Recent Tube

কোরআনে ঘোষিত বিজয় দিবসের ৩ দফা এবং সরকারের ৪ দফা কর্মসূচি;

কোরআনে ঘোষিত বিজয় দিবসের ৩ দফা এবং সরকারের ৪ দফা কর্মসূচি; 
 ==========================

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় একটি দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে স্বাধীন-স্বকীয় জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জন আমাদের মহান বিজয়। গৌরবদীপ্ত ও দুর্বিনীত সাহসী জাতি হিসেবে আমাদের কাছে ১৬ ডিসেম্বর বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বছরের একটি মাত্র দিন হলেও জাতির মনে এক ভিন্নতর ভঙ্গী ও অনুভূতি শব্দায়মান হয়ে ওঠে। আলোকোজ্জ্বল এ দিনটি আমাদের সামগ্রিক জীবন ও ইতিহাসে এবং তার সত্তা ও স্বরূপকে পরিব্যক্ত ও পরিধৃত করে বিরাজ করছে বিস্ময়কর অভিভবে। 

ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় দিবস উদযাপন ও সরকারের দায়িত্বঃ 
-----------------------------------------------------
পবিত্র কোরআনুল কারিমের দু’টি সূরায় বিজয় দিবসের ও বিভিন্ন সূরায় সরকার, আলেম ও জনগণের দায়িত্ব কর্মসূচি বর্ণনা করা হয়েছে। সূরাদ্বয়ের একটির নাম সুরা ফাতাহ, অপরটির নাম সুরা নাসর। ‘ফাতাহ’ অর্থ বিজয়, আর ‘নাছর’ অর্থ সাহায্য। 

দেশ-স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে দেশ ও মাটির গাদ্দারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ দখলমুক্ত করার নাম বিজয়। আর বিজয় অর্জনের পেছনে অলৌকিক শক্তির নাম হচ্ছে নাসর বা সাহায্য। বিজয় অর্জন হলে কি করতে হবে তা সুরা নাসর থেকে বুঝার চেষ্টা করি। 

###আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন সূরা নাছরে এরশাদ করেনঃ 
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ [١١٠:١] وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا [١١٠:٢] فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا [١١٠:٣]
"১. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, ২. এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। ৩. তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।" (১১০ নাছরঃ ১-৩)
When the victory of Allah has come and the conquest, And you see the people entering into the religion of Allah in multitudes, Then exalt [Him] with praise of your Lord and ask forgiveness of Him. Indeed, He is ever Accepting of repentance. (110 Nasr: 1-3)

মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন ৩ দফা কর্মসুচি এই সূরায় ৩ নাম্বার আয়াতে ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হলঃ ১. ফাসাব্বিহ, (আল্লাহর তাসবিহ পাঠ তথা পবিত্রতা বর্ণনা করা) পাঠ করা। ২. বিহামদী রাব্বিক, (আল্লাহর হামদ তথা শুকরিয়া) আদায় করা। ৩. ওয়াসতাগফীর, (যুদ্ধের সময় ভুলভ্রান্তি তথা সীমালংঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া) প্রার্থনা করা।

স্বাধীনতা এবং বিজয় একমাত্র মহান করুণাময় আল্লাহর দান। আল্লাহর অশেষ করুণার বদৌলতেই আমরা দেশ বিজয় করতে পেরেছি। তাই শুকরিয়াও করতে হবে তারই। 

অতএব ৩ দফা কর্মসুচি পালনের মাধ্যমেই আমাদেরকে বিজয়ের আনন্দ করতে হবে। বিজয়ের দিন মহান রবের কাছে সেজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে শুকরিয়া আদায় করা নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। বিজয়ের দিন শুকরিয়া নামাজ পড়া নবীজীর সুন্নাত। 

হাদিসে বিজয় উদযাপনে যেসব কর্মসূচির উল্লেখ পাওয়া যায় তা হল ৮ রাকাত শোকরিয়া নামাজ আদায় করা। কেননা নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন শোকরিয়া হিসেবে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন (জাদুল মায়াদ, আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি)। নবীজির দেখাদেখি অনেক সাহাবিও তাঁর অনুকরণে ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। ১০ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মাদ (সাঃ) আনন্দ উদযাপন করেছেন। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন, যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে, তারা যত অত্যাচার-নির্যাতনকারীই হোক না কেন তারাও নিরাপদ। এই ছিল প্রিয়নবীর মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।

###সরকারের ৪ দফা দায়িত্ব বা ৪ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে-
মহান রাব্বুল আলামিন সুরা হজ্বের ৪১ নাম্বার আয়াতে এরশাদ করেনঃ 
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ [٢٢:٤١] 
"তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।" (২২ সূরা হজ্বঃ ৪১)
[And they are] those who, if We give them authority in the land, establish prayer and give zakah and enjoin what is right and forbid what is wrong. And to Allah belongs the outcome of [all] matters. (22 Hajj: 41)

###সরকারের ৪ দফা দায়িত্ব বা ৪ দফা কর্মসূচীঃ ১. তারা সালাত কায়েম করবে, ২. যাকাত দেবে এবং ৩. সৎকাজের আদেশ দেবে ও ৪. অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।
সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এই ৪ দফা কর্মসূচি সংবিধানে আইন করে তা রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে আল্লাহ্‌র আইন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

###মুসলমানদের প্রতিটি রক্তকণিকায়ই দেশপ্রেমের শিহরণ থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশপ্রেমের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হল, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, 
باب فَضْلِ الرِّبَاطِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ‏‏
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ بَهْرَامَ الدَّارِمِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، - يَعْنِي ابْنَ سَعْدٍ - عَنْ أَيُّوبَ بْنِ مُوسَى، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ شُرَحْبِيلَ بْنِ السَّمِطِ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ ‏"‏ ‏.‏
"আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু বাহরাম দারেমী (রহঃ) ... সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিযক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে।"

It has been narrated on the authority of Salman who said:
I heard the Messenger of Allah (ﷺ) say: Keeping watch for a day and a night is better (in point of the reward) than fasting for a whole month and standing in prayer every night. If a person dies (while performing this duty), his (meritorious) activity will continue and he will go on receiving his reward for it perpetually and will be saved from the torture of the grave.
[হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih), (গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩৪/ রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন (كتاب الإمارة) | হাদিস নাম্বারঃ ৪৭৮৫)]

-- মোঃ মিজানুর রহমান

Post a Comment

0 Comments