Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৪৩ ;, জিয়াউল হক।

       দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৪৩;
  

অদ্ভূত স্বপ্নের এরকম ব্যাখা যখন দিচ্ছেন কিশোরী দাসী বারাকাহ, তখন কিন্তু আমিনা নিজেও জানতেন না যে, তিনি অন্তস্বত্তা হয়েছেন। তবে কিছুুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলেন যে, সত্যি সত্যিই তিনি গর্ভবতী! এ ঘটনাও কিশোরি বারাকা’র উপস্থিত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক। 

এভাবে নবীজীবনের শুরু থেকেই, এমনকি, পৃথিবীতে তাঁর আগমণেরও পূর্ব থেকেই তাঁকে নিয়ে আলোচনা, দিনে দিনে মায়ের পেটে তাঁর বেড়ে উঠাকালীন মায়ের সেবা ও  যত্ন, জন্মমহুর্তে খোদ সেই শিশু মুহাম্মদেরও  সেবাযত্নে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আহা কি সৌভাগ্যের  অধিকারিণীই না ছিলেন এই নারী!

প্রসবকালীন সময়েও তিনিই ছিলেন আমিনার পাশে। জন্মলগ্নে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির গায়ে সর্বপ্রথম যাঁর স্পর্শ পড়েছে, তিনিই হলেন এই নারী। তিনিই তাঁকে সর্বপ্রথম দেখেন, স্পর্শ করেন, কোলে তুলে নেন! ভূমিষ্ঠ শিশুটির অপার সৌন্দর্যে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন; ‘চাঁদের চেয়েও শিশুটি সুন্দর’ বলে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। 

মা আমিনা তাঁর ইন্তেকালের আগে যখন বুঝতে পারলেন যে তাঁর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, তিনি বারাকাহকে অনুরোধ করেছিলেন; তিনি যেন তাঁর সন্তানকে দেখে শুনে রাখেন। বারাকাহ তাঁর সেই অন্তিম ইচ্ছাটুকু সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে পুরণ ককরতে গিয়ে নিজের জীবনের সকল সূখ শান্তি আর সম্ভাবনাকে পায়ে দলেছেন। 

আব্দুল মুত্তালিবেরও বয়স হয়ে গিয়েছিল। তিনি আশি বছরের বৃদ্ধ। মৃত্যুর আগে এই কিশোরী মেয়েটিকে কোথাও বিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বারাকাহ রাজি হননি। শিশু মুহাম্মদকে ছেড়ে কোথাও যেতে চান নি, কারণ মৃত্যুকালে তিনি শিশুর মা আমিনাকে কথা দিয়েছেন। বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবও তাঁকে বিয়েতে রাজি করাতে ব্যর্থ হন।

বাবা-মা দু'জনকেই হারিয়ে মাত্র ছয় বছরের শিশুর নতুন আশ্রস্থল ছিলেন তাঁরই দাদা; বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিব। পৈত্রিক সম্পত্তিপ্রাপ্তির সুত্রে এই বারাকাহ নাম্নী দাসীর নতুন মনিব হলেন এই শিশু মুহাম্মদ। উভয়েই থাকতে শুরু করলেন বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবের বাড়িতে। আর আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তেকালের পরে তিনি শিশু মুহাম্মদ’সহ এসে উঠেন আবু তালিবের বাড়িতে, তাঁর তত্তাবধানে।

আবার দেখুন মাত্র আটদিনের শিশু যখন হালিমা সাদিয়ার কোলে চড়ে সেই তায়েফে গেলেন, তখন বিধবা আমিনা আক্ষরিক অর্থেই নি:সঙ্গ। এই দু:খিনী নারীর সেই কঠিন মহুর্তগুলোতে উম্মে আইমান তাঁর পাশে থেকেছেন সার্বক্ষণিক সাথী হয়ে। তাঁর উপস্থিতি মা আমিনার মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য পরম সহায়ক হয়েছিল, সেটা নিশ্চিন্তেই বলা চলে।

আব্দুল মুত্তালিবের বাড়িতে, তাঁরই তত্তবধানে থাকাবস্থায় এই বৃদ্ধ শিশু মুহাম্মদের ব্যক্তিত্বের নানা দিক গভীরভাবে খেয়াল করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ শিশু বিশেষ কেউ একজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন। তাই তিনি নিজ সন্তানদের যেমন শিশুটির প্রতি বিেিশষ যতœবান হতে বলতেন তেমনি উম্মে আইমানকেও নির্দেশ দিতেন, পরামর্শ দিতেন তিনি যেন শিশু মুহাম্মদের প্রতি বিশেষভাবে যত্নশীল থাকেন।  

উম্মে আইমান মা আমিনা এবং বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবের এসব নির্দেশ ও পরামর্শ, অসিয়ত এবং তার নিজের মমত্ববোধ থেকে উৎসারিত সকল দায়িত্বগুলো পালন করেছিলেন সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ভালোবাসা আর আন্তরিকতা দিয়ে।  

জন্মের পূর্বে বাবাহারা এতিমন সন্তান মাত্র বছরখানেক মায়ের ¯েœহ পেয়ে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেই সন্তানকেই উম্মে আইমান মায়ের মমতা দিয়ে সারাজীবন আগলে রেখেছিলেন। এ কারণেই তার সাথে শিশু মুহাম্মদের আত্মিক বন্ধন ছিল অত্যন্ত সুদৃড়। প্রিয় রাসুল সা; তাঁকে কোথাও পরিচয় করিয়ে দিতে হলে বলতেন; উম্মি বা’দা উম্মি (আমার মায়ের পরে মা) হিসেবে।

অনেক পরে এসে সময় ও পরিবেশ পাল্টে গেছে। সেদিনকার সেই শিশুটিই বেড়ে উঠে পূর্ণ যুবকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর বয়স তখন ২৫ বছর, মা খাদিজা রা.কে বিয়ে করে তিনি নিজেই সংসারী। তাঁকে দেখা শোনার জন্য তাঁর নিজেরই স্ত্রী রয়েছেন। সেই তখনও  উম্মে আইমানকে বিয়ে করাতে বেগ পেতে হয়েছে। বারাকাহ তখন প্রায় আটত্রিশ উনচল্লিশ বছররের এক নারী। এ পর্যায়ে এসে তিনি সা. উম্মে আইমানকে মুক্ত করে দিলেন ।

সমকালীন সমাজে যে কোন দাস দাসীর পক্ষে মনিবের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া বা হতে পারাটা ছিল এক মহার্ঘ বস্তু। এই স্বাধীনতা প্রত্যেকের জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য বিষয় ছিল। তারা মুখিয়ে থাকতো সম্ভাব্য যে কোন শর্তে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু উম্মে আইমান মুক্তি পেয়েও প্রিয় রাসুল সা. কে ছাড়তে চাইলেন না। ফলে তিনি উম্মে আইমানকে সাথে করে নিয়ে আসলেন খাদিজা রা. এঁর বাড়িতে।

মুহাম্মদ সা: বারাকাহকে ডেকে বললেন; ইয়া উম্মি (সারা জীবন এভাবে, এ ডাকেই তিনি সা: বারাকাহকে ডেকেছেন।) আমার জন্য আপনি আপনার জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, এখন আপনাকে বিয়ে করতে হবে।

উম্মে আইমান প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা. কে ছেড়ে যেতে হবে, এমন কোন দূরতম সম্ভাবনাও সহ্য করতে পারতেন না। তিনি জবাব দিলেন; ‘আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। মা কি তার সন্তানকে কখনও ছেড়ে যায়?

উম্মে আইমানের কথা শুনে প্রিয় মুহাম্মদ সা. এ পর্যায়ে উম্মে আইমানের মাথায় একটা চুমু খেলেন আর স্ত্রী খাদিজা রা. এঁর দিকে তাকিয়ে বললেন; ‘ইনিই হলেন বারাকাহ, মায়ের পরে আমার মা। আমার পরিবারের অংশ’ 

বারাকাহ প্রিয় মুহাম্মদ সা: এতোটাই ভালোবাসতেন যে, তাঁকে ছেড়ে কোথাও যেতে হবে, সেই আতংকে বিয়েই করবেন না! এমন স্বিদ্ধান্ত নিয়ে সেই স্বিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন। এ পর্যায়েই মা খাদিজা রা. এগিয়ে এলেন উম্মে আইমানকে বুঝাতে। বলে উঠলেন;

বারাকাহ, তুমি তোমার যৌবন আর জীবনের সমস্ত সময়টুকু তাঁর জন্যই শেষ করে দিয়েছো। আজ তিনি তোমার জন্য কিছু করতে চাচ্ছেন। অন্তত তাঁর খাতিরে, আমার দিকে তাকিয়ে বার্ধক্যে ন্যুজ্ব হয়ে পড়ার আগে দয়া করে রাজি হয়ে যাও।  (সংক্ষেপকৃত)।

Post a Comment

0 Comments