Recent Tube

শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলে ওজু নষ্ট হবে কি? মতবিরোধ এবং সমাধান। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



 
 শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলে ওজু নষ্ট হবে কি? মতবিরোধ এবং সমাধান।
-------------- ◈◉◈-------------- 

শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলে তাতে ওজু ভঙ্গ হবে কি না-সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে। তবে অধিক বিশুদ্ধ মতে, তা ওজু ভঙ্গের কারণ নয়।

নিম্নে এ বিষয়ে বিংশ শতকের অন্যতম দুই শ্রেষ্ঠ ফকিহ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. এবং আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. এর ফতোয়া তুলে ধরা হল:

 ❑ শাইখ উসাইমিন রাহ এর ফতোয়া:


  প্রশ্ন: 
 আহত স্থান থেকে রক্ত বের হলে কি ওজু নষ্ট হবে? না কি যে স্থান থেকে রক্ত বের হয়েছে তা পরিষ্কার করাই যথেষ্ট?

 উত্তর:
“সঠিক কথা হল, পেশাব-পায়খানার স্থান ছাড়া শরীরের অন্য কোনও স্থান থেকে রক্ত বের হলে ওজু ভঙ্গ হবে না-চাই নাক থেকে বের হোক (এপিসট্যাক্সিস) বা আহত স্থান থেকে বের হোক বা রক্ত পরীক্ষার জন্য ইচ্ছাকৃত বের করা হোক। বেশি হোক বা কম হোক। এসব কারণে ওজু ভঙ্গ হবে না-এটাই অগ্রাধিকার যোগ্য মত। কারণ এতে ওজু ভঙ্গ হওয়ার কোন দলিল নেই। আর ওজু ভঙ্গ হওয়া শরিয়তের একটি বিধান- যার পক্ষে দলিল থাকা প্রয়োজন। ওজু সাব্যস্ত হয়েছে শরিয়তের দলিলের মাধ্যমে। আর যা শরিয়তের দলিলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে তা শরিয়তের দলিল ছাড়া বাতিল হবে না। কিন্তু পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে ওজু ভঙ্গ হওয়ার পক্ষে কোনও দলিল নাই। চাই তা রক্ত হোক বা পুঁজ হোক বা বমি হোক।

যেহেতু তা পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয় নি তাই তাতে ওজু নষ্ট হবে না-চাই কম হোক বা বেশি হোক। তবে শরীরের কোনও অঙ্গ থেকে বেশি পরিমাণে রক্ত বের হলে তাহলে তা ধুয়ে ফেলবে। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ফাতিমা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখমণ্ডল থেকে রক্ত ধুয়ে দিতেন যখন উহুদ যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছিলেন।”
[উৎস: নূরুন আলাদ দারব (সৌদি আরবে বিখ্যাত ইসলামি প্রশ্নোত্তর বিষয়ক রেডিও প্রোগ্রাম]
 
❑ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
 
“যদি রক্ত স্বল্প পরিমাণে হয়-যেমন: সামান্য আহত হওয়া-তাহলে তাতে ওযু ভঙ্গ হবে না। তার ওযু সহিহ। কিন্তু রক্ত ​​বেশি পরিমাণে হলে এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এতে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারো কারো মতে শরীর আহত হলে বা তাতে ক্ষত সৃষ্টি হলে ওজু বাতিল হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, এতে ওযু বাতিল হবে না। অর্থাৎ এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো স্পষ্ট নয় এবং যেগুলো স্পষ্ট সেগুলো সহিহ নয়।

তাই মুমিনের জন্য নিরাপদ হল, যদি প্রচুর পরিমাণে রক্ত নির্গত হয় তাহলে সালাত কাজা করে নিবে (অর্থাৎ ঐ অবস্থায় সালাত পড়ে থাকলে ওজু করে পুনরায় সালাত কাজা করে নিবে) মতানৈক্য থেকে দূরে থাকার স্বার্থে এবং দীনের ব্যাপারে সতর্কতা হিসেবে। তবে রক্ত হালকা ও সামান্য হলে তা ক্ষমার্হ।”

◯ শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলে ওজু নষ্ট না হওয়ার পক্ষে হাদিসের দলিল:

ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, মদিনার সাত ফকিহ প্রমুখ ফকিহগণ রক্ত নির্গত হওয়ার কারণে ওজু ভঙ্গ না হওয়ার পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন:

সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যাতুর রিকা যুদ্ধের পরে গাতফান থেকে মদিনা ফেরত আসার পথে রাতের বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম সৈন্যদের প্রহরায় আম্মার বিন ইয়াসের রা. এবং আব্বাদ বিন বিশর রা. কে নিযুক্ত করে সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন। আব্বাদ রা. প্রহরায় নিয়োজিত থাকার সময়টা আল্লাহর ইবাদতে কাটানোর উদ্দেশ্যে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইত্যবসরে, এক মুশরিক তাকে উদ্দেশ্য করে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করলো। কিন্তু তিনি প্রতিবার শরীর থেকে তীর বের করে সালাত অব্যাহত রাখলেন। তারপর সালাত সমাপ্ত করার পর তার সঙ্গী আম্মার বিন ইয়াসের রা. আব্বাদ রা. এর শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে দেখে বললেন, প্রথম তীর নিক্ষিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে তুমি কেন আমাকে জাগিয়ে দাও নি? তিনি বললেন, “আমি এমন একটি সূরা তিলাওয়াত করছিলাম যা বন্ধ করতে চাই নি।”
[রাগিব সারজানি-সিরাতে নববী ৩৫ তম খণ্ড ৮ম পৃষ্ঠা-অনলাইন ভার্সন]

ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেনেছেন। কিন্তু রক্ত প্রবাহিত হওয়া স্বত্বেও সালাত অব্যাহত রাখার বিষয়ে তিনি আপত্তি করেন নি। এতে ওজু নষ্ট হলে তিনি অবশ্যই তাকে বলতেন যে, শরীর থেকে রক্ত বের হওয়ার কারণে তোমার ওজু ভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো। তাই এভাবে তোমার সালাত শুদ্ধ হয় নি। কিন্তু তিনি তা বলেন নি।

কিন্তু হানাফি মাজহাব সহ অন্যান্য আলেম যারা বলেছেন, শরীর থেকে রক্ত নির্গত হলে ওজু নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের কথার পক্ষ কোনও হাদিসের দলিল নাই কিয়াস বা যুক্তি ছাড়া। তাদের মতে, শরীর থেকে পেশাব-পায়খানা বের হলে যদি ওজু নষ্ট হয় তাহলে রক্ত বের হলেও ওজু নষ্ট হবে। কারণ প্রবাহিত রক্তও নাপাক। কিন্তু হাদিসের বিপরীতে কিয়াস বা যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং অধিক বিশুদ্ধ মতে, পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া শরীরের অন্য কোনও স্থান থেকে রক্ত নির্গত হলে তাতে ওজু নষ্ট হবে না। বরং তা ধৌত করা বা কাপ, টিস্যু ইত্যাদি দ্বারা ভালোভাবে তা পরিষ্কার করে নেওয়াই যথেষ্ট। তবে সতর্কতা এবং মতবিরোধ থেকে বাঁচার স্বার্থে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্ত নির্গত হলে কেউ যদি পুনরায় ওজু করে নেয় তাহলে তা উত্তম-যেমনটি বলেছেন, শাইখ বিন বায রাহ.।
----------------- ◈◉◈----------------- 
 উত্তর প্রদানে:
 আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi
https://m.facebook.com/235040300248856/posts/1379019779184230/

Post a Comment

0 Comments