Recent Tube

কুরআনিক থট প্রসেস, আল কুরআনের চিন্তামানস’ (১) জিয়াউল হক।




'কুরআনিক থট প্রসেস, আল কুরআনের চিন্তামানস।  -পর্ব-১
-------------------------------
                      

      পাকিস্থানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মিসেস বেনজির ভুট্টো তার লেখা Reconciliation: Islam, Democracy and the West’ নামক গ্রন্থে চমৎকার একটা ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুরের একটা ঘটনা বিবৃত করেছেন তার সেই বইতে। ষাটের দশকে সিঙ্গাপুরের তৎকালীন সরকার দেশের আভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেন। সেই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে তারা গ্রামাঞ্চল হতে নানাজাতির দরিদ্র মানুষজনকে ছোট্ট দেশটির নানা প্রান্তে স্থানান্তরিত করে পূনবার্সিত করেন। 

     এরকম ঘটনায় কোন কোন জায়গায় মুসলমান পরিবার পূনর্বাসিত হয়। এইসব মুসলমান পরিবারগুলো ইতোপূর্বে একেত্রে দেশের কোন এক কোণায় নিজেদের একটা সমাজ বানিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। কিন্তু পূনর্বাসিত হয়ে নতুন স্থানে আসার ফলে তাদের আগেকার সেই ক্ষুদ্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র সমাজ আর রইলো না, তারা বরং হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃষ্টান এরকম বহুধর্মাবলম্বী সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটা মিশ্র সমাজে এসে পড়লেন।

     এইরকম বহুধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত মিশ্র একটি সমাজে মুসলমরা প্রথামত নিজেদের ইবাদত করার জায়গা হিসেবে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলেন। তারা উক্ত মসজিদ সমূহে আজান সম্প্রচারের জন্য মাইকও স্থাপন করলেন এবং দিনে পাঁচবার সেখানে নামাজের জন্য আজান দেয়া হতে লাগলো। এতে করে মুসলমানদের প্রয়োজন তো মিটলো কিন্তু স্থানীয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কেউ কেউ আপত্তি উত্থাপন করলেন শব্দদূষণ’সহ নানা কারনে। 

     এ নিয়ে আন্তগোষ্ঠী আন্তধর্মীয় উত্তেজনা দেখা দিতে লাগলো। সরকার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন বিষয়টির সুরাহা করার জন্য চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের যৌথ প্রচেষ্টায় সমস্যাটির সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান বের করা হয়। 

    সমাধানটি হলো, মসজিদ হতে মাইকে হাঁকা আজানের শব্দের তীব্রতা কমাতে মাইকের মুখগুলো মিনারের চূড়া থেকে আগে যেমন বহির্মূখী ছিল, তার বিপরিতে তা এখন উল্টো অন্তমূর্খী করে দেয়া হয়, সেই সাথে, সেই যুগে প্রচলিত মাইকে যতোটা সম্ভব আওয়াজ কমানো সম্ভব এবং যতোটা কমানো হলে আশে পাশের জনপদে মুসলিম জনগোষ্ঠী আজানের শব্দ শুনতে পারেন, ততোটা কমানো হয়। এ ছাড়া আরও একটা পদক্ষেপ নেয়া হয় স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে, সিঙ্গাপুরের তঃকালিন রেডিও ট্রান্সিস্টর সার্ভিস থেকে রেডিও’র মাধ্যমে প্রতি ওয়াক্তের আজান সম্প্রচার শুরু করা হয়। 

   একটি বহুধর্মী  সমাজে বসবাসরতম মুসলমান জনগোষ্ঠীও প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতার পরিচয় দেন স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি। তারা বিনাদ্বিধায় এ ব্যবস্থা মেনে নেন। ফলে যে সম্যাটি নিয়ে সূচনাতে আন্তগোষ্ঠী ধর্মীয় ও সামাজিক উত্তেজনা দেখা দেবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছিল সেই সমস্যাটির অত্যন্ত সফল ও শান্তিপূর্ণ সমাধান বেরিয়ে আসে। (প্রকাশিতব্য গ্রন্থ 'কুরআনিক থট প্রসেস, কুরআনের চিন্তামানস’ থেকে অংশবিশেষ)
------------------------------------------------------------------ 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও গবেষক। 

Post a Comment

0 Comments