সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও আফগান মুজাহিদ বাহিনীর রাজনৈতিক বিজয়।
সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর। প্রায় দশ বছর ধরে চলা এ ধ্বংসলীলা শেষ হয় ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।
১৯৮০ সালের শুরুর দিকে অর্থাৎ সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যে বিশ্বের ৩৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ জাতিসংঘে “সোভিয়েত সৈন্যদের তাৎক্ষণিক, জরুরি ও নিঃশর্ত প্রত্যাহারের” দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন।
সেসময় আফগান (তালেবান)যোদ্ধাগণ পাশের দেশ চীন ও পাকিস্তান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পায়। পাশাপাশি আফগানিস্তান পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পায়।
কমিউনিজম বিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় ছিল আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী মিত্রপক্ষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল আফগানিস্তান।
বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র ঢুকতে থাকে আফগানিস্তানে। উপায়ান্তর না দেখে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি আফগানিস্তানে রুশ সৈন্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আনুমানিক ১ লাখ ৮ হাজারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদী এ যুদ্ধে অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর আফগান মুজাহিদরা রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধে সোভিয়েত ইয়নিয়নও ব্যাপক সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।
১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে রুশ নেতা মিখাইল গর্বাচেভের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত সরকার আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। তবে চূড়ান্তভাবে সৈন্য প্রত্যাহার আরম্ভ হয় ১৯৮৮ সালের ১৫ মে। ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সৈন্য প্রত্যাহার সমাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্যদের স্বেচ্ছায় পিছু হটার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব তো আছেই। তার চেয়েও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সোভিয়েত সেনাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কারণ সোভিয়েত সৈন্যদেরকে যখন আফগানিস্তানে প্রেরণ করা হয়েছিল তখন তাদেরকে বুঝানো হয়েছিল যে, তারা আফগানদের সহযোগিতা করতে এসেছে। কিন্তু আফগানিস্তানে এসে তাদের বুঝতে পেরেছিল যে তাদের পাঠানো হয়েছে আফগানিস্তান ধ্বংস করতে।
নিহত সোভিয়েত সেনাদের প্রতি চার জনের একজনই মারা যেত নিজ পক্ষের গুলিতে বা আত্মহত্যা করে।”
সোভিয়েত সেনারা অসংখ্য আফগান নিরপরাধ নারী ও শিশুকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে। রুশ সৈন্যরা যখন মুজাহিদদের খোঁজ করার জন্য গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়াত, তখন তারা গ্রাম থেকে নারীদের ধরে নিয়ে এসে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাত।
নামকরা লেখক সিবা শাকিব তাঁর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বই ‘আফগানিস্তান, হোয়্যার গড ওনলি কামস টু উইপ’ এ আফগান নারীদের উপর সোভিয়েত সৈন্যদের অত্যাচারের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “উর্দিধারী রুশ ছেলেরা আদেশ পালন করতে গিয়ে, ভয় কাটিয়ে, তারা গ্রামগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, নারীদের তুলে নিয়ে যায়, ধর্ষণ করে, স্তন কেটে ফেলে, পেট চিরে ফেলে, ভ্রূণগুলোকে চাপড় দিয়ে বালিতে পুঁতে ফেলে। তারা শিশুদের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে।”
এ যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার সোভিয়েত সৈন্য এবং ১০ লাখ আফগান প্রাণ হারায়। প্রায় ৭০ লক্ষ আফগান নাগরিক হয় গৃহহারা।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ঐক্য ভেঙে যায়। শেষ হয় সুদীর্ঘদিনের স্নায়ুযুদ্ধ। আর এরই বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন সাম্রাজ্যের একাধিপত্বের দিন।
টুইন টাওয়ারে পরিকল্পিত হামলার জের ধরে বুশ প্রশাসন কথিত জঙ্গি নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ইস্যু করে আফগানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।সোভিয়েত সেনারা আফগানে যা করেছিল আমেরিকা ও ন্যাটো তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
বেসামরিক মানুষ মেরেছে লাখো লাখো,নারীকে বানিয়েছে ভোগের পণ্য।
আমেরিকান সেন্য কতৃক আবু গারিব কারাগারে পূরুষ ও নারী বন্দি ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক নির্যাতন বিশ্ব বিবেকের নাড়া দেয়নি।
ইলেক্ট্রিক শকের ভয় দেখানো মাথায় হুড পরে একটি বক্সের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গিলিগান (ছদ্দনাম) এর ছবিটি আবু গারিব ট্রাজেডির সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি। এই ছবিটি একসময় আবু গারিব কারাগারের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল।
ইরাকের কুখ্যাত আবু গারিব-কারাগার। যেখানে মানবতা ছিল মূল্যহীন।
যে ইসলাম নারীকে মর্যাদার আসনে সমাসিন করল সেই ইসলামাী হকুমাত কায়েম করা তালেবানদের নিকট মানবতার বয়ান নিয়ে হাজির হয়েছে কথিত মানবতাবাদীরা।কথা বলছে নারীর আত্নসম্মানের অধিকার নিয়ে।এরচে বড় কৌতুক পৃথিবীতে আর কি হতে পারে। মুসলমানদের বোঝা উচিত,তাদের সমস্যা তালেবান নয়,সমস্যা হল ইসলামী হুকুমাত।
---------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments