Recent Tube

কুরআন বুঝতে চাইলে আগে অন্তত এটুকু বুঝুন- - জিয়াউল হক।




কুরআন বুঝতে চাইলে আগে অন্তত এটুকু বুঝুন--।

  আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, কুরআন নাজিল হয়েছিল যার উপরে, তিনি একজন উম্মী, নিরক্ষর। আর যে সমাজে এ কিতাবটি নাজিল হয়েছিল, সে সমাজের অধিকাংশ লোকজনই ছিল লিখতে পড়তে না পারা নিরক্ষর, অশিক্ষিত। সেকালের মক্কায় মাত্র তেইশজন লোক লেখা পড়া জানতো। আর বাঁকি সবাই ছিল নিরক্ষর। এই নিরক্ষরদেরই একজন ছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা:।

  কুরআন বুঝতে হলে যদি এর পাঠককে বিদগ্ধ জ্ঞানী পন্ডিত হতে হতো, তাহলে সম্ভবত তিনি তা নাজিল করতেন প্রাচীন গ্রিক বা মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া কিংবা পারস্যে। কারণ প্রাচীন বিশ্বে এই তিনটি সমাজেই ছিল তৎকালীন যুগের সবচেয়ে বড় বড় দার্শনিক, বিদ্বান ও পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ। ঐ সব সমাজে জ্ঞান, দর্শন, যুক্তি ও বিজ্ঞানের চর্চাও হতো ঢালাওভাবে

  আপনি যখন এ বাস্তবতাকে খুব সুক্ষভাবে বিশ্লেষণ করবেন, তখনই আপনার দৃষ্টিতে কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ও শক্তির মাহাত্ব্যটা ধরা পড়বে।

  কুরআনের অন্যতম এক বৈশিষ্ঠ এটা যে, আপনি যদি অতি উচ্চশিক্ষিত হয়ে থাকেন, তবে সেখানে আপনি আপনার উচ্চমার্গীয় চিন্তার খোরাক পাবেন।

  আবার আপনি যদি একেবারে নিরক্ষর হয়ে থাকেন, তবে এই একই কুরআনে আপনি আপনার বোধ ও অনুভুতির স্তরের সাথে সামঞ্জস্যশীল চিন্তা-ভাবনা ও শেখার খোরাক পাবেন।

  আর আপনি যতই অশিক্ষিত ও নিরক্ষর হোন না কেন, আপনি যদি একবার কুরআনের যে দর্শন, যে শিক্ষা সেটা ধরে নিতে পারেন, তা হলে আপনার মনোজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে।

  ঠিক এই কাজটিই হয়েছিল আরববাসীর মনোজগতে। আমরা কোটি কোটি লোক কুরআন পড়ছি, তেলওয়াত করছি, খতম করছি ও করাচ্ছি। বিশ্বে প্রায় দুই কোটি হাফেজ বানিয়েছি, কিন্তু হায়, আমাদের চেতনায় আল কুরআনের শিক্ষা ও দর্শন ঠাঁই পায় নি।

  অথচ প্রিয় রাসুল সা: এর একলক্ষ চব্বিশ হাজার সাহাবীর মধ্যে তিনজন উম্মাহাতুল মু‘মিনিন সহ মাত্র বাইশজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন। বাঁকি সবাই কুরআনের হাফেজ না হলেও এর শিক্ষা ও দর্শনকে পুরোপুরি আত্মস্থ করেছিলেন। তাই তাদের দ্বারা পুরো বিশ্ব চিরদিনের মতই বদলে গেছে। আজ আমরা বিশ্ব বদলাবো কি, নিজেদেরই তো বদলাতে পারি না।

  আপনার বয়স হয়ে গেছে, বড়ো কিংবা বুড়ো হয়ে গেছেন, জীবনেও মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ হয়নি, আরবি ভাষা জানেন না, এসব নানারকম সমস্যা মনে হতে পারে। কুরআনকে সহজভাবে বুঝার জন্য অবশ্যই মাদ্রাসায় পড়া, ছোটকাল থেকেই চর্চা করার অভ্যাস তৈরি হওয়া, আরবি জানা খুবই প্রয়োজন, সেটা সত্য। 

  কিন্তু এতাদিন হয়নি বলেই যে এখন আর হবে না, সেটাও কিন্তু না। আপনি চাইলেই একটু চেষ্টা করে কুরআনটাকে বুঝে নিতে পারেন। একটা এ্যমেজিং গ্রন্থ, বিশ্বাস করুন, একবার এর মজা পেয়ে গেলে আর ছাড়তে পারবেন না। 
  কুরআনের চোখ দিয়ে বিশ্ব ইতিহাস, মানবচরিত্র, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, মহাকাশবিজ্ঞান, রাজনীতি ও দর্শন এসব বুঝার চেষ্টা করুন। হলফ করে বলতে পারি, এক ধরনের নেশার মধ্যে পড়ে যাবেন।বিশ্বাস না হয় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেই দেখুন না।

   কুরআন বুঝা আসলেই সহজ, তার জন্য, যিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাবেন। আল্লাহ এ গ্রন্থকে সহজ করেই নাজিল করেছেন আমাদের জন্য। এ সত্যটাকে সবার আগে হৃদয় দিয়ে বুঝে নিন।
-------------- 
লেখক ঃ  ইসলামি চিন্তাবিদ ইতিহাস বিশ্লেষক, গবেষক, দাঈ, ও লেখক।

Post a Comment

0 Comments