Recent Tube

আমরা তো আল্লাহর সেই অনুগ্রহেরই প্রত্যাশী মাত্র! --- জিয়াউল হক।




 আমরা তো আল্লাহর সেই অনুগ্রহেরই প্রত্যাশী মাত্র!
--------------------------------- 

     আচ্ছা,খুবই সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি। যেমন ধরুন, দেশের স্কুল কলেজগুলোতে কারিকুলাম নির্ধারণ করে কে? বাচ্চারা কি পড়বে, কখন কিভাবে পড়বে, সেটা কে ঠিক করে দেয়? ব্যাংকে জমাকৃত অর্থে সুদ নেয়া হবে কি না, হলে তার হার নির্ধারণ করে কে? পানশালা, মদ উৎপদন, বিক্রি ও বিপনন, গণিকালয় স্থাপন, ফ্যাশন শো, সফট বা হার্ড পর্নো, অশ্লীল নাটক সিনেমা এসব সৃষ্টি ও প্রচলন কিংবা পরিচালনার , অথবা তা বন্ধের অনুমতি দেয় কে?

     বাঘা বাঘা সন্ত্রাসী, খুনীকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং মানবিক (?) কারনে শাস্তি মওকুফ করে মুক্তি দেয় কে? কোন নিরীহ, সজ্জন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি (?) হিসেবে বিবেচনা করে তাকে যেন তেন ভাবে হত্যা বা কারান্তরীণ করে কে? অবলীলায় দেশের সম্পদ চুরি করে কে? কার হাতে সে রকম অবারিত সুযোগ থাকে? যারা বড় বড় রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করে বা পাচার করে, তাদের নিবৃত করা বা শাস্তি প্রদানের দায় কার? ক্ষমতাই বা কার হাতে থাকে?

     ইচ্ছামত গরীব মানুষের উপরে কর আরোপের ক্ষমতা কার হাতে? একটি সমাজের দরিদ্র ও দূর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে রাষ্ট্রের অর্থ খরচ না করে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে সৌধ কিংবা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাস্কর্য নির্মাণের সুযোগ ও ক্ষমতা কার হাতে? আপামর জনসাধারণের নুন্যতম প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব, তাদের উপর থেকে সর্বপ্রকার অবিচার ও জুলুম নিবারণ ও প্রতিকারের দায়িত্ব কার হাতে? সেরকম ক্ষমতা ও শক্তিইবা কার আছে?

    আঈন প্রণয়ন ও সেই আঈন প্রয়োগের ক্ষমতা কাদের হাতে থাকে? আঈনের মাধ্যমে দুষ্টের দমন ও শিষ্ঠের লালনের সুযোগ কার হাতে? সরকারি প্রভাব ও ক্ষমতার প্রয়োগে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আপামর মানুষের কল্যাণের ক্ষমতা সরকারের চেয়ে আর কার হাতে বেশি থাকে? এ সবের উত্তর একটাই; দেশের সরকার। সরকার তো আর কোন ব্যক্তি নয়। সরকার একটি প্রতিষ্ঠান, যার হাতে দেশের সকল ক্ষমতা ও সম্পদ। খুব সহজে, একটামাত্র হুকুম জারি করে দেশে, দশের কল্যাণ অকল্যাণ করার সকল ক্ষমতা ও উপাদান তাদের হাতেই থাকে।

     আপনি দেশের আর দশজন নাগরিকের মতোই একজন নাগরিক। আপনার ও দায়িত্ব আছে, অধিকার এবং দায়ও আছে এই দেশে বসাবস করার। দেশের ভালো মন্দ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা কিংবা মাথা ঘামানোর, দেশ গঠনে অংশ নেবার। সেই আপনিই আগ বাড়িয়ে ঘোষণা দেবেন যে, আপনার কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই, রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না! বেশ তো, রাজনীতি না করার অধিকারও আপনার রয়েছে। না করলে না করবেন, ভালো কথা। রাজনীতি করতে আপনাকে বাধ্য করার অধিকারও কারো নেই। 

    তবে একটা কথা, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, রাষ্ট্র পরিচালকদের স্বিদ্ধান্ত-কর্মকান্ড, রাষ্ট্রের গৃহিত স্বিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ, তাদের কাজ কর্ম নিয়ে আপনার যদি কোন মাথাব্যাথা নাই’ই থাকবে তা হলে রাষ্ট্রের কোন কোন স্বিদ্ধান্তের বিপক্ষে সরব হন কেন? ‘জাত গেল‘ ‘জাত গেল‘, ‘ইসলাম গেল‘ ‘ইসলাম গেল‘ বলে গলা ফাটান কেন? 

    যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। জনগণের দূর্দশা দূর্ভোগ দূর করতে আপনার যদি কোন ভুমিকা পালনের ইচ্ছাই না থাকে, তা হলে সেই জনতার কাছে ইসলাম তুলে ধরতে চান কেন? কোন ইসলাম তুলে ধরতে চান? যে ইসলামে বাদ প্রতিবাদের উত্তাপ নেই, আমর বিল মা‘রুফ আর নাহি আনিল মুনকার আর সমাজ পরিবর্তনের ডাক নেই, সেই ইসলাম? 

   এতোটা আপোষকামী হয়ে ইসলামের বিকৃত রুপ উপস্থাপনের অধিকারইবা আপনাকে কে দিল? ইসলামের মায়ায় উদ্বেলিত হয়ে তার বিকৃত রুপ তুলে ধরার পরিবর্তে যেমন আছেন, তেমন থাকুন। নিশ্চিন্ত থাকুন, ইসলাম আপনাকে ছাড়াই নিরাপদ থাকবে। 

    আল্লাহর দুনিয়ায় মানুষের অভাব নেই। গণমানুষের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা, তাদের কাছে পরিপূর্ণ ইসলামের রুপ তুলে ধরার মতো যোগ্য লোক আল্লাহ পাকই জুটিয়ে দেবেন সহসাই। তিনি নিজেই সে ওয়াদা ও আশ্বাস কুরআনের পাতায় আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন যেন আমরা কোন মহলের উদাসীনতায় হতাশ না হই। তাই আমরা আপনার হীনমন্যতা, হঠকারিতা, পলায়নপরতা ও বালখিল্যতা দেখে মোটেও আশাহত নই। আমরা তো আল কুরআনের পাঠ গ্রহণে মন দিয়েছি;

  ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে নিজ জীবনব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, অচিরে (তাদের স্থলে) আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি রহমদীল এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে চেষ্টা প্রচেষ্টা করবে এবং এ ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর নিন্দবাদে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি  যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।’(সুরা মায়েদা: ৫৪)

   আমরা তো আল্লাহর সেই অনুগ্রহেরই প্রত্যাশী মাত্র!
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ,ইংল‍্যান্ড।

Post a Comment

0 Comments