Recent Tube

সিয়াসতনামা- একজন নিজামুল মুলক ও ইতিহাসের বাঁকবদল। জিয়াউল হক।





সিয়াসতনামা- একজন নিজামুল মুলক ও ইতিহাসের বাঁকবদল;
 --------------------------------- 

   সেলুজক শাসনামলে বাগদাদে সুলতান মালিক শাহের সুযোগ্য উজির ইতিহাসখ্যাত নিজাম উল মুলক (১০১৭-১০৯২) ছিলেন অত্যন্ত প্রজাবৎসল, যোগ্য ও দক্ষ একজন মন্ত্রী। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী, বিদ্বান ও নিষ্ঠাবান একজন মুসলমান। 

   উল্লেখ্য যে, এই সময়টাতে বাগদাদের আব্বাসীয় খেলাফত ও মিশরে ফাতেমি খেলাফত ব্যবস্থা, উভয়টিই আভ্যন্তরীণ নৈরাজ্যের শিকার হয়েছিল। শাসকবর্গ, আমির ওমরাহ’সহ সাধারণ প্রজাসাধারণের অধিকাংশই ইসলামি চেতনা হতে অনেকটাই দূরে সরে পড়েছিল। সমাজ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আমোদ আহ্লাদ, বিলাসব্যঞ্জনে ব্যস্ত। 

    ওদিকে রোমান সাম্রাজ্য প্রায়ই মুসলিম খেলাফতের সীমানায় উৎপাত করতে থাকে। রাজ্যশাসন, মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব যথাযথ সম্পাদনের পাশাপাশি নিজাম উল মুলক মুসলিম সমাজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শংকিত ও আতংকিত হয়ে পড়েন।

    তৎকালীন রাজা বাদশাহ, সুলতান, আমীর ওমরাহদের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করে তাদেরকে স্বৎ পরামর্শ দেয়াটাও ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ, এতে করে কখনো ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো। যেমন বলা যেতে পারে, ‘হিকমত আল ইশরাক’ গ্রন্থটি লেখার কথিত অপরাধে (!) লেখক শিহাব উদ্দীন সোহরোওয়ার্দিকে মৃত্যুদন্ডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

     এরকম অবস্থায় কিছু একটা করার জন্য, কোন না কোনভাবে শাসকদের ভূল ধরিয়ে দিয়ে তাদের নজরে করণীয় তুলে ধরার জন্য নিজাম উল মুলক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক অমূল্য বই লেখেন, ইতিহাসখ্যাত গ্রন্থ; ‘সিয়াসতনামা’। বইটি তিনি সুলতান মালিক শাহের নামেই উৎসর্গ করেন।

    যাদুর মতো কাজ হয় এর ফলে। রাষ্ট্র ও প্রশাসন ব্যবস্থাপনা, কর ও আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, আঈনশৃংখলা রক্ষাসহ প্রশাসনের এমন কোন বিভাগ নেই, যে বিভাগ নিয়ে তিনি তার ‘সিয়াসতনামা’য় বিস্তারিত লেখেননি। 

     বইটা পড়ে সুলতান মালিক শাহ এতোটাই প্রভাবিত হন যে, তিনি মন্ত্রী নিজামের পরামর্শমতে সাম্রাজ্যজুড়ে শিক্ষা সংস্কারে নেমে পড়েন। বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশেষ করে, বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন ও কার্যকর শিক্ষা সিলেবাস অনুমোদন করেন।

 
    আজও নিজামিয়া মাদ্রাসা ও শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম বিশ্বে টিকে আছে। উম্মাহর এরকম কল্যাণ চিন্তায় কাতর হবার পাশাপাশি তিনি প্রকৃত অর্থেই তাদের দুরাবস্থাগুলোকে চিহ্নিত করতে ও তা কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত ও সময়োচিত পদক্ষেপও নেন, সমাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। 

    এটা দেখে ইসলামবিরোধী মুনাফিক শক্তি শংকিত হয়। হাসান বিন সাবাহ’র কুখ্যাত গুপ্তঘাতক বাহিনী তাকে হত্যা করে ফেলে। অপরাধ? উম্মাহর কল্যাণ চিন্তা ও তাদের পথনির্দেশ করে একটা বই; ‘সিয়াসতনামা’ রচনা! নিজাম উল মুলক শহীদ হলেন। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠিত নিজামিয়া মাদ্রাসা টিকে রইলো। মাত্র একটি শতাব্দির মধ্যেই তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন সত্য হলো। সত্য হলো তারই অবর্তমানে, মৃত্যুর পরে। 

    নিজাম উল মুলক প্রতিষ্ঠিত সেই নিজামিয়া মাদ্রাসা থেকেই তুখোড় মুজাহিদ হিসেবে বেরিয়ে আসেন মুসলিম উম্মাহর এক কান্ডারী; সুলতান গাজী সালাহউদ্দীন, জেরুজালেম উদ্ধারকারী বিশ্বখ্যাত সেনাপতি! 

     আজ সবাই গাজী সালাহউদ্দীন হতে চায়, কিন্তু গাজী সালাহউদ্দীন যারা তৈরি করেন, সেই নিজামুল মুলক কোথায়? সেই সিয়াসতনামার মতো সেই সাহিত্য লেখার সাহিত্যিক চিন্তকও বা কোথায়?

Post a Comment

0 Comments