Recent Tube

ইসলামের প্রত্যেক বিধিবিধান কত বাস্তবিক, তাৎপর্যপূর্ণ। ; কুতুব শাহ।

ইসলামের প্রত্যেক বিধিবিধান কত বাস্তবিক, তাৎপর্যপূর্ণ। 
فَأَسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ 
‘যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।

কী চমৎকার নির্দেশনা। ইসলামের প্রত্যেক বিধিবিধান কত বাস্তবিক, তাৎপর্যপূর্ণ। অজানা বিষয়কে জানার জন্য বিশেষজ্ঞকে প্রশ্ন করো, জেনে নাও। এরপর আমল করো তখনই জীবন সুন্দর, নান্দনিক, নিরাপদ হবে, ইবাদত বিশুদ্ধ হবে, ইহকাল পরকাল পারফেক্ট হবে। অজানা বিষয়ে আমল মানে অন্ধকার পথে চলা যেখানে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল, জীবনের ভয়ানক ঝুঁকি। তাই অভিজ্ঞদের প্রশ্ন করার মাধ্যনে জেনে নেয়াই উত্তম।  চিকিৎসা বিষয় প্রশ্ন করতে হবে অভিজ্ঞ ডাক্তারকে, আইন বিষয়ক প্রশ্ন উকিল ব্যারিস্টারকে অনুরুপ শরঈয়ী বিষয়ে প্রশ্ন করতে হবে বিজ্ঞ আলেমদের। কিন্তু মূর্তি ইস্যুতে ফতোয়া দিতে দেখলাম তুরিণ আফরোজ, ইনু, মেনন, তাফস-সহ অনেককে! এটা জাহেলিয়্যার চূড়ান্ত নমুনা! অজ্ঞতার শেষ ধাপ! বাড়াবাড়ির শেষ সীমা!

✍️ আজকে এক ট্রল মুফতীর খোঁচাখোঁচি, চুল্কানি দেখলাম। ভাবটা এমন আমিই সব জানি আযহারী যা বলেন তাই ভুল! এটাও অজ্ঞতার নগ্ন প্রদর্শন নিজের অযোগতার বহিঃপ্রকাশ। আমি আযহারীর সি ফুড বিষয়ক আলোচনাটি শুনেছি। আমার কাছে বিষয়টি খুব সুচারু, প্রাসাঙ্গিল এবং দালিলিক মনে হয়েছে। সি ফুডের ব্যাপারে ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহঃ) এর মত অন্তত রিপিট দুইবার উল্লেখ করে অন্যান্য ফোকাহাদের মত এবং কোরান হাদীস থেকে কিছু দলীল আর মূল নীতি আলোচনা করেছেন। বাডিয়ে বল্লাম? আপনি তার পুরা ভিডিওটা শুনেন এবং একই টাইপের প্রশ্নের জবাব ডঃ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, শায়খ আহমদুল্লাহ, মুফতী কাজী ইব্রাহীমের মতামত শুনেন। ( কমেন্টে দেব)

✍️ সাধারণ পাঠকের জন্য বিষয়টি আরেকটু সংক্ষেপে বলছি। সি ফুডের ব্যাপারে ইমাম আযম আবু হানিফা (রহঃ) এর মত বেশ সহজ এবং সুন্দর। অর্থাৎ হানাফীদের মত হল, মাছ হিসাবে বিবেচিত, মাছ হিসাবে গণ্য এমন সব সামুদ্রিক প্রাণী বৈধ। খুব সহজ না? 

এই ক্ষেত্রে ইমাম শাফেঈয়ী (রাহঃ)  এর মত ভিন্ন। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং হারাম ঘোষিত প্রাণী ব্যতীত সমস্ত সকল প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল। সুতরাং এ দৃষ্টিতে তিমি মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামকু, ঝিকুন ইত্যাদি সবই হালাল প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। আর ব্যাঙ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম। কারণ ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। কুমিরের ব্যাপারটি দ্বিমত পূর্ণ। জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমদের মতে তা হারাম।

যেসব ওলামা, ফোকাহা সর্বপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল বলেছেন এই ব্যাপারে কুরআন হাদিসের বক্তব্য: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
..أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে”। (সূরা মায়িদাহ: ৯৬)

 আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:
قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ
“আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ।” (সূরা আনআম: ৫)

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:« هو الطهور ماؤه الحل ميتته »“নদী বা সাগরের পানি পবিত্র, এবং পানিতে বসবাসকারী মৃত প্রাণীও খাওয়া বৈধ।” (তিরমিযী ৬৯, আবু দাউদ ৮৩, হাদিসটি আলবানী রহ. ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে সহীহ বলেছেন: ১/২১)  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী শুরাইহ বলেন; পানিতে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী খাওয়া বৈধ।” (বুখারী ৫/২০৯১)  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন:
مَا أَحَلَّ اللهُ فِىْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا. ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ (وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا)-
‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না’ (মারিয়াম ১৯/৬৪)।[ হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৫৬।]

 তাছাড়া ইসলামের একটি অন্যতম মূলনীতি হল, দুনিয়াবি সকল বস্তুই বৈধ যতক্ষণ না ইসলামে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়। আর কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাওয়ার ব্যাপারে কুরআন,সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় না। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হল যে, উপরোক্ত সামুদ্রিক প্রাণী বৈধতার ব্যাপারে কোন বাধা নেই। এগুলোকে মাকরূহ বলাও প্রমাণ সাপেক্ষ নয়। তবে কারও যদি তা খেতে রুচি না হয় তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এগুলোকে হারাম বা মাকরূহ বলার কোন যৗক্তিকতা নাই।

 ব্যাঙ খাওয়া হারামঃ যে সকল ব্যাঙ পানি ছাড়া বাঁচে না সেগুলোও খাওয়া হারাম কেননা হাদিসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ ব্যাপারে হাদিস হল: আব্দুর রহমান ইবনে উসমান রা. থেকে বর্ণিত:
أَنَّ طَبِيباً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – عَنِ الضِّفْدَعِ يَجْعَلُهَا فِي دَوَاءٍ، فَنَهَى عَنْ قَتْلِهَا. أَخْرَجَهُ أَحْمَدُ، وَصَحَّحَهُ الْحَاكِمُ في صحيح الجامع 6970 .হাদিস
“কোন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? তিনি ওটা হত্যা করতে নিষেধ করলেন।” (আহমাদ ১৫৩৩০, নাসাঈ ৪৩৫৫, আবূ দাউদ ৩৮৭১, দারেমী ১৯৯৮, হাকিম ৪র্খ খণ্ড ৪১১ পৃষ্ঠা। সহীহুল জামে, হা/৬৯৭০)
আর শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হত।

 কুমির: কুমিরের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমাম মালেক ছাড়া অন্যান্য ইমামগণ যেমন ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল তথা অধিকাংশ ইমামদের মতে কুমির খাওয়া হারাম। কারণ এটি উভচর প্রাণী। অর্থাৎ কুমির যেমন পানিতে বসবাস করে স্থল ও বন-জঙ্গলেও বসবাস করে। সেই সাথে এটি বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী।আর হাদিসে বড় নড় নখ বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আবু হুরারা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ، فَأَكْلُهُ حَرَامٌ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
“লম্বা দন্ত বিশিষ্ট সকল হিংস্র পশুর গোশত খাওয়া হারাম।” (সহীহ মুসলিম) 

✍️ শেষ কথাঃ মাছ হিসাবে স্বীকৃতি বিবেচিত, পরিচিত এমন সামুদ্রিক প্রাণী হানাফী মতানুসারে আমরা খেতে পারি যা খুব সহজ সূত্র। অন্যান্য কিছু প্রাণী যা বিষাক্ত প্রমাণিত নয় অথবা খেতে ঘৃণাবোধ হয়না তা অন্যকেউ খেতে চাইলে তাড়াহুড়ো করে হারাম ফতোয়া দিবেন না তবে নিজের অপছন্দ হলে খাবেন না। ব্যাস।

Post a Comment

0 Comments