Recent Tube

ছাত্র আন্দোলনের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসুক। মতিউর আকন্দ।





ছাত্র আন্দোলনের হারানো তিহ্য ফিরে আসুক;
—————————————

গত ১ জুলাই ২০২১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পেরিয়ে গেলো। শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অনেকেই স্মৃতিচারন করেছেন। একসময় আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ‘ডাকসু’। 

  পাকিস্তান শাসনামলেও ডাকসু নির্বাচন হতো। ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিগন জাতীয় ইস্যুতে কথা বলতেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন।অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতেন। ডাকসুকে বলা হতো সেকেন্ড পার্লামেন্ট।
৫২’র ভাষা আন্দোলন,৬২’র শিক্ষা আন্দোলন,৬৯’র গনআন্দোলন,৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।জনগন তাকিয়ে থাকতো ছাত্র নেতৃবৃন্দের প্রতি। ছাত্র নেতাদের যথেষ্ট সম্মান দেয়া হতো।

   আমি দেশের ২য় বৃহৎ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আন্দোল সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিন অন্চলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একক প্রভাব বিদ্যমান। ৯০’র গণ আন্দোলনে আমি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহন করেছি।ঐ সময় আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের, শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলাম।নির্বাচিত প্রতিনিধির যে মর্যাদা ও সম্মান ছিল তার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ আমার হয়েছিল।ছাত্রজীবনে বহুবার কারাগারে আটক হয়ে উপলব্ধি করেছি; একজন বন্দী ছাত্র নেতা মুক্ত ছাত্র নেতার চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী।(আমি নিজেকে নেতা দাবী করি না।)কারাগারে বন্দী থাকা অবস্হায় ক্যাম্পাসে মুক্তি আন্দোলন, মুক্তি লাভের পর ফুলেল শুভেচ্ছা ,এসবই ছিল ছাত্র আন্দোলনের অলংকার।

    একটা চ্যালেন্জের মধ্যে আমরা ছাত্র আন্দোলন করেছিলাম।প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের সাথে সুসম্পর্ক ছিল আমাদের। সেসময় মতিহার সবুজ চত্বরে আমাদের কোন ছাত্র সভা হলে হাজার হাজার ছাত্র, শিক্ষক,কর্মকর্তা কর্মচারীগন উপস্হিত হতেন। আমাদের বক্তব্য ছিল গঠনমূলক। আজও সিনিয়র শিক্ষক এবং যারা নতুন ভাবে শিক্ষক হয়েছেন তারা যোগাযোগ করেন, আমাদের খোঁজখবর নেন।
দেশের গুরুত্বপূর্ন প্রতিটি ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য থাকতো।সরকারের বাজেট, সামাজিক ঘটনা, হত্যা, নারী নির্যাতন,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমাদের কর্মসূচি থাকতো। সেদিনগুলো মুখর ছিল, সতেজ ছিল। ছিল অনেক বেশী প্রানবন্ত।বহু আন্দোলন সংগ্রাম আমাদের মাঝে ,একটা তৃপ্তি-স্বস্তি ও আনন্দ রোমাঞ্চিত করতো।

    ছাত্রজীবন শেষ করে  আজ আমরা সবাই কর্মজীবনে।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সে আন্দোলন মুখর ,আনন্দময় দিনগুলো আজও আমাদের হৃদয়েকে করে আলোড়িত,উদ্দীপ্ত।

    দেশ  স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে ৩০ বছর হলো।মাঝখানে ২০০৭-২০০৮ বাদে ২৮ বছর দেশ শাসন করছে রাজনৈতিক দলসমূহ। দীর্ঘ এ সময়ের মাঝে ডাকসু সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি বললেই চলে। জাতির গৌরব ছাত্র সমাজকে রাজপথে কথা বলতে দেয়া হয়নি ।দেশে আজ কোন ছাত্র আন্দোলন নেই। কার্যকর ছাত্র আন্দোল সরকারের জন্য কখনো  হুমকী হতে পারেনা। যে সরকার জনগন কতৃক নির্বাচিত তাদের কিসের ভয়? নির্বাচনের পরিবর্তে নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে ক্ষমতায় যারা আসেন তারা সবসময়ই ছাত্র আন্দোলনকে ভয় পান। তাই ছাত্রদের আন্দোলন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন তারা বন্ধ করে রেখেছেন।এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। জাতীয় নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছেনা।এ অবস্হার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

    আমরা আশাকরি ,কোমলমতি ছাত্রসমাজ হয়তো একদিন জেগে উঠবে। আবারো ফিরে আসবে হারানো ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাঙ্গনের পবিত্র ও সবুজ চত্বর আবারো ছাত্র আন্দোলনে মুখরিত হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ! কারন দেশে ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরীর জন্য ছাত্র আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments