Recent Tube

একটি জীবন, একটি ইতিহাস। ✍️শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী।



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 

অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, বাতেলের আতংক প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান (রাহি:), 
-----------------------------------
একটি জীবন, একটি ইতিহাস। 

✍️(Ishaque Al-Madani)
_________________________
শায়খুল হাদীস ইসহাক আল মাদানী হাফিজাহুল্লাহ... 

এক: প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) সিলেট জেলার গোলাপগন্জ উপজেলার এক  সম্ভ্রান্ত আলিম পরিবারে ১৯৫৩ সালের ৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।বয়সে তিনি  আমার কয়েক মাসের বড়। আমার জন্ম এই সালের ৯ ই অক্টোবর। তিনি আমার বাল্য বন্ধু ছিলেন।রাজনীতির ময়দানে আমি ভিন্ন দলের হলেও তিনি আমাকে ছোট ভাই হিসেবে স্নেহ করতেন এবং ইসলামী শিক্ষা অর্জনে মূল্যবান পরামর্শ দিতেন।তার আব্বা ছিলেন খ্যাতিমান আলেম হযরত মাওলানা মাহমুদ আলী (রাহি:) এবং নানাজান ছিলেন বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাবিদ হযরত মাওলানা আব্দুল গনী (রাহি:) যিনি আমার উস্তাদ ছিলেন।ফুলবাড়ি মাদ্রাসায় আমাকে ইলমুছ ছারফ শিক্ষা দিয়েছেন।প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান( রাহি:)  হলেন মুফতি মাযহারুল ইসলাম কাসিমী কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধ বই-বিখ্যাত ১০০ ওলামা মাশায়েখের ছাত্র জীবন- বইটিতে উল্লেখিত এশিয়ার বিখ্যাত ১০০ ওলামা মাশায়েখের অন্যতম। 

দুই :  প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান (রাহি:) প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী ছিলেন। সব ক্লাসেই তিনি প্রথম স্হান অধিকারী ছিলেন।ফুলবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা হতে দাখিল, আলিম এবং ১৯৭০ সালে ফাযিল পরীক্ষায় অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।তিনি ফুলবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সংসদ -আল ইছলাহ - এর দুই মিয়াদে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন।১৯৭১ সালে তিনি টাইটেল পড়ার জন্য সিলেট সরকারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১৯৭২ সালে সিলেট বিভাগে টাইটেল পরীক্ষায় একমাত্র প্রথম বিভাগ লাভ করেন। ফাযেল সাহেব (রাহি:) এর কাছে তিনি অতি প্রিয় ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ফুলবাড়ি মাদ্রাসা থেকে চলে আসার পর আমি (ইসহাক আল মাদানী)  আল ইছলাহ ছাত্র সংসদের সেক্রেটারি হই। ১৯৭৫ সালে আমি ও সিলেট আলিয়া থেকে কামিল (টাইটেল) পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে প্রথম বিভাগে ২য় স্হান অধিকার করি।আলহামদুলিল্লাহ। তিনি ভাল রেজাল্ট করার জন্য আমাকে সব সময় পরামর্শ ও উৎসাহ দিতেন।আমি তার থেকে তিনছর পরে কামিল (টাইটেল) পাশ করি। কারণ আমি প্রাইমারি স্কুলে ৪ বছর লেখাপড়া করেছিলাম। আর তিনি সরাসরি রস্তম পুর এবতেদায়ী মাদ্রাসায় ভর্তি হন।প্রকাশ থাকে যে ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এর টাইটেল পরীক্ষায় প্রথম স্হান অধিকারী শায়খ মোনওয়ার হোসাইন (হাফি) ১৯৮৩ সালে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে আমার সাথে ফাইনেল পরীক্ষা দিয়ে ২ য়  শ্রেণীতে ৩য় স্হান অধিকার করেন।আলজেরিয়ার শায়খ বাকুক আব্দুল কাদের (হাফি) ২য় শ্রেণীতে ২য় স্হান অধিকার করেন।আল্লাহর ফযলে আমি (ইসহাক আল মাদানী) ১ম শ্রেণীতে ১ম স্হান অধিকার করি। আলহামদুলিল্লাহ।

তিন :  প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান(রাহি:) কাওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদেরকে মসজিদ মাদ্রাসার চার দেয়ালের ভিতর থেকে বের করে রাজনীতির ময়দানে বীরদর্পে পদার্পণ করার জন্য ১৯৭৩ সালে সিলেটের প্রানকেন্দ্র কাজির বাজারে  প্রতিষ্ঠিত করেন জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসা। তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় অংক, ইংলিশ ও সমাজ বিজ্ঞানকে কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করেন।এসব বিষয়ে প্রায়ই তিনি আমার সাথে পরামর্শ করতেন।আরবি ভাষার প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা। তিনি নিজে অনর্গল আরবি ভাষায়  বক্তৃতা দিতে পারতেন।আমি সম্ভবত ১৯৯৩ সালে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত সালমান মুর্শেদ কে নিয়ে তার জামেয়া ভিজিট করি।রাষ্ট্রদূতের সফরসঙ্গী ছিলেন জামায়াত নেতা মীর কাশিম আলী (রাহি:)।প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি ) রাষ্ট্রদূতের সামনে আরবীতে যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তাতে আমি হতবাক হয়ে যাই।
১৯৮৬  সালের এপ্রিল মাসে কাবা শরীফের প্রধান ইমাম ও খতীব ৭ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন।আমি কাবার ইমাম সাহেবকে ৩ দিনের জন্য সিলেট সফরের আমন্ত্রণ জানাই।তিনি আমার আবদার সাদরে গ্রহন করেন।তখন আমি মহতরাম খন্দকার আব্দুস সুবহান সাহেব(রহ:) কে সভাপতি, পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান এডভোকেট আ.ফ.ম কামাল সাহেব (রহ:)কে মহাসচিব এবং সিলেট ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক  সইয়্যাদ মুস্তফা কামাল (রহ:) কে যুগ্মসচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করি। 
 কাবা শরীফের  প্রধান ইমাম ও খতীব শায়েখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়েল (রাহি:) সিলেট বিমান বন্দরে নামলেন বিকেল ৪ টায়। তখন আমাদের মসজিদ সমূহে আসরের নামায হত বিকেল ৪:৩০ মিনিটে। কাবার ইমাম সাহেবকে যখন আমি গাড়িতে উঠাবো তখনই তিনি বললেন না আমি নামায পড়ে গাড়িতে উঠবো।আমি বললাম যে এখানে হাজার হাজার লোক রয়েছে তারা  সবাই  নামায পড়ার মতো বড় মসজিদ এখানে নেই। তিনি বললেন আল্লাহর সকল যমীনই রাসূলের উম্মতের জন্য মসজিদ। ইমাম সাহেব আযান দিতে বললেন কাল বিলম্ব না করেই প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি)  বিমানবন্দরে আযান দিলেন। আমরা সবাই কাবার ইমামের পিছনে সালাতুল আসর আদায় করলাম। তখনই কাবার ইমামের দৃষ্টি প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের প্রতি পড়ল।এই দিন বাদ মাগরিব সুন্নাত চৌধুরীর বাসার নীচের হলরুমে ওলামাদের বৈঠক ছিল।সিলেটের সত্তর আশিজন বড় বড় মুহাদ্দিস, মুফতি ও মুহতামিম উপস্হিত ছিলেন। আমি মিটিং টি সঞ্চালনা করি।কাবা শরীফের ইমাম এ মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ওলামাদেরকে প্রশ্ন করার আহবান জানান। তখন দু'জন ইসলামী স্কলারই আরবীতে প্রশ্ন করার সাহস করেন। তারা হলেন আমার  অগ্রজ প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) ও দরগাহ মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা এমদাদুল হক হবিগঞ্জী(রাহি:)।আল্লাহ উভয়কে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
উল্লেখ্য যে কাবা শরীফের ইমাম সাহেবকে পরদিন ফজরের নামাজে দরগাহ মসজিদে ইমামতি করার কথা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।কাবার ইমাম সিলেটে এসে জানতে পারেন যে দরগাহের মাজারে শিরক হয় তাই তিনি রাত ৯ টায় পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেন যে তিনি দরগাহ মসজিদে নামায পড়াবেন না। দরগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিয আকবর আলী (রহ:) গাছবাড়ি হুজুর,বরকতপুরী হুজুর ও শায়খুল হাদীস এমদাদুল হক হবিগঞ্জি (রাহি:) সবাই মিলে কাবা শরীফের ইমামকে অনেক ব্যাখা দিয়ে ইমামতি করার অনুরোধ করলেও তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন।রাত দশটায় দরগাহের ইমাম সাহেব দরগাহ মাদ্রাসার ৩ জন উস্তাদ আমার মীরাবাজারস্হ বাসায় পাঠান।আমি কালবিলম্ব না করে কাবার ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করে তার সম্মতি নিয়ে বাসায় ফিরি। ফলে পরদিন কাবার ইমাম সাহেব দরগাহ মসজিদে ফজরের ইমামতি করেন।নামাজ শেষে শিরকের ভয়াবহতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।কাবার ইমামের বক্তব্যটি তার সফরসঙ্গী ঢাকার লালবাগ শাহী মসজিদের খতীব মাওলানা আমীনুল ইসলাম (রাহি:) বাংলায় অনুবাদ করেন।এভাবে এ সংকটের সমাধান হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে দরগার ইমাম সাহেব আমাকে পুত্রতুল্য স্নেহ করতেন। 
প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি ) ১৯৯৭ সালে আমাকে তার জামেয়ার আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স দেয়ার অনুরোধ জানান এবং ৬০ জন মেধাবী ছাত্র মনোনীত করেন।আমি ও আমার সাথীদ্বয় মাওলানা  আব্দুল ফাত্তাহ আল মাদানী ও শায়খ মুহাম্মদ চৌধুরী দেড়মাস তার জামেয়ার ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেই।প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্রদের তালিকা নিম্নে বর্ণিত হলো।

চার: প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান (রাহি:) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রথমে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর এবং পরবর্তীতে আমীর এর দায়িত্ব পালন করেন।তিনি নাস্তিক মুরতাদদের আতংক ছিলেন।১৯৮১ সালে  এম.সি কলেজের জনৈক অধ্যাপক কুখ্যাত সরদার আলা উদ্দীন কুরআন অবমাননা কারী প্রবন্ধ সাপ্তাহিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশ করে।প্রিন্সিপাল সাহেব তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন।১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ গুড়িয়ে দিলে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) সিলেটে হরতালের ডাক দেন।কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষনা দেয়ার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সিলেট স্টেডিয়ামে চলমান অশ্লীল নাচ গান,জোয়া হাউস প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেন।যার ফলে জেলা প্রশাসক বাধ্য হয়ে এ অশ্লীল প্রদর্শনী বন্ধের ঘোষনা দেন। ১৯৯৩ সালে বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরীনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের সূচনা করেন।পরবর্তীতে এ আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয় এবং তাসলিমা নাসরীন দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনের বীজ তিনি রোপন করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের ১৯ শে এপ্রিল বিতর্কিত কবি শামসুর রহমানকে সিলেটে সংবর্ধনা দেয়ার তারিখ নির্দিষ্ট হয়।প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন এবং হরতালের ডাক দেন।ফলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পন্ডু হয়ে যায়। ২০০০ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন হলের নাম বিভিন্ন হিন্দু মনীষিদের নামে রাখার সিদ্ধান্ত হয় তখনই প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:)  গর্জে উঠেন।তিনি বলেছিলেন পিতার নাম আব্দুল্লাহ হলে ছেলের নাম রবীন্দ্রনাথ হতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়টি হযরত শাহজালাল( রহ:) এর নামে থাকলে তার হল ও ভবনসমূহের নাম নাস্তিক মুরতাদের নামে হতে পারে না। সিলেটের সর্বদলীয় গুনীজন ও শিক্ষাবিদদের  আন্দোলনের ফলে নাস্তিক মুরতাদের নামে হল ও ভবন করা সম্ভব হয় নি। আমারই ছাত্র শাহজালাল জামেয়া পাঠানটুলার বেলাল আহমদ এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিল।

পাচ: প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) এর কথায় ও কাজে মিল ছিল।তিনি তার পরিবারের সকল ছেলে মেয়েকে ইসলামী শিক্ষায় সুশিক্ষিত করেছেন।তারই সুযোগ্য সন্তান প্রখ্যাত আলিমেদ্বীন সামিউর রহমান মুসা (হাফি) আজ জামেয়া মাদানিয়ার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব যোগ্যতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। তিনি তার মেয়েদেরকেও বড় বড় আলেমের কাছে বিবাহ দিয়েছেন। তারই ছোট ভাইহাফিয মাওলানা আতিকুর রহমান (রাহি:) আমার ক্লাসমেট ছিলেন। তিনি সিলেটের প্রানকেন্দ্র কাজিরবাজারে  বিশাল ক্যাম্পাস নিয়ে জামেয়া মাদানিয়া প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তিনিই সর্বপ্রথম কাওমী মাদ্রাসার মুহতামিম পদটি প্রিন্সিপাল পদে রূপান্তরিত করেছেন।তিনি তার ছাত্রদেরকে ডোরাসাপ না হয়ে বাতেলের বিরুদ্ধে সিংহের মত গর্জন দিতে শিখিয়েছেন। তিনি ব্যাতিক্রমধর্মী কাওমী মাদ্রাসা গড়ে তুলেন যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ইসলাম বিরোধি কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাজপথ দখল করে উত্তাল মিছিল  ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতেন আজও করছেন।তারই প্রতিষ্ঠিত জামেয়া থেকে উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত মুহাদ্দিস, মুফাসিসর, মুফতি  ও ইমাম গন আজ দেশে বিদেশে বলিষ্ঠতার সাথে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাফিজ মাওলানা আব্দুল মালিক এযহারী (হাফি) সিলেট ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক প্রখ্যাত আলিম শাহ নজরুল ইসলাম (হাফি:) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতীব মাওলানা মুতিউর রহমান (হাফি:) সহ অনেক অনেক ইসলামি  স্কলারগন জামেয়া মাদানিয়ারই ফসল।প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি ) কোন চুক্তিবাদী বক্তা ছিলেন না।তার বক্তৃতায় কুরআন হাদীসের অকাট্য দলিল থাকতো।তার ওয়াজে বুযুর্গদের কিচ্ছাকাহিনী, আকাবিরদের অলীক স্বপ্নও ভূয়া কেরামতির উল্লখ ছিল না বরং আসহাবের রাসূলের সংগ্রামী জীবন ও কর্মের আলোচনা থাকত।তিনি ব্রিটেনের স্হায়ী নাগরিক হয়েও যুক্তরাজ্যর বিলাসবহুল জীবন পরিত্যাগ করে বাংলার গ্রামেগঞ্জে ওয়াজ করে বেড়াতেন। আত্মসম্মানবোধে তিনি একজন মাইলফলক আলেম ছিলেন।তিনি তাগুতি শক্তির কাছে দুনিয়ার স্বার্থে নিজেকে কখনও ছোট করেন নি।তিনি সত্যকে অকপটে বলতেন।তিরস্কারকারীদের তিরস্কারের ভয় তার মধ্যে ছিল না। মৃত্যু অবাধ তিনি আমার প্রিয়জন ছিলেন।আমি ভিন্নদলের সমর্থক হলেও কোন দিন আমাকে এমন বাক্য বলেন নি যাতে আমি মনে কষ্ট পাই।

ছয়:  প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান (রাহি )১৯৭৯ সালে  প্রথম হজ্ব সফরে যান। আমি তখন মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার সাথে যোগাযোগ করে হজ্বে আমার সাথী হন।একই বাসে আমরা দুজন মক্কা থেকে মদীনা শরীফ যাই। মদীনা শরীফে ৮ দিন আমার -গাশশাম হলে- আমারই বিছানায় থাকেন।মদীনা শরীফের সকল ঐতিহাসিক স্হানসমূহ আমি তাকে দেখাই। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আমার সাথে যান। আমার ক্লাসে বসে এক ঘন্টা ক্লাস ও করেন।মিসরের প্রখ্যাত ডঃ কান্নাভীর (রাহি:) শিক্ষাদান  পদ্ধতি অবলোকন করেন এবং মুগ্ধ হন।বিভিন্ন রঙ ও বিভিন্ন পোশাকের শতাধিক দেশের মেধাবী ছাত্রদের দেখে তিনি অভিভূত হন।ক্লাস শেষে উভয় যখন ভার্সিটি হলে ফেরলাম তখন তিনি আমাকে বললেন - ইসহাক, তুই ভার্সিটিতে ফার্স্ট হতে হবে।বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। 
আমি নিম্নস্বরে বললাম- আমার ডিপার্টমেন্ট হল আরবী ভাষা ও সাহিত্য ডিপার্টমেন্ট আমি এক অনারব কিভাবে আরবদেশের ছাত্র দের সাথে প্রতিযোগিতা করে ফার্স্ট হব? কেননা তাদের মাতৃভাষা হল আরবী। তিনি ধমকের স্বরে বললেন :আরে তুই পারবে, চেষ্টা কর,চেষ্টা করলে সব হয়, আমিও তোর জন্য দোয়া করব। তিনি দেশে ফিরলেন।আমারও স্টাডি চলছে।১ম বর্ষ ও ২ য় বর্ষে ফার্স্ট হয়েছি।৩য় বর্ষে গিয়ে হোচট খেলাম।পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ পূর্বে দাতের ব্যথায় এমন জর্জরিত হলাম যার ফলে পরীক্ষা ড্রপ দিতে হল।এবার এমন এক ব্যাচের সাথী হলাম যারা ছিলেন অতি মেধাবী। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ৩ য় বর্ষেও ফার্স্ট হলাম।৪র্থ বর্ষেও প্রথম স্হান লাভ করে ডিপার্টমেন্টে আমি একাই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আজ অবধি কোন দেশের কোন ছাত্র আমার সর্বোচ্চ মার্কের রেকর্ড ক্রস করতে পারে নি। এ সফলতার পিছনে ছিল প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি ) এর দোয়া, উৎসাহ ও প্রেরণা দান এবং সর্বোপরি আল্লাহর করুনা।

সাত: ১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়ী হিসেবে চাকুরী নিয়ে বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন করি।সৌদি এম্বেসীর রিলিজিয়াম এট্যাচী ছিলেন আমার বস। আমি তার অনুমোদন নিয়ে সিলেট আসি।আমার সিলেট আসার পিছনে আবু নাসের আব্দুজ জাহির ( হাফি:) এর অবদান ও ছিল। আমি তাকে আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।তিনি এখন ব্রিটেনে আছেন।তখন তিনি সৌদি রাষ্টদূতের পি.এস ছিলেন।সিলেট আসার পর প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রাহি:) আমাকে জামেয়ার মাদানীয়ার গেস্ট শায়খুল হাদীস হওয়ার প্রস্তাব দেন।আমি ভিন্নদলের সমর্থক হওয়ায় তার এ প্রস্তাবে কালক্ষেপণ করি।পরবর্তীতে তাকে খুশী করার জন্য ১৯৯৭ সালে আমি আমার দুই সহকর্মী শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আল মাদানী (রাহি:) ও শায়খ মুহাম্মদ চৌধুরী আল মাদানী  (হাফি:) কে নিয়ে দেড় মাসের জন্য জামেয়া মাদানিয়ার আরবী ভাষার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করি।জামেয়ার মেধাবী ৬০ জন শিক্ষার্থী এ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।এ কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী হাফিয মোহাম্মদ শফিউল আলম ও মুহাম্মদ মাহবুব আহমদ -আদ দাওয়াহ - নামে আরবীতে একটি সাময়িকী বের করেন। সাময়িকীর সার্বিক তত্ত্ববধানে আমি ছিলাম। এ সাময়িকীর ১৫ নং পৃষ্ঠার ছবি নিম্নে দেয়া হল।এখানে শিক্ষার্থীদের নাম ও তাদের মেধাক্রম উল্লেখ্য আছে:

Post a Comment

0 Comments