Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৭০; বিষয়ঃ কোরআন খতম কেন?নুর --- মুহাম্মদ চৌধুরী (মুবিন)




          
                     বিতি কিচ্ছা;
             পর্ব-৭০;


কোরআন খতম কেন?
--------------------------------- 
      "ইয়াহুদীরা এই কোরআন শুনে না, অথবা শুনলেও শুনে না-শুনার মত করে। এবং এর কথাগুলোকে প্রকৃত স্থান থেকে বিকৃত করে উচ্চারণ করে। ওরা বলে আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম। " 

      এই কথাগুলো পবিত্র কালামে পাকে সয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কথা। আমরা যারা্ ঈমান এনেছি এই কালামের প্রতি, তারা কি শুনি এই কোরআনকে শুনার মত করে? অথবা শুনি কি শুনার যথার্থ হক আদায় করে? আমরা কি পড়ি তা বুঝে নেবার প্রয়োজনে? অথবা বুঝে নিয়ে তার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যত্নশীল হই ,যেরুপ যত্নশীল হওয়া সংগত? এই প্রশ্নগুলোর প্রতি সম্যক অলোকপাত করাই আজকের এই লেখনীর উদ্দেশ্য।

        আসলে যে বিষয় নিয়ে কথা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়, এটা সেরকমই একটা বিষয়। কারণ আমল যা ই থাক্, আলমারীতে স্বযতনে রক্ষিত প্রাতিষ্টানিক সনদ ছাড়া কথা বলার অধিকার অন্তত এ যুগে কারোরই নেই, হোক সে সনদ নকল অথবা আসল। আর লিখছি বলেই তা অকাট্য হবে, এমন আমিও মনে করি না। মন্তব্যে সঠিক ও আরও অজানা অনুচ্ছেদ বেরিয়ে অসলে বিস্তর উপকৃত হবার সম্ভাবনা প্রবল হবে, তাতে ক্ষতি কি?

        লেখাটির একটি ফেস্ বুক ষ্ট্যটাস্ নিয়ে। কোন এক জনাবা তার টাইম লাইনে নীজের সুন্দর একটি ছবি পোষ্ট করছেন। এবং লিখেছেন," আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমি ৭৯তম কোরআন খতম করলাম"।

        আমার কথা কোন একটি বই বা কিতাব ৭৯ বার আদ্যোপান্ত পড়ে থাকলে তার অন্তর্নিহিত সারাংশ স্বীয় মগজে বদ্ধমূল হয়ে যাবার কথা। আমরা ক'জন তা পেরেছি? আর কোন বিশ্বাসী ব্যাক্তি ৭৯ বার পড়ে থাকলে তার বিধি নিষেধের বাস্তব চর্চ্চায় উক্ত ব্যক্তি থাকবে যথেষ্ট অগ্রগামী -এটাই স্বাভাবিক । তবে আমরা ক'জন তা পেরেছি? আমার মতে এইভাবে দিবানিশী না বুঝার জন্য কোরআন পড়তে থাকা, আর তার নির্দেশাবলীর প্রতি গাফেল থাকা বা নির্দেশাবলীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করাকে কোরআন খতম বলে। বস্তুত আমরা কোরআন খতম করবো? না স্বীয় দেহে তথা স্বীয় আঙ্গিকে কোরআন জিন্দা করবো? কোনটার জন্য আমরা নির্দেশিত?  আসলে বাস্তব জীবনে আমাদের কৃত আমল বা কাজ দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত: এই কোরআন খতম করেই চলেছি। অথচ এই কোরআন কষ্মিনকালেও খতম করার জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয় নাই। খতমতো তাঁরাই করবে যারা এই কোরআনের প্রতি অবিশ্বাসী তথা সন্দেহপ্রবণ । তারা এই কোরআন শুনেনা, অথবা শুনলেও শুনে না শুনার মত করে। 

        উতলু"  শব্দ দ্বারা কোরআন পাক তেলাওয়াতের জন্য কোরআনের একাধীক জায়গায় উল্লেখিত আছে। ইকরা শব্দ দ্বারা পড়তেও বলা হয়েছে 'কোরআন' তার নাযিলের শুরুতেই। কিন্তু খতম করার কথাতো সম্ভবত বলা হয়নি কোথাও? তবে বাস্তবে আমরা যে তা অবলীলায় খতম করেই চলেছি- এটার প্রমান আমাদের কাজে, কর্মে, আচারে, আচরণে মশহুর বিদ্যমান। উতলু বা তেলাওয়াত একটি আরবী শব্দ। খাতামা বা খতমও একটি আরবী শব্দ। কোরআনিক পরিভাষা এই শব্দ দুটো। 

      তেেলাওয়াতের বাংলা অর্থ খতম নয় বরং হক আদায় করে অধ্যয়ন করা বুঝায়। আর আরবী খতম শব্দের বাংলা অর্থ হল মোহর মারা, তালা দেয়া। যার সমার্থক আরও শব্দ আছে যেমন- ধ্বংস সাধন করা, বেইজ্জত করা, বন্ধ করা, বিনাশ করা ইত্যাদী। খতমের এসব অর্থের দিকে তাকালে আর  আল্ কোরআনের প্রতি আমাদের আচরণের দিকে তাকালে স্পষ্টত: প্রমান হয় এই উপমহাদেশের অধিবাসীরা আমরা কি দিন কি রাত শুধু এই কোরআন খতম করেই চলেছি। এর পরিনতি কত ভয়াবহ হতে পারে জেনেও কোরআন খতম করা থেকে বিরত হচ্ছি না।

      অত:পর কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার পরিবারে কোরআনের সাথে কি আচরণ করা হচ্ছে? উত্তরে তিনি বলবেন, মাশা আল্লাহ আমি করেছি বিশ খতম, আমার স্ত্রী করেছেন ত্রিশ খতম, বড় মেয়ে তের খতম, ছোট মেয়ে দশ খতম, ছেলে করেছে চৌদ্দ খতম । আর ঐ যে দেখছেন চশমাওয়ালা ওভারস্মাট খোকা ! সে তো হাফেজে কোরআন, সে তো দিন রাত শুধু আছেই কোরআন খতমের ধান্ধায়। অমুকের খতম , তমুকের খতম। কোরআন খতম করতে করতে সে তো নিজেই খতম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতো পড়ার পরও যদি দেখা যায় স্বয়ং আপনার মেয়েটি বিয়ের মজলিশে পার্লারের সাজে সজ্জিত হয়ে কনে সেজে বসে আছে । একবারও আপত্তি করে নাই এই বলে যে , হে আমার শুভাকাঙ্কীরা , তোমরা নিশ্চয়ই জান : আমি একজন মুসলমান, আমি কোরআনের অনুসঙ্গী, আমাকে কোরআনের নির্দেশনার বাহিরে কোন কাজে বাধ্য তোমরা করতে পার না। এগুলো আমি কোরআন থেকে জেনেছি। এই কোরআন আমি ৭৯ বার পাঠ করেছি। আমাকে একদিনের জন্য নয় এক মুহুর্তের জন্যও কোরআনের বিপরীত চলতে বাধ্য করার কোন এখতিয়ার কারো নেই। বরং এর বিপরীতে যেমন খুশি তেমন সাজে , রঙ্গে ঢঙ্গে মত্ত হয়ে দিন যায় তো পোহায় রাত । ইহাকেই বলে কোরআন খতম।

      ভরা মজলিশে সন্তান কর্তৃক পিতার আদেশ অমান্য করলে যেমনভাবে পিতার বেইজ্জতি হয়, তেমনিভাবে কোরআন পাঠ পরবর্তী তৎক্ষনাৎ কোরআনের পঠিত বিধানের বিপরীত চলনই  এই কোরআনের বেইজ্জতি সাধন তথা কোরআন খতম। আর এই কাজটি যারা অবলীলায় করে যাচ্ছি তারা ঈমানদার বা ঈমানের দাবিদার। বলা হচ্ছে, তিন দিনের কম সময়ে পুরো কোরআন তেলাওয়াত করো না। আমরা করছি পুরো এক রাতের কিছু কম সময়ে। বলা হচ্ছে ধীরে , স্থিরে , থেমে থেমে  কোরআন তেলাওয়াত করো, আমরা তেলাওয়াত করছি দুর্বোধ্য ভাষায় ও ঝড়ের গতিতে। ইনসাফের কথা হচ্ছে অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। আমরা মাইক সাঁটিয়ে দিচ্ছি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কারো বাড়ীর দিকে, এটা নাকি কোরআনের দাওয়াত। বলা হচ্ছে অল্প মূল্যে কোরআন বিক্রি করো না। অথচ এই তেলাওয়াতেই আজ আমাদের জীবিকা। এইভাবে প্রতিনিয়ত আমরা কোরআন পাঠ পূর্বক হাটছি কোরআনের উল্টো পথে। আমার মতে ইহাকেই বলে কোরআন খতম , আর কত মানানসই এই নামকরন। 

       এক পদের দোকানে তেমন ক্রেতা পাওয়া যায় না তাই ইদানীং কত রকমইনা খতম আবিষ্কার হল এই উপমহাদেশে। সহীহ্ হাদীসে এগুলোর একটিরও মজবুত ভিত্তি আছে কি না সন্দেহ, একমাত্র সর্প খতম ছাড়া। একটি বিষধর সর্প খতম করলে ত্রিশজন ফেরেস্তা আজাদ করার সওয়াব পাওয়া যায়। আর যুদ্ধের ময়দানে সামনাসামনি শত্রু খতমতো সর্বজনবিদিত। তবে  আর যা হোক এইভাবে কোরআন খতমের মাধ্যমে  পৃথিবী থেকে ক্রমশ: খতম হয়ে যাচ্ছে মুল ইসলাম।  যা  খতম করতে বিশ্বব্যাপী ইয়াহুদী নাসারারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে কি বলতে হবে এই উপমহাদেশে খতম বানিজ্যের ধারক ও 
বাহকরা আসলেই ইসলাম বিদ্বেষী ইয়াহুদী নাসারা চক্রেরই ক্রীড়নক?এতএব আসুন আমরা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের খতম কার্য বন্ধ করে তা জিন্দা করে তুলি আপন আখলাকে। এটাতো সেই কোরআন যার বাস্তব সফল চিত্র মাকারামে আখলাক নবীয়ে করীম মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ ছাড়াও যার জীবন্ত কিংবদন্তী ছিলেন হযরত আবু বাকার (রা:), হযরত ওমর (রা;), হযরত উসমান (রা;), হযরত আলী (ক:) প্রমুখ। এদের সকলের চাল চলনই ছিল জীবন্ত কোরআন।

       জালেমরা সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস্! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভাগ্য , আমি যদি অমুককে বন্ধুরুপে গ্রহন না করতাম। আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকাল্ ধোঁকা দেয়। আর রাসুল বলবেন: হে আমার পালনকর্তা আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে প্রলাপ সাব্যস্থ করেছে।

Post a Comment

0 Comments