Recent Tube

সেজদা অবস্থায় দুআ, সেজদায়ে শোকর এবং সেজদায়ে তিলাওয়াতের পদ্ধতি, দুআ ও আহকাম।আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল




সেজদা অবস্থায় দুআ, সেজদায়ে শোকর এবং সেজদায়ে তিলাওয়াতের পদ্ধতি, দুআ ও আহকাম
------------ ●◈●------------ 
 প্রশ্ন:
 ১, নামাজে সেজদারত অবস্থায় দুয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়। কিন্তু কিভাবে দুয়াগুলো পড়তে হবে? সিজদার
তাসবীহ -সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা ৩ বার পড়ার পর কি দুয়া পড়তে হবে এবং কোন কোন দুয়া পড়তে হয়?
প্রশ্ন: 
২, কুরআন তিলাওয়াত এর সময় সেজদার আয়াত পেলে অথবা সেজদায় শোকর দিলে সেজদারত অবস্থায় কি শুধু ৩ বার সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়লেই হবে না কি সেই সাথে অন্যান্য দুয়াও পড়া যাবে যেমন নামাজের সেজদা অবস্থায় পড়া হয়?

 উত্তর:
 নিম্নে সেজদা অবস্থায় দুআর পদ্ধতি, সেজদায়ে শোকর এবং সেজদায়ে তিলাওয়াতের পদ্ধতি, দুআ ও হুকুম-আহকাম সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

 ♥ ক. সালাতে সেজদা অবস্থায় দুআ করা:

 ♦ সালাতে সেজদা অবস্থায় দুআ করার গুরুত্ব:

সেজদা অবস্থায় অধিক পরিমাণে দুআ করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
“সেজদারত অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী থাকে। তাই সেজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো।” (সহীহ মুসলিম)
অন্য এক হাদীসে এসেছে :
أَلَا وَإِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا، أَوْ سَاجِدًا، فَأَمَّا الرُّكُوعُ، فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ وَأَمَّا السُّجُودُ، فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ
“শুনে রাখো, রুকূ বা সেজদাবস্থায় তেলাওয়াত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। তাই রুকূ অবস্থায় তোমরা তোমাদের রবের স্তুতি জ্ঞাপন করো আর সেজদাবস্থায় খুব দুআ করো। কেননা সেজদা অবস্থা দুআ কবুলের উপযুক্ত সময়।” (সহীহ মুসলিম)

 ♦ সালাতে সেজদা অবস্থায় দুআ করার পদ্ধতি:

যে কোন সালাতে সেজদা অবস্থায় প্রথমে হাদীসে বর্ণিত সেজদার একাধিক দুআ ও তাসবীহ এর মধ্য থেকে এক বা একাধিক দুআ ও তাসবীহ পাঠ করা। যেমন, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা (তিন বা ততোধিক বার)
তারপর কুরআন-হাদীসের যত দুআ মুখস্থ আছে সেগুলো পাঠ করা। এমনকি নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে নিজ ভাষায়ও দুআ করা যায়।
(এ ক্ষেত্রে নিজ ভাষায় দুআ করার ব্যাপারে ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।)

★ উল্লেখ্য যে, কিছু মানুষকে দেখা যায়, সালাত পড়ে বসে থাকে। তারপর উঠে যাওয়ার সময় একটি সেজদা দেয় তারপর উঠে চলে যায়। এটি একটি বিদআতী পদ্ধতি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলািইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে এভাবে সেজদা করার কোন প্রমাণ নেই।
------------ 

 💠 খ) সেজাদায়ে শোকর বা কৃতজ্ঞতার সেজদা:

 যে কোন সুসংবাদ বা দু:সংবাদ থেকে মুক্তির খবর পাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি সেজদা দেয়াকেই সেজদায়ে শোকর বা শুকরিয়া আদায়ের সেজদা বলা হয়।
এর পদ্ধতি হল, যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় সাথে সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে এবং এতে সেজদার বিভিন্ন দুআ ও তাসবীহ পাঠ করবে (যেমন সুবহানা রাব্বিয়াআল আ’লা)।

 🔶 কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়:

▪ক. সেজাদয়ে শোকরের জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় সেজদা দেয়া জায়েয। শরীর পাক থাকুক অথবা নাপাক থাকুক।
▪খ. এমনকি অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে সালাতের অন্যান্য শর্তাবলীও এখানে প্রযোজ্য নয়। কারণ হাদীসে সালাতের যে সকল শর্তাবলী, (যেমন পবিত্রতা অর্জন, কিবলামূখী হওয়া, সতর ঢাকা, মহিলাদের পূর্ণ পদা করা ইত্যাদি) সেজদায়ে শোকরের ব্যাপারে সেগুলো বর্ণিত হয় নি।
▪ গ. এতে তাশাহুদ ও সালাম নেই।
▪ ঘ. এতে একটি মাত্র সেজদা দিতে হবে; দুটি নয়।
▪ ঙ. এতে তাকবীর দেওয়ারও প্রয়োজ নাই। কেননা এ ব্যাপারে দলীল নেই। আর দলীল ব্যাতিরেকে কোন আমল করা শরীয়ত সম্মত নয়।
------------ 

 💠 গ. তেলাওয়াত সেজদার পদ্ধতি ও বিধিবিধান:

 কুরআনের সেজদার আয়াত সমূহ (১৪টি মতান্তরে ১৫টি) পাঠ করলে সেজদা দেয়া সুন্নত। নিম্নে এর পদ্ধতি ও বিধিবিধান তুলে ধরা হল:
▪ক. সালাতের মধ্যে সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সেজদায় যাওয়া এবং সেজদার দুআ ও তাসবীহ সমূহের মধ্য থেকে এক বা একাধিক দুআ পাঠ করা। অত:পর তেলাওয়াতে সেজদার বিখ্যাত দুআটি পাঠ করা।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা তিলাওয়াতের সেজদাতে এই দু‘আ পাঠ করতেন:
‏ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সাম’আহু ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহ।
অর্থ: “আমার চেহারা সেই মহান সত্তার জন্য সাজদাহ্ করলো যিনি নিজ শক্তি ও সামর্থ্যে একে সৃষ্টি করেছেন এবং এতে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।” (সহীহ। সহীহ আবু দাউদ/১২৭৩)
নিম্নোক্ত দুআটিও পড়া হাদিস সম্মত:
اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ
‘‘হে আল্লাহ! এর মাধ্যমে আপনার নিকট আমার জন্য সওয়াব লিখে নিন। এর মাধ্যমে আমার পাপ দূরীভূত করুন, এটিকে আমার সঞ্চয় বলে গ্রহণ করুন এবং আমার থেকে এটিকে এভাবে কবুল করুন যেভাবে আপনি আপনার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম) থেকে কবুল করেছিলেন।’’
(হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনে আব্বার রা. হতে। সুনান তিরমিযী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৬/ সফর (أَبْوَابُ السَّفَرِ) পরিচ্ছদঃ সিজদা-এ কুরআনের দু’আ। এ হাদিসটিকে কোন কোন মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন। তবে ইবনে খুযাইমা, হাকিম ও ইবনে হিব্বান প্রমুখ সহীহ বলেছেন এবং আলবানী হাসান বলেছেন।)
তারপর আল্লাহু আকবার বলে সেজদা থেকে উঠে পুনরায় সালাতের জন্য উঠে দাঁড়ানো।
▪খ. ইমাম সাহেব জেহরী সালাত তথা যে সকল সালাতে উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করতে হয় (যেমন: মাগরিব ও ইশা এবং ফজরের সালাত) সে সকল সালাতে সেজদার তিলাওয়াত পাঠ করার পর তৎক্ষণাৎ 'আল্লাহু আকবার' বলে সেজদা দিবে এবং তার অনুসরণ করে মুসল্লিগণও সেজদা দিবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াবে।
কিন্তু যে যে সকল সালাতে উচ্চ আওয়াজে কিরাআত নেই সে সকল সালাতে (যেমন যোহর, আসর সালাত) ইমাম সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করলেও সেজদা দিবে না। কারণ এতে মুক্তাদীদের সালাতে তালগোল লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
▪গ. একাকী সালাত আদায় করার সময় যখনই তিলাওয়াতের সেজদা পাঠ করবে তখনই সেজদা দিবে। কেননা, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে প্রতিবার নিচে নামা ও উপরে উঠার সময় তাকবীর বলতেন। সুতরাং সালাতে সেজদায়ে তেলাওয়াত দেয়ার সময় তাকবীর দিবে এবং উঠার সময়ও তাকবীর দিবে।
▪ঘ. সালাতের বাইরে তেলাওয়াতের সময় কেবল সেজদায় যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে কিন্তু উঠার সময় তাকবীর বলার প্রয়োজন নাই। কেননা হাদিসে কেবল সেজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলার কথা এসেছে। সেজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর বলার কথা আসে নি। যেমন ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত,
كَانَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ عَلَيْنَا القُرْآنَ, فَإِذَا مر بِالسَّجْدَةِ كبر وَسَجَدَ وَسَجَدْنَا
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট কুরআন পাঠ করতেন। অত:পর তিনি সেজদার আয়াত এলে তাকবীর দিয়ে সেজদা দিতেন; আমরাও সেজদা দিতাম।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
▪ ঙ. সালাতের বাইরেও তেলাওয়াতের সেজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর দেয়ার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সেজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর দেয়ার কথা বর্ণিত হয় নি (যেমনটি উপরোক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়েছে)। তাই সেজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর দেয়ার প্রয়োজন নাই।
▪ চ. সালাতের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতের সেজদার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়।
▪ ছ. এতে তাশাহুদ বা সালাম নেই।
▪ জ. এতে একটি মাত্র সেজদা দিতে হবে; দুটি নয়।
▪ঝ. বসে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তেলাওয়াতে সেজদা আসলে বসা অবস্থায় 'আল্লাহু আকবার' বলে একটা সেজদা দিতে হবে। সেজদা দেয়ার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর প্রয়োজ নাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণে সেজদার মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায়কারী নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
------------ ●◈●------------ 
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানি)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
FB ID: AbdullaahilHadi

Post a Comment

0 Comments