Recent Tube

রুটির ফ্যাক্টরী যখন কবরে! কথিত কিচ্ছা কাহিনি ও আমাদের বুঝার বিষয়ে প্রকৃত এনালাইসিস। মো জাহের উদ্দাম লস্কর।


রুটির ফ্যাক্টরী যখন কবরে!
--------------------------------- 
আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে কোন কিছুর জন্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কেউ তার দু:খ-দূর্দশা, অভাব-অনটন দূর করতে পারে এমন বিশ্বাস করা হচ্ছে শিরক। এমন অনেক বর্ননা-ই ফাযয়েলে আমল-এ বিদ্যমান যার কিছু কেচ্ছা নিচে বর্ননা করছি:

 ■ কিচ্ছা -১
মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্ধ্‌লভী 'ফাযায়েলে আ'মাল'-এ কি লিখেছেন। রসূলুল্লাহ্‌ ﷺ  বলেছেনঃ
-যেই ব্যাক্তির কোন জিনিসের প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন ঐ ব্যাক্তির ক্ববরের পার্শ্বে গিয়া আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করে।[ ফাযায়েলে দরূদ, পৃষ্ঠা ৯৬, হিকায়াত ৩৫]

 ■  কিচ্ছা -২ 
 শায়েখ আবুল আকতা বলেন আমি মদীনায়ে মোনাওয়ারা পৌছে পাঁচদিন সেখানে অবস্থান করিয়াছিলাম, কিন্তু ঐ পাঁচদিন পর্যন্ত আমি তেমন কোন মনের খোরাক পাইতেছিলাম না, অন্যত্র আছে পাঁচদিন যাবত আমি কিছুই খাইতে পাই নাই। তাই আমি কবর শরীফের নিকট গিয়া হুজুরে পাক ﷺ এবং হজরত আবু বকর ও হজরত ওমরকে ছালাম আরজ করিয়া বলিলাম ইয়া রাছূলাল্লাহ আজ আমি আপনার মেহ্‌মান। তারপর সেখান হইতে একটু সরিয়া মিম্বরের পিছনে আমি শুইয়া পড়িলাম। স্বপ্নে আমি হুজুরকে দেখিতে পাইলাম যে হুজুরের ডানদিকে হজরত ছিদ্দীকে আকবর বামদিকে ওমরে ফারুক ও সামনে হজরত আলী (রা)। হজরত আলী (রা) আমাকে নাড়া দিয়া বলিলেন, ‘উঠ হুজুরে পাক তাশ্‌রীফ আনিয়াছেন’। আমি উঠলাম ও প্রিয় নবীর দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করিলাম। হুজুর আমাকে একটা রুটি দান করিলেন আমি উহার অর্ধেক খাইলাম। জাগ্রত হইয়া দেখি বাকী অর্ধেক আমার হাতে রহিয়াছে।[ফাযায়েলে হ্জ্ব পৃষ্ঠা ২৫৬]

 ❏ তাহক্বীকঃ
শায়খুল হাদিস যাকারিয়া কান্ধ্‌লভী কবরের নিকট গিয়ে কোন কিছু চাওয়াকে জায়েজ বানানোর জন্য প্রথম কিচ্ছাটিতে একটি মিথ্যা হাদীস তৈরি করেছেন এবং পরের কিচ্ছায় পুরো একটি গল্প লিখেছেন যার মধ্যে শিরকী আকিদার শিক্ষা লুক্বায়িত।

  অনেক তাবলীগি ভাইকে বলতে শোনা যায় এই কাহিনীগুলোতে কোন শিরীক নাই। আসুন কোরআন ও সহীহ হদিসের মানদন্ডে জানার চেষ্টা করি এই কাহিনীগুলোতে শিরক আছে কিনা। 

   মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কুর’আনে বলেছেন:
-আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।[সূরা ইউনূস- ১০৬]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর বর্তায় না এবং যার সম্পর্কে তিনি জানেন না, কোথায় সে থাকে এবং কোথায় তাকে সোপর্দ করা হয়৷ সবকিছুই একটি পরিষ্কার কিতাবে লেখা আছে৷ [সুরা হুদ-৬]

   আয়েশা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ-এর ওফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি চাদর টেনে টেনে মুখমণ্ডলের উপর দিচ্ছিলেন। কিন্তু আবার যখন অস্বস্তি বোধ করছিলেন তখন তা সরিয়ে দিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি বলছিলেনঃ
‘ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের উপর আল্লাহ্‌র লা’নত বর্ষিত হোক। তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বা সিজদার স্থান করে নিয়েছে। (অর্থাৎ সেখানে তারা সিজদা করে।)’ আর ইয়াহুদিদের মত না করতে রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বার বার হুঁশিয়ার করে দিচ্ছিলেন। [বূখারীঃ ২/১২৪৯ (ই.ফা.বা) মুসলিমঃ ২/১০৭৬ (বা.ই.সে)]

    জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি নবী ﷺ  এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছি যে ‘তোমাদের মধ্য থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহ্‌র কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ্‌ ইবরাহীমকে (আঃ) যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন আমাকেও তিনি ঠিক তেমনিভাবে খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবু বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো, তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করতো। তবে তোমরা কিন্তু কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানাবেনা। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। [মুসলিমঃ ২/১০৭৭]

  ❏ ইমাম আবু হানিফা(রহি) এর উক্তিঃ
ফাজায়েলের অনুসারীরা নিজেদেরকে হানাফী মাযহাবের অনুসারী দাবী করেন। দেখুন ইমাম আবু হানিফা বলেছেন,
১। এটা কারো জন্য উচিত হবে না তিনি (আল্লাহ্‌) ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে বা উসিলায় তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) ডাকা এবং তিনি যেভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করার অনুমতি ও আদেশ দিয়েছেন, তা ব্যতীত অন্য কোন উপায় অবলম্বন করা। যেমনটি তিনি আদেশ করেছেনঃ 'আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।(সূরা আল-আ’রাফ: ১৮০) [আদ-দুর্‌রুল মুখ্‌তার মা’আ হাশিয়া রাদ্‌দুল মুখ্‌তার ৬/৩৯৬-৩৯৭]

  ২।  এটা প্রার্থনাকারীর জন্য ঘৃণিত যে, সে বলে, ‘আমি তোমার কাছে চাচ্ছি অমুক ও তমুকের উসিলায়’, অথবা, ‘তোমার নবী ও রাসূল গণের উসিলায়’ এবং ‘পবিত্র ঘর ও পবিত্র স্থানের উসিলায়।’ [শারহুল-আকিদাতুত্‌-তাহাত্তীয়্যাহ্‌ (পৃষ্ঠা ২৩৪) এবং ইসাফুস্‌-সাদাতুল্‌-মুস্‌তাকীম (২/২৮৫) এবং শারহুল-ফিক্‌হিল-আক্‌বার (পৃষ্ঠা ১৯৮)- আল-ক্বারী]

   ৩। এটা কারো জন্য উচিত হবে না আল্লাহ্‌কে ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে আল্লাহ্‌কে ডাকা এবং এটা তার জন্য আরও ঘৃণিত হবে যদি সে বলে, ‘তোমার কুর্‌সির সম্মানের নামে/উসিলায়’ অথবা ‘তোমার সৃষ্টির নামে/উসিলায়’। [আল-ফিক্‌উল আবসাত (পৃষ্ঠা ৫৬)]
অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা নিজেও তার অনুসারীদের আল্লাহ্‌ ভিন্ন অন্য কারো কাছে সাহায্য না চাইতে বলেছেন। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে কিভাবে সাহায্য চাইতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন।

   ❏ পর্যালোচনাঃ
  আমরা পবিত্র কুর’আন ও সহীহ্‌ হাদীস থেকে জানতে পারলাম কবরকে পুজার স্থান বানানো, কবরবাসীর কছে কিছু চাওয়া শরীয়তে নিষেধ। কবরের কাছে সাহায্য চাওয়া ও দু’আ করা শিরক। আমরা আরও জানলাম কোন সাহায্যের আশায় আল্লাহ্‌কে ছাড়া অন্য কাওকে ডাকাও নিষেধ। তাইতো রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর জীবনের শেষ দিকে কবরবাসীর কাছে চাইতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যারা এমন কাজ করবে তাদের সবাইকে অভিশাপ দিলেন।
কিন্তু উল্লেখিত কেচ্ছা দুটির মাধ্যমে যাকারিয়া কান্ধ্‌লভী সেই কাজটি-ই করলেন। তিনি এই গল্প দ্বারা কি প্রমান করতে চান? প্রমান করতে চান যে কবরের কাছে গিয়ে দু’আ করলে নবী ﷺ নিজে তার সাথে দেখা করতে আসেন ও এক টুকরা রুটি দ্বারা পুরস্কৃত করেন। এবং স্বপ্নের বস্তু স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রয়ে যায়। না! বরং যাকারিয়া কান্ধ্‌লভী এটা বলতে চায় যে, আল্লাহ্‌র রাসূল ﷺ ও প্রসিদ্ধ সেই সাহাবীরা শায়খ আকতার সাথে বাস্তবে দেখা করেছেন,স্বপ্নে নয়!

  ঐ দুটি কেচ্ছার কারনে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়:
◉ আল্লাহকে ছেড়ে মৃতুর পর নবীর মাজারে গিয়ে খাদ্যের প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক নয় কি?
◉ মৃতুর পর নবী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আক্বিদাহ পোষন করা শিরক নয় কি?
◉ এই রকম শিরকী আকিদাহ কি মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, নাকি জাহান্নামের দিকে?

   ❏ শিরককারীর ঈমান আমল সব বরবাতঃ
শির্‌ক এমনই ভয়ংকর যে অল্প পরিমান শির্‌ক মানুষের সারা জীবনের ঈমান আমল ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কারন আল্লাহ বলেন,
-নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরককে মাফ করেন না৷এ ছাড়া অন্যান্য যত গোনাহর হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে৷ [সুরা নিসা- ৪৮]

  ❏ উপসংহারঃ
পরও যদি তাবলীগের ভাইয়েরা বলে থাকেন তাবলীগের কিতাব সমুহের শিরক শিখানো হয় না, মাজার পুজার দিকে আহবান করা হয় না, ঈমান ও আমল পরিশুদ্ধ করানো হয় তাদেরকে বলবো নীচের গল্পটি একবার অনুধাবন করুন:
এক পাতিল গরম পানিতে একটি ব্যাঙ ছেড়ে দেওয়া হলো। ব্যাঙটি সাথে সাথে লাফ দিয়ে বের হয়ে এলো। কারন এটা যে গরম পানি সে সেটা সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছে। আবার এক পাতিল ঠান্ডা পানিতে সেই ব্যাঙটিকেই ছেড়ে দেওয়া হলো। পাতিলের নিচে কুপি জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। ব্যাঙটি টের পেলো না। আপন মনে খেলতে লাগেলো। গরম কিছুটা বাড়তে থাকলে, সে স্থান পরিবর্তন করে গরমের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। এভাবেই চললো ৩/৪ মিনিট। কিন্তু পানি যখন ফুটতে শুরু করলো তখন সে আর পাতিল হতে বের হয়ে আসতে পারলো না। কারণ বড় লাফ দেওয়ার মতো শক্তি সে আগেই ছোট ছোট লাফ দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাঙটি জীবিত অবস্থায়ই সিদ্ধ হতে থাকবে। 

    তাবলীগ জামায়াতের ভাইদের অবস্থা হয়েছে ঐ সিদ্ধ হতে থাকা ব্যাঙ এর মত; শির্‌ক দেখেও বলছেন শিরক নেই। শত শত ভুল দেখেও বলছে ওমুক বইতেও তো ভুল আছে, ফাজায়ালের কিতাবে থাকলে সমস্যা কি?

   তাবলীগ জামায়াতের ভাইয়েরা!
আশাকরি অল্প লাভের জন্য নিজের বড় ক্ষতি করবেন না।
  

Post a Comment

0 Comments