Recent Tube

জিন্নাহ-নামা ; মীর সালমান শামিল।

 
 জিন্না-নামা;

০১. কায়েদে আজম/ কাজী নজরুল ইসলাম,
___________________

 “মুসলিম লীগের আন্দোলন যেরূপ গদাই-লস্করী চালে চলছিল, তাতে আমি আমার অন্তরে কোন বিপুল সম্ভাবনার আশার আলোক দেখতে পাইনি। হঠাৎ লীগ নেতা কায়েদে আজম যেদিন পাকিস্তানের কথা তুলে হুংকার দিয়ে উঠলেন -“আমরা ব্রিটিশ ও হিন্দু ফ্রন্টে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করব” সেদিন আমি উল্লাসে চীৎকার করে বলেছিলাম –হাঁ, এতোদিনে একজন ‘সিপাহসালার’ সেনাপতি এলেন। আমার তেজের তলোয়ার তখন ঝলমল করে উঠলো।”

    —শাহেদ আলী সংকলিত, ১৯৮৯;

 ০২. জিন্নাহ/ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক 
 ___________________
 ...মিঃ ল্যাস্কি, আই ডু নট উইশ টু বি ম্যানশনড উইথ মিঃ নেহেরু। আই  অ্যাম এ মেম্বার অব মুসলিম লীগ এন্ড এ ফলোয়ার অব মিঃ জিন্নাহ।

 ...মিঃ জিন্নাহ ত বেঙ্গল আপনেদের দিয়া দিছিলেন, আপনেগো চিত্তে সুখ অইলো না বেঙ্গল পার্টিশন করলেন। 

 ...লর্ড রীডিং এর মৃত্যুর পর তার পুত্র তার একটা বায়োগ্রাফি প্রকাশ করেন। তিনি যতদিন ইন্ডিয়াতে ছিলেন প্রতি সপ্তাহে তার পুত্রের কাছে একটা কইর‍্যা চিঠি লিখতেন। ভারতের যেসকল ডিগনিটরির লগে তার দেখা অইত, তাগো সম্পর্কে লর্ড রীডিং তার প্রাইমারি ধারনাটা প্রকাশ করতেন। মিঃ গান্ধীর লগে যখন রীডিং এর দেখা অইছে, লর্ড রীডিং তার সম্পর্কে লিখছেন, এই লোকের সঙ্গে আমাগো ব্যবসা জমবে ভালা। একইভাবে যত ইন্ডিয়ান লিডারের লগে দেখা অইছে  সকলকে একটা ক্যাটেগরিতে ফেলছেন কিন্তু মিঃ জিন্নাহর সঙ্গে তার দেখা হওনের পরের চিঠিতে এক্কেরে সুর পাল্টাইয়া গেল। এই লোক এক্কেরে বেয়ারা। উই উইল হ্যাভ ট্রাবল ইন হ্যান্ডলিং মিঃ জিন্নাহ। আমি বললাম, আপনি সব সময় মিঃ জিন্নাহকে বেশি বেশি নাম্বার দিচ্ছেন। জিন্নাহ্ সাহেব ওবস্টিনেট ছিলেন সত্য, কিন্তু আপনি তার প্রতি দুর্বল। স্যার হাসলেন, আমি ত আর বানাইয়া বলবার লাগছি না।

 — যদ্যপি আমার গুরু/ আহমেদ ছফা, পৃ: ৮৫, ৮৩, ৮৮-৮৯

০৩. কায়েদে আযম জিন্দাবাদ / মোতাহের হোসেন চৌধুরী
______________________________________
সত্যি, কায়েদে আযমের কাছে আমাদের ঋণের অন্ত নেই।  আমরা মুসলমানরা কিছুতেই তাকে ভুলতে পারবাে না। আমরা যে আজ নিঃশংক জীবন যাপন করছি, সে তাে তার জন্যই। নইলে হিন্দুর ভয়ে আমাদের সংকুচিত থাকতে হত, আর সংকোচন দুমড়ে নষ্ট করে দিত আমাদের আভ্যন্তর শক্তিকে। আমরা হতােদ্যম হয়ে পড়তুম। কোনাে প্রকারে জীবনধারণ করতে সক্ষম হলেও, আমাদের সেই আনন্দবিহীন জীবনে লাগতাে না সার্থকতার ছোঁয়া। তাই কায়েদে আযমের গুণকীর্তনে পঞ্চমুখ হতেই হয়। ওটা মােটেই বাড়াবাড়ি নয়।

 - মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচনাবলী 
 (প্রথম খন্ড) / সম্পাদনা : সৈয়দ আবুল মকসুদ ॥ [ বাংলা একাডেমী - জুন, ১৯৯৫ । পৃ: ৫০৩-৫১২ ]

০৪. জিন্নাহ এবং শেখ মুজিব/ আহমদ ছফা 
____________________________
...শেখ মুজিব ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য এবং গুরু-শিষ্য দু’জনেই ছিলেন জিন্নাহের ভক্ত। আমার শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক সেদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, তার কাছে শেখ মুজিবের কিছু ছবি আছে, সেই ছবিতে জিন্নাহ মারা যাওয়ার পর শেখ মুজিব হাউমাউ করে কাঁদছেন।

 — বাংলাবাজার পত্রিকা, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ইং

০৫. ইতিহাস / আবু হেনা মােস্তফা কামাল 
_______________________
তােমাকে জেনেছি আকাশের চেয়ে বড় 
সাগরের চেয়ে অনেক মহত্তর 
ক্লান্ত চোখের পাতায় নতুন আলাের ঝড় তুমি এনে দিলে। নতুন জোয়ার ছুঁয়ে গেল বন্দরে।

 - মাহে-নও, ডিসেম্বর ১৯৫৬ [মহিউদ্দিন আহমেদ/ আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব। প্রথমা, পৃঃ-১৪৯ থেকে উদ্বৃত]

০৬. জিন্নাহ-চরিত্রের বৈশিষ্ট্য / মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী। 
______________________________________
বৃদ্ধ বয়সে আজন্ম পােষিত আদর্শকে এভাবে পরিত্যাগ করতে চির নবীনের অভিসারী একটা প্রবল মনের প্রয়ােজন হয়। তা তার ছিল। কিন্তু তাঁর অপূর্বত্ব এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ তরুণ বয়স থেকেই দেশ, জাতি ও সমাজের মুক্তির জন্যে সাধনা করেছিলেন। সারাটি জীবন এই সাধনায় কেটে গেলাে, এলাে বার্ধক্য। জরা এসে জাপটে ধরলাে তাঁর দেহকে। কিন্তু তিনি যখন অন্তরে উপলব্ধি করলেন যে, তাঁর জীবনের মহাব্রত এক নতুন কঠোরতায় সমাবৃত হয়ে তখনাে তার জন্যে অপেক্ষা করছে, তিনি দেহের জরাকে শিখায়িত মন দিয়ে জয় করেন। দুর্ধর্ষ সংগ্রামে নেমে পড়লেন দুর্জয় বিশ্বাস নিয়ে। একজন বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত, স্বাস্থ্যহীন মানুষ স্বভাবতঃই শান্তি চায়, বিশ্রাম চায়, নিশ্চিন্ত অবসর চায়; কিন্তু মহান কর্তব্য অসমাপ্ত দেখে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ কায়েদে আজমের গুরুভার দায়িত্ব এই বয়স এবং শরীরের এই অবস্থায় স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলেন। এরূপ সাহসের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর মেলে কই?

 — মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচনাবলী 
(দ্বিতীয় খন্ড) / সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ ॥ [ বাংলা একাডেমী - জুন, ১৯৯২ । পৃ: ১৭৪-১৭৬ ]

০৭. জিন্নার প্রতি / সুকান্ত ভট্টাচার্য
‌‌___________________
যুযুধান দেশ কে আজ নির্বিরােধ! 
কুচক্রান্ত ছড়ায় রাত্রিচারী 
মিথ্যার মদে ভুলবে না নির্বোধ 
দিনরাত্রি যে বিদ্যুৎ সঞ্চারী।

তপস্যা শেষ, ভাঙ্গো আজ মৌনতা, 
দুর্গের দ্বার খােলো বিনিদ্র দ্বারী, 
শত্রুরা মূঢ়; সম্ভাষে স্বাধীনতা, 
আমরা জয়ের সাগরে জমাবাে পাড়ি, 
আজকে এ-দেশ শুনেছে যে ব্রত কথা 
সােনার খাঁচার সঙ্গে তাইতাে আড়ি। 

— উত্তরাধিকার,  শ্রাবণ-আশ্বিন ১৩৯১

০৮. নিশান বরদার/ সিকান্দার আবু জাফর
_________________________
তোমার একান্ত স্বপ্ন সাধনার মূল্যে পাওয়া
আজাদীর পরম সম্মান।
এ দিনের ক্ষয় নেই তাই
এ দিনের অধিবাসী আমরা সবাই,
জাতির মহান পিতা: তোমার স্মরণে আজ
সালাম জানাই।

— মাহে-নও, সেপ্টেম্বর ১৯৫৫ [মহিউদ্দিন আহমেদ/ আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব। প্রথমা, পৃঃ-১৪৯ থেকে উদ্বৃত]

০৯. কায়েদে আজমকে/ ফজল শাহাবুদ্দীন
 _________________________
 মাঝে মাঝে দেখিয়াছি প্রভাতের আলােক রঙীন। 
 তবু সেই ঝড় এলাে-মেলাে সেই রাত্রির হাওয়ায়। 
 তুমি এলে হে নাবিক, প্রভাতের পানপাত্র হাতে 
 আঁধার মুখর হলাে জীবনের প্রদীপ্ত শপথে 
 রাত্রির বন্দর থেকে মৌসুমীর হাসিন উষায়।

— মাহে-নও, ডিসেম্বর ১৯৫৬ [মহিউদ্দিন আহমেদ/ আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব। প্রথমা, পৃঃ-১৪৯ থেকে উদ্বৃত]

১০. স্রষ্টার প্রতি (কায়েদে আজমকে)/ মযহারুল ইসলাম
______________________
সহসা আলোর পরশ লাগলে
প্রাণে প্রাণে এক চেতনা জাগে আঁধার দুয়ার খুলে গেল সম্মুখে
কে তুমি হে নব-পথ-সন্ধানী আলােকদ্রষ্টা?

 — মহিউদ্দিন আহমেদ/ আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব। প্রথমা, পৃঃ-১৫০ 

১১. পাকিস্তান ঘোষণা/ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
  ____________________________
  আজ আমি পূর্ণ ঈমানদারী ও সততার সঙ্গে ঘােষণা করছিঃ বাংলার প্রতিটি মুসলমান আজ লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত। আমরা পাকিস্তান চাই-এ প্রশ্নের কোনাে অবস্থাতেই আপােষ নেই। এ পথে যেই বাধা দিতে আসবে, মুসলিম জনতাই তাকে সরিয়ে দেবে। পাকিস্তানের জন্যে তারা জান কবুল করতেও প্রস্তুত।

  বাঙলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত আসার পথে এমন কতগুলাে প্রদেশ অতিক্রম করতে হয়েছে, যে সব এলাকায় মুসলমানরা সংখ্যালঘু। আমি তাদের মধ্যেও আজাদীর প্রাণ-চাঞ্চল্য দেখেছি। তারা আমাকে বলেছেনঃ তোমরা আমাদেরকে আমাদের ভাগ্যের ওপরই ছেড়ে দাও। তবু নিজ এলাকায় তােমরা পাকিস্তান কায়েম করাে। আমাদের ভাইয়েরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করবে, একটি আজাদ দেশের বাসিন্দা হবে এতেই আমাদের গৌরব। সত্য বলতে কি, মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশের মুসলমানরাই আজ আমাদের আজাদীর পথ দেখিয়েছে, আজাদীর পথে উৎসাহ যুগিয়েছে। তাদের এই সুদৃঢ় সংকল্পের প্রতি আমাদের অভিনন্দন। এ তাে গেল সংখ্যালঘু প্রদেশের মুসলমানদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কথা। কিন্তু যে সব এলাকায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা পাকিস্তান সংগ্রামে নিজেদের জানমাল সব কিছুই কোরবানী দিতে, সব রকম দুর্যোগ-বিপদ হাসিমুখে বরদাশত করতে আজ প্রস্তুত হয়েছেন। পূর্ণ ঈমানদারি আর সততার সঙ্গেই আজ আমি ঘােষণা করছিঃ বাংলার প্রতিটি মুসলমান আজ প্রস্তুত। আমাদের আজকের একমাত্র দাবি, একমাত্র কাম্য পাকিস্তান। আমাদের পথের প্রতিবন্ধক মুসলিম জনতাই সরিয়ে দেবে। আমরা আজ জান কোরবানে প্রস্তুত।

  কায়েদে আজম, আপনি আমাদের পরীক্ষা নিন। আমরা বাংলার মুসলমান পাকিস্তান হাসিলের জন্যে, অভীষ্ট লাভের জন্যে আপনার নির্দেশ মােতাবেক যে কোন ধরনের কোরবানীর জন্যে আজ প্রস্তুত।

পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

 — গনতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (স্মারক গ্রন্থ), [ঢাকা, সিটি পাবলিকেশন্স- ডিসেম্বর ১৯৯৮। পৃঃ ১২২-১২৪। প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ১৯৬৪]

১২. ছােটদের কায়েদে আযম/ হাসান হাফিজুর রহমান । 
   _________________________________

 তিনি গড়ে তুলেছিলেন নতুন এক দেশ, হয়েছিলেন বিরাট এক জাতির মুকুটহীন রাজা। রাজার ছেলে তিনি নন, কিন্তু রাজা বাদশাদের চেয়েও অনেক। বড় কাজ তিনি করে গেছেন। অসম্ভবকে করে গেছেন সম্ভব। ঘর-হারা জাতিকে।
দিয়ে গেছেন চিরকালের অটুট এক ঘর।

১৩. করাে না কো সংশয় / বেগম সুফিয়া কামাল
    _______________________________

...কায়দে আজম ! তোমার আসন আজিও রয়েছে খালি 
তুমি এসেছিলে তমসা-নিশীথে প্রাণের প্রদীপ জ্বালি। 
তােমার সে পথ আঁধির ধূলিতে যেন নাহি ঢেকে যায় 
তােমার তরণী কূলে এসে যেন নাহি ডুবে ঝঞায়। 
হে আমীর-উল বহর! তােমার তরণী ভিড়াও কূলে, 
নতুন মাটির এ চর তােমার ভরুক ফসলে-ফুলে, 
তােমার দেহের নির্মোক ছাড়ি সত্য অমর প্রাণ 
অবিনশ্বর দ্যুতিময় হয়ে রয়েছে অম্লান! 
এ আশিষ দানাে, উধ্বে রহিয়া তুমি —
সত্য সেবায়, সাম্যে পূর্ণ হােক এ পাক ভূমি।

  মাহে নও / ডিসেম্বর '৫৭ [মহিউদ্দিন আহমেদ/ আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব। প্রথমা, পৃঃ-১৫০ থেকে উদ্বৃত]

 "অল্প কিছু ব্যক্তি ইতিহাসের গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে। খুবই কম মানুষ বিশ্বের মানচিত্র পরিবর্তন করে। এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুস্কর যাকে একটি জাতি-রাষ্ট্র তৈরির কৃতিত্ব দেওয়া যায়।  মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তিনটিই করেছিলেন"। 

 - স্ট্যানলি উলপার্ট,
অধ্যাপক এবং ইতিহাসবেত্তা, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। 

 আজ কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৪৪তম জন্ম বার্ষীকি।।

Post a Comment

0 Comments