Recent Tube

আপনার কাজ একটাই- জিয়াউল হক।



 

  আপনার কাজ একটাই-

 ----------------------------------- 
 জনৈক আমেরিকান সাইকোলোজিস্ট (মনোবিজ্ঞানী) ধর্মকে অস্বীকার করে বলেছেন; Science has shown religion to be history’s cruelest and wickedest hoax (Science and Christian belief, C. A. Coulson, পৃ: ৪) (বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, ধর্ম হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও নিকৃষ্ঠতম ভন্ডামি।) 

     ধর্ম নিয়ে এক শ্রেণির সুশীল পন্ডিতের এইসব ভন্ডামি নিয়ে পরে একদিন আলাপ করবো। আজ আমরা বরং একটা মুখরোচক খাবার; ডিম নিয়ে কিছু হাল্কা কথাবার্তা বলি আসুন।

      ডিম। অনেকের প্রিয় খাবার। আমারও। ডিম দিয়ে তৈরি নানা পদের মুখরোচক পুষ্ঠিকর খাবার আমাদের শরীর ও মন উভয়ই তাজা রাখে। ডিম খেতে খেতে কতোই না আড্ডা দিয়েছি আমরা। কিন্তু একটা কাজ আমরা খুব কমই করেছি; ডিম খেতে খেতে বা ডিম হাতে এর গঠন নিয়ে চিন্তা করা। এ কাজটা সম্ভবত আমরা কেউই করিনি। যদি করতাম, তা হলে আমাদের চিন্তার জগতটা অন্যরকম হতে পারতো। 

     একটা ডিম, সবচেয়ে সহজলভ্য ডিমটার কথাই ধরুন; মুুরগির ডিম। প্রায় ৪০ ধরনের বিভিন্ন প্রোটিন’সহ মিনারেলস, Vitamin A, D, Phosphorus, Calcium, Thiamine  এবং Riboflavin  ভিটামিন যেমন আমাদের পুষ্ঠি ও শক্তি জোগায় তেমনই তা হতে মুরগরি বাচ্চাও জন্ম নেয়। নরম তুলতুলে মুরগির বাচ্চাকে আমরা অনেরকেই হাত দিয়ে ছুঁয়ে ধরতে পছন্দ করি, কারন তার কোমলতা, গায়ে হাল্কা পশমের মসৃণতা আমাদেরকে আকৃষ্ঠ করে।

     দীর্ঘ একুশ দিন তা দেয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। মানুষ’সহ অন্যান্য প্রাণির গর্ভাশয়ে বাচ্চা বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে তারা মায়ের শরির থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্ঠির সরবরাহ পেয়ে পরিপুষ্ঠ হতে থাকে। কিন্তু মুরগি’সহ এরকমন অন্যান্য প্রাণির ক্ষেত্রে তা হয় না। মায়ের শরিরের সাথে তার কোন সংযোগ না থাকায় বেড়ে উঠার জন্য সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্ঠি ও রসদ পাবার তার আর কোন সুযোগ নেই। 

    কিন্তু তারপরেও তা বেড়ে উঠে, একটা পরিপূর্ণ প্রাণের রুপ লাভ করে। আরও অবাক ব্যাপার হলো; এই সেই তরল কুসুম আর এলবুমিন (ডিমের ভেতরে সাদা তরল অংশটুকু); তার ভেতর থেকেই একটি প্রাণ তৈরি হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে! কোথায় যেন একটা পর্দা রয়েছে, ফলে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না!

    কোরআন মাজিদে আল্লাহ তবলেন; 'যারা কুফরি করে তারা কি ভেবে দেখে না, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে। তবু কি তারা ইমান আনবে না।' (সুরা আম্বিয়া: ৩০)। 

    আল্লাহ পাক ডিমের মধ্যে সেই পানি মওজুদ রেখেছেন। আর সকল প্রাণের মৌল হচ্ছে যে প্রোটিন, সেই প্রোটিনও ডিমের মধ্যে রেখেছেন। ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের তৈরি ডিমের খোলসের গায়ে প্রায় ১৭ হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র রয়েছে, খালি চোখে দেখতে না পাওয়া এইসব ছিদ্রগুলো দিয়ে ডিমের মধ্যে আলো ও আদ্রতা ঢুকলেও কোন ধুলোবালি ও রোগজীবানু যেন না ঢুকে পড়ে সে জন্য দুইস্তর বিশিষ্ঠ এই খোলসের মধ্যে রয়েছে আরও একটা সুক্ষ পর্দা; ব্লুম (Bloom), যা ডিমের ভেতরে প্রাণের মৌল উপাদান; পানি ও প্রোটিনকে যে কোন জীবানুর আগ্রাসন হতে রক্ষা করে।

    একুশ দিন তা দেবার ধারাবাহিকতায় এর ভেতরে আমাদের অলক্ষ্যেই একটা প্রাণ; মুরগির বাচ্চা, জন্ম নেয়। নরম ও দূর্বল বাচ্চাটা এক সময় ভেতরেই নড়াচড়া করতে থাকে। মানুষের হাতে, তার শক্তির কাছে ডিমের বাইরের খোলসটা যতোই দূর্বল ও ভঙ্গুর বলে মনে হোক না কেন, ভেতরের ঐ বাচ্চাটার কাছে তা এক দূর্ভেদ্য দূর্গ বটে! প্রশ্ন হলো; অতি দূর্বল এই সত্তার কাছে ডিমের খোলস ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসার তাগাদা দেয় কে? খোলস ভাঙ্গার মতো শক্তিইবা তাকে কে জোগায়? তাও আবার এই একুশতম দিনেই! 

    আগে ভাবা হতো, ডিমের ভেতর থেকে বাচ্চা বেড়ে উঠায় ক্রমবর্ধিষœু চাপে খোলসটা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আধুনিক এক্স-রে ও মাইক্রোস্কোপিক পরিক্ষায় তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বায়োলোজিস্ট ও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন একুশতম দিনে ডিমের ভেতরে মুরগির বাচ্চার ঠোঁটে এক ধরনের শক্ত সুঁচালু শুড় (Beak) গজায়। এই সুঁড় গজানোর সাথে সাথে বাচ্চাটা ভেতর থেকেই ডিমের খোলসটাতে আঘাত করতে থাকে। 

   প্রশ্ন হলো, আঘাত করে ভেতর থেকে খোলস ভেঙ্গে বেরুনোর তাড়া সে কোথা থেকে পায়? কে তাকে ইলহাম করে জানায় যে, এখান থেকে বেরুলেই সে বিশাল ও বিস্তৃত এক বিশ্বের সন্ধান পাবে! আর সেই বিশাল, বিস্তৃত ও বৈচিত্রময় পৃথিবী দেখা, সেখানে বিচরণ করা, তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিজের দূর্বল শরিরের সকল শক্তিটুকু কাজে লাগিয়ে খোলস ভেঙ্গে গলাটা বাড়িয়ে, মাথাটা উঁচু করে কিচির মিচির আওয়াজ তুলে চারিদিকে আগ্রহী দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখে আর এক সময় লাফিয়ে বেরিয়ে আসে, চীরদিনের মতো! 

    বিজ্ঞানীরা প্রশ্নটির উত্তর দিতে অপরাগ। তারা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরও দশটা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। তারা খুঁজতে গিয়েছিল ডিমের ভেতর থেকে বাচ্চাটা কিভাবে বেরিয়ে আসছে? সে প্রশ্নের উত্তর। মাইক্রোস্কাপ আর এক্সরে মেশিন প্রশ্নটির জবাব দিতে গিয়ে আরও একটা কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেছে; মুরগির বাচ্চার মুখে একুশতম দিনে সুঁড় তৈরি করেন কে? বিজ্ঞানীরা লাজওয়াব! কেউ একজন আছেন নিশ্চয়। তাদের ভন্ডামি ধরা পড়ে যায়। বিজ্ঞান নয়; ভন্ড হলো বিজ্ঞানের ধারক কিছু বিজ্ঞানী। তারা একটা মেকি খোলস তৈরি করে নিজেদের ভন্ডামি টিকিয়ে রেখেছে। 

   হে যুবক; কুরআনের জ্ঞান হলো আপনার সেই সুঁড়, আপনি যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিজ্ঞানের তৈরি মেকি খোলসটা ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে দেখতে পাবেন জ্ঞানের এক বিশাল জগত অপেক্ষমান। আপনার কাজ একটাই; কুরআনের জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মতবাদকে টোকা দেয়া, দেখবেন তা ধ্বসে পড়ছে সহসাই!
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments