Recent Tube

কালেমা তাইয়্যেবা ৪র্থ পর্বমাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম


          কালেমা তাইয়্যেবা; 
                                        ৪র্থ পর্ব;

প্রকৃত ইলাহ্ (মা'বুদ),

     কুরআন শরীফের প্রায় প্রত্যেক পৃষ্ঠায় প্রকৃত আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায় এবং তা থেকে আরবী ‘ইলাহ’ (اِلَه) শব্দের ব্যাখ্যা জানতে পারা যায়। কিন্তু কুরআনের সেই আয়াতগুলাে উদ্ধৃত করে সেই সবগুলাের অর্থ লিখতে গেলে আলােচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই এখানে আমরা সব আয়াতের শুধু সার-কথা লিখে দিচ্ছি। এখানে কুরআনের সেই আয়াতগুলাে সম্মুখে রেখে যা লেখা হলাে, তা-ই প্রকৃত আল্লাহর পরিচয় এবং তা-ই ইলাহ’ শব্দের আসল অর্থ।

   আল্লাহ তথা প্রকৃত ইলাহ’ জীবনদাতা মৃত্যুদাতা। তিনি সমস্ত জীবকে লালন-পালন ও রিযিক দান করেন। তিনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনকারী । নষ্ট ও ক্ষয়প্রাপ্ত জিনিসকে তিনিই আবার নতুন করে গড়তে পারেন। প্রাকৃতিক জগতে একমাত্র তাঁরই হুকুম ও আইন চলে। তিনিই সকল কাজের মূল কর্তা। তারই ওপর একান্তরূপে ভরসা করতে হয়। তিনিই নিরাশার আশা; বিপদে-আপদে সব সময় কেবল তারই রহমতের আশা করা যায়। মানুষের লাভ-লােকসান, ক্ষতি-উপকার কেবল তারই ইচ্ছাক্রমে হয়ে থাকে। দৃশ্য-অদৃশ্য, জানা-অজানা সব কিছুই তিনি ভালাে করে জানেন। তিনি সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং সকলের ওপর জয়ী। তিনি সব রকম শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক। তিনি সর্ব প্রকার দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে; কোনাে ভুল-ভ্রান্তি বা পাপ-অপরাধ তার নেই। তিনি সারা জাহানের একচ্ছত্র মালিক; সমস্ত বিশ্ব-সাম্রাজ্যের তিনিই। প্রকৃত সম্রাট, শাহানশাহ ও রাজাধিরাজ। দুনিয়ার যাবতীয় ধন-সম্পদ ও সম্পত্তির প্রকৃত ও নিরংকুশ মালিক তিনিই। তিনি সমগ্র বিশ্বলােককে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের চালু করা প্রাকৃতিক নিয়ম-বিধানের ভিত্তিতে নিজেই তা পরিচালনা করছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিধান দিয়েছেন। অতএব মানুষের কর্মজীবনে তাঁর আদেশ-নির্দেশই একমাত্র পালনযােগ্য আইন। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও সব ব্যাপারে কেবল তারই আদেশ ও নিষেধ মাথা নত করে মানতে এবং পালন করে চলতে হবে। তার কোনাে ক্ষয়-ক্ষতি নেই; তিনি অবিনশ্বর, অক্ষয় ও চিরঞ্জীব। তিনি সব সময় বর্তমান ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তাঁর কাছে ভূত-ভবিষ্যত বা বর্তমান বলতে কিছুই নেই; সমস্ত কালই তাঁর কাছে সমানভাবে বর্তমান। তাঁর কথা ও আদেশের কোনাে নড়চড় নেই। তাঁর কোনাে ইচ্ছার ব্যতিক্রম করার বা তার সিদ্ধান্তের বিপরীত করার ক্ষমতা কারাে নেই। ভয় করার যােগ্য একমাত্র তিনিই; অন্য কারাে দাসত্ব বা নিরংকুশ আনুগত্য লাভের অধিকার নেই। এ সমস্ত ব্যাপারে তাঁর কেউ শরীক নেই; তিনি এক ও একক। তাঁর মর্জির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে এমন কেউ নেই। তিনি নিজ ইচ্ছামতে কাজ করেন- কারাে কথা, দো'আ বা সুপারিশ মানতে তিনি এতটুকু বাধ্য নন। তিনি কারাে ওপর নির্ভরশীল নন, কারাে মুখাপেক্ষীও তিনি নন; বরং সারে জাহানের সব কিছু কেবল তাঁরই মুখাপেক্ষী— কেবল তাঁরই ওপর নির্ভরশীল। তাঁর রহমত না হলে কারাে এক মুহূর্তকাল বাঁচে থাকার উপায় নেই।

‘ইলাহ' (মা'বুদ) সম্পর্কে জাহিলী মতবাদ

     উপরে সংক্ষেপে ইলাহ তথা আল্লাহ তা'আলার পরিচয় দেওয়া হলাে। এ পরিচয় এতৎসম্পর্কিত মাত্র কয়েকটি আয়াতের সারমর্ম । নতুবা আল্লাহর পরিচয় লিখে শেষ করার ক্ষমতা কোনাে মানুষেরই নেই। কিন্তু যা লেখা হয়েছে তা থেকে আল্লাহর যে প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় তা-ই তার আসল সিফাত ও গুণ। কিন্তু দুনিয়ার মুশরিক লােকেরা আল্লাহর এ আসল পরিচয় এবং আসল গুণাবলী ভুলে গিয়ে নিজেদের খামখেয়াল অনুসারে আল্লাহ্ সম্পর্কে অমূলক কতকগুলাে ধারণা রচনা করে নিয়েছে। আল্লাহর আসল পরিচয় না পেয়ে তারা যে কিভাবে সত্য ও শান্তির পথ ভুলে গিয়েছে এবং প্রত্যেক পদে পদে আঘাত খেয়েছে, কুরআন থেকে সংক্ষেপে আমরা এর বিবরণ এখানে উদ্ধৃত করছি।

     মুশরিকগণ একমাত্র সাহায্যদাতা আল্লাহ্ তা'আলাকে ভুলে গিয়ে অন্য শক্তির কাছে সাহায্য ভিক্ষা করে ও

وَاتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لَعَلَّهُمْ يُنصَرُونَ
আল্লাহকে ছেড়ে তারা অন্য শক্তিকে 'ইলাহ' বানিয়ে নিয়েছে এ আশায় যে, সম্ভবত তার কাছে থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে। 
(সূরা ইয়াসীনঃ ৭৪)

   কার্যসিদ্ধির জন্য তারা মৃত মানুষকে ডাকেঃ

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ لاَ يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ - أَمْواتٌ غَيْرُ أَحْيَاء وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
আল্লাহ ব্যতীত তারা আর যাদের (প্রভু মনে করে) ইবাদত করে, তারা একটি জিনিসও সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই আর একজন সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। তারা মৃত- জীবিত নয়। তারা এতটুকুও জানে না যে, তাদের কোন দিন কোন সময় পুনরুজ্জীবিত করা হবে । 
(সূরা নহলঃ ২০-২১)

     তারা আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য লাভ করার উদ্দেশ্যে তাকে বাদ দিয়ে অন্য শক্তির দাসত্ব করেঃ

وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى
যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য শক্তিকে মনিব ও পৃষ্ঠপােষক হিসাবে গ্রহণ করে এবং বলে, আমরা কেবল এ উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। অর্থাৎ তারা প্রকৃত আল্লাহর কাছে পৌছার জন্য কৃত্রিম আল্লাহ্ বানিয়ে লয় ।
(সূরা যুমারঃ ৩)

 তারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার জন্য অন্য শক্তির ইবাদত করে ।
يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ
তাদের উপকার বা তারা আল্লাহ ছাড়া এমন সব জিনিসের উপাসনা করে, ক্ষতি করবার কোনাে ক্ষমতাই যেসবের নেই। তারা বলে যে, এরা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।
(সূরা ইউনুসঃ ১৮)

   এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, তাদের ধারণা হলাে, সরাসরিভাবে আল্লাহর কাছে পৌঁছা যাবে না। আল্লাহর কাছে পৌছতে হলে কৃত্রিম উপাস্যদেরকে মাধ্যম ধরতে হবে।

   তারা চন্দ্র এবং সূর্যের পূজা করে। মনে করে, দিন-রাত, চন্দ্র ও সূর্য বিস্ময়কর জিনিস, এরা উপাস্য না হয়ে পারে না। অথচ চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহরই সৃষ্ট এবং তার অস্তিত্ব এবং একত্বের নিদর্শন মাত্র। আল্লাহ্ বলছেনঃ

وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ
    রাত ও দিন, চন্দ্র এবং সূর্য আল্লাহর অস্তিত্ব এবং একত্বের নিদর্শন; অতএব কি চন্দ্র কি সূর্য এর কোনােটিকেই সিজদা (পূজা-উপাসনা) করিও না; কেননা এগুলােতে প্রকৃত আল্লাহর অস্তিত্ব ও অসীম কুদরতের প্রমাণ। এগুলােকে সিজদা করে তাে কিছুই লাভ হবে না ।
(সূরা হা-মীম আস্ সিজদাহঃ ৩৭)

     তারা আলেম, পীর ও পণ্ডিতদের দাসত্ব করে; তারা যাই বলে ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে তারা তাই পালন করে। অন্ধভাবে এরূপ কোনাে মানুষের আনুগত্য করা ও নির্বিচারে হুকুম পালন করে চলা শিক। কারণ মানুষ আল্লাহ্ ছাড়া আর কারাে হুকুম নির্বিচারে পালন করলে তাকেই আল্লাহর মর্যাদা দান করা হয়। আল্লাহ্ তাদের অবস্থা বর্ণনা করছেনঃ

 اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ
  তারা আল্লাহ্ তা'আলাকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম, পীর, পণ্ডিত ও সরদার লােকদেরকে নিজেদের রব্ব’ বা প্রভু বানিয়ে নিয়েছে।
(সূরা তওবাঃ ৩১)

    বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিংবা প্রয়ােজন মিটাবার জন্য তারা মানুষকে ডাকে। এরূপ ডাকা আল্লাহ্ তা'আলার দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ এবং এও শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এরূপ উদ্দেশ্যে ডাকতে হবে কেবলমাত্র আল্লাহকে। বলা হয়েছেঃ

إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ فَادْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
    আল্লাহকে ছেড়ে তােমরা যাদেরকে (বিপদ মুক্তির জন্য) ডাকো তারা তােমাদেরই মতাে (অক্ষম) বান্দাহ্ বই তাে নয়। অতএব, (তারা সত্যই তােমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে বলে মনে করে থাকো, তবে) তাদের কাছে দো'আ করেই দেখাে, তারা তােমাদের প্রার্থনার জবাব দান করুক না, তাদের সম্পর্কে তােমাদের ধারণা যদি সত্যই হয়। (আ'রাফঃ ১৯৪)

     তারা এক আল্লাহ তা'আলার বিধান ত্যাগ করে মনের ইচ্ছামতাে কাজ করে ন্যায়-অন্যায়, ভালাে-মন্দ এবং পাপ-পূণ্য কিছুরই বিচার করে না।

 أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
 যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে ‘প্রভু বানিয়ে লয় (কেবল প্রবৃত্তির ইচ্ছামতাে কাজ করে) তার অবস্থা কি তুমি দেখােনা? তথাপি কি তার দায়িত্ব তুমি গ্রহণ করবে ?
(সূরা আল-ফুরকানঃ ৪৩)

    এখানে যে আয়াতগুলাে উল্লেখ করা হলাে, একটু গভীরভাবে সেগুলাের অর্থ চিন্তা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, দুনিয়ার একদল মানুষ এক আল্লাহকে ‘ইলাহ’ ও ‘রব্ব’ অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক স্বীকার না করে, নিজের প্রবৃত্তির কামনা, ক্ষমতাবান মানুষ, বাতিলপন্থী পীর-দরবেশ ও ধর্মগুরু, চন্দ্র-সূর্য এবং নিষ্প্রাণ দেব-দেবীকে বাস্তবিকই ‘খােদা' বা ‘প্রভু বানিয়ে নিয়েছে আর তাদের দাসত্ব, গােলামী, পূজা-উপাসনা ও হুকুম বরদারী করছে। কিন্তু সারে জাহানের সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক এক আল্লাহর অস্তিত্ব গুণ-বৈশিষ্ট্যকে তারা কেউই সম্পূর্ণ অস্বীকার করেনি; কেউই কখনাে এ কথা বলেনি যে, সৃষ্টিকর্তা নেই বা তার কোনাে গুণ-বৈশিষ্ট্য নেই। আসলে তারা আল্লাহকেই সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিমান ও সর্বপ্রধান হুকুমদাতা বলে মানত, কিন্তু তাদের আকীদার মধ্যে মূল দোষ ছিল এই যে, তারা সেই সঙ্গে আল্লাহর সৃষ্ট জীবদের মধ্যে ফেরেশতা, জ্বিন, মানুষ, দেব-দেবী, চন্দ্র-সূর্য-তারকা ইত্যাদিকেও আল্লাহ্ তা'আলার অংশীদার, সাহায্যকারী বা অনুরূপ শক্তির আধার বলে মানতাে। বিপদের সময় এদের কাছে আশ্রয় চাইত; কঠিন কোনাে কাজ সমাধা করার জন্য এদের কাছে শক্তি প্রার্থনা করত। মনে করত যে, এদেরও কিছু না কিছু ক্ষমতা আছে। প্রকৃত আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য প্রকৃত আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত পাওয়ার জন্য এবং প্রকৃত আল্লাহর কাছে সুপারিশ করাইবার জন্য তারা এসবের দাসত্ব ও পূজা করত। এদের জন্য তারা মানত মানতাে এবং এরাও মানুষের কোনাে ক্ষতি বা উপকার করতে সক্ষম এই ধারণায় এদেরকে ভয়ও করত। আর একটি বড় দোষ এই ছিল যে, তারা আল্লাহর বিধান ছাড়াও নিজেদের মনের কামনা-বাসনা এবং নিজেদের তথাকথিত পীর-দরবেশ ও নেতৃবৃন্দের কথার দ্বারা হালাল হারাম ঠিক করত । তারা একথা চিন্তা করত না বা কারাে কাছে জিজ্ঞাসাও করত না যে, এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার হুকুম কি? আল্লাহর কাছে এটি হালাল না হারাম? তারা শুধু এটুকুই জানতে চাইত যে, কাঙ্খিত জিনিসটিকে তাদের (বাতিল) পীর দরবেশ বা নেতারা পছন্দ করেন, না অপছন্দ করেন, হালাল বলেন কিংবা হারাম মনে করেন? এ ব্যাপারে মনঃপুত ইঙ্গিত পেলে অমনি তারা সেই অনুসারে কাজ করত।

    যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই মানুষকে তা দান (ধন-সম্পদের) নিরংকুশ মালিক মনে করত এবং নিজেদের ইচ্ছামতাে তা উপার্জন ও ব্যয়-ব্যবহার করত।

   কালেমা তাইয়্যেবার বিরােধিতা করার মূল কারণ

    আল্লাহ্ সম্বন্ধে দুটি ধারণা আমরা পাশাপাশি উল্লেখ করলাম। প্রথমটি প্রকৃত আল্লাহর পরিচয় আর অপরটি আল্লাহ্' সম্পর্কে দুনিয়ার জাহিল ও মুশরিক লােকদের ধারণার ব্যাখ্যা। এ ব্যাখ্যা খুব ভালাে করে বুঝে নেওয়ার পর এ কথা বুঝতে কারাে অসুবিধা হবে না যে, দুনিয়ার ইতিহাসে যখনই এবং যারই মুখে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (Yaj)-এর আওয়াজ বুলন্দ হয়েছে, তখনই সেই সমাজের গুমরাহ লােকেরা এবং তথাকার বাতিলপন্থী রাষ্ট্রপতি, পুঁজিপতি ও ধর্মপতির। এর বিরুদ্ধে সকল শক্তি নিয়ােজিত করে একে অংকুরেই বিনষ্ট করতে যারপর নাই চেষ্টা করে কেনাে ? এই কালেমা শুনেই তারা কেনাে একেবারে আগুনের মতাে জ্বলে উঠেছে এবং বহু দিনের বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী লােকদের সঙ্গে প্রকাশ্য শত্রুতা করতে তারা কেনাে ওঠে পড়ে লেগেছে? 

    আসল ব্যাপার এই যে, এই কালেমার আওয়াজ যখনই যে-দেশে (নতুন করে) বুলন্দ হয়েছে, সে দেশের লােকেরা অমনি তা শুনে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে, এর অর্থ এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবধারা কি। তারা বুঝেছে, এই কালেমাকে সত্য বলে বিশ্বাস ও কবুল করলে এবং এই কালেমা অনুসারে
নিজেদের জীবন ঢেলে তৈরী করলে কিংবা এই কালেমার শিক্ষা প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে কোথায় কোথায় আঘাত লাগে— কোন কোন স্বার্থ, বিশ্বাস বা নিয়ম-পদ্ধতিকে অসংকোচে পরিত্যাগ করে নতুন শিক্ষা নতুন বিশ্বাস ও নতুন নিয়ম-পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই যে, কোনাে সমাজে এই কালেমা উচ্চারিত ও প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই সমাজের লােকেরা নীতির দিক দিয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেঃ একদল
এই কালেমাকে বুঝেছে, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস ও কবুল করেছে, মুখে উচ্চারণ ও প্রচার করেছে এবং সমগ্র  জীবন দিয়ে জীবনের প্রত্যেকটি কমের ভিতর দিয়ে এই। কালেমার আদর্শ রূপায়িত করেছে, এর সত্যতা প্রমাণ করেছে।

    আর একদল লােক এই কালেমার অর্থ বুঝেছে এবং বুঝে একে অংকুরেই বিনষ্ট করার জন্য, এর আওয়াজ অন্য কোনাে মানুষের কানে যেন না পৌছতে পারে সে জন্য নিজেদের সর্বশক্তি লাগিয়ে ও যথাসর্বস্ব ব্যয় করে চেষ্টা করেছে। তাই এই কালেমা যেমন মানব সৃষ্টির আদি থেকে চলে এসেছে, তেমনি এর বিরোধিতাও সেই সময় থেকে হয়ে এসেছে। এ জন্য মুসলিম’ ও ‘কাফের’ দুটি শব্দ বা মানুষের দুটি দল আদিকাল থেকে সমানভাবে চলে এসেছে। এ দুই দলের মধ্যে যে লড়াই, তা নীতি ও আদর্শের লড়াই এবং এ লড়াইয়ের ইতিহাসই হচ্ছে কালেমা তাইয়্যেবার ইতিহাস। ইসলামের পরিভাষায় এ লড়াইকেই বলা হয় ‘জিহাদ'।

চলবে.....।
-------------------------------------------------------------
বার্তা প্রেরকঃ শামীম আজাদ। 

Post a Comment

0 Comments