Recent Tube

জান্নাতে কি এরোপ্লেন ও বিমানবন্দর থাকবে?



প্রশ্ন: কথাটা শুনতে বাচ্চাদের মতো মনে হতে পারে; কিন্তু আমি জানতে চাই যে পৃথিবীতে কেউ যদি কোন জিনিস খুব বেশীমাত্রায় পছন্দ করে থাকে - যেমন ধরুন: এরোপ্লেন, তাহলে কি সে জান্নাতেও এটা পাবে? এর সাথে কি সে একটা বিমানবন্দরও পেতে পারে?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য এবং অসংখ্য ছলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রতি।

   এই প্রশ্নটি মোটেও শিশুসুলভ নয়, বরং বুদ্ধিমান লোকদেরকে (ইসলামে) উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা প্রশ্ন করে জানতে চায়, এবং এমন জিনিসের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে যা তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য আরও উদগ্রীব করে তুলবে এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য আরও বেশী পরিশ্রম করতে তাদেরকে উৎসাহ দিবে। আল্লাহ্‌র রসূল (ﷺ)-এর কয়েকজন সাহাবীও তাকে এরকম প্রশ্নই করেছিলেন।

   সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ তার বাবার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একবার এক ব্যক্তি নবী  (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল!  জান্নাতে কি ঘোড়া থাকবে?” তিনি বললেন, “যদি আল্লাহ্‌ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে যখনই তুমি লাল রত্নের তৈরি কোন ঘোড়ার পিঠে চড়ে জান্নাতের যেখানে খুশি উড়ে বেড়াতে চাইবে, তখনই তা করতে পারবে”। 

   অপর এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! জান্নাতে কি উট থাকবে?” তিনি সেই লোককে আগের ব্যক্তির মতো উত্তর দিলেন না। তিনি বললেন, “যদি আল্লাহ্‌ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে সেখানে তুমি তোমার মন যা চায় তাই পাবে”।
--- [ তিরমিযী : ২৫৪৩;  ইমাম আলবানী "স্বহীহ" বলেছেন, দেখুন: স্বহীহ আল-তারগীব : ৩/৫২২ ]। 

   আর যদি সুনির্দিষ্ট করে আপনার প্রশ্নের ব্যাপারে বলতে হয় – যে কেউ যদি ওড়া-উড়ি এবং এরোপ্লেন খুব বেশী ভালোবাসে (তাহলে এমন লোকের জন্য কি থাকবে); এমন অনেক হাদিস আছে যেগুলোতে এই ধরনের আনন্দময় জিনিসের কথা বলা হয়েছে। (স্বহীহ হাদিস দ্বারা) একথা প্রমাণিত যে, শহীদদের রুহগুলি জান্নাতের পাখিদের পাঁজরের ভেতর রাখা থাকে, যার মধ্যে থেকে তারা যেখানে খুশি উড়ে বেড়ায়। আরও প্রমাণিত যে জা’ফার ইবনে আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তার দুই ডানাসহ জান্নাতে উড়ে বেড়ান, যেগুলো মু’তাহর যুদ্ধে কাটা পড়া তার দুই হাতের বিনিময়ে আল্লাহ্‌ তাকে পুরস্কার হিসাবে দিয়েছেন। 
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে: রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)- বলেছেন: “আমি জা’ফরকে ফেরেশতাদের সাথে জান্নাতে উড়ে বেড়াতে দেখেছি”।
---[ তিরমিযী, ৩৭৬৩; ইমাম আলবানী হাদিসটিকে "স্বহীহ" বলেছেন, দেখুন: স্বহীহ আল জামি : ৩৪৬৫ ]। 

   আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি ইবনে জা’ফারকে সালাম দিতেন এবং বলতেন “সালাম তোমার প্রতি, হে দুই ডানাওয়ালা ব্যক্তির পুত্র”। --- [ স্বহীহ বুখারী:  ৩৫০৬ ]। 

    অধিকাংশ মানুষ কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়া,নিজে-নিজে উড়তে পারাকেই বেশী আকর্ষণীয় মনে করে। এমন বহু আয়াত এবং হাদিস রয়েছে যেগুলো বলছে যে, জান্নাতের অধিবাসীরা তাদের অন্তর যা চায় তা-ই পাবে। যেমনটা এই আয়াতে বলা হয়েছে যে: “স্বর্ণের পাত্র আর পেয়ালা দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করা হবে; সেখানে তাদের মন যা কিছু চাইতে পারে, এবং যা কিছুতে নয়ন তৃপ্ত হয় তার সবকিছুই থাকবে, এবং তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে”। 
--- [ সূরাহ আল যুখরুফ, আয়াত : ৭১ ] 

   এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল-সা’দি বলেন:
“তাদের মন যা কিছু চাইতে পারে” এই কথাটি অর্থের দিক থেকে ব্যাপক এবং এর মধ্যে সম্ভাব্য সব রকমের কল্যাণ, খুশি, আনন্দ এবং বিনোদন তাদের সর্বোৎকৃষ্ট রূপে অন্তর্ভুক্ত। এবং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন: “আদন (জান্নাত) যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার নীচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা যা চায় তাই পাবে। এভাবেই আল্লাহ্‌ মুত্তাকিদের (আল্লাহ্‌ভীরুদের) পুরস্কৃত করেন”। --- [ সূরাহ নাহল, আয়াত : ৩১ ]।

মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: “আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘আমি আমার ন্যায়পরায়ণ বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি যা কোন চোখ কোনদিন দেখেনি, কোন কান কোনদিন শোনেনি এবং যা কোনদিন কেউ কল্পনাও করেনি’। তোমরা চাইলে তিলাওয়াত কর: ‘কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুকায়িত আছে। " 
---- [ সূরাহ আস-সাজদা, আয়াতঃ ১৭ ]

স্বহীহুল বুখারীর - ৩০৭২ এবং স্বহীহ মুসলিমের - ২৮২৪ নং হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে যে: “মানুষের উচিৎ জান্নাতের নিখুঁত হওয়ার ব্যাপারে এবং এর বাসিন্দাদের পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া।"

আর যদি নিশ্চিত করে বলতে হয় যে জান্নাতে এরোপ্লেন এবং এয়ারপোর্ট থাকবেই থাকবে – তাহলে এই ব্যাপারে কোন দলীলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। বিষয়টি অদেখা জগতের বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যার ব্যাপারে কথা বলতে হলে দলীল থাকা আবশ্যক।
আমরা তাই বলি যা আল্লাহ্‌র রাসূল  (ﷺ) বলেছিলেন: “যদি আল্লাহ্‌ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান তাহলে সেখানে তুমি তোমার মন যা চায়, এবং যা কিছুতে তুমি আনন্দে আত্মহারা হবে তা-ই পাবে”।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি যেন তিনি আমাদের এবং আপনাকে সেইসব কাজ করতে সাহায্য করেন যা আমাদেরকে জান্নাতের অনন্তকালের ভোগ-বিলাসের দিকে নিয়ে যাবে এবং আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। 

ভাষান্তর: আরিফ আবদাল চৌধূরী।
নয্বরে ছানী : আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

Post a Comment

0 Comments