Recent Tube

জ্বি, যুদ্ধটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়, ইসলামের বিরুদ্ধেই। - জিয়াউল হক।






জ্বি,যুদ্ধটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়,ইসলামের বিরুদ্ধেই
----------------------------
  
    চলমান বিশ্বে ঘটা করে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ‘ওয়ার অন টেরর’ শুরু করেছিল আমেরিকার নেতৃত্বে নিউকন জোট নাইন ইলেভেনের পরে। সেই ‘চটকদার ওয়ার টেরর’ শ্লোগাণটি অনেক মুসলিম দেশের সরকারই গ্রহণ করেছে। কিন্তু আসলে যুদ্ধটা হলো ইসলামের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নয়। খোদ পশ্চিমাদেরই কথা সেটা। অতি সম্প্রতি এক সেক্যুলার পন্ডিত তার লিখিত বইয়ে খোলাখুলি লিখেছেন;

   We are at war with Islam. ----- Such a transformation is by no means guaranteed to occur, however, given the tenants of Islam. 

ভাবানূবাদ: আমরা ইসলামের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছি। এ কথাটা পরিস্কার করে বলাটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে হয়তো সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে এটাই সত্য। এটা এমন নয় যে, সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছিনতাই হয়ে যাওয়া একটা শান্তিপূর্ণ ধর্মের সাথে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে গেছি। আমরা আসলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি আল কুরআন ও হাদিসে মুসলমানদের নবী কর্তৃক যে জীবনপদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, ঠিক সেই জীবনপদ্ধতির সাথে। খৃষ্টানরা যেমন নিজেদের ধর্মীয় বিধি বিধান ভুলে গিয়ে চলতে শিখেছে, ঠিক সেরকম মুসলমানরা তাদের ধর্মের নিয়ম নীতি ভুলে গিয়ে খৃষ্টানদের সাথে ভবিষ্যতে সহবস্থান করবে, ইসলামি দর্শন ও তার শিক্ষার কারণেই তেমনটা ঘটার কোনই সম্ভাবনা নেই।১ 

    বইটি ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে দেড়দশক আগে; ২০০৫ সালে। বইয়ের আলোচ্য বিষয়, বক্তব্য ও যুক্তি অতি সাম্প্রতিককালের। সমসাময়িক সময়ের। বইটির ইনারপেজ ও ব্যাকপেজে প্রশংসা করে নিউইয়র্ক টাইমস, অবজারভার, গার্ডিয়ান, ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্যা ইকনোমিষ্ট’সহ বিশ্বের বিখ্যাত পত্রিকাগুলো যে রিভিও দিয়েছে, তা এক দিকে যেমন মুসলমানদের জন্য আতংকের, আবার আশাপ্রদও বটে।

    আশাপ্রদ কারণ রিভিউগুলো পড়ে অন্তত এটা জানা যায় যে, বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকাগুলোর কোটি কোটি পাঠক কদাচিৎ ব্যাতিক্রম ব্যতিরেকে বইটির বক্তব্য মতাদর্শ ও চিন্তাধারকেই লালন করে। অর্থাৎ পশ্চিমা সমাজ, সেকুল্যার বিশ্ব আজ খোলাখুলিই বলতে শুরু করেছে যে, তারা আসলে ইসলামের সাথে, ইসলামের দর্শন ও শিক্ষার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। 

    এ সত্যটাকে মুখ ফুটে বাধ্য হচ্ছে এই কারণে যে, শত ছল চাতুরি’সহ নানাভাবে উপস্থাপন করেও তারা সেক্যুলারিজমকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেনি, তাদের মিশনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার পরিকল্পনায় সক্যুলারিজম একটা ব্যর্থ মতবাদ, মুসলমানদের দ্বারা পরিত্যাজ্য মতবাদ।
বিশ্বের কোন কোন মুসলিম দেশে মুসলমান নামধারী কিছু এজেন্টের সহায়তায় সেক্যুলারিজমকে গেলানোর চেষ্টা প্রচেষ্টা করেও আপামর জনগোষ্ঠীকে ইসলাম থেকে দুরে সরিয়ে নেওয়া যায়নি, ইসলামের পুনর্জাগরণকে ঠেকানো যায়নি। এর কারণ কি? 

    উত্তর, একটাই, ইসলাম বিশ্বের যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো শক্তি তার নিজের ভেতরেই ধারণ করে। এ কারণেই পশ্চিমের সহায়তায় বিশ্বের কোন কোন মুসলিম দেশ সেক্যুলারিজমকে ধারণ করলেও সে দেশের আপামর মুসলমান জনগোষ্ঠী তা বর্জন করে নিজেদের আত্মিক শক্তি, ইসলামের অন্তর্ণিহিত শক্তির জোরে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রখ্যাত ইংরেজ ও খৃষ্টান ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি চমৎকার ভাষায় সে সত্যটা তার নিজস্ব উপলব্ধী থেকে ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে;

  In theory the unitary state is an obligatory political framework for the religion; but theory was refuted by experience. ---  of the defunct unitary Islamic state’s successor-states. 

   ভাবানূবাদ: সুত্রানুযায়ী ধর্ম টিকে থাকার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর উপস্থিতি অপরিহার্য, কিন্তু বাস্তবতা এ সুত্রকে অকার্যকর প্রমাণিত করলো। বাস্তবতা এটা প্রমাণ করে দেখালো যে, ইসলাম কোন রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগীতা ছাড়াই টিকে থাকতে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। 

     এর দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ফল হয়েছে। ইশ্বরের ক্ষমতা ও প্রকৃতি এবং ইশ্বরের সাথে তার প্রতি বিশ্বাসীদের (অর্থাৎ মুসলমানদের - লেখক) সম্পর্ক সন্মন্ধ্যে মুসলমানদের ধারণা, বিশ্বাসই বদলে দিয়েছে, এরই ফলে প্রথম যুগের মুসলিম রাষ্ট্র ও তার প্রভাবাধীন রাজ্যসমূহে বসবাসরত অমুসলিম জনগোষ্ঠী দলে দলে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে।২

    আর বাস্তবতা হলো আজও সেটাই হচ্ছে। সেটাই আমরা নিজেদের চোখে দেখছি। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে একজন মুসলমানকে ভাবতে হবে নতুন করে; সেক্যুলারিজম নামক চটকদার কুহকী মতবাদের সাথে তার সম্পর্ক কেমন হতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে। 

তথ্যসুত্র:
১. The End of Faith: Religion, Terror and Future of Reason, Sam Harris, Simon & Schuster UK Ltd. London, পৃ: ১০৯-১১০

২. Mankind and Mother Earth, Arnold Toynbee, পৃ: ৪২৯-৪৩০

(প্রকাশিতব্য গ্রন্থ ‘সেক্যুলারিজম’ থেকে)

Post a Comment

0 Comments