Recent Tube

দ্বীনি প্রশ্নোত্তর ❓

প্রশ্ন :
কবর থেকে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করবে তার হুকুম কি? 

উত্তরঃ 
যে ব্যক্তি কবর থেকে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করবে, সে আল্লাহ্ তাআলা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলদেরকে অস্বীকারকারী কাফের। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا وَآبَاؤُنَا أَئِنَّا لَمُخْرَجُونَ

‘‘কাফেরেরা বলেঃ আমরা এবং আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে’’? (সূরা নামলঃ ৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ الأَغْلاَلُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

‘‘আপনি যদি বিস্মিত হন, বিস্ময়ের বিষয় তাদের কথাঃ মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নতুন জীবন লাভ করব? তারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। তাদের গলদেশে থাকবে লৌহ শৃঙ্খল। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’’। (সূরা রা’দঃ ৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ لَنْ يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

‘‘কাফেররা ধারণা করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। আপনি বলুনঃ আমার প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। অতঃপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ?। (সূরা মুমিনঃ ৭) এছাড়াও রয়েছে আরো আয়াত।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ

(كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ فَأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَنْ يُعِيدَنِي كَمَا بَدَأَنِي وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ إِعَادَتِهِ وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا وَأَنَا الْأَحَدُ الصَّمَدُ لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفْئًا أَحَدٌ)

‘‘আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অর্থ এই যে, সে বলে থাকে আল্লাহ্ আমাকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সেভাবে সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা আমার পক্ষে অধিক সহজ ছিল না। আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ এই যে, তার কথাঃ আল্লাহ্ পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জম্ম দেই নি এবং আমাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর আমার সমতুল্য কেউ নেই’’।[1]

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর। 

 
প্রশ্নঃ (১১২) সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার দলীল কি? কয়বার ফু দেয়া হবে? 

উত্তরঃ সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ

‘‘এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তৎক্ষনাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৮ এই আয়াতে দুইবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। একবার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ

وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللَّهُ

‘‘আর সেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত’’। (সূরা নামলঃ ৮৭) 

যারা এই আয়াতে الفزع শব্দের ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেছেন, তাদের মতে এখানে الفزع দ্বারা প্রথম ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা সূরা যুমারের ৬৮নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। মুসলিম শরীফের হাদীছ থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَلَا يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلَّا أَصْغَى لَهُ وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَهُ فَيَصْعَقُ ثُمَّ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا صَعِقَ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ أَوْ يُنْزِلُ اللَّهُ قَطْرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ

‘‘অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া মাত্রই প্রত্যেক ব্যক্তি তা কান পেতে শুনার চেষ্টা করবে। সর্বপ্রথম উটের হাওজ মেরামত রত একজন ব্যক্তি সেই শব্দ শুনতে পেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর সকল মানুষ সেই শব্দ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা শিশিরের ন্যায় এক প্রকার হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তাতে মানুষের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। পুনরায় শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে সকল মানুষ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে’’।[1] এই হাদীছে দুই ফুঁ দেয়ার কথা এসেছে। আর যারা الفزع এর ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেন নি, তাদের মতে এখানে উপরোক্ত দু’টি ফুৎকার ব্যতীত তৃতীয় ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা এ দু’টির পূবেই দেয়া হবে। শিঙ্গার দীর্ঘ হাদীছে একথার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে তিনটি ফুৎকারের কথা বলা হয়েছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার ফুৎকার, বেহুঁশ হওয়ার ফুৎকার এবং বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ফুৎকার। আল্লাহই ভাল জানেন।

[1] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। 
 
প্রশ্নঃ (১১৩) কুরআন মাজীদে কিভাবে হাশরের বর্ণনা এসেছে? 

উত্তরঃ কুরআন মাজীদে হাশরের মাঠে মানুষকে একত্রিত করার ধরণ বর্ণনায় অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ

(وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ)

‘‘আর তোমরা আমার কাছে এককভাবে এসেছ। যেভাবে প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম’’। (সূরা আনআমঃ ৯৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

(وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا)

‘‘সেদিন তাদেরকে একত্রিত করব, তাদের কাউকেও ছাড়ব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا

‘‘সেদিন দয়াময় আল্লাহর কাছে পরহেজগারদেরকে সম্মানিত অতিথিরূপে সমবেত করা হবে’’ এবং আমি অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।’’ (সূরা মারইয়ামঃ ৮৫-৮৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلاَثَةً * فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ * وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ * وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ

‘‘আর তোমরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। এক শ্রেণী ডান হাতে আমলনামা পাবে। কতই না ভাগ্যবান হবে ডান হাতের দল! আরেক শ্রেণী বাম হাতে আমলনামা পাবে। কত হতভাগ্য হবে বাম হাতের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী’’। (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৭-১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لاَ عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلاَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا

‘‘সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে। তার কথা এদিক সেদিক হবে না। দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সকল শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৮) হাশরের মাঠের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় উটের পদধ্বনির ন্যায় আওয়াজ হবে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِهِ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وَجُوهِهِمْ

‘‘আল্লাহ্ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, তাদের জন্য আপনি আল্লাহ্ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৯৭) উক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।

 
প্রশ্নঃ (১১৪) হাদীছ শরীফে হাশরের কি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে? 

উত্তরঃ হাদীছ শরীফে হাশরের পদ্ধতি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ 

(يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا)

‘‘মানুষকে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় তিনভাবে একত্রিত করা হবে। দু’জন একটি উটের উপর, তিনজন একটি উটের উপর, চারজন একটি উটের উপর এবং দশজন একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের স্থানে উপস্থিত হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে।[1] বুখারী ও মুসলিম শরীফে আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,

(أَنََّ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَة؟ِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟)

‘‘জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে হাঁটানো হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ দুনিয়াতে যিনি তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে সক্ষম ছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে সক্ষম নন?[2]

ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ)

‘‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ

‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে।[3] আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো বর্ণনা করেন যে,

(يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالَ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَهمهم ذلك)

‘‘কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে।[4]

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক। [2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর। [3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক। [4] - বুখারী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু রিকাক।  নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ
অধ্যায়ঃ প্রশ্ন এবং তাঁর উত্তরসমুহ

 
প্রশ্নঃ (১১৫) কুরআন মযীদে বর্ণিত হাশরের মাঠে অবস্থানের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করুন 

উত্তরঃ হাশরের মাঠের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ 

وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ * مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ

‘‘আপনি কখনও মনে করবেন না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফেল। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না। তাদের অন্তর উড়ে যাবে’’। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا

‘‘যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ

‘‘আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ

تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ

‘‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।’’ (সূরা মাআ’রিজঃ ৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَا الثَّقَلاَنِ

‘‘হে মানুষ ও জিন! আমি শিঘ্রই তোমাদের প্রতি মনোনিবেশ করব’’। (সূরা আর্-রাহমানঃ ৩১)

Post a Comment

0 Comments