Recent Tube

নিজদের সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নাই তারা নাকি আবার ইসলামী রাজনীতি করে, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করবে"। --- কুতুব শাহ।

 


  নিজদের সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নাই তারা নাকি আবার ইসলামী রাজনীতি করে, দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করবে"।
---------------------

    সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ডায়লগ বহুল প্রচলিত এবং দু'টো পক্ষ খুব জোরে তা প্রচার করে। আবার তাদেরই কোন বক্তা ওয়াজের মঞ্চেও এই ডায়লগ দিয়ে জোশে কাঁপতেও দেখা যায়। ঈমান আক্বীদা তো মানুষের অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসের সাথে জাড়িত কেউ স্বেচ্ছায় প্রকাশ না করলে জানার উপায় নাই। কিন্তু সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম বলতে তারা বুঝায় টুপি, লম্বা জুব্বা বা পোশাক। তাদের কাছেই এসবই ইসলাম আর এই পোশাক না পড়লে বডি থেকে ইসলাম উধাও! কত ভয়ানক অজ্ঞতা।


     লম্বা জুব্বাই কি একমাত্র সুন্নাহ? নাহ, তা অকাট্য ভাবে বলা যাবেনা। বরং এভাবে বলা যায় ইসলামী ড্রেসের যে প্যাটার্ন সে হিসাবে জুব্বা ভাল পোশাক। এর বাইরে গেলেই সুন্নার খেলাফ বলা বাড়াবাড়ি অতিরঞ্জন। কারণ, ইসলামে পোশাকের মূলনীতি বা ড্রেসকোড অনুসারে  সার্ট-পেন্ট তৈরী হলে তাও বৈধ। অতচ, শার্ট-প্যান্ট পড়া নিয়ে কত ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ এমনকি সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নাই বলাটা চরম অজ্ঞতা। এরা আসলে ইসলাম বলতে জুব্বাতেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে! 

     টুপিঃ টুপি মুসলিম উম্মাহর ‘শিআর’ জাতীয় নিদর্শন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগ থেকে প্রতি যুগে এর উপর ব্যাপকভাবে আমল ছিল। তবে সুন্নাহ কিনা তা নিয়ে ওলামাদের দুই ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়। এক পক্ষের মতে সুন্না অন্য পক্ষের মত সুন্না নয়। আমরা সুন্না হিসাবে ধরে নিয়ে এই ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহ, প্রেরণা দিতে পারি। কিন্তু টুপি না পড়লে সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম নাই দাবী হল অজ্ঞতা। এখানেই সমস্যা। আর এই সমস্যার কারণে অনেক বিভাজন। কেউ আবার তিন কল্লি, পাঁচ কল্লি টুপিকে ইসলাম বানিয়ে নিয়েছে আবার কেউ টুপি না পরলে বড়িতে ইসলাম নাই দাবী করছে! 

     প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা হল, সুন্নাহভিত্তিক আমলের জন্য আমরা সুন্দর পদ্বতিতে দাওয়াত, আহবান করতে পারি কিন্তু সাড়ে তিন হাত বড়িতে ইসলাম নাই অথবা মসজীদ, মক্তবে এই নিয়ে ফাসাদ তৈরী সীমালঙ্ঘন মাত্র।

     সালাফে ছালেহীনের আক্বীদা অনুযায়ী আমরা মানুষের উপর কোন শারঈ আধিপত্য চাপিয়ে দিতে পারিনা। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছেন, ‘তুমি তাদের উপর দারোগারূপে প্রেরিত হওনি’ (গাশিয়া ৮৮/২২)। সুতরাং আমরাও মানুষের উপর দারোগার ভূমিকায় অবতীর্ণ হ’তে পারি না। নিজদের মত মত অনুযায়ী চলার জন্য মানুষের উপর তরবারি দিয়ে ক্ষমতা বিস্তার করার অধিকার নেই, মসজীদ থেকে বের করে দেয়ার অধিকার নাই, সাড়ে তিন হাত বড়িতে ইসলাম নাই বলে বিদ্রুপ করার অধিকার নাই।

    এই ব্যাপারে শায়খ আলবানীর উপদেশ ভাল লেগেছে। তিনি বলেন, 
خير الأمور الوسط، وحب التناهي غلط ‘সর্বাধিক কল্যাণকর হ’ল মধ্যপন্থা অবলম্বন। চরমপন্থার প্রতি আকর্ষণটা ভূল।

    দুঃখের বিষয় আলবানীকে যারা বেশী মানার দাবী করেন তারাও আজ আমীন জোরে বলা, বুকে হাত বাঁধা, আট রাকাত তারাবী ইত্যাদি কিছু ইখতেলাফী, ইজতেহাদী মসআ'লার উপর ভিত্তি করে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ফাসাদ আর মসজীদকে আলাদা করে ফেলছে! হ্যাঁ, কিছ মযহাব অনুসারীরাও কম যায়না তা স্বীকার করে নিচ্ছি। উভয় পক্ষের উচিৎ সুন্নতের জন্য মারামারি দিয়ে যেন ফরজ লঙ্গন না হয়। 

    প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই আজকাল কয়জন বক্তা ওয়াজ মাহফিলের মত দাওয়াতের সাজানো সুন্দর  বাগানকে কাজে লাগায়? সেখানে বসে কিছু লোক ফাসাদের বীজ বুনে আবার ওয়াজ নয় যেন কিচ্ছা কাহিনীর আসর! 

  রাসূল (ছাঃ) বলেন, إن بني إسرائيل لما هلكوا قصوا ‘নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলগণ কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনায় লিপ্ত হওয়ার কারণে ধ্বংস হয়েছিল’ (ত্বাবারাণী, ছহীহাহ হা/১৬৮১)। 

    এ হাদীছের ব্যাখ্যায় শায়খ আলবানী বলেন, সম্ভবত এটা এ কারণে বলা হয়েছে যে, তাদের আলেম ও বক্তাগণ জনগণকে ফিকহ এবং উপকারী জ্ঞানের পরিবর্তে অলীক কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনাকে গুরুত্ব দিয়েছিল এবং এই কাজকেই নেকআমল গণ্য করা শুরু করেছিল। ফলে তারা ধ্বংসে নিপতিত হয়েছিল।

    আজকের যুগের বহু গল্পকার বক্তাদেরও একই অবস্থা। যাদের অধিকাংশ বক্তব্যের বিষয়বস্ত্ত আজগুবি গাল-গল্প, হৃদয় গলানো বক্তব্যসমূহ এবং নিজ পীরের বিজ্ঞাপনে অলীক কাহিনী
----------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments