Recent Tube

আসুন ওদের কদর্য কুৎসিত মুখের পর্দা সরাই – জিয়াউল হক।


আসুন ওদের কদর্য কুৎসিত মুখের পর্দা সরাই –
---------------------------- 

 থমসন রয়টার ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী একটি জরিপ চালিয়েছিল নারীর জন্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ কোনটি বা কোনগুলো, বিশ্বব্যাপী জেন্ডার বিশেষজ্ঞাদের জ্ঞান, গবেষণা ও মতামত এ বিষয়ে কি বলে? তা জানার জন্য। 

   সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রথিতযশা ও বিদগ্ধ ৫৫০ জন জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা এ জরিপে অংশ গ্রহণ করেন এবং সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে তাদের মতামত প্রদান করেন। ২০১৮ সালে ঐ একই বিষয়ে আবারও সমসংখক বিশেষজ্ঞের গবেষণালব্ধ মতামত জানতে চাওয়া হয়। 

   বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো, ২০১১ সালের প্রথম জরিপে ভারত ছিল পৃথিবীর মধ্যে নারীর জন্য সবচেয়ে বৈরি ও অনিরাপদ দেশ। তার সাত বসর পওে এসে দ্বিতীয় জরিপেও কোনরকম পরিবর্তন ঘটেনি, একজন নারীর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ ও ভয়ংকর দেশ হলো; ভারত! (Thomson Reuters Foundation  জুন ২৬, ২০১৮)

  বিশ্বের বুকে অত্যন্ত স্বনামধন্য সংস্থাটি ভারত সরকারের নিজস্ব ডাটা ও কর্ণাটক প্রাদেশিক সরকারের মঞ্জুনাথ গঙ্গাধরা’র সরল ও অকপট স্বীকারোক্তিও উদ্ধৃত করেছে তারা। ফলে ভারতের সাথে সাথে বিশ্বের অন্যান্য যে সব দেশ এই কলংককে মাথায় নিতে বাধ্য হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে, সেগুলো; যুদ্ধবিদ্ধস্থ আফগানিস্থান ও সিরিয়া হলো যৌথভাবে দ্বিতীয় অনিরাপদ দেশ, আর ঐ একইভাবে মার্কিন ঘাঁটি গেড়ে বসা যুদ্ধবিদ্ধস্থ সোমালিয়া এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত, ধনী, জ্ঞানী ও গুণী (!) রাষ্ট্র আমেরিকা হলো যৌথভাবে তৃতিয় বৃহত্তম অনিরাপদ দেশ! (সুত্র: ঐ)

   বিগত ২০২১ সালের লোকগণনায় আফগানিস্থানের মোট জনসংখ্যা চল্লিশ মিলিয়ন বা চার কোটি, যার মধ্যে নারীর সংখ্যা হলো শতকরা ৪৮.৭ জন, তথা, ১ কোটি ৯৪ লক্ষ। 

   অপরদিকে ঐ একই সময়কালে সিরিয়ার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে শতকরা ৮৯.৪% নারী, সংখ্যায় ৮০ লক্ষ ৯৮ হাজার জন। 

   অপরদিকে সোমালিয়ার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৫ হাজার, যার শতকরা ৫০.৪ ভাগ নারী, সংখ্যায়; ৮৩ লক্ষ ৩৪ হাজার জন। উক্ত তিনটি মুসলিম প্রধান দেশের নারী জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত সংখ্যা; ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ৩২ হাজার। 

   এর বিপরিতে ভারতে শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই ১০০ কোটি ৯ লক্ষ (১৬ই জানুয়ারি, ২০২১ এর হিসাব), এর শতকরা ৪৮.৪% নারী হিসেবে মোট হিন্দু নারীর সংখ্যা হলো; ৪৮ কোটি ৪০ লক্ষ জন। বিশ্বের বুকে সবচেয়ে নির্যাতিতা, নিগৃহিতা অবদমিতা (Oppressed) ও ঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী। আফগানিস্থান, সোমালিয়া ও সিরিয়ার সম্মিলিত নারী জনসংখ্যার চেয়ে সাড়ে সাতগুন বেশি নারী নির্যাতিত হচ্ছে!

   ভারতের বুকে যতো হিন্দু নারী নির্যাতিতা হচ্ছে, আফগানিস্থানে মুসলিম নারী নির্যাতিতা হচ্ছে তার মাত্র ৪.০০৪%, অর্থাৎ শতকরা মাত্র ৪ জন! একইভাবে ২০২১ সালে আমেরিকার জনসংখ্যা ৩৩ কোটি ২৯ লক্ষ ১৫ হাজার, এর মধ্যে ৫০.৫২ জন নারী, সংখ্যায় ১৬ কোটি ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার জন। উক্ত তিনটি মুসলিম প্রধান দেশের চেয়েও প্রায় সাড়ে চারগুণেরও বেশি (৪,৬৩ গুন)।

  অর্থাৎ মুসলিম প্রধান তিনটি দেশে যত নারী নির্যাতিতা হচ্ছে হচ্ছে, তার চেয়েও সাড়ে তিনগুন বেশি নারী আমেরিকায় এবং সাড়ে সাতগুন বেশি নারী ভারতের বুকে নির্যাতিতা হচ্ছে। 

  একটু ভিন্নভাবে বলি বিষয়টা। তিনটি মুসলিম  প্রধান দেশে যত নারী নিগৃহিতা হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে, তা আমেরিকার মোট নির্যাতিতা নারীর মাত্র ২১ %, আর ভারতের বুকে হিন্দু নির্যাতিতা নারীর তুলনায় মাত্র ৭,৪০%। অথচ আমেরিকা, ভারত আর অমুসলিম বিশ্বের মিডিয়াগুলো তা-লে-বা-ন শাসনে আফগান নারীদের দুর্দশা (!) নিয়ে মেকি কান্না করতে করতে বাজারে গিøসারিনের আকাল বানিয়ে ফেলেছে!

  অংকশাস্ত্রের যে কোন মানদন্ডেই হিসাব করুন না কেন, দেখবেন অমুসলিম নারীরা বিশ্বের বুকে মুসলিম নারীদের তুলনায় বেশি নির্যাতিতা ও অবদমিতাবস্থায় রয়েছে। মুসলিম দেশে নারীরা সে তুলনায় অনেক ভালো রয়েছেন, নিরাপদে ও সম্মানের সাথেই রয়েছেন (তবে এটাও  সত্য যে, আমাদের মুসলিম সমাজে নারীরাও নিগৃহিতা হচেছন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক কাজ করার রয়েছে)।

  বৈশ্বিক মানের গবেষণালব্ধ এসব তথ্য উপাত্তকে সামনে নিয়ে যখন বসি আর আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বের নানা অমুসলিম সরকার ও তাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের মায়াকান্না দেখি আফগানিস্থান, ইরান, বাংলাদেশ, পাকিস্থানের মত মুসলিম দেশে নারীর অবস্থা নিয়ে, তখন মনে প্রশ্ন জাগে, আসলে নারী নির্যাতন রোধ নারীস্বাধীনতা নিশ্চিত ও নারীমুক্তির জন্য মনযোগ দেয়া দরকার কোথায়, আর তারা নজর দিচ্ছে কোন দিকে! এর পেছনে আসল উদ্দেশ্যটা কি? প্রশ্নটা কি করতে পারি?

  আমাদের তরুণ-যুবপ্রজন্ম টিকটকে ব্যস্ত, অমুসলিম বিশ্বের কদর্য, কুৎসিত এ চেহারাটা মুসলিম সমাজের ধান্দাবাজ আাঁতেলদের সামনে তুলে ধরবে কে?
---------------------------- 
লেখক ঃ  ইসলামি চিন্তাবিদ ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক, সাহিত্যিক, প্রবন্ধ লেখক, ও দাঈ । 

Post a Comment

0 Comments