Recent Tube

একাধিক বিয়ে : ইসলাম কি বলে। মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী



  নাস্তিক পাড়ায় ইসলামের উপরে জোরেশোরে একটি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, ইসলাম নাকি বহুবিবাহে বিশ্বাসী !

 এ বিষয় নিয়ে মূলতঃ নাস্তিকদের জবাব দেয়ার জন্য এ ব্যাপারটি নিয়ে  আমি এত লিখালিখি করি। বুঝাতে চাই যে,ইসলাম বহুবিবাহকে সাপোর্ট করেনি বরং বিয়েকে সীমাবদ্ধতার পিলারে বেঁধে দিয়েছে । আশা করছি আমি এজন্য আল্লাহর কাছে উত্তম জাজা পাবো ।
আর ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করা আমার কাজের অংশ । 
Because, I am a religious analyst
পড়ে দেখুন,আমার এক বছর আগের রিপোষ্ট বিশ্লেষণ।
যা প্রকাশিত হয়েছিল পত্র পত্রিকায়।  
===============♦===============
একাধিক বিয়ে : ইসলাম কি বলে
মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরীঃ। 
----------------------------------------------
®(সকলের প্রতি পড়ার অনুরোধ রইলো)
বিয়ে একটি পবিত্র সামাজিক বন্ধন । এই বন্ধনের মধ্য দিয়ে মহান অাল্লাহ মানব জাতির বিস্তার এবং সভ্যতার ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন । বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে বহুগামী পুরুষকে মহান অাল্লাহ  করেছেন ঘরমুখি  । বেঁধেছেন স্থিতিশীল পারিবারিক কাঠামোর বাঁধনে ।
 পৃথিবীর সকল ধর্মেই বিবাহ প্রথা বিদ্যমান থাকলেও বহুবিবাহকে স্বিকৃতি দিয়ে প্রকৃতপক্ষে জাহেলি যুগের মতই নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য বানিয়ে রেখেছে। অাজকে ইউরোপ, অামেরিকা কিংবা ভারতে বিয়ের উপর যে নিয়ন্ত্রণ অারোপ করেছে তা শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বিধান ।  মুটেও ধর্মীয় নয় ।
ইসলাম এসে নারীদের মর্যাদাকে প্রতিষ্টিত করেছে চারটি বিয়ের অনুমোদন দিয়ে।  তাও কঠিন শর্তারোপের ভিত্তিতে । তবে স্বাভাবিকভাবে একটি বিয়েকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে । মানবিক দিক কিংবা বিশেষ প্রয়োজন সেটা ভিন্ন কথা। 
ইসলামের প্রাথমিক যুগে অনেক সাহাবীরা জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন । একাধিক বিয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে বিধবা মহিলা সাহাবীদের জীবনকে অন্য পুরুষ সাহাবীদের সাথে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্টিত করা হয়েছিল ।
তাছাড়া যুদ্ধের পরে বন্দী মহিলাদেরকে বিয়ের মধ্য দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল ।  স্বয়ং বিশ্বনবী দুইজন যুদ্ধবন্দী নারীকে বিয়ে করে পুরো মহিলা সমাজকে মর্যাদার অাসন দান করেছিলেন। জাহেলী যুগে যুদ্ধবন্দী নারীরা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বলে গন্য হতো ।  তারা শিকার হতো পাশবিক অাচরণের।। হুজুর (স) এই জাহেলী প্রথাকে ভেঙ্গে দিলেন।

যুগযুগ ধরে দেখা যায় পুরুষরাই বেশী দূর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারান। তাছাড়া নারীদের প্রজনন হার বেশী ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে  ইসলামী শরীয়াত চারটি বিয়ের অনুমোদন দিয়েছে শুধু । পাশাপাশি অনেক সময় দেখা যায় কোন স্ত্রী হয়তো অসুস্থতাজনিত কারণে ঠিকমত ঘরকন্না করতে পারেননা এমতাবস্থায় স্বামীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে অনিবার্য হয়ে পড়ে। কখনও বা কোন স্বামীকে জৈবিক চাহিদা অতিমাত্রায় তাড়িত করে সেই ক্ষেত্রে স্বামী তাঁর চরীত্রকে হেফাজতের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন । 
মহান অাল্লাহ মু'মীন বান্দাহদেরকে লক্ষ করে বলেন,
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩)

এবার আসুন পুরো আয়াতের শেষাংশটি আবার  দেখি,

" আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। [সুরা নিসা - ৪:৩]"
 
কি বুঝলেন সম্মানিত পাঠক? দ্বিতীয় অংশটিতে মহান আল্লাহ কি পরামর্শ দিচ্ছেন একটি বিয়েতে সন্তুুষ্ট থাকার পরামর্শ নাকি একাধিক।
আমিতো দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ পরামর্শ দিচ্ছেন একটিতেই সন্তুুষ্ট থাকার জন্য । 

এবার আপনার পরিবেশ পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন বলে দেবে আপনার একাধিক বিয়ে দরকার কিনা। 

এই ক্ষেত্রে অবশ্যই উত্তম যে, দ্বিতীয় বিয়ের আগে স্ত্রীর অনুমতি নেয়া -(যদিও ইসলাম অাপনাকে এ ব্যাপারে বাধ্য করেনি) কেননা ইসলাম বলে- যদি একাধিক স্ত্রী থাকে, তাহলে তোমাকে অবশ্যই তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে হবে’। কারণ যদি প্রথম স্ত্রী অনুমতি দেয়, তবে স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্য অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বিরাজ করবে।

যেখানে প্রথম সহধর্মিণীকে অাপনার বিয়ের সিদ্ধান্ত অাপনি জানাতেই পারছেননা!  সেখানে অাপনি কিভাবে একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করবেন? । 
না জানিয়ে বিয়ে করার মধ্য দিয়েইতো অাপনার বেইনসাফি শুরু হয়ে গেল  ।
অার এভাবে করে কোরঅানের অায়াতের শেষাংশকে অাপনি অবজ্ঞা  করলেন । 

অার দুই বা ততোধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা এবং ইনসাফ রক্ষা করা কি চাট্রিখানি কথা?
মরুভূমিতে একটি নগর গড়া যতটা কঠিন দুই স্ত্রীর মধ্য সমতা রক্ষা করাটাও ঠিক ততটাই কঠিন ।
প্রকৃত কথা হলো একজন স্ত্রী নিয়ে অাপনাকে সন্তুষ্ট থাকাতে পারাটাই শ্রেয়।। 

স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করা নিশ্চয় কঠিন কাজ তাই আল্লহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন,
 
"তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না……”

(সুরা নিসা ০৪:১২৭)
 
উপরের দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
 
“….তোমরা এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়োনা ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না …”

( সুরা নিসা ০৩:১২৭)
 
এ ব্যপারে নবী মুহাম্মদ (স:) বলেন, 
 
"যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।"

(আহমেদ ২/৩৪৭; আসবে সুনান; হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯)

কোরঅান সুন্নাহ মূলত বহুবিবাহ প্রথা রোধ করেছে প্রয়োজন সাপেক্ষে চারজন স্ত্রী গ্রহণের অুনমতির মধ্য দিয়ে । তবে তা উৎসাহব্যঞ্জক নয় । 
 
 যেখানে প্রাচীন গ্রীক এমনকি ভারতবর্ষেও পুরুষেরা যত খুশী তত বিয়ে এমনকি বিয়ে বহির্ভূত অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত ছিল সেখানে, “মুহাম্মদ (স) বহু বিবাহ ও অবাধ যৌনাচারকে সীমার বাঁধনে বেঁধেছিলেন।”
 
ইসলাম চারটি বিবাহকে বৈধ বলেছে এবং একটি বিবাহ করতে উপদেশ দিয়েছে। সকল ধর্মেই বহু বিবাহ বৈধ। কিন্তু কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। অর্থাত আপনি যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন কোনো আসুবিধা নেই। পাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক লিটনার  লিখেছেন, "অপরিমিত বহু বিবাহ প্রথাকে মুহাম্মদ (স) রুখে দিয়ে ছিলেন।” তিনি আরো লিখছেন, “মুহাম্মদ (স) এর আইনের উত্সাহ কিন্তু স্পষ্টতই একটি বিবাহের পক্ষেই।”
 
 মধ্যযুগে যেখানে  নারীত্বের অপমানের কী চরম পদ্ধতিই না চালু ছিল সেখানে ইসলাম মাত্র চারটি বিয়েকে উৎসাহ নয় বরং শুধুমাত্র অনুমোদন দিয়ে নারীত্বের অপমানের লাগাম টেনে ধরেছিল ।
 
যারা কোন ধরণের ব্যাখ্যা ছাড়া দুই চার লাইনে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই  একাধিক বিয়ের পরামর্শ দিয়ে দেন তারা মুলত Family structure কে ক্ষতিগ্রস্ত করেন ।
অথচ ইসলাম Muslim family structure কে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে শান্তি,স্বস্থির নিশ্চয়তা বিধান করতে চায় ।

Post a Comment

0 Comments