Recent Tube

টুকটাক সংলাপ-২ ; জিয়াউল হক।

         
           
    টুকটা সংলা-২
    
  দ্রোহে আর দহনের দায় -

  আমরা আগুন নিয়ে কথা বলবো। আগুনের কেমিক্যাল গঠন ও কর্মপ্রণালী নিয়ে কোন কথা নয়, খুব সাধারণ ও সাদামাটা দু’টো কথা, সেটা হলো; আগুন বদলে দেয়। বস্তুকে তার আদি রুপ ও প্রকৃতি থেকে সে বদলে দেয়। ফলে আগুনের সংস্পর্শে এসে বস্তু তার আদি রুপ ও প্রকৃতি, আসল চেহারা ও চরিত্র সব বদলে ফেলতে বাধ্য হয়। যেহেতু বস্তু তার মৌলিক প্রকৃতি ও চরিত্রই বদলে ফেলেছে তাই সে আর তার পূর্বরুপ ও পরিচয়ে ফেরত যেতে পারে না।

     উদাহারণ হিসেবে আপনি কিছু ছাইয়ের কথা চিন্তা করুন, কাঠ, খড়ি, কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার কারণে যে ছাই ভস্মের উৎপত্তি হয়েছে, সেগুলো তার আসল রুপ ও প্রকৃতি, চেহারা ও চরিত্র বদলে ফেলেছে আগুনের সংস্পর্শে এসে। আগুন সেগুলোর আদি গঠন ও চরিত্রকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে।

   একইভাবে একটা ইটের কথা ভাবুন। একটা ইট বানানোর জন্য বিশেষ ধরনের কিছু মাটি নিয়ে তা পানিতে ভিজিয়ে তাকে কাদার আকৃতি দান করা হয়। পরবর্তিতে এই কাদাকে রোদে শুকানো হয়। রোদের উত্তাপে কাদার ভেতর থেকে পানিটুকু সরিয়ে নিলেও ইটের আকৃতিটা রয়ে যায়। নিছক কিছু কাদা তখন একটা আকৃতি পেয়েছে মাত্র। কাঁচা ইটের আকার। তবে মাটির মৌলিক রুপ আর প্রকৃতি বদল হয়নি। কারণ, এটা এখনও আগুনের সংস্পর্শে আসেনি। 

   এই কাঁচা ইটটাকে ইচ্ছা করলেই আবারও পানিতে ভিজিয়ে কাদা হিসেবে পরিবর্তিত করা যাবে এবং সেখান থেকে তা পূনরায় পুর্বের রুপ; শুকনো মাটিতে ফেরানো যাবে। কিন্তু যে মহুর্তে এই কাঁচা কাদা মাটির তৈরি ইটের আকৃতিবিশিষ্ঠ খন্ডটি সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে আসবে, একটা নির্দিষ্ঠ সময় পর তা পরিণত হবে ইট হিসেবে। 

   আগুনে পোড়ানোর পরে যে ইট’টা তৈরি হয়েছে, সেটাকে আর কখনোই তার আগের রুপে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভবপর নয়, কারণ, তা আগুনে দাহ হয়েছে। আগুন তার আসল প্রকৃতি ও চরিত্রই বদলে দিয়েছে। আগুনের ধর্মই হলো বস্তুর ধরন, গঠন ও চরিত্র বা প্রকৃতি বদলে দেয়া। এটাই তার শক্তি ও চরিত্র। সে বদলে দেয় একেবারে ভেতর থেকে। 

   মানুষ যখন হিংষা আর ক্রোধের আগুনে পুড়তে থাকে, তখন তার ভেতরের সকল কল্যাণকর, স্বৎ গুণাবলী, মানবিক প্রকৃতি; ফিতরাত সব পুড়ে নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের ভেতরে কিছুু না কিছু স্বৎ গুন, মানবিক বৈশিষ্ঠ, দক্ষতা ও বিশেষ পারঙ্গমতা বিদ্যমান থাকে জন্ম থেকেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও যত্ন এবং সুযোগ বা ট্রিগার পেলে তা প্রস্ফুটিত হয়। 

   এটা প্রকৃতিরই নিয়ম। কিন্তু এই নিয়মেরই ব্যতয় ঘটে তখন, যখন ব্যক্তি তার নিজের মনের ভেতরে অযৌক্তিক, অপরিমিত ক্রোধ, ক্ষোভকে লালন করতে থাকে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আক্ষেপ-আক্রোশ ও ক্রোধ এগুলো মানবিক বৈশিষ্ঠ, তার সৃষ্টির সাথেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত প্রবণতা। তবে একটা বিশেষ সীমা পর্যন্ত এবং একটাবিশেষ  প্রকৃতিতেই কেবলমাত্র। 

    ‘বিশেষ সীমা’টা হলো, ক্ষোভ আক্রোশের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে কোনমতেই জুলুমের আশ্রয় নেয়া যাবে না, পারস্পরিক আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া হুদুদ অতিক্রম করা যাবে না। আর ‘বিশেষ প্রকৃতি’টা হলো; ক্ষোভ ও ক্রোধের প্রকাশ কখনোই মানবিক প্রকৃতি, শিষ্ঠাচার, শ্লীলতা ও শালীনতার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো রুপ নেবে না। 

    সমস্যা হলো, মানুষ তার মনে যখন ক্রোধের আগুনকে লালন করে, তখন তার মন থেকে এরকম সকল চেতনাই হারিয়ে যায়, এটাই হলো ‘রাগের বশে নিয়ন্ত্রণ হারানো’। ক্রোধে উন্মাদ হওয়া। এর জন্যই আত্মসংযম একজন মানুষের অন্যতম চারিত্রিক গুন। নিজের মনে লুকায়িত ক্রোধের আগুনটাকে নিবিয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার চরিত্রে স্বৎগুণাবলীর স্ফুরণ ঘটতে শুরু করেছে, আপনি নিজেই অবাক হবেন তা দেখে।

   মৌলিক এ দু’টো চেতনাকে মনে সযত্নে লালন করা প্রয়োজন। এ জন্যই ইসলাম বার বার রাগ দমন করতে বলেছে। যিনি রাগ দমন করতে পারেন, তাকেই প্রকৃত বীর বলা হয়েছে। আমাদের যুবপ্রজন্ম, যারা আগামি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন, বিশেষ করে, তাদের কাছেই বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments