Recent Tube

জামায়াত এ ইসলামি: টিকে থাকার রহস্য কি? রুখে দেবার পথটাই বা কি? জিয়াউল হক।




জামায়াত এ ইসলামি: টিকে থাকার রহস্য কি? রুখে দেবার পথটাই বা কি?
 --------------------------------- 
    অংকের হিসেবে আজ (২৬ শে আগষ্ট, ২০২১) হতে ঠিক ২৮৯৮৩ দিন আগে, ২৬শে আগষ্ট, ১৯৪১ এক মঙ্গলবারের ভ্যাপসা গরমে ঘামে ভেজা সকাল, লাহোরের ইসলামীয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘জামায়াত এ ইসলামি হিন্দ’ নামে সংগঠনটি মাত্র ৭৫ জন ব্যাক্তির অংশগ্রহণে গঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে এক এক করে দীর্ঘ ৮০ টি বছর পেরিয়ে ৮১তম বছরে পদার্পণ করেছে আজ।
 
    বিগত দুই কুরুন বা আশিটি বসর এই সংগঠনের উপর দিয়ে কেয়ামতের আজাব গেছে ধারাবাহিকভাবে। এমন কোন পথ ও পন্থা নেই যে, একে দমন করার জন্য ব্যবহার করা হয়নি। এমন কোন প্রোপাগান্ডা নেই যা এ সংগঠনকে বিতর্কিত করতে ব্যবহার করা হয়নি। আঈনের জোর বা বন্দুক কিংবা পেশির জোর খাটিয়েও তাদের দমন করা যায়নি। সেদিনের সেই ক্ষুদ্র দলটি আজ বিশ্বের বুকে এমন কোন দেশ, এমন কোন সমাজ নেই যেখানে বিস্তৃত হয়নি, যেখানে কমবেশি এর অনূগামী বা অনুসারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ এক বিষ্ময়ই বটে! 

    কি চেয়েছিলেন তারা? একটি সত্যনিষ্ঠ দল দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, যাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হবে বিশ্বের বুকে শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত একটি মানবিক ও কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বিশ্বের বুকে নানা মতার্দশপন্থী প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদের ঘোষিত লক্ষ্যই হলো এটা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা নানা বানিয়েছেন। প্রয়োজনে সেই সব মত ও দর্শনকে বিসর্জন দিয়েছেন বা সংশোধন, সংয্জোন বিয়োজনও করেছেন। বিশ্বের বুকে আজ পর্যন্ত কোথাও এ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কি না, ইতিহাসের কাছে প্রশ্নটি রাখুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।

   একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত এ দলটি ব্যক্তিজীবন থেকে পারিবারিক জীবন ও সমাজ এবং সমাজের সকল অংগনে একটি ইতিবাচক ও কল্যাণকর পরিবর্তনের ডাক দিতেই সারা বিশ্ব যেন হামলে পড়েছে! এমনকি, অনেক ইসলামি দল ও গোষ্ঠী, জানবাজ মুসলমান নেতা-কর্মী ও আলেম আল্লামাও রয়েছেন এ দলে! 

    আর কোথাও নয়, কেবলমাত্র পাকিস্থানের ইতিহাসে এ যাবত কালে একজন স্বতন্ত্র রাষ্ট্রপতি (মুহাম্মদ খাঁন জানেজো) ও ৩টি সামরিক অভ্যূত্থান বাদে এ পর্যন্ত ৪টি রাজনৈতিক দল মোট ১৯ জন সরকারপ্রধান (২২ দফায়) সরকার গঠন করেছেন। তারা বা তাদের প্রতেক্যের সরকারই এই দলটির প্রতি বৈরি আচরণ করেছেন রাষ্ট্র ও প্রশাসনের শক্তি কাজে লাগিয়ে। বিগত দিনের এইসব সরকার ও তাদের রাজনৈতিক প্লাটফরমের বক্তব্যগুলো দেখুন, দেখবেন তারা সবাই অন্তত একটি জায়গায় একমত, তা হলো; জামায়াত এ ইসলামির বিরোধিতা করা, তাকে দমন করা।

   এই একই ধারা বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও। তবুও আশিটি বসর পরে এসে সেদিনের সেই ক্ষুদ্র সংগঠনটি সকল জুলুম নির্যাতন সয়েও আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল তাই নয়, তারা প্রতিনিয়তই নিজেদের কর্মপরিধি বিস্তৃত করে চলেছে। আজ বালি থেকে দিল্লি, লন্ডন থেকে ওয়াশিংটন কিংবা মস্কো থেকে মক্কা বা আন্দামান থেকে আমাজন সর্বত্রই তাদের নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, প্রত্যাশা কিংবা হতাশা অথবা আতংক! শত শত কোটি মানুষ জড়িয়ে আছে এ কর্মকান্ডে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। এই যে টিকে থাকা, শত প্রতিকূলতার মুখেও নিজেদের বিস্তৃত করতে পারা, এর পেছনে রহস্যটা কি? 

    প্র্রশ্নটা অনেক দিন থেকেই ভাবছি। আমার জ্ঞান, বিদ্যা আর বুদ্ধি খুবই কম। তারপরেও নিজের মতো করে ভাবতে গিয়ে আমার দৃষ্টিতে একটা মাত্র উত্তর ধরা পড়েছে, সেটা হলো; জামায়াত-এ ইসলামি তার জন্মলগ্ন থেকেই এমন একটা পঠনরীতি, সাহিত্য ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণি তৈরি করতে পেরেছে যার উপরে ভিত্তি তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ কুরআন ও সুন্নাহকে ভিত্তি করেই বিংশ বা একবিংশ শতাব্দির পৃথিবী ও সমাজের জন্য উপযুক্ত চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি (Exposition of Thoughts) উদ্ভাবন করতে পেরেছেন।

   বর্তমান বিশ্বে যে কোন মতাদর্শীয় রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর চেয়ে তারা এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনেক এগিয়ে। অবশ্য দলটিকে এখনও এ ক্ষেত্রে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। এটাই হলো তাদের টিকে থাকা আর বিস্তার লাভ করার পেছনে আসল রহস্য। যারা যুগের প্রয়োজন মেটানোর মতো উপযুক্ত জ্ঞান, চিন্তা ও কৌশল উদ্ধাবন করতে পারে, তাদেরকে দমানো যায় না। আল কুরআনের সবচেয়ে বড় মোজেজাগুলোর অন্যতম একটি এই যে, সে প্রত্যেক যুগের চাহিদা মোটনোর মতো জ্ঞান ও চিন্তা সরবরাহ করতে পারে।

    এদের অগ্রগতি কি রোধ করা যাবে না? খুব যৌক্তিক একটা প্রশ্ন। সম্ভবত এর সবচেয়ে কার্যকর জবাব হলো; হাঁ যাবে। ওদের সাহিত্যকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে এবং তার চেয়ে উত্তম পাঠ উপাদান বা কন্টেন্ট তৈরি করেই তদের রুখে দিয়ে নিজেরা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করি। (একান্তই আমার নিজস্ব মতামত)।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments