُخوَّنُ فيها الأمينُ وينطِقُ فيها الرُّوَيْبضةُ قيلَ وما الرُّوَيْبضةُ قالَ الرَّجلُ التَّافِهُ في أمرِ العامَّةِ . رواه ابن ماجه رقم ٤٠٤٢, الحاكم في المستدرك ٤/٤٦٥, المعجم الأوسط للطبراني  ٣٢٥٨, مسند أحمد ٢/٢٩١ , الطحاوى في “مشكل الآثار : ١/٤٠٥, والبزار ٢٧٤٠ , و الطبراني في “معجمه الكبير”١٢٥/٦٨/١٨ , وفي مسند الشاميين  ٤٨,  , وأبو يعلى ٣٧١٥

‘অতি শিঘ্রই মানুষের উপর এমন সব প্রতারনাপূর্ণ সনের আগমন ঘটবে, যখন (পৃথিবীর মানুষের সামনে আসল) মিথ্যুককে সত্যবাদি আর (প্রকৃত) সত্যবাদিকে মিথ্যুক বানানো হবে, এমনিভাবে (আসল) খেয়ানতকারীকে আমানতদার আর (প্রকৃত) আমানতদারকে খেয়ানতকারী বানানো হবে। (আর মানুষজন প্রতারকদের প্রতারনা ও ধাপ্পাবাজী বুঝতে না পেরে ওগুলোকেই সত্য মনে করতে থাকবে, আর প্রকৃত সত্য ও সত্যপন্থিরা সর্বসাধারণের দৃষ্টির আরালে থাকবে)। আর সে জামানায় রুওয়াইবাজা ‘কে কথা বলতে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি? রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন- الرَّجلُ التَّافِهُ في أمرِ العامَّةِ – সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে (কথা বলার) একদম অযোগ্য-অপদার্থ ব্যাক্তি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০৪২; মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৪৬৫; আল-মু’জামুল আউসাত, ত্বাবরানী- ৩২৫৮; মুসনাদে আহমাদ- ২/২৯১; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী- ১/৪০৫; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৭৪০; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরানী-১৮/৬৮/১২৫; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরানী ৪৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা ৩৮১৫]

এখানে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষনীয়-

(১) উপরের হাদিসেরে বিষয়গুলো ঘটবে শেষ জামানায়; দাজ্জাল বেড় হওয়ার বেশ কিছু বছর আগে, (আর বহু নির্ভরযোগ্য হাদিস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত যে, দাজ্জাল বেড় হবে শেষ জামানায়)।

যেমন: হযরত আওফ বিন মালেক আশযায়ী রা.-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-
 إِنَّ أَمَامَ الدَّجَّالِ سِنِينَ خَوَادِعَ يَكْثُرُ فِيهَا الْمَطَرُ ، وَيَقِلُّ فِيهَا النَّبْتُ ، وَيُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ ، وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ ، وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ ، وَيُخَوَّنُ فِيهَا الأَمِينُ ، وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ ” , قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : ” مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ ” . وَبِهِ عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ ، عَنْ أَنَسٍ ، مِثْلَهُ , غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ : ” قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ ؟ قَالَ : الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ . أخرجه الطحاوى في “مشكل الآثار : ١/٤٠٥, والبزار ٢٧٤٠ , و الطبراني في “معجمه الكبير”١٢٥/٦٨/١٨ , وفي مسند الشاميين ٤٨ , و الروياني ٥٨٨ -
‘নিশ্চয়ই দাজ্জালে (আগমনের) আগে কিছু প্রতারনাপূর্ণ বছর এমন হবে, যখন তাতে অনেক বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু তাতে শস্য-ফলন হবে কম। তখনকার  মিথ্যুককে সত্যবাদি বলে গণ্য করা হবে এবং সত্যবাদিকে গণ্য করা হবে মিথ্যুক রূপে। এমনিভাবে তখনকার খেয়ানতকারীকে আমানতদার হিসেবে গণ্য করা হবে, আর আমানতদারকে গণ্য করা হবে খেয়ানতকারী রূপে। সেসময় রুওয়াইবাজাহ’কে কথা বলতে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন- مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ -‘‘এমন ব্যাক্তি যার (বাস্তবে আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) মূল্য নেই, (যে তার উপযুক্তই নয়)’। আর হযরত আনাস রা.-এর বর্ণনায় আছে: জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন: الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ – ফাসেক (পাপাবিষ্ঠ ও মনুষ্যত্বে পচনধরা সব) ব্যাক্তিরা, যারা সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে কথা বলবে। 
[শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী-১/৪০৫; মুসনাদে বাযযার, হাদিস ২৭৪০; আল-মু’জামুল কাবির, ত্বাবরানী-১৮/৬৮/১২৫; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরানী ৪৮; মুসনাদে রুইয়ানী, হাদিস ৫৮৮; মুসনাদে আবু ইয়া’লা ৩৮১৫] 

ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃ: ২২৮ হি:) তাঁর কিতাব ‘আল-ফিতান’-এ হযরত আবু হুরায়রাহ রা.-এর সূত্রে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন- 
حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عِيَاضٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ السَّبَّاقِ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، يَقُولُ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : “ يَكُونُ قَبْلَ خُرُوجِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ سَنَوَاتُ خُدْعَةٍ ، يُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ ، وَيُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ ، وَيُؤْتَمَنْ فِيهَا الْخَائِنُ ، وَيُخَوَّنُ فِيهَا الأَمِينُ ، وَيَتَكَلَّمُ الرُّوَيْبِضَةُ الْوَضِيعُ مِنَ النَّاسِ
 মাসিহ দাজ্জাল বেড় হওয়ার আগে কিছু বছর এমন হবে যে, তখনকার সত্যবাদিকে মিথ্যুক বলে গণ্য করা হবে এবং মিথ্যুককে গণ্য করা হবে সত্যবাদি রূপে। এমনিভাবে তখনকার খেয়ানতকারীকে আমানতদার হিসেবে গণ্য করা হবে, আর আমানতদারকে গণ্য করা হবে খেয়ানতকারী রূপে। আর (তখন)  রুওয়াইবাজাহ কথা বলব, (যারা) الْوَضِيعُ مِنَ النَّاسِ -মানুষের মধ্যে ছোটলোক/তুচ্ছ-অথর্ব ব্যাক্তি’। [আল-ফিতান, ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ, হাদিস ১৪৫৫] আর ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহ. মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হল: রুওয়াইবাজাহ কি – ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি ﷺ বললেন- سِفْلَةُ النَّاسِ -‘নিচুমানের মানুষ’ । [আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৮২]

(২) উপরের মূল হাদিসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, শেষ জামানায় সেই উল্লেখীত সময়টি হবে এমন, যখন গোটা পৃথিবী প্রতারক ও প্রতারনার গাঢ় অন্ধকারে আবিষ্ট হয়ে থাকবে, মানুষজনের স্বভাব-চরিত্র এতটাই ঘোলাটে হয়ে যাবে যে, তখন এটা বোঝাই মুশকিল হয়ে যাবে যে, কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা, কে প্রতারক করছে আর কে সৎ। শুধু তাই নয়, তখন
 يصدَّقُ فيها الكاذِبُ ويُكَذَّبُ فيها الصَّادِقُ ويُؤتَمنُ فيها الخائنُ ويُخوَّنُ فيها الأمينُ –
(পৃথিবীর মানুষের সামনে আসল) মিথ্যুককে সত্যবাদি আর (প্রকৃত) সত্যবাদিকে মিথ্যুক বানানো হবে, এমনিভাবে (আসল) খেয়ানতকারীকে আমানতদার আর (প্রকৃত) আমানতদারকে খেয়ানতকারী বানানো হবে। (আর মানুষজন প্রতারকদের প্রতারনা ও ধাপ্পাবাজী বুঝতে না পেরে ওগুলোকেই সত্য মনে করতে থাকবে, আর প্রকৃত সত্য ও সত্যপন্থিরা সর্বসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে থাকবে)।

আমার মতে (আর শুধু আমার মতে নয়, বরং বিশ্বের চোখ-কান-খোলা-রাখা সচেতন মুসলীম-অমুসলিমদের কাছে একথা দিনের আলোর ন্যায় প্রতিভাত হয়ে গেছে যে), এই দায়িত্বটা নিয়েছে বিশ্বের সকল দেশের চলবাজ/অসৎ/মিথ্যুক/প্রতারক পলিটিশিয়ানরা ও তাদের দালাল মিডিয়াগুলো। শুধুমাত্র ৯/১১-এ টুইন টাওয়ারে হামলা, ৭/৭-এ লন্ডনে বোম ব্লাষ্ট, দায়েশ/আই.এস.আই.এস -এর মতো গরম টপিকগুলোকে হাতে নিন এবং কয়েক মাস রিসার্স করুন, দেখবেন এর সবগুলো ইসরাঈল, আমেরিকা ও ব্রিটেনের জায়োনিষ্ট রাজনীতিকদের নোংরা এজেন্ডার বাস্তব রূপ, যা তাদের নিজেদের প্লান-প্রোগ্রাম অনুপাতে সুদক্ষভাবে সম্পাদন করা হয়েছে ইসলামকে ‘সন্ত্রাসের ধর্ম’ এবং মুসলমানদেরকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্টি’ হিসেবে বিশ্বের চোখে তুলে ধরার জন্য। আর এই প্রোপাগান্ডাকে মানুষের মনমগজে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য বিশেষ দালালী দায়িত্ব পালন করে চলছে দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো। আমার প্রায় ১০ বছরের ক্ষুদ্র গবেষনা থেকে আমানতদারীর সাথে বলছি, আমার ব্যাক্তিগত মতে,  ইসরাঈল, আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ভারত’র বদ পলিটিশিয়ান, বদ ইন্টেলিজেন্স এজন্সি ও বদ মিডিয়া’কে সবচাইতে ধুর্ত-কৌশলী, মিথ্যুক ও প্রতারক বলে অনুভূত হয়েছে। এদের সাথে মুসলীম প্রধান দেশগুলোর মুনাফেক পলিটিশিয়ানরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটছে।  

(২) উপরের মূল হাদিসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এরকম মিথ্যা ও প্রতারনাপূর্ণ জামানাকে যুৎসই কায়দায় কাজে লাগানোর জন্য খল-নায়কের ভুমিকা পালন করতে আবির্ভূত হবে একটি জ্ঞানপাপী গোষ্ঠি, যাদেরকে রুওয়াইবাজাহ বলে ইশারা করা হয়েছে। তাদের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে হাদিসে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে:  الرَّجلُ التَّافِهُ في أمرِ العامَّةِ – সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে (কথা বলার) একদম অযোগ্য-অপদার্থ ব্যাক্তি।

ইমাম শাতেবী রহ. লিখেছেন-
قَالُوا : هُوَ الرَّجُلُ التَّافَةُ الحَقِيرُ يَنْطِقُ فِي أُمُورِ العَامَّةِ ، كَأَنَّهُ لَيْسَ بِأَهْلٍ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي أُمُورِ العَامَّةِ فَيَتَكَلَّمُ 
-আলেমগণ বলেছেন: الرَّجُلُ التَّافَةُ (অযোগ্য-অপদার্থ ব্যাক্তি) হল এমন  الحَقِيرُ (হাকীর/অপদার্থ) ব্যাক্তি যে সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয় নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু বাস্তবে সে এমন যে, সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয় নিয়ে কথা বলার উপযুক্ত সে নয়; তথাপি সে কথা বলবে। [আল-ই’তিসাম, শাতেবী-১২/৬৮১]

হাদিসে রুওয়াইবাজাহ‘র পরিচয়ে আরো বলা হয়েছে: مَنْ لا يُؤْبَهُ لَهُ -‘এমন ব্যাক্তি যার (বাস্তবে আল্লাহ’র দৃষ্টিতে) মূল্য নেই, (যে তার উপযুক্তই নয়)’। বলা হয়েছে: الْفُوَيْسِقُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ – ফাসেক (পাপাবিষ্ঠ ও মনুষ্যত্বে পচনধরা সব) ব্যাক্তিরা, যারা সর্বসাধারণ মানুষের বিষয়-আসয়ে কথা বলবে। বলা হয়েছে: الْوَضِيعُ مِنَ النَّاسِ -মানুষের মধ্যে ছোটলোক/তুচ্ছ-অথর্ব ব্যাক্তি’। বলা হয়েছে: سِفْلَةُ النَّاسِ -‘নিচুমানের (ছোটলোক) মানুষ’। 

আমার মতে, এখানে রুওয়াইবাজাহ ব্যাক্তিরা হল- এই শেষ জামানায় যাদেরকে পৃথিবীর মানুষ লিবারেল বুদ্ধিজীবী বা সুশীল  সমাজ বলে মনে করে বা মিডিয়ার জোরে সেই উপাধির মেডেল গলায় ধারন করে। জনগণের কী করা উচিৎ, কী না-করা উচিত, দেশ ও সমাজের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ, কোন সরকার কী ভুল করছে কী তার সমাধান, কোন রাজনৈতিক ইস্যু কোন কারণে উথলে উঠলো ও তা কি করে দমানো উচিত -তারা সর্বসাধারণ মানুষকে ইত্যকার হাজারো উপদেশ ও নসিহত খয়রাত করে থাকে মিডিয়ার টক-শো’তে, গোল-টেবিলে, শালিস ময়দানে বা মিটিং ও জনসভা গুলোতে। প্রত্যেকটি দেশেই এধরনের বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজ ঘরানার লোক পাবেন এবং মিডিয়া বলেন বা সভা-সমাবেশ বলেন -যেখানেই জনগণের সমস্যা সেখানেই তাদের মুখ ও কলম অবশ্যই সচল পরিলক্ষিত হবে। 

যেকোনো দেশের ইসলাম বিরোধী সরকার, পলিটিশিয়ান ও তাদের দালাল মিডিয়া গুলোকে দেখবেন এই রুওয়াইবাজাহ’দেরকে জনগণের সামনে জোরেসোরে কভারেজ দেয় এবং যখন যেভাবে প্রয়োজন হয় তাদের মতামতকে ফলাও করে প্রচার করে; উদ্দেশ্য থাকে এদেরকে দিয়ে বিশেষ করে ইসলামের বিপক্ষে কথা বলানো, ইসলামী শরীয়াহ’কে মানুষের চোখে সেকেলে (Backdated) বা অন্যায়-অবিচারমূলক মর্মে তুলে ধরা, ইসলামের ধারক বাহক আহলে-হক্ব ওলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুমিন মুসলমানদেরকে ছোট ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্লের পাত্র বানানো, মহা-পন্ডিত সেজে কুরআন-সুন্নাহ’র নতুন নতুন ব্যাখ্যার আবর্জনা ও ঝোপঝাড় উপস্থাপন করে সর্বসাধারণ মানুষের মনে আমাদের মুসলীম উম্মাহ’র সম্মানীত  মুহাদ্দেসীন, মুসতাহীদীন ও মুহাক্কেক আলেমগণের ব্যাখ্যা ও ফাতওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ জন্মিয়ে দেয়া ইত্যাদি। কাফের, মুশরেক, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফেক – সবধরনের   রুওয়াইবাজাহ আপনি পাবেন আমাদের এই শেষ জামানায়। 

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর লক্ষ-কোটি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হতে থাক অনন্তকাল, যিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় উম্মত’র জন্য এমন কোনো ক্ষতিকারক কিছু নেই যা বর্ণনা করতে বাদ রেখেছেন। তিনি এধরনের কাফের, মুশরেক, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফেক সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন ১৪০০ বছর আগে, যা দৃশ্য আজ আমরা অবলোকন করছি। 

ইমাম হাকেম তিরমিযী, ইমাম ত্বাবরাণী এবং ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. নিজ নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন-

শেষ জামানার বুদ্ধিজীবী, মিথ্যুক মিডিয়া ও পলিটিশিয়ান সম্পর্কে মহানবী সা.-এর ভবিষ্যত বাণী 
سيأتي على أمتي زمان تكثر فيه القراء ، وتقل الفقهاء ويقبض العلم ، ويكثر الهرج ” قالوا : وما الهرج يا رسول الله ؟ قال : ” القتل بينكم ، ثم يأتي بعد ذلك زمان يقرأ القرآن رجال لا يجاوز تراقيهم ، ثم يأتي من بعد ذلك زمان يجادل المنافق الكافر المشرك بالله المؤمن بمثل ما يقول “- اخرجه الحاكم فى المستدرك : ٤/ ٤٥٧ رقم ٨٤١٢ , كتاب الفتن والملاحم و قال: هذا حديث صحيح الإسناد ، ولم يخرجاه و وافقه الذهبى,  المعجم الأوسط للطبراني, رقم الحديث ٣٣٨٥; جامع بيان العلم وفضله لابن عبد البر: , رقم ١٠٤٣  ;  مجمع الزوائد – ١/١٢٩, الجامع الصغيرلالسيوطي: ٢ / ٥٧, هذا الحديث حسن

 ‘অতি শিঘ্রই আমার উম্মাতের উপর এমন জামানা আসবে, যখন (কুরআনের) পাঠক হবে প্রচুর, কিন্তু (কুরআনের গভীর জ্ঞনের ধারক) ফকিহ হবে অল্প, (আল্লাহ তাআলাে একে একে ফকিহ আলেমবৃন্দকে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিবেন এবং এভাবেই) ইলম উঠে যাবে, (ফলে সর্বক্ষেত্রে জাহেল ও মুর্খ মানুষদের ঢল নামবে) এবং (এর ক্রমধারায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি হবে যে,) হারাজ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল: হারাজ কী -ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি ﷺ বললেন: (শেস জামানায়) তোমাদের (মুসলমানদের) মধ্যে (সংঘটিত) খুনাখুনি (-যা হবে একটি বিশেষ ফিতনা)। সেই জামানার পর আমার উম্মতের মধ্যে থেকে এমনসব ব্যাক্তিদের আবির্ভাব হবে, যারা কুরআন-তো পড়বে, কিন্তু (কুরআনের মর্মার্থ জিহবা থেকে) তাদের (গলার) হলকূমও অতিক্রম করবে না, (ক্বলব ও মস্তিষ্কে ঢোকা-তো পরের কথা)। সেই জামানার পর এমন হবে যে, মুনাফেক, কাফের ও মুশরেক ব্যাক্তি মুমিনের সাথে আল্লাহ’র ব্যাপারে বাক-বিতন্ডা করবে -এমন উদাহরণ টেনে, যা সে বলে থাকে। [মুসতাদরাকে হাকীম- ৪/৫০৪, হাদিস ৮৪১২; আল-মু’জামুল আউসাত, তাবরাণী, হাদিস ৩২৭৭; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইবনু আব্দিল বার- ১০৪৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ১/১২৯; জামেউস সাগীর, সুয়ূতী- ২/৫৭]

হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-

 سيهلك من أمتي أهل الكتاب وأهل اللبن ” ، قال عقبة : ما أهل الكتاب يا رسول الله ؟ قال : ” قوم يتعلمون كتاب الله يجادلون به الذين آمنوا ” قال : فقلت : ما أهل اللبن يا رسول الله ؟ ” قال : ” قوم يتبعون الشهوات ويضيعون الصلوات ” . اخرجه الحاكم فى المستدرك: ٦/٣٧٤, و قال: هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه و وافقه الذهبى; و ابن جرير الطبري فى تفسيره: تحت سورة الغفير -٦٩ , و الرويانى فى المسند: ١/١٨٣ رقم ٢٣٩, ٢٤٠

কাফের মুনাফেক, মুশরেক, মুমিন, মুর্তি সংস্কৃতি বিতর্ক 

‘অতি শিঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে কিতাবধারী ও দুধধারী’রা বরবাদ হয়ে যাবে। হযরত উকবা রা. জিজ্ঞেস করলেন: কিতাবধারী কে -ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি ﷺ বললেন: ওই সকল (মুনাফেক) লোক, যারা আল্লাহ’র কিতাব (আল-কুরআন)-কে শিখবে এবং তা দিয়ে বাকবিতন্ডা/ঝগড়াবিবাদ করবে তাদের সাথে যারা ইমানদার। হযরত উকবা রা. বলেন: আমি  জিজ্ঞেস করলাম: দুধধারী কি -ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি ﷺ বললেন: ওইসমস্ত লোক যারা কুপ্রবৃত্তির পিছে পিছে চলবে এবং নামাযকে নষ্ট ও বরবাদ করে ফেলবে’। [মুসতাদরাকে হাকিম- ৬/৩৭৪; মুসনাদে রুইয়ানী– ১/১৮৩, হাদিস ২৩৯, ২৪০; তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর- ১৮/২৯৬]

ইমাম ত্বাবরাণী রহ. হযরত উকবা বিন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেছে যে,  রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-
 أتخوف على أمتي اثنتين: يتبعون الأرياف والشهوات، ويتركون الصلاة والقرآن يتعلمه المنافقون يجادلون به أهل العلم. اخرجه طبراني ,كنز العمال: ١١/١١٦ رقم ٣٠٨٤٢ -
‘আমি আমার উম্মতের উপর দুটি বিষয় নিয়ে ভয় করি: (১) তারা গ্রামকে শহরে রুপান্তর (করার পিছনে পড়ে যাবে) ও নফসানী-খাহেশাতের অনুগত্য করবে এবং নামায ও কুরআন’কে ছেড়ে দিবে। (তখন মোক্ষম সুযোগ দেখে মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে) মুনাফেকরা কুরআনের ইলম শিখে নিবে (এবং) তা দিয়ে আহলে-ইলম (হক্কানী আলেম)গণের সাথে বাকবিন্ডা করবে’। 
[ত্বাবরাণী: কাঞ্জুল উম্মাল– ৫/৬৪৫, হাদিস ৩০৮৪৬]

এদের যদি উদাহরণ চান, তাহলে বোঝার সুবিধার্থে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করছি মাত্র। বুদ্ধি-সুদ্দি থাকলে বাকিদেরকেও চিনে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। যেমন: বাংলাদেশের ‘শাহরিয়ার কবির’, ভারতের ‘তারিক ফাতাহ’, আমেরিকার ‘উইলিয়াম বিল ম্যাহের’  (William Bill Maher), যুক্তরাজ্যের ইমাম তাউহিদী প্রমূখের নাম বিশেষভাবে নিতে পারেন।

এরা আসলে সমাজের হাতুরে ডাক্তার, যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট পৃথিবীতে ঘটিত যাবতীয় সমস্যা ও ফিতনা-ফাসাদের প্রকৃত কারণ ও সমাধান সম্পর্কে অজ্ঞ হয়েও সমাজ সংষ্কারের নামে যখন যা মনে করছে তা-ই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। আর অপদার্থ রোগীরাও এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের প্রেসকিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন/ব্যবহার করে হাহাকার তুলছে -মরে গেলাম..অামাদেরকে বাঁচান!!!

Post a Comment

0 Comments