Recent Tube

শিরক


                                 শিরক;

(৩৪)
বড় শিরক

শিরকের প্রকারভেদ : শিরক দুই প্রকার-

১.- الشرك الاكبر বড় শিরক

২. الشرك الاصغر- ছোট শিরক

الشرك الاكبر বা সবচেয়ে বড় শিরক :

 বড় শিরক হ’ল  আল্লাহর কোন সমকক্ষ স্থির করে ইবাদতের কোন এক প্রকার আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের কাছে দো‘আ করা, সিজদা করা, মানত করা, অন্যকে ডাকা, অন্যের নিকট সাহায্যে প্রার্থনা করা মৃত ব্যক্তি, জ্বিন কিংবা শয়তানের প্ররোচনাকে ভয় করা। যেমন, মূর্তি, জ্বিন এর নিকট সাহায্য চাওয়া অথবা কবরের নিকট সন্তান চাওয়া, অলী-আওলিয়ার নিকট সাহায্য চাওয়া যাতে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। যেমন আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى  ‘আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তো এদের পূজা কেবল এজন্যেই করি যেন এরা (সুফারিশের মাধ্যমে) আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে’ (যুমার ৩৯/৩)।

الشرك الاكبر  বা বড় শিরক ৩ প্রকার :

১. الشرك فى الربوية (আশ-শিরক ফির রুবূবিয়াহ)

২. الشرك فى الألوهية (আশ-শিরক ফিল উলূহিয়াহ)

৩. الشرك فى الاسماء و الصفات (আশ-শিরক ফিল আসমা ওয়াছ-ছিফাত)

الشرك فى الربووية (আশ শিরক ফির রুবূবিয়্যাহ) :

 আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা বা অন্য কাউকে অংশীদার বানানো। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। গায়েব বা অদৃশ্যের খবর একমাত্র তিনিই রাখেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও গায়েবের খবর জানতেন না। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ- ‘বল যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক নই। যদি আমি অদৃশ্যের খবর রাখতাম, তাহ’লে আমি অধিক কল্যাণ অর্জন করতাম এবং কোনরূপ অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করত না। আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদানকারী মাত্র’ (আ‘রাফ ৭/১৮৮)।

الشرك فى الألوهية (আশ-শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ) :

 ইবাদতে মহান আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কাউকে শরীক করার নাম। ইবাদত হবে সম্পূর্ণ শিরক মুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا  ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না’ (নিসা ৪/৩৬)।

الشرك فى الاسماء و الصفات আশ-শিরক ফিল আসমা ওয়াছ ছিফাত : 

 এই শিরক হ’ল আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের সাথে অন্য কিছু বা তাঁর সৃষ্টির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা। যেমন : এ ধরণের কথা বলা যে, আল্লাহর পা আমাদের পায়ের মত বা তাঁর চেহারা আমাদের চেহারার মত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেغوث  বা غوث الاعظم ‘গাউসুল আযম’ বা ত্রাণকর্তা বলা ইত্যাদি।

 শিরক প্রধানত ৪ প্রকার :

 الشرك الدعاءদো‘আ বা প্রার্থনায় শিরক :

  আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যদের দেব-দেবীকে আহবান করা, তার নিকটে প্রার্থনা করা। মাযার বা পীরের নিকট কিছু চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ- (মুশরিকদের চরিত্র এই যে,) যখন তারা নৌযানে আরোহণ করে, তখন (তারা ভয়ে) একনিষ্টভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলভাগে এনে ভিড়িয়ে দেন (এবং ভয় কেটে যায়,) তখন তারা (পুনরায়) শিরকে লিপ্ত হয়’ (আনকাবুত ২৯/৬৫)।

الشرك النية و العبادة و القصد নিয়ত, ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে শিরক :

  আল্লাহর উদ্দেশ্যে উপাসনা বা ধর্মীয় কাজকর্ম, সংকল্পের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং দেব-দেবী, জ্বিন বা অন্য কিছু অর্থাৎ গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে সৎ আমল সম্পাদন করা যেমন পীর আওলিয়ার উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করা এই শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
 الشرك الطاعة  আনুগত্যর শিরক
 

  অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার হারামকৃত বস্ত্তকে হালাল এবং হালালকৃত বস্ত্তকে হারাম করার ক্ষেত্রে আলেম-ওলামা, পীর আওলিয়া, কর্তৃপক্ষ বা নেতৃবৃন্দের অনুসরণ করা (আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের বিরুদ্ধে)। মহান আল্লাহ বলেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ  ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম-ওলামা ও পোপ-পাদ্রীদের এবং মারিয়াম পুত্র মসীহ ঈসাকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করেছে। অথচ তাদের প্রতি কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধুমাত্র এক উপাস্যের ইবাদত করবে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে, তিনি সে সব থেকে পবিত্র’ (তাওবাহ ৯/৩১)।

الشرك المحبة ভালবাসায় শিরক :

 মহান আল্লাহ বলেন, وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তারা তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায়। কিন্তু যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর জন্য সর্বাধিক ভালবাসা পোষণ করে থাকে। আর যালেমরা (মুশরিকরা)। যদি জানত যখন তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে যে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা (তাহ’লে তারা শিরকের ক্ষতিকারিতা ব্যাখ্যা করে দিত)’ (বাক্বারাহ ২/১৬৫)।

Post a Comment

0 Comments