Recent Tube

আলেম কাকে বলে? প্রকৃত আলেম কারা? আলেমের মর্যাদা ও আলেমের অমর্যার পরিণতি এবং দরবারী আলেম, ইলম গোপনের পরিণতি এবং পথভ্রষ্ট আলেমের পরিণতি; শামীম আজাদ।



  
    আলেম কাকে বলে? প্রকৃত আলেম কারা? আলেমের মর্যাদা ও আলেমের অমর্যার পরিণতি এবং দরবারী আলেম, ইলম গোপনের পরিণতি এবং পথভ্রষ্ট আলেমের পরিণতি

 আলেমের সংজ্ঞা

 আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ
নিশ্চয়ই তাঁর বান্দাদের (মধ্যে) আলেমগণই আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিশালী ও ক্ষমাশীল। সূরা আল-ফাতিরঃ ২৮

 এ আয়াতের ব্যাপারে ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেন, 
فَمَنْ عَلِمَ أَنَّهُ عَزَّ وَجَلَّ قَدِيرٌ أَيْقَنَ بِمُعَاقَبَتِهِ عَلَى الْمَعْصِيَةِ
 আলেম তারাই যারা আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপার জ্ঞান রাখেন। তারা আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে কোনো সন্দেহের মধ্যে নেই (বান্দার অপরাধ যা-ই হোক না কেন)।

 আল-রাবি’ বর্ণনা করেন যে ইবন আব্বাস বলেন, (مَنْ لَمْ يَخْشَ اللَّهَ تَعَالَى فَلَيْسَ بِعَالِمٍ) যে আল্লাহ (ও তার শাস্তি)-কে ভয় করেনা সে আলেমই নয়।

عَنْ يَحْيَى بْنِ جَعْدَةَ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «يَا حَمَلَةَ الْعِلْمِ اعْمَلُوا بِهِ، فَإِنَّمَا الْعَالِمُ مَنْ عَمِلَ بِمَا عَلِمَ وَوَافَقَ عِلْمُهُ عَمَلَهُ، وَسَيَكُونُ أَقْوَامٌ يَحْمِلُونَ الْعِلْمَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، يُخَالِفُ عَمَلُهُمْ عِلْمَهُمْ، وَتُخَالِفُ سَرِيرَتُهُمْ عَلَانِيَتَهُمْ، يَجْلِسُونَ حِلَقًا فَيُبَاهِيَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيَغْضَبُ عَلَى جَلِيسِهِ أَنْ يَجْلِسَ إِلَى غَيْرِهِ وَيَدَعَهُ، أُولَئِكَ لَا تَصْعَدُ أَعْمَالُهُمْ فِي مَجَالِسِهِمْ، تِلْكَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى
 
  ইয়াহইয়া ইবনু জা’দাহ আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: হে ইলমের ধারক (আলেম)গণ! তোমরা তোমাদের ইলম অনুযায়ী আমল কর; কেননা, আলেম তো হলেন সেই ব্যক্তি যিনি তার জ্ঞান অনুসারে আমল করেন এবং তার আমল তার ইলম অনুসারে হয়। আর অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে, যারা ইলমের ধারক (আলেম) হবে কিন্তু তাদের ইলম তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তাদের আমল হবে তাদের ইলমের বিপরীত। তাদের গোপন বিষয়সমূহ হবে প্রকাশ্য বিষয়সমূহের বিপরীত। তারা গোলাকৃতি হয়ে (হালাকায়) বসে একে অপরের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি তার নিকট না বসে অন্যের নিকট বসলে সে এতে রাগান্বিত হবে এবং সে তাকে সেখানে বসতে নিষেধ করবে। আর এরা হলো ঐ সকল লোক যাদের এ মজলিসে কৃত আমলসমূহ আল্লাহ তা’আলা’-র নিকট উঠবে না।
সুনানে দারেমী-৩৯৪

تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّى
 জাহান্নাম সে ব্যাক্তিকে ডাকবে যে সত্যের প্রতি পিঠ দেখিয়েছিল এবং মূখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। 
সূরা মা'আরিজঃ ১৭

وَعَنْ سُفْيَانَ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْه قَالَ لِكَعْبٍ مَنْ أَرْبَابُ الْعِلْمِ قَالَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ بِمَا يَعْلَمُونَ قَالَ فَمَا أَخْرَجَ الْعِلْمَ مِنْ قُلُوبِ الْعُلَمَاءِ قَالَ الطَّمَعُ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ

  সুফ্ইয়ান সাওরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

       উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) কা‘ব (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, প্রকৃত ‘আলেম কারা? কাব (রহঃ) বললেন, যারা অর্জিত ‘ইলম অনুযায়ী আমাল করে। উমার (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয় কোন্ জিনিস? কা'ব (রহঃ) বললেন, (সম্মান ও সম্পদের) লোভ-লালসা" 
দারিমী ৫৭৫, মিশকাতুল মাসাবিহ ২৬৬

   আলেম দুই শ্রেণীর;

وَعَنِ الْأَحْوَصِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ ﷺ عَنِ الشَّرِّ فَقَالَ لَا تَسْأَلُونِي عَنْ الشَّرِّ وَاسْأَلُونِي عَنْ الْخَيْرِ يَقُولُهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ أَلاَ إِنَّ شَرَّ الشَّرِّ شِرَارُ الْعُلَمَاءِ وَإِنَّ خَيْرَ الْخَيْرِ خِيَارُ الْعُلَمَاءِ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ

  আহ্ওয়াস ইবনু হাকীম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মন্দ (লোক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, আমাকে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, সাবধান! খারাপ মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে মন্দ ‘আলেম। আর ভাল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল ভাল ‘আলেমরা।  
দারিমী ৩৭০, মিশকাতুল মাসাবিহ ২৬৭

  আলেমের মর্যাদা 

وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
‘যাদেরকে এলেম দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে অনেক স্তরে মর্যাদা দিয়েছেন।’ 
সূরা মুজাদালাহঃ ১১

هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
  যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে?
সূরা যুমারঃ ৯

  যার কোন ইলম নেই–তার জন্য আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,
فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
‘অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ’। 
সূরা আম্বিয়াঃ ৭

  অন্য আয়াতে এসেছে, 

فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
‘ অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে’। 
সূরা নাহলঃ ৪৩

وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ مِنْ إجْلالِ اللهِ تَعَالَى : إكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ المُسْلِمِ، وَحَامِلِ القُرآنِ غَيْرِ الغَالِي فِيهِ، وَالجَافِي عَنْهُ، وَإكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِط». حديث حسن رواه أَبُو داود

  আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পাকা চুলওয়ালা বয়স্ক মুসলিমের, কুরআন বাহক (হাফেয ও আলেম)-এর যে কুরআনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞাকারী নয় এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সম্মান করা এক প্রকার আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা।’’
আবূ দাউদ ৪৮৪৩, রিয়াদুস সালেহিন ৩৫৮

 وَعَن أَبي الدَّردَاءِ  قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُمَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَبْتَغِي فِيهِ عِلْماً سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ المَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ العِلْمِ رِضاً بِمَا يَصْنَعُ وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي المَاءِ وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ وَإِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَإِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بحَظٍّ وَافِرٍرواه أَبُو داود والترمذي

   আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে, যাতে সে জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর ফিরিশতাবর্গ তালেবে ইলমের জন্য তার কাজে প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি বিছিয়ে দেন। অবশ্যই আলেম ব্যক্তির জন্য আকাশ-পৃথিবীর সকল বাসিন্দা এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আবেদের উপর আলেমের ফযীলত ঠিক তেমনি, যেমন সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জের উপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত। উলামা সম্প্রদায় পয়গম্বরদের উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইল্মের (দ্বীনী জ্ঞানভান্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে পর্যাপ্ত অংশ লাভ করল।” 
আবু দাঊদ ৩৬৪৩, তিরমিযী ২৬৮২, ইবনে মাজাহ ২২৩, ইবনে হিব্বান ৮৮, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৬৯৬, সহীহ তারগীব ৬৭, দারেমী ৩৪২

  وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالْاۤخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَه وَأَهْلَ السَّموتِ وَالْأَرَضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

  আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এদের একজন ছিলেন ‘আবিদ (‘ইবাদাতকারী), আর  দ্বিতীয়জন ছিলেন ‘আলেম (জ্ঞান অনুসন্ধানকারী)। তিনি বললেন, ‘আবিদের উপর ‘আলেমের মর্যাদা হল যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ‘ইলম শিক্ষাকারীর জন্য দু’আ করে।  
সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিযী ২৬৭৫, সহীহুত্ তারগীব ৮১, দারিমী ১/৯৭-৯৮, মিশকাতুল মাসাবিহ ২১৩

ورَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ مَكْحُوْلٍ مُرْسَلًا وَلَمْ يَذْكُرْ رَجُلَانِ وَقَالَ فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلى اَدْنَاكُمْ ثُمَّ تَلَا هذِهِ الاۤيَةً (اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلمَاءٌ) وَسَرَدَ الْحَدِيْثَ اِلى اۤخِرِه

মাকহূল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

দারিমী এ হাদীসে মাকহূল (রহঃ) থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, ‘আবিদের তুলনায় ‘আলিমের মর্যাদা এমন, যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের উপর আমার মর্যাদা। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবী)

“নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ‘আলিমরাই তাঁকে ভয় করে”- সূরা ফাত্বির/মালায়িকাহ্ ৩৫: ৮

এছাড়া তার হাদীসের অবশিষ্টাংশ তিরমিযীর বর্ণনার অনুরূপ।  
দারিমী ২৮৯, মিশকাতুল মাসাবিহ ২১৪

عنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لَيْسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَمْ يُجِلَّ كَبِيرَنَا وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقَّهُ

উবাদাহ বিন স্বামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সে ব্যক্তি আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান দেয় না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার চেনে না।” (আহমাদ ২২৭৫৫, ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৯৫)
  

আলেমের অমর্যার পরিণতি 

(صحيح لغيره) وروي عن ابن عمر عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُبَاهِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ لِيَصْرِفَ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ فَهُوَ فِي النَّارِ. رواه ابن ماجه

ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বিদ্যাম্বেষণ করবে এই উদ্দেশ্যে যে, তা দ্বারা আলেমদের মাঝে গর্ব করবে, মূর্খ লোকদের সাথে ঝগড়া করবে অথবা তার দিকে মানুষের দৃষ্টি ফিরাবে, তবে সে জাহান্নামে যাবে।” 
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ)
সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব ১০৯

নিকৃষ্ট আলেম যারা

وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُوْشِكُ اَنْ يَّاْتِىَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَّا يَبْقى مِنَ الْإِسْلَامِ اِلَّا اسْمُه وَلَا يَبْقى مِنَ الْقُرْاۤنِ اِلَّا رَسْمُه مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَّهِىَ خَرَابٌ مِّنَ الْهُدى عُلَمَاءُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ اَدِيْمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيْهِمْ تَعُوْدُ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِيْ شُعَبِ الْاِيْمَانِ

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শীঘ্রই মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শুধু নাম ব্যাতীত ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সেদিন কুরআনের অক্ষরই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মাসজিদ্ গুলোতো বাহ্যিকভাবে আবাদ হতে থাকবে, কিন্তু হিদায়াতশুন্য থাকবে। তাদের ‘আলিমগন হবে আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক, তাদের নিকট থেকেই (দ্বীনের) ফিতনাহ-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর এ ফিতনাহ তাদের দিকেই ফিরে আসবে।  
শু‘আবুল ঈমান ১৯০৮, মিশকাতুল মাসাবিহ ২৭৬

আহ্‌ওয়াছ ইবনু হাকীম থেকে বর্ণিতঃ:

আহ্‌ওয়াছ ইবনু হাকীম তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বললেন, মন্দ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস কর না; বরং আমাকে ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর । এটা তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, জেনে রাখ, সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক হল আলেমরা, যারা খারাপ এবং সর্বাপেক্ষা ভাল হচ্ছে আলেমদের মধ্যে যারা ভাল।
দারেমী ৩৭০; মিশকাত ২৪৯ 

عَنْ زِيَادِ بْنِ حُدَيْرٍ، قَالَ: قَالَ لِي عُمَرُ: «هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الْإِسْلَامَ؟» قَالَ: قُلْتُ: لَا، قَالَ: يَهْدِمُهُ زَلَّةُ الْعَالِمِ، وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ

যিয়াদ ইবনু হুদাইর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমি কি জানো, কিসে ইসলামকে ধ্বংস করবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আলিমগণের পদস্খলন বা ভ্রান্তি, কিতাব তথা কুরআন নিয়ে মুনাফিকদের ঝগড়া-বিবাদ, গোমরাহকারী আইম্মা (নেতা)-দের শাসন-পরিচালনা।
দারেমী ২২০

দরবারী আলেম 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ سَكَنَ الْبَادِيَةَ جَفَا وَمَنِ اتَّبَعَ الصَّيْدَ غَفَلَ وَمَنْ أَتَى أَبْوَابَالسَّلاَطِينِ افْتُتِنَ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গ্রামে বাস করে সে হয় কঠোর স্বভাবের, যে ব্যক্তি শিকারের পেছনে ঘুরে সে হয় গাফেল আর যে ব্যক্তি বাদশাহের দরবারে যায় সে ফিতনায় নিপতিত হয়। (আত তিরমিজী: ২২৫৬, মিশকাতুল মাসাবীহ: ৩৭০১ 

وَعَنْ زِيَادِ بْنِ حُدَيْرٍ قَالَ قَالَ لِي عُمَرُ هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الْإِسْلَامَ؟ قُلْتُ لَا قَالَ يَهْدِمُه زَلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّينَ
যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলতে পারো, ইসলাম ধ্বংস করবে কোন জিনিসে? আমি বললাম, আমি বলতে পারি না। তখন তিনি [‘উমার (রাঃ)] বললেন, ‘আলিমদের পদস্খলন, আর আল্লাহর কিতাব (কুরআন) নিয়ে মুনাফিক্বদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসন। 
মিশকাতুল মাসাবী: ২৬৯, সুনানে দারিমী ২১৪

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى، عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم - وَقَالَ مَرَّةً سُفْيَانُ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم - وَقَالَ ‏ "‏ مَنْ سَكَنَ الْبَادِيَةَ جَفَا وَمَنِ اتَّبَعَ الصَّيْدَ غَفَلَ وَمَنْ أَتَى السُّلْطَانَ افْتُتِنَ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জংগলে বসবাসকারীর অন্তর কঠিন হয়ে যায়। যে লোক শিকারের পিছনে ছুটে সে কর্মবিমুখ হয়। আর যে লোক রাজা-বাদশার নিকট আসা-যাওয়া করে সে বিপদগ্রস্থ হয়।
সুনানে আবু দাউদ ২৮৫৯

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রদিআল্লাহু আ’নহু) বলেছেন, “একজন ব্যক্তি যে তার দ্বীনকে সাথে নিয়ে কোন শাসকের নিকট যায়, সে (শাসকের কাছ থেকে) বের হয়ে আসে তার সাথে কোন কিছু না নিয়েই।” (অর্থাৎ সে দ্বীন রেখে আসে) 

ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: " إِذَا رَأَيْتَ الْقَارِئَ يَلُوذُ بِالسُّلْطَانِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لِصٌّ وَإِذَا رَأَيْتَهُ يَلُوذُ بِالْأَغْنِياءِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ مُرَاءٍ (شعب الإيمان)

“যখনই তুমি কোন আলেমকে দেখবে শাসকদের কাছে গমন করতে, জেনে রাখো, সে হচ্ছে একজন চোর। আর যদি তাকে ধনী লোকদের কাছে আনাগোনা করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে।” 
.
সুফিয়ান আস-সাওরি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إِنْ دَعَوْكَ أَنْ تَقْرَأَ عَلَيْهِمْ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ , فَلَا تَأْنَفْهُمْ (شعب الإيمان)

“তোমরা সেখানে যেও না, এমনকি তারা যদি তোমাদেরকে শুধুমাত্র ‘কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করার জন্যও ডাকে।” 

(দরবারি সে যেই হোক না কেন, তার থেকে সতর্ক হওয়াই দ্বীন ইসলামের শিক্ষা। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ , সাহাবিগণ (রদিআল্লাহু আনহুম) থেকে শুরু করে সালাফদের সকলেই সাবধান করেছেন। কেন বলছি হঠাৎ দরবারিদের কথা তা বুঝতে হলে প্রথম কমেন্ট দ্রষ্টব্য। দরবারিদের ভ্রষ্টতায় অবাক হওয়ার কিছু নেই, অবাক হওয়ার বিষয় হল ভ্রষ্টতার সীমা পরিসীমা।)

عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ خَرَجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ تِسْعَةٌ خَمْسَةٌ وَأَرْبَعَةٌ أَحَدُ الْعَدَدَيْنِ مِنَ الْعَرَبِ وَالآخَرُ مِنَ الْعَجَمِ فَقَالَ ‏ “‏ اسْمَعُوا هَلْ سَمِعْتُمْ أَنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ فَمَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَىَّ الْحَوْضَ وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ وَهُوَ وَارِدٌ عَلَىَّ الْحَوْضَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ مِسْعَرٍ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ قَالَ هَارُونُ فَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ عَاصِمٍ الْعَدَوِيِّ، عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ ‏.‏ قَالَ هَارُونُ وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، وَلَيْسَ، بِالنَّخَعِيِّ عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ حَدِيثِ مِسْعَرٍ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ حُذَيْفَةَ
কাব ইবনু উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আমাদের সামনে আসলেন। আমরা সংখ্যায় ছিলাম নয় জন; পাঁচ জন আরব এবং চার জন অনারব অথবা এর বিপরীত। তিনি বললেনঃ তোমরা শোন, তোমরা কি শুনেছ? খুব শীঘ্রই আমার পরে এমন কিছু সংখ্যক শাসক আবির্ভূত হবে, যে লোক তাদের সংস্পর্শে গিয়ে তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে এবং তাদেরকে অত্যাচারে সহায়তা দান করবে সে আমার দলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলে অন্তর্ভুক্ত নই। আর সে ব্যক্তি হাওযে কাওসারে আমার সামনে পৌছতে পারবে না। আর যে লোক তাদের সংস্পর্শে যাবে না, তাদের অত্যাচারে সহায়তা দান করবে না এবং তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে না, সে আমার এবং আমিও তার। সে হাওযে কাওসারে আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে। আত তিরমিজী: ২২৫৯

ইলম গোপনের পরিণতি 
============================

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ 
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।  
 সূরা বাকারা-১৭৪

أُولَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ 
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।
সূরা বাকারা-১৭৫
--------------------------

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ جَابِرٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক এমন ইল্‌ম (জ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় যা সে জানে, অতঃপর সে তা গোপন করে, তাকে ক্বিয়ামাতের দিবসে আগুনের লাগাম পরানো হবে।
ইবনু মা-জাহ ২৬৪
জামে' আত-তিরমিজি ২৬৪৯

পথভ্রষ্ট আলেম উম্মতের জন্য ফিতনা:

আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, “আমি নবী ﷺ-এর নিকটে একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, ‘এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্‌-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম,

‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্‌-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [নবী ﷺ] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ।’” 
মুসনাদ আহমদ ২০৩৩৫

অন্য বর্ণনায় এসেছে: শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: "إِنِّى لاَ أَخَافُ عَلَى أُمَّتِى إِلاَّ الأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ، فَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِى أُمَّتِى لَمْ يُرْفَعْ عَنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

নবী ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্‌-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ ব্যতীত। এভাবে, যখন আমার উম্মাহ্‌-এর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠানো হবে, এটা তুলে নেওয়া হবে না বিচার দিবস পর্যন্ত।”
মুসনাদ আহমাদ ১৬৪৯৩, ২১৩৬০, ৩১৩৫৯, ২০৩৩৪, এবং, আদ্-দারিমী ২১১ ও ২১৬।

পথভ্রষ্ট আলেমদের ভ্রষ্টতায়ও আল্লাহর গজব নেমে আসতে পারে

আল্লাহ তায়ালা যাকে ইলম-জ্ঞান দান করেন, তার উচিত সেটাকে মর্যাদা দেয়া। কেউ দুনিয়ার তুচ্ছ বস্তুকে ইলমের উপর প্রাধান্য দিলে আল্লাহ তায়ালা তার থেকে তা ওঠিয়ে নেন।ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নবীদের পরেই আলেমদের মর্যাদা। 

হাদিসের ভাষায় 
আবু দারদা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন
الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ
‘আলেমরা নবীর ওয়ারিশ।’ 
আবু দাউদ ৩৬৪১, জামে আত তিরমিজি ২৬৮২ ইবনে মাজাহ ২২৩, দারেমী ৩৪২

আলেমের মর্যাদা সম্পর্কে সরাসরি আল কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যাদেরকে এলেম দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে অনেক স্তরে মর্যাদা দিয়েছেন।’ 
সূরা মুজাদালাঃ ১১

আলেমদের মর্যাদার কারণ হলো তারা নবীদের আদর্শকে বাস্তবায়ন করেন। শয়তানের প্ররোচনা ও ধোঁকায় পড়ে যারা পথভ্রষ্ট হয়, আলেমরা তাদেরকে সরল পথের দিশা দেন। বড় ব্যক্তিদের ভালো উদ্যোগের ফল হয় অনেক ব্যাপক। তাদের পদস্খলনেও নেমে আসতে পারে পুরো জাতির ওপর বিপর্যয়। তাই আলেমদের ব্যাপারে রাসূল (সা.) এর জবান থেকে হাদিসের বহু জায়গায় হুঁশিয়ারি এসেছে। 

এক হাদিসে এসেছে, 

وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعاً يَنْتَزعهُ مِنَ النَّاسِ، وَلكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِماً، اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوساً جُهَّالاً، فَسُئِلُوا فَأَفْتوا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا . متفقٌ عَلَيْهِ

‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আম্‌র ইবনে আ'স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইল্‌ম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইল্‌ম তুলে নেবেন (অর্থাৎ, , আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”
বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯, রিয়াদুস সলেহিন ১৪০০

উক্ত হাদিসে যে বিপর্যয় নেমে আসার কথা বলা হয়েছে, তা হলো ধর্মীয় বিপর্যয়। লেবাসধারী আলেমের কারণে মানুষের দ্বীন ঈমান নষ্ট হবে। জাগতিক দিক থেকেও মানুষের বিপদ হতে পারে আলেমের নীতিহীনতার কারণে। আল কোরআনে এর বিবরণ এসেছে।

আল কুরআনে বহু ঘটনার বিবরণ আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, কুরআনে এত ঘটনার বিবরণ কেন এসেছে? কুরআন নাজিলের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য হলো, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো মুসলমানকে জানিয়ে তা থেকে উপদেশ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আল কুরআনে সূরা আ’রাফের ১৭৬ ও ১৭৭ নম্বর আয়াতে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে একজন আলেমের ভ্রষ্টতার কারণে পুরো একটা জাতির ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছিলো। নিম্নে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

আল কুরআনে ইহুদি এক আলেমের বিবরণ ও বর্তমান সময়ের আলেমদেরর তা থেকে শিক্ষা :

ঘটনাটি আল কোরআনে বিবৃত হয়েছে এভাবে, ‘আপনি তাদের বিবরণ দেন ওই লোকের, যাকে আমি নিজের নিদর্শন সমূহ (বহু আসমানি কিতাবের ইলম) দান করেছিলাম, কিন্তু সে তার অবমূল্যায়ন করে অন্য পথ অবলম্বণ করে। এরপর তার পেছনে লাগে শয়তান। ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। আমার ইচ্ছা হলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিতাম নিদর্শন সমূহের বদৌলতে। কিন্তু সে দুনিয়ার মোহে পড়ে মনের খায়েশের অনুগামী হয়ে রয়েছে। পরিণতিতে তার অবস্থা হলো কুকুরের মতো। যদি তাকে তাড়া করা হয় তবুও হাঁপায় আর ছেড়ে দিলেও হাঁপায়। এ হলো সেসব লোকের উদাহরণ, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে। এতএব, আপনি বলুন এসব কাহিনী, যেন মানুষ চিন্তা করে।’

ওই আলেমের পরিচয় :

উল্লিখিত আয়াতে ইহুদি এক আলেমের বিবরণ শুনানোর জন্য রাসূল (সা.)-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেন এই উম্মতের আলেমরা তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। ওই আলেম আল্লাহর মারেফতের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছার পরও নিজের স্বার্থ, কামনা-বাসনা হাসিলের পেছনে পড়ে। পরিণতিতে সে গোমরাহি ও পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়। পার্থিব সম্মানের যে মুকুট জাতি তার মাথায় দিয়েছিলো তাও তাকে হারাতে হয়। আল কোরআনে ওই আলেমের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মুফাসসিরদের থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। সেগুলোর মাঝে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, যা ইবনে আব্বাস (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ওই আলেমের নাম ছিলো বালআম ইবনে বাঊরা। সে ছিলো সিরিয়ার অধিবাসী। এক বর্ণনায় পাওয়া যায় ওই আলেম বনি ইসরাইলের সদস্য ছিলো। আসমানি কয়েকটি কিতাবের ইলেম ছিলো।

ভ্রষ্টতার বিবরণ :

হজরত মুসা (আ.) মিসর ছেড়ে চলে এলেন সিরিয়ায়। সঙ্গে আসে ইহুদিদের বারটি গোত্র। আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে মুসা (আ.) এর ওপর নির্দেশ এলো, ইহুদিদের নিয়ে জাব্বারিনদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। জাব্বারিন হলো প্রবল শক্তিশালী একটা সম্প্রদায়। যারা বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা দখল করে রেখেছিলো। অন্যদিকে জাব্বারিনরাও মুসা (আ.) সম্পর্কে জেনেছিলো। মিসরের প্রতাপশালী শাসক ফেরাউন তার কাছে পরাজিত হয়েছে। তাছাড়া মুসা (আ.) এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইহুদিদের বারটি গোত্র। তাই জাব্বারিনরা ভয় পেয়ে যায়। ওই এলাকার বড় আলেম ও বুযূর্গ ব্যক্তি ছিলেন বালআম ইবনে বাঊরা। সবাই মিলে তার কাছে এসে আবেদন করে যে, আপনি দোয়া করেন যেন আল্লাহ তায়ালা মুসা ও ইহুদিদেরকে এ এলাকায় প্রবেশ থেকে ফিরিয়ে দেয়। ‘ইসমে আজম’ পড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। বালআম ইবনে বাঊরা ‘ইসমে আজম’ জানতো। তাই তার দোয়া কবুল হতো। প্রথম প্রথম বালআম তাদের আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, সেখানে আল্লাহর নবী হজরত মুসা (আ.) আছেন। তার সহযোগিতার জন্য রয়েছেন ফেরেশতা। আর নবী ও ফেরেশতার বিপক্ষে দোয়া করলে দুনিয়া-আখেরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে যায়। কিন্তু সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা তাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকে।

এক পর্যায়ে সে বলে, আমি আগে ইস্তেখারা করে আল্লাহর কাছ থেকে জানি, এ ব্যাপারে দোয়া করা যাবে কিনা? ইস্তেখারা করার পর স্বপ্নযোগে তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়। সম্প্রদায়ের লোকদের বিষয়টি জানালে তারা সরাসরি কোনো কিছু বলেনি। বরং তারা কৌশল অবলম্বন করে। একটা লোভনীয় উপঢৌকন দিয়ে পাঠায়। মূলত এটা ছিলো ঘুষ। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, কাজ করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার স্ত্রী ওই উপঢৌকন গ্রহণ করে। সম্পদের মোহ ও স্ত্রীর সন্তুষ্টি কামনার জন্য সে মুসা (আ.) ও ইহুদিদের বিপক্ষে দোয়া করতে আরম্ভ করে। যতই দোয়া করছিলো, তা মুসা (আ.) ও ইহুদিদের পরিবর্তে নিজ সম্প্রদায়ের বিপক্ষে যাচ্ছিলো। এতে সম্প্রদায়ের লোকেরা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। বালআম তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলে, এটা আল্লাহর কুদরত। আমার করার কিছু নাই। আমার দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ হয়ে গেছে। তাই আমি তোমাদেরকে কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছি। তা যদি করতে পার আর তা কাজে লাগে তাহলে তোমরা সফল। নিজেদের সুন্দরী মেয়েদেরকে সাজিয়ে মুসার বাহিনীতে ছেড়ে দাও। বলে দাও, বাহিনীর কেউ কিছু করতে চাইলে কেউ যেন বাধা না দেয়। এরা মুসাফির, দীর্ঘ দিন যাবত পরিবার থেকে দূরে। তাই সহজেই তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। আল্লাহর নিকট ব্যভিচার অনেব বড় ঘৃণিত কাজ। যে জাতির মাঝে এহেন ঘৃণিত কাজ ছড়িয়ে পড়ে তাদের ওপর আল্লাহর লানত নাজিল হয়। অভিশপ্ত জাতিতে তারা পরিণত হয়। এমন জাতি কখনো অন্যদের ওপর বিজয় লাভ করতে পারে না।

বালআমের এই পৈশাচিক চালটি সম্প্রদায়ের খুব পছন্দ হলো। নিজের ইজ্জত-সম্মানের দিকে না তাকিয়ে মেয়েদেরকে মুসা (আ.) এর বাহিনীতে সাজিয়ে পাঠিয়ে দিলো। ইহুদিদের এক নেতা সে ফাঁদে পা দিলো। মুসা (আ.) তাকে নিষেধ করা সত্তেও সে তা থেকে বিরত হলো না। একজনের ব্যভিচারে ইহুদিদের ওপর গজব নেমে এলো। তাদের সত্তর হাজার লোক প্লেগে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে মারা গেলো। ইহুদিরা ওই নেতা ও নারীকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দিলো। যেন অন্যরা তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। বালআম ইবনে বাঊরাকে অনেকে মুসলমান বললেও, প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহ.) তাকে মুনাফিক আখ্যায়িত করেছেন।

বালআম ইবনে বাঊরার শাস্তি :

আল্লাহ তায়ালা যাকে ইলম-জ্ঞান দান করেন, তার উচিত সেটাকে মর্যাদা দেয়া। কেউ দুনিয়ার তুচ্ছ বস্তুকে ইলমের উপর প্রাধান্য দিলে আল্লাহ তায়ালা তার থেকে তা ওঠিয়ে নেন। এর বিপরীতে নেমে আসে আজাব। বালআম ইবনে বাঊরার ওপর যে আজাব নেমে এসেছিলো, তার বিবরণ কুরআনেই এসেছে। জিহ্বা বের হয়ে কুকুরের মতো বুকের ওপর ঝুলে থাকতো। সে অনবরত কুকুরের মতো হাঁপাতো। দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের তুলনায় খুবই নগণ্য। আল্লাহই তার আখেরাতের অবস্থা বলে দিয়েছেন ‘আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।'

ঘটনা থেকে শিক্ষা :

এক. ইবাদতকারী বড় আলেম হয়েও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হতে পারে। হতে পারে সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্যুত। তাই আলেম হয়েও আল্লাহর কাছে সর্বদা দোয়া করা যেন, দ্বীনের ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক দেন।

দুই. সম্পদ ও সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। এগুলো হচ্ছে, মানুষের মন পরীক্ষার মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা এগুলোর মহব্বত মানুষের মনে দিয়ে পরীক্ষা নেন যে, বান্দা কি এগুলোর মহব্বতে আমার কথা ভুলে যায় নাকি আমাকে স্মরণে রাখে? বালআম ইবনে বাঊরার মতো ব্যক্তিও স্ত্রী ও সম্পদের মোহে নিজের ঈমান আমলকে মিটিয়ে দিয়েছে। তাই ওগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

তিন. দ্বীনের দাওয়াতের নিয়তে খারাপ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ভালো। হাদিসেও এ ব্যাপারে এসেছে যে, যে বান্দা মানুষের সঙ্গে মিশে এবং তাদের দুর্ব্যবহারের ওপর ধৈর্য ধারন করে, সে ওই লোকের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সঙ্গে মিশে না। তবে কারো যদি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে। মানুষের সঙ্গে মিশলে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য না মিশাই উত্তম।

চার. অশ্লীলতা গোটা জাতির জন্য আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে জাতি নিজেদেরকে বিপদ থেকে মুক্ত রাখতে চায় তাদের উচিত সমাজে অশ্লীলতা ছড়াতে না দেয়া।

পথভ্রষ্ট আলেমগণ সম্পর্কে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সতর্কবাণী-

আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, “আমি নবী ﷺ-এর নিকটে একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, ‘এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্‌-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম,

‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্‌-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [নবী ﷺ] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ।’” -মুসনাদ আহমদ ২০৩৩৫

অন্য বর্ণনায় এসেছে: শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: "إِنِّى لاَ أَخَافُ عَلَى أُمَّتِى إِلاَّ الأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ، فَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِى أُمَّتِى لَمْ يُرْفَعْ عَنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

নবী ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্‌-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ ব্যতীত। এভাবে, যখন আমার উম্মাহ্‌-এর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠানো হবে, এটা তুলে নেওয়া হবে না বিচার দিবস পর্যন্ত।”
 মুসনাদ আহমাদ ১৬৪৯৩, ২১৩৬০, ৩১৩৫৯, ২০৩৩৪, এবং, আদ্-দারিমী, ২১১ ও ২১৬।
- ---------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments