Recent Tube

সালাতে তাওয়াররুক কী এবং তার বিধান; আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।







সালাতে তাওয়াররুক কী এবং তার বিধান;
--------------------------------- 
প্রশ্ন: 
যখন আমরা তিন রাকাত বিতর একসাথে পড়ব আর যখন আমরা দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে এক রাকাত পড়ব এই তিন অবস্থায় আমাদের সালাম ফিরানোর আগে বসার নিয়মটা কী হবে? আমরা কি তাওয়াররুক করে বসবো নাকি ডান পায়ের পাতা বা খারা রেখে বাম পায়ের উপর বসবো?

উত্তর: 
যে সকল নামাযে দু’টি তাশাহুদ আছে তার শেষ তাশাহুদে তাওয়ার্‌রুক করা সুন্নাত। যেমন: মাগরিব, এশা, যোহর ও আছর ছালাতে। কিন্তু যে নামাযে শুধু একটিই তাশাহুদ- যেমন ফজর নামায- তাতে তাওয়াররুক করা সুন্নাত নয়।

   আর এই সুন্নাত নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রমাণিত। কেননা ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে বরাবর। তবে দলীলের ভিত্তিতে যে পার্থক্য পাওয়া যায় তার কথা ভিন্ন। কিন্তু এমন কোন সহিহ দলীল নেই যা দ্বারা নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য প্রমাণিত হয়। নামাযের পদ্ধতির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলেই সমান।

  তাওয়াররুক হল: তাশাহুদের শেষ বৈঠকে বসার সময় ডান পা'কে বাম পায়ের নীচে বের করে দিয়ে নিতম্ব জমিনে রেখে তাঁর উপর বসা এবং ডান পা'কে খাড়া রাখা। 

  উৎস: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম প্রশ্ন নং (২৫৬)
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
অনুবাদক: আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি ও আবদুল্লাহ আল কাফী

★★★  এখান থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, দু রাকআত বা এক রাকআত নামাযে তাশাহুদের বৈঠকে তাওয়াররুক করা যাবে না। কেননা, এগুলোতে  একটিমাত্র তাশাহুদ আছে। সুতরাং এ নামাযগুলোতে ‘তাওয়ারুক’ না করে বরং সাধারণভাবে ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসতে হবে।অর্থাৎ ইফতিরাস করে বসতে হবে। আল্লাহু আলাম।

★★  উপরোক্ত ফতোয়ার আলোকে দু তাশাহুদ বিশিষ্ট সালাত ছাড়া তাওয়াররুক নেই। সুতরাং এক তাশাহুদে তিন রকআত বিতর পড়লে তাতে তাওয়ররুক করা যাবে না। আল্লাহু আলাম।
---------------------------------
 প্রশ্ন: সুন্নত ও নফলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম?

 উত্তর :  
 ফরজ, সুন্নাত, নফল সকল ক্ষেত্রে একই কথা। তবে সুন্নত ও নফল সালাত দু রাকাত পরপর সালাম ফিরিয়ে পড়াই উত্তম।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ যোগ্য, অন্য একদল আলিম প্রতি শেষ বৈঠকে তাওয়াররুক করাকে বৈধ বলেছেন চাই তাতে দুটি তাশাহুদ থাকুক অথবা একটি তাশাহুদ থাকুক। অর্থাৎ দু তাশাহুদ হওয়ার বিষয়টি দ্বিমত পূর্ণ।

 তাওয়াররুকের হাদিস:

    হুমাইদ আস সায়েদি রা. হতে বর্ণিত,
وَإِذَا جَلَسَ فِى الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ
"আর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ রাকআতে বসতেন তখন বাম পাকে সামনে বাড়াতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন। আর তিনি তার নিতম্বের উপর বসতেন।" [সহিহুল বুখারি]

    মুহাম্মাদ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আতা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একদল সহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবু হুমাইদ সায়েদি রা. বলেন, 
أَنَا كُنْتُ أَحْفَظَكُمْ لِصَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُهُ إِذَا كَبَّرَ جَعَلَ يَدَيْهِ حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا رَكَعَ أَمْكَنَ يَدَيْهِ مِنْ رُكْبَتَيْهِ، ثُمَّ هَصَرَ ظَهْرَهُ، فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتَّى يَعُودَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ، فَإِذَا سَجَدَ وَضَعَ يَدَيْهِ غَيْرَ مُفْتَرِشٍ وَلاَ قَابِضِهِمَا، وَاسْتَقْبَلَ بِأَطْرَافِ أَصَابِعِ رِجْلَيْهِ الْقِبْلَةَ، فَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ جَلَسَ عَلَى رِجْلِهِ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى، وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ

  "আমিই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে অধিক স্মরণ রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি (সালাত শুরু করার সময়) তিনি তাকবির বলে দু হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখন দু হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। অতঃপর রুকু হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যাতে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসতো। অতঃপর যখন সেজদা করতেন তখন দু হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন না, আবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তাঁর উভয় পায়ের অঙ্গুলির মাথা কিবলা মুখী করে দিতেন। যখন দু’রাকআতের পর বসতেন তখন বাম পা-এর উপর বসতেন আর ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাক‘আতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন। [সহীহ বুখারি (তাওহীদ) অধ্যায়: ১০/ আযান  হাদিস নং ৮২৮, ১০/১৪৫. তাশাহ্হুদে বসার নিয়ম। আধুনিক প্রকাশনী: ৭৮২ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৭৯০]

     উক্ত আমল ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিয়মিত আমল। হাদিসটি দশ জন সাহাবী কর্তৃক সত্যয়নকৃত। কিন্তু উক্ত সুন্নাত আজ সমাজ থেকে অনেকাংশে বিদায় নিয়েছে। কারণ অধিকাংশ মুসল্লি তা আমল করে না।
--------------------------------- 
উত্তর প্রদানে: 
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল;
দাঈ,জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Post a Comment

0 Comments