Recent Tube

তুমি যাকে দেখো মওদূদীবাদ পাশ্চাত্যে তাকেই দেখে সভ্যতার সংঘাত!? ইবনে যুবাইর।

 তুমি যাকে দেখো মওদূদীবাদ পাশ্চাত্যে    
  তাকেই  দেখে সভ্যতার সংঘাত;

       বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে এ দেশের আলিমদের নূন্যতম জ্ঞান থাকলে নিজের ঘর পুড়তে দেখেও অপরের ঘর জ্বালানোর কথা কল্পনাও নিতে পারত না।দু'খান চটি বই পড়ে মুফতি হলে যা হয় আর কি!এরা যুগ যুগ ধরে মওদূদীবাদ খুঁজে খুঁজে হয়রান হলো।এতে করে কিছু না হলেও দরবারের সেলামী কিন্তু হয়েছে।এটাই কম অর্জন নাকি?

     প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক Samuel P. Huntington মনে করেন যে জাতি রাষ্ট্র(Nation State) এখন আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌল একক নয়।বিশ্বায়নের ফলে জাতি রাষ্ট্রের(Nation State) অবস্থান ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে , তাই ভবিষ্যতে সংঘাত সৃষ্টি হবে সভ্যতার মধ্যে, জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে নয়।হান্টিংটনের এ ধারণা সামাজিক বিজ্ঞান , বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। এতদিন ভূমন্ডলীয় ও জাতিরাষ্ট্র ধারণাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মূল্যায়ন ও বিচার বিশ্লেষণে প্রাধান্য দেয়া হতো।তবে এখন গবেষকরা সংস্কৃতির দ্বন্দ্বকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়নের উপাদান হিসেবে বিবেচনা করছেন।

    বুশ প্রশাসনের ' সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তার উদ্দেশ্য।বুশও নিজে এই যুদ্ধকে(মুসলমানের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের) ক্রুসেডের যুদ্ধ হিসেবে একবার উল্লেখ করেছেন এবং যদিও পরে হয়তো কৌশলগত কারণে পরে তা প্রত্যাহার করেছেন। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সাথে খ্রিস্টানদের দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ একুশ শতকের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে এ ধরনের একটি আভাস ওয়াশিংটন দিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। হান্টিংটন ১৯৯৩ সালে মার্কিন ফরেন এফেয়ার্স জার্নালে একটি প্রবন্ধ লিখেন , পরবর্তীতে যা তিনি আরো সুসংবদ্ধ আকারে বই হিসেবে প্রকাশ করেন(The Clash of Civilisations and the Remarking of the World Orders).এই বই বহু প্রশংসা কৃড়াৃয  পশ্চিমাদের নিকট।তিনি তার লেখায় যুক্তি দেখান যে- বর্তমানে পশ্চিমা দুনিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে এবং এ কারণে পশ্চিমা বিশ্ব চাইবে তার সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখতে অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্যে , যা অন্য সভ্যতা সমূহের নিকট থেকে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। ফলে সভ্যতা সমূহের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।তিনি মূলত বলতে চেয়েছেন কোনো আদর্শিক(রাজনৈতিক) দ্বন্দ্ব বা অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর আগামী দিনে নতুন করে সংকটের জন্ম দিবে না বরং সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বই এই সংকটের জন্ম দিবে অর্থাৎ সভ্যতা সমূহের মধ্যকার সংঘাত হবে আধুনিক বিশ্বের বিরোধের ক্রমবিকাশের সর্বশেষ পর্যায়।স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্ব নতুন করে দ্বন্দ্বের সুযোগ করে দিয়েছে আর তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক সংঘাত। তার মতে ধর্ম ও ভাষা হচ্ছে সংস্কৃতির ভিত্তি। তার ভাষায়- "The fundamental source of conflict in this new world will not be primarily ideologocal or primarily economic. The great divisions among human being and the dominating source of conflict will be cultural. Nation State will remain the most powerful actors in world affairs, but the principal conflicts of global politics will occur between nations and groups of different civilisations. The Clash of Civilisations will dominate global politics".

    তার পুস্তকে আরও যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, সভ্যতাসমূহের মধ্যকার ত্রুটিরেখাগুলো সঙ্কট ও রক্তপাত আরম্ভ করার জন্য জ্বলে ওঠার বিন্দু হিসেবে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক সীমারেখাগুলোকে প্রতিস্থাপিত করেছে। এ ব্যপারে অধ্যাপক হান্টিংটন মুসলমানদের সাথে খ্রিস্টান জগতের ১৩০০ বছরব্যাপী লড়াইয়ের উল্লেখ করে ইসলামকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। বড় আকারের সংঘাত সৃষ্টি হবে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও প্রাচ্যসভ্যতার মধ্যে। এক পর্যায়ে চাইনিজ সভ্যতাও হাত মেলাতে পারে ইসলামী সভ্যতার সাথে।

     সভ্যতার বিচারে হান্টিংটন মানব জাতিকে নয়টি ভাগে ভাগ করেছেন।
তার মধ্যো প্রাধান্য পেয়েছে ইসলামী সভ্যত( কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান , তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর, ইরাক, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আরব দেশসমূহ, পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া)।
পাশ্চাত্যের দ্বিতীয় এবং প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে হান্টিংটন এর মত অনুযায়ী ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতা।ইসলামকেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর সংঘাতই তার নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য হিসাবে দেখিয়েছেন।

     অধ্যাপক হান্টিংটন যে পাশ্চাত্য জগতের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাত কে অনিবার্য বলে মত প্রকাশ করেছেন তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে , উল্লেখিত ইসলামী রাষ্ট্রগুলো পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে , যেখানে মার্কিনীরা অস্ত্র বিস্তার রোধের মত সার্বজনীন আদর্শ অনুসরণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।

     অধ্যাপক হান্টিংটনের এই গবেষণার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি" Dialogue Among Civilisations" শীর্ষক একটি প্রস্তাব করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, নেতিবাচক অমানবিক দ্বন্দ্বের স্থলে সভ্যতাসমূহের মধ্যে ইতিবাচক ও সুফল প্রদানকারী আলাপ- আলোচনায় আত্মনিয়োগ করা প্রয়োজন। এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান ২০০১ সালকে সভ্যতাসমূহের মধ্যে মত বিনিময়ের বছর বা "Year of Dialogue Among Civilisations" হিসেবে ঘোষণা করেন।

     ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাবলির পর প্রেসিডেন্ট বুশ এজন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়গ্রহণকারী ওসামা বিন লাদেন ও তার আল কায়দাকে দোষী সাব্যস্ত করে সে দেশটির উপর হামলা চালান। পরবর্তী বছরের শুরুতে কংগ্রেসে প্রদত্ত তার State of the Union(মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রতি বছরের শুরুতে কংগ্রেসে যে ভাষণ দেন তাই State of the Union) ভাষণে দুটো মুসলিম দেশ ইরান ও ইরাক এবং উত্তর কোরিয়া কে শয়তানের অক্ষশক্তি(Axis of evil) বলে আখ্যায়িত করেন এবং  ইরাকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেন তা হান্টিংটনের সভ্যতাসমূহের মধ্যে সংঘাত সম্পর্কিত তাত্ত্বিক চিন্তাধারা থেকে অনুপ্রাণিত বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। হান্টিংটন চুড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখাতে চেয়েছেন মূল সংঘাতটি হবে পাশ্চাত্য বনাম  ইসলামের মধ্যে।
প্রবন্ধের প্রথম বাক্য এবং শেষ প্যারা থেকে লেখকের চিন্তাধারা স্পষ্পভাবে ফুটে উঠেছে।প্রথম বাক্যটি নিম্নরুপ:
    কতক পশ্চিমা লোক বিল ক্লিনটনসহ(বিল ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকা কালে লেখা)যুক্তি দেন যে,পাশ্চাত্যেে সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই।সমস্যা শুধু চরমপন্থি আগ্রাসীদের সাথে।কিন্তু বিগত চোদ্দশত বছরের ইতিহাস ভিন্ন কথাই প্রমাণ করে।পাশ্চাত্যের জন্য মৌলবাদী সমস্যা নয়,ইসলামই আসল সমস্যা যা ভিন্ন একটি সভ্যতা।
-----------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments