Recent Tube

ইকামাতে দ্বীনের গুরুত্ব এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার ভয়ংকর পরিণতিঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


ইকামাতে দ্বীনের গুরুত্ব এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার ভয়ংকর পরিণতিঃ
--------------------------------------------------
ইকামাতে দ্বীনের মূল কথা হল, নিজের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা। আর এ কাজ একক ভাবে কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ. 
তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এতে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা শুরা ৪২/১৩)

 আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো এক শ্রেণীর তাগুতপন্থী, রাজ দরবারী, ইকামাতে দ্বীনের দুশমন, পথভ্রষ্ট আলেম কুরআন সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র সংস্করণে ঘোরতর বিরোধী এবং ইসলাম বিরোধী কুফুরী শাসনে সন্তুষ্ট। শুধু তাই নয় যারাই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন করে তাদের বিরোধীতা করাই এদের মূল ধর্ম। তাদের দাবি হলো, নিজের জীবনে দ্বীন কায়েম করাই যথেষ্ট, রাষ্ট্রে কায়েম করার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম না থাকার কারণে রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহর নিকট দায়ী হবে, আমরা (সাধারণ মুসলিম) না। এ বিষয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ এর দায়িত্ব আল্লাহ আমাদের দেননি। (নাউজুবিল্লাহ) 

 হ্যাঁ! যারা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পরও আল্লাহর বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে না, বিচার ফায়সালা করবে না তারা নিঃসন্দেহে অপরাধী। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা বিচার ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। (সূরা মায়িদা ৫/৪৫)

 কিন্তু যারা জালিম শাসকের কুফুরী শাসনে সন্তুষ্ট হওয়ার কারণে কুরআন সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র সংস্করণে চেষ্টা করে না, তারা আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
আর তোমরা সেই ফিতনা-বিপর্যয়কে ভয় কর যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু জালিমদের উপরই আপতিত হবে না (বরং তোমাদের উপরও আপতিত হবে)। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সূরা আনফালঃ ০৮/২৫)

 হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
"أَوْحَى الله عَزَّ وَجَلَّ إِلَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنِ اقْلِبْ مَدِينَةَ كَذَا وَكَذَا بِأَهْلِهَا، قَالَ: فَقَالَ: يَا رَبِّ إِنَّ فِيهِمْ عَبْدَكَ فُلَانًا لَمْ يَعْصِكَ طَرْفَةَ عَيْنٍ، قَالَ: فَقَالَ: اقْلِبْهَا عَلَيْهِمْ، فَإِنَّ وَجْهَهُ لَمْ يَتَمَعَّرْ فِيَّ سَاعَةً قَطُّ"
"আল্লাহ তা'আলা জিবরীল (আ) এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন এই মর্মে যে, তুমি অমুক অমুক নগরীকে তার বাসিন্দাসহ উলট-পালট করে ধ্বংস করে দাও। জিবরীল (আ) বললেন, হে আল্লাহ! তাদের মধ্যে তোমার এমন একজন বান্দা রয়েছে, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও তোমার নাফরমানী করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তা'আলা বললেন, তাকে সহ অন্যান্য অধিবাসী নিস্তনাবুদ করে দাও। কেননা আমার নাফরমানী হতে দেখে (প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা) কখনও তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়নি।" (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান: হাদীস নং ৭১৮৯)

 যারা স্বৈরাচার আল্লাহদ্রোহী জালিম শাসকের পক্ষ নিয়ে চাটুকারিতা ও দালালি করে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুশমন। তারা আখিরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাওজের নিকটেও স্থান পাবে না। সহীহ হাদীসে এসেছে, 
 عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِكَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ أَعَاذَكَ اللَّهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ قَالَ وَمَا إِمَارَةُ السُّفَهَاءِ قَالَ أُمَرَاءُ يَكُونُونَ بَعْدِي لَا يَقْتَدُونَ بِهَدْيِي وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِي فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ لَيْسُوا مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ وَلَا يَرِدُوا عَلَيَّ حَوْضِي وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُمْ وَسَيَرِدُوا عَلَيَّ حَوْضِي. 
 হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম স. কা’ব বিন উজরা (রাঃ) কে বললেন: হে কা’ব আল্লাহ তায়ালা তোমাকে পথভ্রষ্ট লোকদের শাসন থেকে হেফাজাত করুন। তিনি আরজ করলেন, পথভ্রষ্টদের শাসন কি? রাসূলে কারীম স. বললেন: আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা আমার পথনির্দেশনা বা হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না। আমার সুন্নাতের অনুকরণ করবে না। অতএব, যারা তাদের বাতিল শাসনকে সত্যায়ণ করবে, জুলুম-অত্যাচার ও স্বৈরা শাসন চালাতে তাদেরকে সাহায্য করবে; তাদের সাথে আমার, আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমার হাওজের কাছে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের মিথ্যাচারকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তাদেরকে জুলুম-অত্যাচর ও স্বৈরাচারের ব্যাপারে সাহায্য করবে না, তারা আমার, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারা পরকালে আমার হাওজের কাছে স্থান পাবে। (মুসনাদে বাযযার এবং মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৪০৩২, ১৪৮৬০; সুনানে নাসায়ী হাদীস নং ৪২০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২২৫৯ ও সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২৭৯)।

  যত নাফরমানী মূলক কাজ রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে হয়- তা নির্মুল করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্র সংস্কার করা অপরিহার্য। এ জন্যই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
ان الله ليزع بالسلطان ما لا يزع بالقران.
"আল্লাহ তা'আলা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে এমন কিছুর উচ্ছেদ ঘটান, কুরআনের মাধ্যমে যেগুলো উচ্ছেদ ঘটান না।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফহীমুল কুরআন)
অর্থাৎ কুরআনের সতর্কবাণী অধিকাংশ লোকের উপরই প্রভাব বিস্তার করে না। কিন্তু ভয় এবং প্রহরের আঘাত অনেকেই প্রভাবিত করে। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাব মারাত্মক। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি কোন অন্যায় কাজকে প্রতিহত করতে চায় তাহলে তা সহজেই এটা সম্ভব হবে, ওয়াজ-নসীহত ও বক্তৃতার মাধ্যমে তা ঐ ভাবে সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ওয়াজ-নসীহতের কোন প্রভাবই লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি ইসলামের বিধান পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ কাজে মানুষকে বাধ্য করা হয় তবে সকলেই ইসলামের বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে। (শারহু সুনানে আবু দাউদ লিশ শায়েখ আব্দুল মুহসিন, খন্ড ২৩, পৃঃ ৪৫৭; তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন, পৃঃ ২২০)

  সুতরাং যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে তারা মূলত দ্বীন ইসলামের দুশমন। উপরোক্ত আলোচনায় কুরআন হাদীসের মাধ্যমে এটাও প্রমাণ হল যে, যারা শুধু ব্যক্তিগত ভাবে আল্লাহর হুকুম মেনে চলে কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম তথা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে না, তারাও আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই আসুন, ইকামাতে দ্বীনের সর্ববৃহৎ সংগঠন 'জামায়াতে ইসলামী'তে সামিল হয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন! (আমিন)
------------------------- 
Tanzil Islam

Post a Comment

0 Comments