Recent Tube

কোনও নারীর একাধিক বিয়ে হয়ে থাকলে জান্নাতে সে কার সাথে অবস্থান করবে?আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



কোনও নারীর একাধিক বিয়ে হয়ে থাকলে জান্নাতে সে কার সাথে অবস্থান করবে?
 
প্রশ্ন: 
এক দীনদার মহিলার সাথে তার স্বামীর তালাক সংঘটিত হয়। তারপর ঐ মহিলার সাথে অন্য একজন দ্বীনদার পুরুষের বিয়ে হয়। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার পূর্বের স্বামীও দ্বীনদার অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে এবং শেষ বিচারের দিন উক্ত মহিলা সহ তার আরও দু স্বামী সকলের জান্নাতের ফয়সালা হয়। এখন আমার প্রশ্ন হল, ঐ মহিলা অনন্ত কালের পরকালের জান্নাতি জীবনে কোন স্বামীর সাথে বসবাস করবে? এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস কী বলে?

উত্তর:

এটি মুমিনদের জন্য বিরাট সুসংবাদ যে, জান্নাতবাসী সৎকর্ম শীল স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি প্রিয়জনেরা জান্নাতে একসাথে থাকার সুযোগ পাবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ ‎
“জান্নাতে আদন (অনন্তকাল বসবাসের জান্নাত)। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্ম শীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।” [সূরা রা’দ: ২৩]

তিনি আরও বলেন, 
 رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدْتَهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আর তাদেরকে দাখিল করুন চিরকাল বসবাসের জান্নাতে, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” 
[সূরা গাফির/মুমিনুন: ৮]

 ইমাম ইবনে কাসির রাহ. বলেন,

“অর্থাৎ আল্লাহ জান্নাতবাসীদের সাথে তাদের জান্নাতের উপযুক্ত ইমানদার বাপ-দাদা, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি ইত্যাদি প্রিয়জনদেরকে একত্রিত করবেন-যেন তাদের চক্ষুশীলত হয়। এমনকি নিম্নস্তরের জান্নাতিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করবেন। উচ্চস্তরের জান্নাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হবে না। এটি আল্লাহ পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহ। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ ۚ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ 
 “যারা ইমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।” [সূরা তুর: ২১]
[তাফসিরে ইবনে কাসির, ৪/৪৫১]

 ❑ কোনও নারীর একাধিক বিয়ে হয়ে থাকলে জান্নাতে সে কার সাথে অবস্থান করবে?

এখানে প্রশ্ন হল, দুনিয়াতে কোনও নারীর একাধিক বার বিয়ে হয়ে থাকলে যদি সে সহ তার সকল স্বামী জান্নাতবাসী হয় তাহলে সে কার সাথে থাকবে? 

এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের তিনটি অভিমত পাওয়া যায়। যথা:

 ◈ ১. তাদের মধ্যে যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো ছিল তার সাথে থাকবে।
 ◈ ২. তাকে স্বাধীনতা দেয়া হবে। সে তাদের মধ্যে যার সাথে থাকতে চাইবে তার সাথে থাকবে।
 ◈ ৩. সর্বশেষ স্বামীর সাথে থাকবে।
 
◆ ১ম মতের পক্ষে বর্ণিত হাদিসটি মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সহিহ নয়। ইবনে আদি, কায়সারানি সহ অনেক মুহাদ্দিস তাকে মুনকার (যা মারাত্মক পর্যায়ের জইফ/দুর্বল) বলেছেন। আর ইবনুল জাওযী বলেন, এ হাদিসটি সহিহ নয়।
 
عن أمِّ سلمةَ قالت قلتُ يا رسولَ اللهِ المرأةُ منَّا تتزوَّجُ الزَّوجَيْن والثَّلاثةَ والأربعةَ ثمَّ تموتُ فتدخلُ الجنَّةَ ويدخلون معها من يكونُ زوجُها قال يا أمَّ سلمةَ إنَّها تخيَّرُ فتختارُ أحسنَهم خُلقًا فتقولُ أيْ ربِّ إنَّ هذا كان أحسنَهم خُلقًا معي في دارِ الدُّنيا فزوِّجنيه يا أمَّ سلمةَ ذهب الخُلقُ الحسنُ بخيرِ الدُّنيا والآخرةِ
المحدث:ابن عدي المصدر:الكامل في الضعفاء الجزء أو الصفحة:4/248 حكم المحدث:منكر
المحدث:ابن القيسراني المصدر:ذخيرة الحفاظ الجزء أو الصفحة:3/1698 حكم المحدث:منكر
المحدث:ابن الجوزي المصدر:العلل المتناهية الجزء أو الصفحة:2/649 حكم المحدث:لا يصح
 
◆ ২য় মতের পক্ষে কোনও দলিল পাওয়া যায় না।
 
◆ তবে দলিলের আলোকে ৩য় মতটি তুলনামূলক অধিক বিশুদ্ধ। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أيُّما امرأة تُوفي عنها زوجها فتزوجت فهي لآخر أزواجها
صححه الألباني رحمه الله في صحيح الجامع 2704 وفي السلسلة الصحيحة 1281 
“যে মহিলার স্বামী মৃত্যু বরণ করার পর অন্য স্বামীর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে তার শেষ স্বামীর জন্য। ”[মুসনাদে আবি ইয়ালা--এর সনদের বর্ণনাকারীগণ সবাই ثقات বা নির্ভরযোগ্য। সিলসিলা সহিহা, হা/১২৮১ ]
 
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أن هجيمة بنت حُيي الأوصابيّة أم الدرداء الصغرى خطبها معاوية بن أبي سفيان، فأبت وقالت: سمعت أبا الدّرداء يقول: قال رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ ” المرأة لآخِرِ أزواجِها ” ولست أريد بأبى الدرداء بديلاً، وهو حديث صحيح رواه الطبراني
 উম্মুদ দারদা আস সুগরা হুজাইমা বিনতে হুওয়াইকে মুয়াবিয়া রা. বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং জানায়, আমি আবুদ দারদা রা.-কে বলতে শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নারী তার সর্বশেষ স্বামীর জন্য।” আর আমি আবুদ দারদার কোনও বিকল্প চাই না’।  [ত্বাবারানী-সহিহ] যদিও এ হাদিসগুলোকেও কোনও কোনও মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন।
 
যাহোক, এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্যে শেষোক্ত হাদিসগুলো তুলনামূলক অধিক নির্ভরযোগ্য। কারণ অনেক মুহাদ্দিসের মতে সেগুলো সহিহ। সুতরাং এ বিষয়ে ৩য় মতটি তুলনামূলক অধিক বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।

 উত্তর প্রদানে:
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments