Recent Tube

আরবি ‎يد ‏শব্দের অর্থ কি শুধু হাত? ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏মুহাম্মদ ‎তানজিল ‎ইসলাম ‎।


আরবি يد শব্দের অর্থ কি শুধু হাত?
---------------------------------------------------
সাধারণত যারা আল্লাহর দৈহিক অঙ্গ প্রতঙ্গে বিশ্বাসী তারা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত يد শব্দ পেলেই আল্লাহর (দৈহিক অঙ্গ হিসেবে) হাত আছে বলে দলিল দেয়। কিন্তু আরবি يد শব্দের অর্থ শুধু (দৈহিক অঙ্গ) হাত নয়। একই ভাবে ইংরেজি Hand শব্দের অর্থও শুধু হাত নয়। এমনকি বাংলা 'হাত' শব্দের অর্থও শুধু দৈহিক অঙ্গ হিসেবে হাত নয়। বরং يد Hand 'হাত' এর হাত ছাড়াও একাধিক অর্থ রয়েছে। যেমন, অধিকার, আয়ত্তি (নিয়ন্ত্রণ) শক্তি, ক্ষমতা, প্রভাব, অনুগ্রহ, সাহায্য, দান ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ ১. আমরা অনেক সময় বলে থাকি বা শুনে থাকি যে, "আইনের হাত অনেক লম্বা।" এর অর্থ এটা নয় যে, আইনের দৈহিক অঙ্গ হিসেবে হাত আছে। বরং এর অর্থ শক্তি বা ক্ষমতা।
 
 উদাহরণঃ ২. কখনো কোথাও কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে বা ঘটালে মাঝে মধ্যে কেউ কেউ বলে থাকে যে, "এ দূর্ঘটনার পিছনে অমুকের হাত রয়েছে। অর্থাৎ অমুকের প্রভাব আছে। 

 উদাহরণঃ ৩. পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
 تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. 
"অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যার হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব জাহানের কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।" (সূরা মুলক ৬৭/০১) 
 তাঁর হাতে ক্ষমতা থাকার অর্থ এটা নয় যে, দৈহিক অঙ্গ হিসাবে তাঁর কোন হাত আছে এবং বিশ্ব জাহানের কর্তৃক তিনি হাতে করে নিয়ে আছেন। বরং বাকরীতি অনুসারে শব্দটি অধিকার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষার মত আমাদের ভাষাতেও বলি যে, দেশের শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে'। এর মানে এ নয় যে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হাতে নিয়ে বসে আছে। বরং এর  অর্থ শাসন ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর আয়ত্তে বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, অধিকারে রয়েছে।

 উদাহরণঃ ৪. ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ  
إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ضَلَالَةٍ وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ وَمَنْ شَذَّ شَذَّ إِلَى النَّارِ .
আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মাতকে অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উন্মাতকে কখনোও গোমরাহীর উপর একত্রিত করবেন না। আর জামা'আতের উপর আল্লাহ তা'আলার হাত (রহমত, অনুগ্রহ, সাহায্য) রয়েছে। যে লোক (মুসলিম সমাজ হতে) আলাদা হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্নভাবেই জাহান্নামে যাবে। (জামে তিরমিযী হাঃ ২১৬৭; মিশকাত হাঃ ১৭৩)
হাদীসে বর্ণিত وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ এর অর্থ এটা নয় যে, জামায়াতের উপর বা সাথে আল্লাহ তাঁর হাত রেখেছেন।বরং এর অর্থ হল, জামায়াত বদ্ধভাবে জীবন- যাপনকারীদের উপর আল্লাহর রহমত, অনুগ্রহ ও সাহায্য রয়েছে। এখানে يَدُ اللَّهِ অর্থ আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য। 

 উদাহরণঃ ৫. আল্লাহ তা'আলা মদীনার ইয়াহুদীদেরকে বিত্তশালী ও স্বাচ্ছন্দ্যশীল করেছিলেন, কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করেন এবং তাদের কাছে ইসলামের আহবান পৌছে, তখন পাষণ্ডরা সামাজিক মোড়লি ও কুপ্রথার মাধ্যমে প্রাপ্ত নযর-নিয়াযের খাতিরে এ আহবান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে তাতের উপর আল্লাহ তা'য়ালা অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন। এতে বলতে থাকে যে, 'আল্লাহর হাত বাঁধা' অর্থাৎ আল্লাহর ধনভাণ্ডার ফুরিয়ে গেছে অথবা আল্লাহ কৃপণ হয়ে গেছেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। 
وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ ۚ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا ۘ بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ.
আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তার (দানের) হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন (সূরা মায়িদাঃ ৫/৬৪)
এখানে 'হাত' বলতে শারীরিক হাত নয় বরং দান'কে এবং 'হাত বাঁধা' বলে কৃপণতা বোঝানো হয়েছে। সূরা আল-ইসরার ২৯ নং আয়াতেও এ শব্দটি উক্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং এর অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহর হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, হাত তো তাদেরই বাঁধা। এর অর্থ এটা নয় যে, ইয়াহুদীদের হাত বাঁধা রয়েছে। বরং এর অর্থ হল, তাদের প্রতি অভিসম্পাত হবে, যার ফলে আখেরাতে আযাব এবং দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা’আলার দানের হাত সব সময়ই উন্মুক্ত রয়েছে। তাঁর দান চিরকাল অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। কিন্তু তিনি যেমন ধনবান ও বিত্তশালী, তেমনি সুবিজ্ঞও বটে। তিনি বিজ্ঞতা অনুযায়ী ব্যয় করেন; যাকে উপযুক্ত মনে করেন, বিত্তশালী করে দেন এবং যার ঘাড়ে উপযুক্ত মনে করেন, অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন। 

উদাহরণঃ ৬. পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ ۖ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ. 
"বাতিল এতে (কুরআনে) অনুপ্রবেশ করতে পারে না; না এর উভয় হাতের মাঝ (সামনে) থেকে, না এর পিছন থেকে। এটি (কুরআন) প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।" (সূরা ফুসসিলাত: ৪১/৪২) 
এখানে বলা হয়েছে يَدَيْهِ এর অর্থ এটা নয় যে, 
কুরআনের উভয় হাত বা দুই হাত আছে। বরং بَيْنِ يَدَيْهِ অর্থ হল 'সামনে'। আবার এ আয়াত দ্বারা এটিও প্রমাণ করা যাবে না যে, মানুষের মত কুরআনের সামনে ও পিছন আছে। বরং এর ব্যাখ্যা হল, কোনো ভাবেই কুরআনে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।

 সুতরাং يد মানে শুধু হাত নয় বরং يد এর 'অধিকার, আয়ত্তি (নিয়ন্ত্রণ) শক্তি, ক্ষমতা, প্রভাব, অনুগ্রহ, সাহায্য, দান' সহ বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। রাঈসুল মুফাসসিরীন আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.)-সহ আরও অনেক মুফাসসির يد এর অর্থ 'শক্তি, কর্তৃত্ব, অধিকার' ইত্যাদি করেছেন। (তাবারী : ১১/৪৭২)
----------------- 
লেখকঃঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থ প্রণেতা প্রবন্ধ লেখক দাঈ ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments