Recent Tube

কসম কি ও এর বিধান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

কি এর বিধান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

أيمان শব্দটি يمين শব্দের جمع (বহুবচন), অর্থ কসম বা শপথ। তবে يمين শব্দের মূল অর্থ ডান হাত। এটি কসম অর্থে ব্যাবহৃতো হওয়ার কারণ হলো, তখনকার লোকজন শপথ করার সময় একে অপরের হাত ধরতো।

 শরীয়তের পরিভাষায় يمين তথা কসম বলা হয়, আল্লাহ তাআলার নাম কিংবা সিফাত উল্লেখ করে শপথকৃতো বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা।

 শপথ দুই প্রকার।

(এক) আল্লাহ তাআলার কোনো সৃষ্টি নিয়ে শপথ করা যেমন- কাবা শরীফ, নবী, আমানত, জীবন, প্রতিমা অথবা আউলিয়া। এ প্রকার শপথ হারাম ও শির্‌ক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শুনে রাখো; আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। তোমাদের কেউ শপথ করলে আল্লাহ্‌র নামেই করবে অথবা নীরোবতা অবলম্বন করবে। [বুখারি ৬১৫৫]

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহ্‌র নামে কসম করলো সে শির্‌ক করলো। [আবু দাউদঃ ২৮২৯] এ ধরনের হারাম কসম ভঙ্গ করলে কোনো কাফফারা নেই। কেনোনা গাইরুল্লাহ্‌র নামে শপথ করা শিরক। আর তা ভঙ্গ করা তাওহীদ। এ কারণেই যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহ্‌র নামে শপথ করে তার তওবা করা উচিৎ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি লাত ও উয্‌যার শপথ করলো তার বলা উচিৎ- لا إله إلا الله – তাছাড়া আল্লাহ তাআলার নাম ও সিফাতসমূহের সম্মান রক্ষার্থে তার নামে কসম করে ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো বস্তু তার সমকক্ষ নয়।

(দুই) আল্লাহ তাআলার নাম ও সিফাতের শপথ করা
এটি চার প্রকার।- ১- শপথের ইচ্ছা ব্যতীতো এমনিতেই لا والله ( না, আল্লাহর কসম) بلى والله (হ্যাঁ, আল্লাহর কসম) মুখে উচ্চারণ করা। এ প্রকারের কসম নিরর্থক। এর কারণে কোনো কিছু লাযিম হয় না। তবে আল্লাহ্‌র মহত্ত্বের প্রতি লক্ষ্য করে এ থেকেও পরহেয করা উচিৎ। ইরশাদ হচ্ছে :
 لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ

আল্লাহ তাআলা কসমের ক্ষেত্রে নিরর্থক কসমের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেন না কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ঐ কসমসমুহের জন্যে পাকড়াও করবেন যে গুলোকে তোমরা দৃঢ় করো। (সুরা মায়েদাহ :৮৯)

২ – অতীতকালীন কোনো বিষয়ের ব্যাপারে সত্য মনে করে কসম করা। পরে দেখা গেলো বিষয়টি উল্টো। এটি নিরর্থক।

৩ – অতীতের কোনো বিষয়ে জেনে শুনে মিথ্যা কসম করা। এটি সম্পূর্ণ হারাম। এটিকে يمين غموس বলা হয়। এ ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন : এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন কবীরা গুনাহসমূহ কি কি ? রাসুল (সাঃ) কবীরা গুনাহের বর্ণনা করতে গিয়ে يمين غموس -কে তার মাঝে শামিল করেছেন।

লোকটি يمين غموس সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসূল (সাঃ) বললেন: এটি হচ্ছে মিথ্যা কসম করে অপর মুসলিমের সম্পদ দখল করা।
এ কসমের কোনো কাফফারা নেই। এটি এমন অপরাধ যা তওবা ব্যতীতো শুধুমাত্র কাফফারার মাধ্যমে মিটে যায় না। যে ব্যক্তি এমন করবে, তাকে তওবা করতে হবে।

৪  ভবিষ্যতের কোনো সম্ভাব্য বিষয়ে ইচ্ছকৃতোভাবে শপথ করা। একে يمين منعقدة বলা হয়। এ ধরণের শপথের ক্ষেত্রেই কাফফারা ওয়াজিব হয়। তবে তিনটি শর্ত সাপেক্ষে : 

(১) শপথকারী মুসলমান, বালেগ ও বিবেকসম্পন্ন হওয়া।

(২) নিজো ইচ্ছায় কসম করা। অতএব, বাধ্য হয়ে কসম করলে কাফফারা দিতে হবে না।

(৩) ইচ্ছা করে কসম ভঙ্গ করা। অতএব, বাধ্য হয়ে অথবা ভুলক্রমে কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হবে না। উল্লেখিতো তিনটি শর্ত পাওয়া গেলে কাফফারা ওয়াজিব হবে।

শপথ ভঙ্গের বিধান যে ব্যাপারে কসম করা হয়, সেটির উপর ভিত্তি করে কসম ভঙ্গের হুকুমও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

(১) কসম ভঙ্গ করা ওয়াজিব: যেমন কোনো ব্যক্তি ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়া অথবা হারাম কাজ করার শপথ করলে তা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি শপথ ভঙ্গ করে ওয়াজিব পালন করবে এবং হারাম কাজ থেকে ফিরে থাকবে। এবং কসমের কাফফারা আদায় করবে। যেমন- কেউ যদি মসজিদে গিয়ে জামাআতে সালাত আদায় না করার কসম করে, তার কসম ভঙ্গ করে জামাআতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। সাথে সাথে কসমের কাফফারা আদায় করবে। অথবা কোনো যুবক ধুমপান না করার কারণে বন্ধুরা তাকে তিরস্কার করতে লাগলো। ফলে সে ধুমপান করার উপর কসম করলো। এমতাবস্থায় কসম ভঙ্গ করে ধুমপান করা থেকে বিরতো থাকবে এবং কাফফারা আদায় করবে।

(২) কসম ভঙ্গ করা মুস্তাহাব: যখন কোনো একটি মুস্তাহাব ছেড়ে দেওয়ার অথবা মাকরূহ কাজ করার কসম করে, তখন কসম ভঙ্গ করে কাফফারা আদায় করা মুস্তাহাব। যেমন – কোনো ব্যক্তি আজকের দিন সুন্নত সালাত আদায় না করার অথবা দাঁড়িয়ে পানি পান করার কসম করলো। এমতোবস্থায় মুস্তাহাব হলো কসম ভঙ্গ করে সুন্নত আদায় করা এবং বসে পান করা। আর কসমের কাফফারা আদায় করা।

(৩) কসম ভঙ্গ করা হারাম: কোনো ওয়াজিব পালন করা অথবা হারাম ছেড়ে দেওয়ার কসম করলে এমতাবস্থায় কসম ভঙ্গ করা হারাম। যেমন – কোনো ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার অথবা মিথ্যা পরিহারের কসম করলো। এ ব্যক্তির জন্যে কসম ভঙ্গ করা হারাম।

(৪) কসম ভঙ্গ করা জায়েয: কোনো একটি জায়েয কাজ করা অথবা ছেড়ে দেওয়ার কসম করলে এমন কসম ভঙ্গ করা জায়েয। যেমন – কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি বাড়ী ক্রয় করার কসম করলো। এমতাবস্থায় কসম ভঙ্গ করে বাড়ীটি ক্রয় না করা জায়েয। তবে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।

সর্বক্ষেত্রে নিজের জন্যে যেটা কল্যাণকর তা-ই করা উচিৎ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

إذا حلفت على يمين فرأيت غيرها خيرا منها فكفر عن يمينك وأت الذي هو خير

তুমি কোনো বিষয়ে কসম করার পর যদি দেখো অন্যটি আরো উত্তম তখন কসম ভঙ্গ করে ভালো কাজটি করে নিবে। (বুখারী ৬১৩২)
হালালকে হারাম মনে করার বিধান যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বৈধ খাদ্য, পানীয় কিংবা পোশাক নিজের উপর হারাম করে নেয়, তাহলে এমতাবস্থায় তা হারাম হবেনা। তার কথাটি কসম হিসেবে গণ্য হবে এবং সে কাফফারা আদায় করে জায়েয বস্তুটি গ্রহন করবে। যেমন – কোনো ব্যক্তি নিজের উপর দুধ হারাম করে নিলে তা তার জন্যে হারাম হবেনা। তবে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে।

কাফফারার বিবরণ
আল্লাহ্‌ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ার ফলে কসমের কাফফারা নির্ধারিতো হয়েছে। যার ফলে কসম করে যে কাজটি না করার কথা ছিলো তা করা বৈধ হয় এবং যা করার কথা ছিলো তা না করা জায়েয হয়। কসমের কাফফারা নিম্নরূপ : (তিনটির যে কোনো একটি)

(১) দশজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। প্রত্যেককে অর্ধ সা চাউল ইত্যাদি দেবে।

(২) দশজন মিসকীনকে সালাত আদায় করতে পারে এতোটুকু পোশাক দেওয়া।

(৩) ত্রুটিমুক্ত একজন মুমিন দাস মুক্ত করে দেওয়া।

কাফফারা আদায়কারী তিনটির যে কোনো একটি বেছে নিবে। যদি উল্লেখিতো কোনো একটি না পায় তাহলে একাধারে তিন দিন রোযা রাখবে। পাঠ সারাংশ ও শিক্ষা

(১) কোনো ব্যক্তি একটি কাজ করা অথবা ছেড়ে দেওয়ার কসম করলো, অতঃপর কসম ভঙ্গ করতে চাইলো। এমতাবস্থায় কসম ভঙ্গ করার পূর্বেও কাফফারা আদায় করতে পারবে। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরূরী নয়।

(২) যে ব্যক্তি খানা খাওয়ানো ও পোশাক প্রদানের সামর্থ রাখে সে রোযা রাখলে কাফফারা আদায় হবেনা। তার রোযাগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।

(৩) কোনো ব্যক্তিকে তার বন্ধু কিংবা অন্য কেউ একটি ভালো কাজে কসম দিলে, তার উচিৎ কসম পূরণ করার সুযোগ দেওয়া। এটি মুস্তাহাব।

(৪) কসম ভঙ্গ করলে তাড়াতাড়ি কাফফারা আদায় করা উচিৎ। কেনোনা ভঙ্গ করার সাথে সাথে এটি ওয়াজিব হয়ে যায়। তা ছাড়া সে পরবর্তীতে আদায় করার সুযোগ নাও পেতে পারে।

(৫) আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরতো থাকা উচিৎ।
(৬) কারণে-অকারণে বারবার কসম না করা উচিৎ।

Post a Comment

0 Comments