Recent Tube

সালাতের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর বিরুদ্ধে শায়েখ মুযাফফরের অভিযোগ ও জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

  সালাতের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর বিরুদ্ধে শায়েখ মুযাফফরের অভিযোগ ও জবাবঃ
-----------------------------------------------------
    আল্লামা মওদুদী রাহঃ নিকট এক ব্যক্তি প্রশ্নের সুরে বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তো একটি পদ্ধতিতেই নামায আদায় করেছেন। কিন্তু লোকেরা যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়ছে, ইসলামে এর স্থান কোথায়? আমি জানতে চাই কোন ফেরকা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিতে নামায পড়ছে? আপনি কোন পদ্ধতিতে নামায পড়েন?

    জবাবে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন, আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীগণ যেসব পদ্ধতিতে নামায পড়েন, তার সবগুলোই নবী (সাঃ) থেকে প্রমাণিত। এ জন্য তাদের কোনো একটি দলের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ কখনো এ কথা বলেনি যে, তাদের পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে যারা নামায পড়ে তাদের নামায হয় না। এ ধরণের কথা বলা তো কেবল অজ্ঞ লোকদের কাজ।.... আমি নিজে হানাফী পদ্ধতিতে নামায পড়ি। কিন্তু আহলে হাদীস, হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী সবার নামাযকে সহীহ ও সঠিক মনে করি। এদের সবার পিছনে আমি নামায পড়ে থাকি। (রাসায়েল ও মাসায়েল, পৃঃ ২/২৪০)

      নিজ পদ্ধতি ব্যতীত সকল মাযহাবের সালাতকে গাঁজাখোর ও জাল সালাত বলে ঘোষণাকারী শায়েখ মুযাফফর আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেন, "মূলত: তার হৃদয়ের গহীনে প্রোথিত মাযহাবী আকর্ষণের কারণে সোজা কথা বলতে পারেননি; বরং তিনি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সালাত আদায় করেন এ কথা স্বীকার করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে হানাফী সালাতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রায় প্রশ্নের ক্ষেত্রে তিনি যুক্তির ফাঁদ এভাবেই পেতেছেন। তা যে আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত শরীয়তের বিরুদ্ধে গেছে, তা তিনি লক্ষ্য করেননি। যুক্তির সাথে শরীয়তের কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত জবাব প্রচলিত রাজনীতির জন্য খুবই মানানসই, আল্লাহর বিধানের জন্য নয়।" (ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন, পৃঃ ১৬০)

    এখানে আল্লামা মওদুদী রাহঃ সকল মাযহাবের সালাতকে সঠিক বলা এবং তিনি নিজে হানাফী পদ্ধতিতে সালাত আদায় করেন বলায়, তা নাকি আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত শরীয়তের বিরুদ্ধে গেছে! (নাউযুবিল্লাহ)। এক বক্তৃতায় শায়েখ মুযাফফর হানাফী মাযহাবের সালাতকে গাঁজাখোর সালাত বলেছেন এবং 'জাল হাদীসের কবলে রাসূলের সালাত' নামক বইয়ে হানাফী মাযহাবের সালাতে সহীহ হাদীস ছেড়ে জাল হাদীস নির্ভর সালাত বলে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। হানাফীদের সালাতের যে বিষয়গুলো নিয়ে আহলে হাদীসের শায়খেরা জাল হাদীসের উপর ভিত্তি বলে আপত্তি তুলেন তা হল- নাভির নীচে হাত বাধা, ইমামের পিছনে ফাতিহাসহ কোনো কিরাত না পড়ে শ্রবণ করা ও চুপ থাকা, আমিন নিরবে বলা এবং রুকুতে রফউল ইয়াদাঈন না করা। হানাফীদের এসব আমলের বিষয়ে ইমামদের মন্তব্যসহ সংক্ষেপে দলিল পেশ করা হল- 
.
১. ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন: 
رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَضَعَ يَمِينَهُ عَلَى شِمَالِهِ فِي الصَّلاَةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
আমি রসূলুল্লাহ স.কে নামাযের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের ওপর নাভির নীচে রাখতে দেখেছি। (ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৩৯৫৯)
হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী হুলব রা. এর হাত বাধার হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন, 
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم يرون أن يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة وكل ذلك واسع عندهم-
সাহাবী, তাবেয়ী ও পরবর্তী যুগের আলেমগণের আমল ছিল এ হাদীস অনুযায়ী। তাঁরা মনে করতেন, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করতেন নাভির উপরে রাখবে, আর কেউ কেউ মনে করতেন নাভির নীচে রাখবে। তাঁদের দৃষ্টিতে প্রত্যেকটিরই অবকাশ আছে। (জামে তিরমিযী হাঃ ২৫২)
লক্ষ করুন, সাহাবী, তাবেয়ী ও তিরমিযী র.এর যুগ পর্যন্ত আলেমগণকে তিনি দুভাগ করেছেন। এক ভাগের মত ছিল নাভির নীচে হাত বাঁধা, আরেক ভাগের মত ছিল নাভির উপরে হাত বাঁধা। বুকের উপর হাত বাঁধার আমল উল্লেখ করেননি। একইভাবে ইবনুল মুনযির র.ও তাঁর আল আওসাত গ্রন্থে উপরোক্ত দুই ধরনের আমল ও মতের কথাই উল্লেখ করেছেন।
.
২. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন: 
«أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ».
আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (স.)-এর নামাযের মতো নামায পড়াব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে প্রথমবার (অর্থাৎ, তাকবীরে তাহরিমা) ব্যতীত আর কোথাও হাত তুললেন না। এ সম্পর্কে বারা বিন আযেব রা. থেকেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীসটি হাসান। সাহাবা এবং তাবিঈদের একাধিক আলিম এভাবেই আমলের কথা বলেছেন। এটা সুফিয়ান সাওরী এবং কুফাবাসীদেরও মত (তিরমিযী হাঃ২৫৭)
ইমাম তিরমিজী রহ. এটাকে হাসান বললেও শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: صححه غير واحد من الأئمة، “বহু সংখ্যক ইমাম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন”। (সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৮৭৪ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) তিরমিযী, আবু দাউদ এবং নাসাঈ শরীফের তাহকীকে শায়খ আলবানীও এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসনাদে আবু ইয়া’লার তাহকীকে শায়খ হুসাইনও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (মুসনাদে আবু ইয়া’লা: ৫০৪০ নম্বর হাদীসের তাহকীকে) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ: ৭৪৮ ও ৭৪৯, নাসাঈ: ১০২৯ ও ১০৬১, মুসনাদে আহমাদ: ৩৬৮১ ও ৪২১১, আব্দুর রযযাক: ২৫৩৩ ও ২৫৩৪, ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৬ ও ২৪৫৮ এবং আবু ইয়া’লা: ৫০৪০ ও ৫৩০২ নম্বরে বর্ণিত হয়েছে)।
ইবনে হাযম জাহিরী আল মুহাল্লা গ্রন্থে লিখেছেন:
فَلَمَّا صَحَّ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَرْفَعُ فِي كُلِّ خَفْضٍ وَرَفْعٍ بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الإِحْرَامِ ، وَلاَ يَرْفَعُ , كَانَ كُلُّ ذَلِكَ مُبَاحًا لاَ فَرْضًا , وَكَانَ لَنَا أَنْ نُصَلِّيَ كَذَلِكَ , فَإِنْ رَفَعْنَا صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي , وَإِنْ لَمْ نَرْفَعْ فَقَدْ صَلَّيْنَا كَمَا كَانَ يُصَلِّي.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমার পর প্রত্যেক ওঠা-নামার সময় হাত তুলতেন বলে যখন সহীহ হাদীসে প্রমাণিত, তখন এর সব ধরণই মুবাহ বা বৈধ হবে, ফরজ হবে না। আমরা এর যে কোন পদ্ধতি অনুসারেই নামায পড়তে পারি। আমরা যদি রফয়ে ইয়াদাইন করি তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। আর যদি রফয়ে ইয়াদাইন না করি তবুও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাযের মতো আমাদের নামায পড়া হবে। (মুহাল্লা, ৩/২৩৫)
আল্লামা ইব্নুল কায়্যিম রাহঃ তাঁর ‘যাদুল-মাআদ’ গ্রন্থে ফজরের নামাযে কুনুত পড়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গে লিখেছেন,
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يُعنَّف فيه من فعله، ولا مَنْ تَركه، وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه، وكالخلاف في أنواع التشهدات، وأنواع الأذان والإِقامة، وأنواع النسك من الإِفراد والقِران والتمتع،
এটা এমন বৈধ মতপার্থক্যের অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যক্তি এটা করলো এবং যে করলো না কাউকেই দোষারোপ ও নিন্দা করা যায় না। এটা ঠিক তেমনই যেমন নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রুপ তাশাহহুদ বিভিন্ন শব্দে পড়া,আযান-ইকামতের বিভিন্ন নিয়ম অবলম্বন করা, এবং হজ্জের তিনটি নিয়ম-ইফরাদ,কিরান ও তামাত্তু বিষয়ে মতানৈক্যের মতোই। (দ্র. ১/২৬৬)
.
৩. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ-
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। তাহলে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা আ’রাফ: ২০৪)
ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল রা. বলেন: এ আয়াত নামায ও খুতবা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (ইবনে কাসীর: ২/২৮১) অর্থাৎ, খুতবা চলাকালীন ও নামাযে তিলাওয়াত চলাকালীন চুপ থাকতে হবে এবং শুনতে হবে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহ. বলেন: أجمع الناس على ان هذه الآية فى الصلواة “উম্মাত একমত যে, এ আয়াতটি নামাযের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে”। (আলমুগনী: ১/৪৯০) ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহ. তাঁর তাফসীরে তাবারীতে ৩৮টি সনদে  সেসব সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন যাঁরা বলেন যে, এ আয়াতে ইমামের কুরআন পাঠের সময়ে মুক্তাদীদেরকে চুপ থাকা এবং কুরআন শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা রা., আতা বিন আবী রবাহ, মুজাহিদ, যাহহাক, ইবরাহীম নাখঈ, কতাদা, যুহরী, আমের, শা’বী, হাসান বসরী, সাঈদ বিন যুবাইর ও সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. উল্লেখযোগ্য। অবশেষে ইবনে জারীর তাবারী রহ. এ ব্যাপারে নিজে এ মন্তব্য করেন:
قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: وَأَوْلَى الْأَقْوَالِ فِي ذَلِكَ بِالصَّوَابِ قَوْلُ مَنْ قَالَ: أُمِرُوا بِاسْتِمَاعِ الْقُرْآنِ فِي الصَّلَاةِ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ وَكَانَ مَنْ خَلْفَهُ مِمَّنْ يَأْتَمُّ بِهِ يَسْمَعُهُ، وَفِي الْخُطْبَةِ. وَإِنَّمَا قُلْنَا ذَلِكَ أَوْلَى بِالصَّوَابِ، لِصِحَّةِ الْخَبَرِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا»
“এ ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক কথা তাঁদেরটি যাঁরা বলেন যে, ইমাম যখন নামাযে কুরআন পাঠ করবেন তখন তাদেরকে (মুক্তাদী) মনোযোগ দিয়ে শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ইমামের পেছনে যারা ইক্তিদা করেছে তারা ইমামের কুরআন পাঠ শুনবে। এ আয়াতটি খুতবার ব্যাপারেও অবতীর্ণ হয়েছে। এ মতটিকে আমি এ কারণে সর্বাধিক সঠিক বলেছি যে, রসূলুল্লাহ স. থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে: اذا قرأ الإمام فانصتوا “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাক”। (তাফসীরে তাবারী)
.
৪. ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত: 
أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَالَ: {غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ} قَالَ: «آمِينَ» يَخْفِضُ بِهَا صَوْتَهُ " «هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ»
তিনি রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়ছিলেন। যখন রসূলুল্লাহ স. غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বললেন তখন নীরবে ‘আমীন’ বললেন। হাকেম বলেন: এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ। তবে হাদীসটি বুখারী-মুসলিম রহ. কেউই বর্ণনা করেননি। (মুসতাদরাকে হাকেম হাঃ২৯১৩; আবু দাউদ তইয়ালীসী হাঃ ১১১৭)

তবে উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলার হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, যা মুক্তাদীদের শিক্ষার জন্য বলে মন্তব্য করে বিখ্যাত ইমাম ইবনুল কয়্যিম আল জাওযিয়া তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘যাদুল মাআদ’-এ বলেন:
وَإِذَا جَهَرَ بِهِ الْإِمَامُ أَحْيَانًا لَيُعَلِّمَ الْمَأْمُومِينَ فَلَا بَأْسَ بِذَلِكَ، فَقَدْ جَهَرَ عمر بِالِاسْتِفْتَاحِ لَيُعَلِّمَ الْمَأْمُومِينَ، وَجَهَرَ ابْنُ عباس بِقِرَاءَةِ الْفَاتِحَةِ فِي صَلَاةِ الْجِنَازَةِ لِيُعَلِّمَهُمْ أَنَّهَا سُنَّةٌ، وَمِنْ هَذَا أَيْضًا جَهْرُ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِينِ، وَهَذَا مِنَ الِاخْتِلَافِ الْمُبَاحِ الَّذِي لَا يُعَنَّفُ فِيهِ مَنْ فَعَلَهُ وَلَا مَنْ تَرَكَهُ، وَهَذَا كَرَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ وَتَرْكِهِ، وَكَالْخِلَافِ فِي أَنْوَاعِ التَّشَهُّدَاتِ، وَأَنْوَاعِ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ،
 মুক্তাদীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য যদি ইমাম সাহেব কখনও কখনও (দুআয়ে কুনূত) উচ্চস্বরে পড়েন তাহলে কোন ক্ষতি নেই। উমার রা. মুক্তাদীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য ছানা উচ্চ আওয়াজে  পড়েছেন। ইবনে আব্বাস রা. জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা উচ্চ আওয়াজে পড়েছেন মুক্তাদীগণকে শিক্ষা দেয়ার জন্য যে, এটা সুন্নাত। ইমাম কর্তৃক উচ্চ আওয়াজে ‘আমীন’ বলাও এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এটা একটি বৈধ বিষয়য়ে মতবিরোধ; যার ওপর আমলকারী বা আমল পরিত্যাগকারী কাউকে তিরস্কার করা যায় না। এটা নামাযের মধ্যে উভয় হাত উত্তোলন করা বা না করা, তাশাহুদের বিভিন্ন রূপ এবং  আজান-ইকামাত সম্পর্কিত মতবিরোধের মতো। (যাদুল মাআদ: ১/২৬৬) 
.
প্রিয় পাঠক! এখন বলুন, আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর ফতোয়া কি সহীহ হাদীস বা শরীয়তের বিরুদ্ধে গেছে? না কি শায়েখ মুযাফফর মিথ্যাচার করেছেন? 
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহঃ বলেন, 
ومن ظن بأبي حنيفة أو عيره من أئمة المسلمين أنهم يتعمدون مخالفة الحديث الصحيح لقياس أو غيره فقد أخطأ عليهم وتكلم إما بظن وإما يهوي- 
"যে ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা রাহঃ অথবা মুসলিমদের অন্য কোন ইমামদের ব্যাপারে এই ধারণা পোষণ করে যে, তাঁরা কিসায় বা অন্য কোনো কারণে (অগ্রধিকার পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন) সহীহ হাদীস ছেড়ে দিয়েছেন, তবে সে তাঁদের ব্যাপারে ভ্রান্ত বিষয় আরোপ করল এবং নিজের ধারণা বা প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে তাঁদের উপর মিথ্যারোপ করল।" (মাজমাউল ফাতাওয়া, ২০/৩০৪)
.
শায়েখ মুযাফফর তার বক্তৃতায় মসজিদে মাযহাবীদের সাথে জামায়াতে সালাত আদায় না করে একা ঘরে সালাত আদায় করতে বলেছেন এবং আল্লামা মওদুদী রাহঃ সকল মাযহাবের সালাতকে সঠিক বলায় তার বইয়ে সমালোচনা করেছেন। অথচ একই ফতোয়া সৌদি শায়েখরাও দিয়েছেন। দেখুনঃ -

১. শায়েখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন,
"মসজিদে জামায়াতে সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুকিম পুরুষের জন্য ওয়াজিব।.. চাই আপনি হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী কিংবা হাম্বলীর পিছনে নামায পড়ুন, এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা শাফেয়ী বা হানাফী, হানাফী অথবা মালেকী, মালেকী কিংবা হাম্বলী মাযহাবের মাঝে যে ইখতিলাফ তা শাখাগত মাসয়ালার ইখতিলাফ। এসব ইখতিলাফ কোন ক্ষতি করবে না।"
২. শায়েখ বিন বায কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, "কেউ যদি রফউল ইয়াদঈন না করে, জোড়ে আমিন না বলে তার সালাত শুদ্ধ হবে কি না।" জবাবে তিনি বলেন, "نعم হ্যাঁ, তার সালাত শুদ্ধ হবে।" তিনি আরো বলেন, "কোনো মসজিদে যদি জোড়ে আমিন না বলে, রফউল ইয়াদাঈন না করে তুমি এসব করবে না।"
৩. শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রাহঃ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যারা জোড়ে আমিন বলে না, রফউল ইয়াদাঈন করে না... এমন ইমামের পিছনে সালাত শুদ্ধ হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, "হ্যাঁ তাদের পিছনে সালাত পড়লে তা শুদ্ধ হবে।.. যে এসব অস্বীকার করবে সে বিদায়াতি ও গোমড়া।" তিনি আরো বলেন, "কেউ যদি দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলে যে, হানাফীদের সালাত হয় না বা হানাফীদের পিছনে সালাত আদায় করলে সালাত হবে না। তাকে তওবা করতে বলা হবে, যেমন বিদায়াতিদের তওবা করতে বলা হয়।" (বিস্তারিত দেখুন লিংকে।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা দাঈ ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments