Recent Tube

কথার তীর। আব্দুল্লাহ আরমান।

  



                         কথার তীর। 



     একদিন রাজা স্বপ্নে দেখলেন তিনি এক সুন্দর ফুল❀ বাগিচায় হাঁটছেন।অনেক সুন্দর বাগান।হরেকরকম ফুলের রঙে সুশোভিত সে বাগান হঠাৎ   করেই এক বিচিত্র রূপ ধারণ করলো।বাগানের একটি ফুল বাদে সব ফুল নিমিষেই শুকনো মলিন হয়ে গেলো!
ঘুম থেকে জেগে রাজা চিন্তায় বিভোর ও কৌতুহলী হয়ে পণ্ডিতদের নিকট স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে একজন পন্ডিত বললেন “আপনি ছাড়া পরিবারের সবাই অচিরেই মৃত্যুবরণ করবে”। ব্যাখ্যা শুনে রাজা অগ্নিশর্মা হয়ে পন্ডিতকে শাস্তি দিলেন।
 আরেকজন পন্ডিত একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন “আপনার পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে আপনি দীর্ঘজীবী হবেন”।তার ব্যাখ্যা শুনে রাজা অত্যন্ত খুশী হয়ে তাকে পুরস্কৃত করলেন!!(গল্পটা এক শায়েখের মুখে শোনা)।

      পাঠক একটু লক্ষ করুন,উভয় পন্ডিতের ব্যাখ্যাই কিন্তু অভিন্ন ছিল।দুজনেই রাজার আগেই তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছেন।কেবলমাত্র উপস্থাপনার পার্থক্যের কারণে একজন পুরস্কার আর অপরজন শাস্তি পেলেন!!

    বিপরীত মতের মানুষকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে গল্পটির শিক্ষা খুবই কার্যকর।

    সরাসরি আক্রমণ কিংবা নেতিবাচক ভঙ্গিতে ভুল ধরলে যে কোনো মানুষেরই ইগোতে আঘাত লাগে ফলে বক্তার কথার গ্রহনযোগ্যতা কমে যায় এবং শ্রোতাও উল্টো রিয়েক্ট করে।ফলে বিভেদ ও বিদ্বেষ  আরও বেড়ে যায়।রাগ ও ইগোর কাছে শ্রোতার বিবেচনাবোধ পরাজিত হয়।

     কিন্তু একই কথা ইতিবাচক ভঙ্গিতে ও শ্রদ্ধার সাথে উপস্থাপন করলে  কথার গ্রহনযোগ্যতা বাড়ে,শ্রোতা সহজেই মোটিভেটেড হয় এবং তৎক্ষনাৎ গ্রহণ না করলেও অন্তত চিন্তার অবকাশ পায়।

    দাওয়াতি কাজের মূল বৈশিষ্ট্যি হলো সহনশীলতা,বিপরীত মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া,সত্য গ্রহণ ও প্রচারের মানসিকতা থাকা ও মোটিভেশনাল পদ্ধতি অবলম্বন করা।সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারেঃ
 ★প্রথমে মতভেদের বিষয়গুলো সামনে না এনে সহমতের বিষয়গুলো উপস্থাপন করে তাকে বোঝান আপনি তার বিরোধী কিংবা আপনি তার সাথে মতভেদে বিশ্বাসী নন।
 ★“আপনার মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি” এই ধরনের বাক্য ব্যবহার করে দলীল ও যুক্তি পেশ করুন ।
 ★বিপরীত মতকে সরাসরি ভুল না বলে বা তার মতের অসারতা প্রমাণের চেষ্টা না করে বলে আপনার মতের যৌক্তিকতা ও প্রমাণ হিকমতের সাথে পেশ করুন।
 ★ কেন তার মতামত আপনি গ্রহণ করছেননা তা বিনয়ের সাথে উপস্থাপন করুন।এক্ষেত্রে উপস্থাপনা যাতে আক্রমনাত্মক না হয় সেদিকে সূক্ষ্ম নজর রাখুন।
 ★হাসিমুখে শুনুন, হাসিমুখে জবাব দিন!
 ★তাকেও কথা বলার সুযোগ দিন ও তার কথার মনোযোগী শ্রোতা হোন,যাতে সে বোঝে আপনি তাকে অবমূল্যায়ন করছেন না!ভালো শ্রোতাকে সবাই ভালেবাসে!
 ★নিজে সিদ্ধান্ত না দিয়ে তার কাছেই গঠনমূলক সিদ্ধান্ত চান,প্রয়োজনে তাকে চিন্তা ও স্টাডি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিন।তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত চেয়ে বিব্রত করবেন না।

    👉ইদানীং আলেমগণ দাওয়াতি কাজের ক্ষেত্রে বিপরীত মতের প্রতি আক্রমনাত্মক বক্তব্য দেন যা মুসলমানদের মাঝে ঐক্যতার পরিবর্তে  বিতর্ক আরও উসকে দেয়,এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
দাওয়াতি কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণী  সর্বদা আমাদের মাথায় রাখা উচিত
فبما رحمة من الله لنت لهم. و لو كنت فظا غليظ القلب لانفضوا من حولك
   অর্থঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। (সূরা ইমরানঃ১৫৯)

  📗এছাড়াও রাসূল সাঃ বলেছেনঃ
تبسمك في وجه أخيك صدقة 
অর্থঃতোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা একটি সদাকাহ(মিশকাতঃ১৯১১)।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল, প্রবন্ধ লেখক, শিক্ষক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments