Recent Tube

খলিফা হিসাবে মানুষের ফরজ দায়িত্বঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

 খলিফা হিসাবে মানুষের ফরজ দায়িত্বঃ
------------------------------------
আল্লাহ তা'য়ালা মানুষকে খলিফা হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেনঃ 
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً. 
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে খলিফা সৃষ্টি করছি'। (সূরা বাকারাঃ ২/৩০) 

খলিফার দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ-
হে দাঊদ,  নিশ্চয় আমি তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা সা'দ: ৩৮/২৬)

এ আয়াত দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, খলিফা হিসাবে মানুষের ফরজ দায়িত্ব হচ্ছে, সকল ধরণের তাগুতী শোষণ, কুফুরী শাসন এবং মানবরচিত মতবাদ অপসরণ করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করা। এসব ফরজ কাজ রাষ্ট্রীয় ইমাম ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না। আর যা ছাড়া কোন ফরজ সম্পূর্ণ হয় না, ওটাও ফরজ। সুতরাং রাষ্ট্রীয়ভাবে খলিফা নিযুক্ত করার মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা মুসলিমদের উপর ফরজ বলে সাব্যস্ত হলো। এ ব্যাপারে সমস্ত ওলামায়ে কিরাম একমত। কতিপয় ওলামায়ে কিরামের মতামত নিম্নে তুলে ধরা হলো- 

সূরা বাকারা ২/৩০ এর তাফসীরে ইমাম তাবারী রাহঃ বলেন, "আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের এ খবর দিয়েছিলেন যে, তিনি পৃথিবীতে তাঁর খলিফা সৃষ্টি করবেন। তারা সেখানে তাঁর সৃষ্টিকুলের মাঝে ইনসাফের সাথে আল্লাহ তা'য়ালার বিধান বাস্তবায়ন করবে।" 
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইমাম তাবারী রাহঃ আরো বলেন, "এ আয়াতের ব্যাখ্যা হবে 'আমি পৃথিবীতে আমার সৃষ্টি জগতের মাঝে আইন পরিচালনায় আমার খলিফা নিয়োগ করব'। সে খলিফা হবে আদম (আ) ও সেই সব বনী আদম যারা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করবে এবং সৃষ্টি জগতের মাঝে ইনসাফ কায়েম করবে।" (তাফসীরে তাবারী) 

ইমাম কুরতুবী রাহঃ সূরা বাকারঃ ২/৩০ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃ 
هذه الاية اصل في نصب امام وخليفة يسمع له ويطاع لتجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الخليفة ولاخلاف في وجوب ذلك بين الامة و لا بين الاءمة.
"এই আয়াতটি মুসলিমদের একজন ইমাম বা খলিফা নিযুক্ত করার ব্যাপারে মূলভিত্তি। খলিফার কথা শুনতে হবে এবং তার নির্দেশ মানতে হবে। তার নেতৃত্বে মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তিনি আল্লাহর খলিফা হিসাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কার্যকর করবেন। এজন্যই মুসলিম জাতির জন্য খলিফা নিযুক্ত করা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।" 
(তাফসীরে কুরতুবী ১/২৬০) 

আল্লামা ইবনে কাসীর রাহঃ বলেনঃ  "ইমাম কুরতুবী রাহঃ সহ প্রভৃতি মনীষীগণ এ আয়াত হতে দলিল গ্রহণ করেছেন যে, রাষ্ট্রের খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব। তিনি মতবিরোধের মীমাংসা করবেন, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিবেন, অত্যাচারী হতে অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রতিশোধ নিবেন, 'হুদুদ' কায়েম করবেন, অন্যায় ও পাপের কাজ হতে জনগণ বিরত রাখবেন ইত্যাদি বড় বড় কাজগুলো যার সমাধান ইমাম ছাড়া হতে পারে না। এসব কাজ ওয়াজিব এবং ইমাম ছাড়া পুরো হতে পারে না। আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব পুরো হয় না, ওটাও ওয়াজিব। সুতরাং খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো " (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারাঃ ৩০ নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ) 

ইমামুল হারামাইন আবুল মাআলী জুওয়াইনী মতে, 
ولا يشك احد من علماء المسلمين في وجوب نصب الامام- بل قد روي الاجماع علي وجوب ذلك كل نن تكلم في هذه المسألة من العلماء- 
"মুসলিম আলেমদের এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই যে, মুসলিমদের (রাষ্ট্রীয়) ইমাম নিযুক্ত করা ফরয। বরং এ ব্যাপারে যারাই কথা বলেছেন তারা সকলে ইজমা 'ঐক্যমত' পোষণ করেছেন।" 
(غياث الامم في التياث الظلم، الباب الأول في وجوب نصب الأءمة وقادة الأمة)

ইমাম শানকীতি বলেনঃ 
من الواضح المعلوم من ضرورة الدين إن المسلمين يجب عليهم نصب امام تجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الله في ارضه. 
"এ কথা সুস্পষ্ট যে, দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়গুলো মধ্যে একটি হলোঃ মুসলিমদের জন্য একজন (রাষ্ট্রের) ইমাম নিযুক্ত করা ফরজ। যার নেতৃত্বে মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ হবে, তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করবেন।" (তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান ১/২৩) 
ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ইমাম নিযুক্ত করা ফরজ- এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম শানকীতি বলেনঃ
ولان الله تعالي قد يزع بالسلطان ما لا يزعه بالقران. كما قال الله: لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ- فيه اشارة الي اعمال السيف عند الاباء بعد اقامة الحجة- 
"কেননা ইমামের নেতৃত্বে (শরীয়তের) এমন কিছু কাজ করা সম্ভব যা কুরআন দ্বারা সম্ভব হয় না। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেনঃ "নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।" (সূরা হাদীদঃ২৫) এই আয়াতে ইঙ্গিত আছে যে, যদি (আল্লাহর বিধানের পক্ষে) দলিল প্রমাণ কায়েম করার পরেও কাজ না হয় তাহলে তরবারি কাজে লাগাতে হবে।" (তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান ১/২৩) 
.
বিঃদ্রঃ অতীতে শুধুমাত্র খারেজীরাই ইসলামী খিলাফাতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ করেছিল। খারেজীরাই ধ্বংস করেছিল ইসলামী খিলাফাত। খারেজীদের হাতেই শহীদ হন খোলাফায়ে রাশেদার তিন খলিফা হযরত ওমর (রাঃ), ওসমান (রাঃ) এবং আলী (রাঃ)। এই খারেজীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: খারিজীরা হল জাহান্নামের কুকুর। (ইবনে মাজাহ হাঃ ১৭৩, মিশকাত হাঃ ৩৫৫৪) আজও ইসলামী খিলাফাত পূনরায় প্রতিষ্ঠার কাজে, ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে এবং বিরোধীতা করছে তারা নব্য সহীহ খারেজী, জাহান্নামের কুকুর। আমরা তাদের আহ্বান করব, আসুন! খারেজী মানহাজ বর্জন করে ইসলাম বিজয়ের উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে ইকামতে দ্বীনের কাজে ঐক্যবদ্ধ হই।

Post a Comment

0 Comments