Recent Tube

মেয়েরা কি নাক্বিসাতুল আক্বল, মানে আক্বল কম?! আব্দুস সালাম আজাদী।



মেয়েরা কি নাক্বিসাতুল আক্বল, মানে আক্বল কম?!
-------------------------- 

 দারুল আরাবিয়্যাহতে বসে আছি আয়েশ করে। ফ্যানের ধুলোওড়া বাতাসে নযর। এর মধ্যে আমার এক উস্তায এলেন। বাংলাদেশের আরবিবীদদের তালিকা করতে বললে আমি তাকে প্রথম থেকে চতূর্থের মধ্যে রাখতে বাধ্য। আর ইসলামি জ্ঞানের উচ্চতার ব্যাপারে তার দিকে তাকালে আমি সাগরের অতলস্পর্ষী নীলে চলে যেতাম। বললেন, এই আজাদী, তুমি এই হাদীসটা পড়, আর বলো তো এটা ঠিক হয় কি করে? 

 আমি হাদ্দাসানা সহকারে সাইয়িদুনা আবুসাঈদ খুদরী (রা) পর্যন্ত ইসনাদ টা টেনে নিয়ে মহানবীর (সা) শব্দের উপর ঠোঁটের উচ্চারণ তুলতে যেয়েই বিস্মিত হলাম।  ‘হে নারী সমাজ, দান কর। কারণ আমি দোযখের অধিবাসীদের অধিকাংশ দেখলাম নারী।  

  মেয়েরা ভড়কে গেলেন। ইবনে উমার এই হাদীসের বর্ণনা করতে যেয়ে বলতেছেন, এই কথা শুনে ওদের মধ্যে থেকে এক মুখরা মেয়ে বলে উঠলো, আমাদের কি সমস্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ, যে দোযখের অধিকাংশ আমরা হতে যাবো। আবু সাঈদ খুদরীর কথা থেকে বুঝতে পারি এই কথা সব মেয়েদের ই ছিলো। মানে গুঞ্জন উঠিয়েছে মেয়েরা, সাতক্ষীরার ভাষায় যেটাকে ‘গোংরানো’ বলে। তবে ভদ্র ভাষায় কিছু কিছু মেয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেন?

  তিনি এবার আরো শক্ত মন্তব্য করে ঈদের ময়দানের আনন্দের মাঝে আখিরাতের আবহ তুলে ধরতে চাইলেন। বললেনঃ তোমরা বেশি বেশি অভিশাপ দাও। আর আত্মীয়দের বিপরীতে চলে যাও। বুদ্ধিতে কম, ধর্মেও কম এমন কোন স্বত্তা একজন স্মার্ট ও নিরেট বুদ্ধিমান পুরুষের বিবেক হরণ করতে তোমাদের চেয়ে বেশি আর কেও পারেনা। 
 
 মেয়েরা মুষড়ে পড়লো। সবাই বললো, বুদ্ধি ও ধর্মে কিভাবে কম আমাদের, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি এবার কুরআনী ছায়াতলে তাদের নিয়ে এসে বললেনঃ একজন পুরুষের সাক্ষ্য কি দুই জন মেয়ের সাক্ষ্যের সমান না? তারা বললো, হাঁ। তিনি বললেনঃ এই তো বুদ্ধি কমের নমূনা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ মাসিক চলা কালীন তোমাদের সালাত নেই, সিয়াম নেই, ঠিক কিনা?? ওরা বললোঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ এটাই ধর্ম কমের নমূনা।
 
 এবার আমার উস্তায বললেনঃ বলোতো, এই হাদীস কিভাবে মেনে নেয়া যায়? এতবড় একটা জুলুম মেয়েদের উপর চাপায়ে দিয়ে তাদের সাপ্রেস আমাদের নবী (সা) কোনদিন করতে পারেন না!!

 আমি গা ঝাড়া দিয়ে পিঠ টান করে বসলাম। উস্তাযের দিকে তাকালাম। মাথার মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, ব্যাথা, কাতরতা এবং বুদ্ধির অক্ষমতার কেমিস্ট্রি ব্রেইনের টিস্যুগুলোতে এমনভাবে দৌঁড় ঝাপ শুরু করে দিলো যে, ঐ শীতের দুপুরেও ভালো ধরণের ঘাম এঁকে বেঁকে শরীরে খাল কাটছিলো।

 এমনিতেই বুদ্ধি সাধ্যি কম, তার পরেও উস্তাযের সামনে বলে কথা, আমার ঠোঁট জোড়া শুষ্কতায় আটকে গেলো, জিহবায় ভারী পারদ জমে আবদ্ধ হয়ে গেলো মুখের ভেতরেই। 

  অস্ফুটে তবে পরিস্কার করে বললামঃ উস্তায, আল্লাহর কসম দিয়ে বলি, এই হাদীস আমার প্রিয়তম মুহাম্মাদ (সা) বলে গেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা সহীহ, সহীহ, সহীহ। এবং যে মুহাম্মাদ (স) আগে পিছের অনেক কথা আল্লাহর কাছ থেকে শিখে বলে গেছেন, সেই মহান ব্যক্তিত্বের হাদীস এটা। তবে এই হাদীস বুঝতে গেলে সমূহ জ্ঞানের দরকার হবে, উস্তায, বেয়াদবী নেবেন না, আপনার আমার মধ্যে তা আছে কি নেই দেখতে হবে।  

  তিনি আমাকে তাচ্ছিল্য দেখালেন। আমিও উন্নাসিক পলক নিমলিত করলাম। বললাম, উস্তায ণৃতত্বে আপনি কি কিছু পড়া শুনা করেছেন? বায়োলোজী, বায়োটেকনোলোজী, বা সাইকোলোজীর কি কিছু দেখা হয়েছে? উস্তায, ইতিহাস-বিজ্ঞানে নর নারীর জীবনাচরণের বিক্ষিপ্ত দৃশ্যগুলো দেখার সু্যোগ তো আমাদের হয়নি। 

  উস্তাযের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে কিনা দেখলাম। মনে হলো না। তিনি আমার মিনমিনে কথা গুলো শুনছেন মনে হলো। বললাম, নারী পুরুষের দৈহিক তারতম্যের ইংগিত এখানে আছে, সাইকোলোজীর বেশ কিছু কথা এখানে আছে। এবং দুনিয়াতে তাদের অবস্থান গত কিছু ত্রুটির কথা বলে দিয়ে জাহান্নামে যদি কেও যায়ও, তার থেকে বের হবার পথ বলে দিয়েছেন।
টাকার মোহ, অলংকারের মোহ, সম্পদ জমানোর মোহতে স্ত্রীবাচকের মনোবিকৃতি এখানে এসেছে। অসম্ভব ভালোবাসায়, অসম্ভব ক্রোধে পুরুষের উপর হানা তূণের মাথায় রক্তের ধারা এখানে চিত্রিত হয়েছে। এখানে একজন স্মার্ট ও বুদ্ধিমান যুবককে তার পাশে বসে তার চেয়েও বুদ্ধিতে কম এক মেয়ে কীভাবে সর্বস্বান্ত করছে, তাকে পাগল করে রাস্তায় নামাচ্ছে তার একটা বাঙময় চিত্র এখানে আছে। উস্তায, আমি নারী বিদ্বেষী না, কিন্তু নারীজাতির শ্বাশত একটা পজিশান ইসলামে চিত্রিত ও চিত্রায়িত এই হাদীসে করা হয়েছে।  

  উনি উঠে দাঁড়ালেন, আমার কথা 'হুরাআত', বা বাজে বকওয়াস মনে হলো তার কাছে । কিন্তু এবার আমি সর্দারি রক্তের তেজ দেখাতে চাইলেও উস্তায বলে নিজকে সম্বরণ করে একটু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। 

  উস্তায, একটু খানি দাঁড়ান। তিনি দাঁড়ালে আমি বলা শুরু করলাম। আচ্ছা দেখুন তো সক্রেটিস থেকে আজ পর্যন্ত যত দার্শনিক এসেছেন তাদের মধ্যে নারী দার্শনিক কত জন? আদম (আ) থেকে আজ পর্যন্ত যত বিজ্ঞানী এসেছেন তার মধ্যে নারী কয়জন? আজ পর্যন্ত যত ভালো সাহিত্যক এসেছেন তাদের মধ্যে বিশ্বমানে পৌঁছেছেন কতজন নারী। সমরে সংহারে যতজন নর আজ বিশ্ব-বিজয়ের তকমা পরেছেন তার মধ্যে নারী কতজন? 

 তিনি আর এগুতে দিলেন না, বললেন, আজাদী, বোকার মত কথা বলো না তো আর!! আগের যামানায় নারীদের কি কোন সুযোগ দেয়া হত? 

 -জানি না, আমি বললাম। আমার বয়স আপনার চেয়েও তো দশ বার বছর কম। তবে বিশ শতকে নারীবাদী আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে এই পর্যন্ত দৃশ্য গুলো আমার কাছে আছে। এখন নারীদের এত মূল্যায়ন করা হয়, কই আপনার মত আরবী জানা লোক কি কোন মেয়ে হতে পারতো না এই দেশে? কিন্তু আছে? কত জন মেয়ে আজ রাস্ট্র চালাচ্ছে? কত জন মেয়ে দুনিয়ার সেরা হয়েছে, তাদের অনুপাত পুরুষের তুলনায় কত?

 উস্তায ভীষণ ক্ষেপলেন, বললেন, আজাদী, ভাবতাম তুমি কিছু জ্ঞানের চর্চা কর, কিন্তু মনে হচ্ছে তেমন ইম্প্রেসিভ কোন পর্যায়ে আগাওনি। 

 আমি চুপ হলাম। বল্লাম, উস্তায, ঠিক বলেছেন। তবে সব দিকের বিচারেই আমি মনে করি এই হাদীস টা সহীহ, এবং আমার মুহাম্মাদ (সা) এই হাদীসের মাধ্যমে নারীদের কে এক স্বতন্ত্র জগতের শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে নিতে চেয়েছেন। তিনি ঈদের দিনে তাদের মন খারাপ করে দেন নি, বলতে চেয়েছেন সব দিক দিয়ে তোমরা নরের পাশাপাশি, তবে জাহান্নামে বেশি দেখলাম তোমাদের। এখন দান খায়রাত করবে, মোহের পেছনে ছুটবেনা। অভিশাপ বেশি বেশি দেবেনা। আত্মীয়দের বিপরীতে দাঁড়াবেনা। তারাও ব্যাপারটা ঐ ভাবেই বুঝেছিলেন বলেই ঐ ঈদের সকালে এত বেশি সোনা-দানা দান করেছিলেন, যার নমূনা আজো পাওয়া যায়না। ঐটা ছিলো জান্নাতের অভিসারী নারীদের দান, ধ্যান, জ্ঞান, নতূন চেতনা ও ঐকান্তিকতার পথে অগ্রযাত্রা। এই সব মহিলাদের মাঝে এমনও ছিলো যারা জান্নাতের সুসংবাদও পেয়েছেন দুনিয়াতেই। 

 এই  হাদীসএর মাধ্যমে তিনি জাহান্নামে মুসলিম মেয়ের সংখ্যা কমাতে চেয়েছেন। আর এই হাদীস জ্ঞানের দ্বার খুলে দিয়ে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রণোদনা ও অধিবাসের চিত্র গুলো আমাদের সামনে মেলে ধরেছেন।

  এই হাদীসে তিনি কোন এক নারীকে কোন এক পুরুষের জ্ঞানের সাথে একবারও তুলনা করেননি। কারণ এক আইশা (রা) দেখিয়েছেন হাজার হাজার  সাহাবিগণের মধ্যে জ্ঞানগত তুলনায় তিনি অনেক অনেক বেশি জ্ঞানী ছিলেন। যুগে যুগে কিছু কিছু নারী জগতকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন অনেক। কিন্তু জেন্ডারগত ভাবে আমাদের নবী (সা) প্রাকৃতিক স্বকীয়তাটাই তুলে ধরেছেন। এর চেয়ে বেশি নয়। 

  তাছাড়া, উস্তায, আপনি কি ভেবে দেখেছেন আরেকটা হাদিস, যেটা আবু আবু হুরায়রাহ(রা) বর্ণনা করেছেন। ইবন সিরীন বলেন, একবার নারী পুরুষদের মাঝে জান্নাতে কারা বেশি যাবে এ নিয়ে বচসা হয়। এর প্রক্ষিতে তারা আবু হুরায়রা (রা) এর কাছে যান। তিনি সব শুনে মহানবী (সা) এর একটি হাদীসের প্রক্ষিতে জান্নাতে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হবে বলে মত দেন।

  তিনি আসলে যে হাদীসটার কথা ইঙ্গিত করেন তাতে মহানবী (স) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদেরকে পূর্ণিমা রাতে চাঁদের মত চেহারার দেখাবে। এরপরে যারা ঢুকবে তারা নক্ষত্রের চেয়েও আলোকিত মনে হবে। তাদের মনগুলো সব হবে এক, মতের অমিল নেই, নেই পরষ্পরের প্রতি বিদ্বেষ। প্রতিটি পুরষের সাথে যাচ্ছে দুই জন করে স্ত্রী। যাদের একেকজনের অপার সৌন্দর্যে পায়ের পেশির ভেতরকার হাড়ের শুভ্রতা দেখা যাবে।………… (বুখারি, ২৩৪৬) 

  এই দুটা হাদীস একত্রে আনলে যেটা বুঝা যায় তা হলো জাহান্নামে যেমন আমাদের নবী (সা) মেয়েদের বেশি দেখেছেন, জান্নাতেও মেয়েরা বেশি যাবে তাও সঠিক বলেছেন কারণ প্রতিটি যুগেই নারীদের সংখ্যা কোথাও কোথাও বেশি হয়। এই হাদীসে বুঝাচ্ছে না যে, জাহান্নামেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি যাবে, আর জান্নাতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বেশি যাবে। বরং যদি দেখতেই হয়, তাহলে জান্নাতেই মেয়েদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হবে, ইনশাআল্লাহ।      

  ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের কথা, আর আজ ২০২২ সাল। আজো এই হাদীসের উপর গবেষণা আমার শেষ হলোনা। মুহাম্মাদ, আমার প্রাণের মুহাম্মাদ (সা), তোমার জন্য আমার জীবন উৎস্বর্গ হোক। এত বড় জ্ঞানের উৎস ছিলে তুমি............

Post a Comment

0 Comments