Recent Tube

সাবধান! জিয়াউল হক।




                           সাবধান;
  -------------- 
একবিংশ শতাব্দিতে মুসলমানদের উপরে সবচেয়ে বড়ো অপবাদ;  উগ্রবাদ বা চরমপন্থা। মুসলমানরা উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী বা চরমপন্থী, এই তকমা লাগিয়েই নানা মুসলিম ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দেশ ও সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে । দেশে দেশে একই অভিযোগে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দমন পীড়ণ চলছে। 

মানবিতিহাসের সবযুগে, প্রতিটি সমাজেই ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠী কর্মতৎপর থেকেছে। সেটা নতুন নয়। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে অনেক গোষ্ঠী স্থানীয় রাজনৈতিক বা বৈষয়িক’সহ নানা কারণে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ক্ষোভকে উগরে দেবার সুযোগ নিয়েছে এই অপবাদকে পুঁজি করে। 
প্রতিবেশি মায়ানমার, শ্রীলংকা, ভারত’সহ অন্যান্য দেশে স্থানীয়রা মুসলমানদের হত্যা নির্যাতন ও উচ্ছেদ’সহ নানা অপকর্মের বৈধতা দিতে অভিযোগ তুলেছে উগ্রবাদিতার। এসবই ষড়যন্ত্র, সেটা জানে।

বিশ্বে অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, মুসলমানরাই সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় এবং নীরিহ জাতি। তারা বোধে ও বিশ্বাসে, চিন্তা ও কর্মে, আচারে ও আচরণে উগ্রতা পরিহারে আদিষ্ঠ। তাদের সৃষ্টিই হয়েছে মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে (সুরা বাকারা : ১৪৩)।

কাজেই উগ্রতা, তথা, প্রান্তিকতা অবলম্বনের কোন সুযোগই নেই। মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি যেমন উচিৎ নয়, তেমনি মুসলমানদের কর্মপদ্ধতিতে শৈথিল্য প্রদর্শন করাটাও অনূচিৎ। উভয় অবস্থাই একজন ব্যক্তি মুসলমানের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তা পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্যও বিপর্যয়কর।  

মধ্যপন্থা পরিত্যাগ করে উগ্রতা কিংবা অতিমাত্রায় শৈথিল্য অবলম্বন করাটা মুসলমানদেরকে পথচ্যুত করতে বাধ্য। চিন্তা, বিশ্বাস, কর্ম ও আচরণের ক্ষেত্রে ইতোপূর্বে এ ধরনের আচরণের কারণেই উম্মাহর অংশ বিশেষ (ইহুদি ও খৃষ্টান সম্প্রদায়) বিভ্রান্ত ও পথ্যুচত হয়েছে। (সুরা ফাতিহা দ্রষ্টব্য)। 

মুসলমান যেন ‘মধ্যপন্থী উম্মত’; চারিত্রিক বৈশিষ্ঠটা হারিয়ে না ফেলে, সে ব্যাপারে  প্রিয় মুহাম্মদ সা. আমাদের সাবধান করে সকল ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা ধারণ ও উগ্রতাকে পরিহারে নির্দেশ দিয়েছেন;
‘তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, বাড়াবাড়ি করো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ে এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (বুখারি)

এক মণীষি সন্তানকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন; বাছা! পুণ্য হচ্ছে দুই পাপের মাঝখানে অর্থাৎ শৈথিল্য ও বাড়াবাড়ির মাঝখানে। সবকিছুর মধ্যাবস্থাই সেরা। সেই গতি অতি মন্দ, যার তীব্রতা বাহনকে ধ্বংস করে’
মুসলমানদের অনেকে এ কর্মধারা পরিহার করায় বিভ্রান্ত হয়েছে, সে ইতিহাস আমরা জানি। 

খোলাফায়ে রাশেদার শেষ সময়কালে কোন কোন গোষ্ঠী মধ্যপন্থা বর্জন করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। দলে-উপদলে বিভক্তি, কেন্দ্রিয় ঐক্যে ভাঙ্গন, আন্তকোন্দল, যুদ্ধ সংঘাত সংঘটিত হয়েছে । সৃষ্টি হয়েছে নানা-ফিরকা, মতবাদ আর ধর্মীয় গোষ্ঠীরও। শিয়া, মু’তাযিলা, মুরজিয়া, জাহমিয়া, কাদরিয়া, খারিজি, রাফিজি, বাতেনি, কারামাতি, ক’টার নাম বলবো!
সালাফদের একনিষ্ঠ (!) অনুসারী হবার দাবীতে অনেকে আজও মুসলিম সমাজকে দলে উপদলে বিভক্ত করছেন । আক্বিদার নামে 'কাফের' 'বাতিল' হিসেবে মুসলমান পরিচিতি থেকেই খারিজ করে দিচ্ছেন। 

প্রতিটি সমাজেই সবযুগেই কিছু লোক থাকে, যাদের ধর্মীয় আবেগ যতোটা থাকে, সে তুলনায় জ্ঞানের পরিপূর্ণতা ও পরিপক্কতা থাকে না। সে বাস্তবতা আজও রয়েছে। ফলে কিছু শেখ, মুফতি আলেম-ওলামা নামধারী উগ্রতাকে পুঁজি করে উম্মাহর মধ্যে বিশৃংখলতার সৃষ্টি করছেন। ভাবছেন ইসলামের ও মুসলমানের এক বিরাট খেদমত করছেন, আসলে করছেন উল্টোটা। এটা ইসলাম বিদ্বেষীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগের সৃষ্টি করায় তারা তা লুফে নিয়ে মুসলিম সমাজকে আরও বেশি দ্বন্দ ও হানাহানিতে লিপ্ত করছে। 

আরবিতে একটা কথা বহুল প্রচলিত; ‘খাইরুল উমুর ওয়াসাতিহা’ - ‘সকল বিষয়ে মধ্যবর্তীটাই সেরা।’ বিশ্বাস ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা ত্যাগ করাটা মারাত্মক ফল বয়ে আনে। অপ্রয়োজনীয় শৈথিল্য কিংবা উগ্রতার কোন একটা অবলম্বন করতে অনিবার্যভাবেই মধ্যপন্থা বর্জন করতে হয়। ফলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা অনিবার্য হয়ে উঠে। 

এ থেকে বাঁচতে প্রিয় রাসুল সা. নির্দেশ দিয়েছেন; ‘সাবধান তোমরা দীনের ভেতর বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা দ্বীনের ভেতর বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। (ইবনে মাজাহ)

যারা এই নির্দেশনার বাইরে গিয়ে উগ্রতাকে লালন ও চর্চা করে, তাদের ব্যাপারে তিনি সা: পরিস্কার ধ্বংস কামনা করে বলেছেন; ‘কথা ও কাজে সীমালঙ্ঘনকারীগণ ধ্বংস হোক’ (সহিহ মুসলিম)। 

অতএব, হে যুবক, জীবনে উগ্রতা লালন ও ধারণ থেকে সাবধান!
---------------------------- 
লেখক : ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক, ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ।

Post a Comment

0 Comments