হোচট
-----------
নুর মোহাম্মদ চৌধুরী মুবিন।
----------------------------------------------
জাহাজ ঘাটে স্বজন হারা বিপন্ন এক নারী।
ভাবছে, একা অথৈ সাগর কেমনে দেবে পাড়ি।
সারেং ছিল পিতৃ তাহার উজিরপুরে ঘর,
সব হারালো ভাগ্য দোষে উড়ীর চরের ঝড়,।
ভোরের আলোয় দৃষ্টি ফেলেই করল আবিষ্কার,
এইতো সে দেশ, যেথায় ঘুমোয় মা জননী তার।
মনের ঘরের গহীন কোনায় অলীক জাগে কতই,
হয়ত তাহার শেষ নিশ্বাস জোটবে মায়ের মতই।
মাথার ভিতর খায় ঘুরপাক জীবন নামের কণা,
শুন্য পেটে হৈ-হুড়-মোড়, পায়কি কোথাও খানা।
বারেক ফিরে দিশেহারা লুপ্ত কাণ্ডজ্ঞান,
যবনীকায় যায় কি জীবন ? ভীষন পেরেশান।
হাঁকিয়ে গাড়ি যাচ্ছিলেন এক তরুন সওদাগর।
সৈকতের ঐ বালুর চরে পড়লো তার নজর।
হাত ঈশারায় থামায় গাড়ী, সঙ্গী টেলি ভাই,
বিপন্নের এক আর্তনাদ- তা বুঝার বাকি নাই ।
এগোয় দু'জন চর পানে, দুই দরদ ভরা প্রাণ ।
মানবতার নজীর স্থাপন করলো দুই মহান।
ক্লান্ত দেহী বিপন্ন যেই পিলোয় ফলের রস্ ।
অন্তরাত্বায় জোগালো বুঝি বাঁচার ফের সাহস।
স্বজন হারা মানবীকে তুলে নিয়ে ঘরে,
আপন মায়ের হস্তে দিল সারিয়ে তোলার তরে।
জননী তার শহর সেরা ভীষন বিচক্ষন,
ভাবলেন তিনি এই মেয়েটি ধরবে বাবুর মন।
খানিক আলাপ, পরখ করে বললেন হেসে মা'য়।
এমন পুষ্প মানায় ভারী শরীফ দরওজায় ॥
বাবুর মনের মনি কোটায় বার্তা দিলেন ছাড়ি ।
বধু করে রাখতে তারে ইচ্ছা তাহার ভারী।
লাজুক ছেলে সুবোধমতি মায়ের কথায় রাজি।
ফুল সজ্জা সাজিয়ে নিলো, আনলো ডেকে কাজী।
চালক টেলি বালক-সুলভ একটা বোকার হাঁড়ি,
চিন্তা করে সাহেব বাবুর ভাগ্য একখান ভারী ॥
করলে পরের উপকার আর মহৎ মনে কাজ,
কোন ফাঁকে যে ভাগ্য ফেরে প্রমান হল আজ।
ফের ভাবে ঐ চালক টেলি- পেলাম আমি ঠক্ ।
চালক বলেই এমন, নইলে উল্টো হতো রথ।
আমিই আগে দেখেছিলাম, বললাম, বাবু এ কি ?
বাবু বললেন পেছন ফেরাও, কাছে গিয়েই দেখি।
কি আর করা? থাকনা কথা, মন থেকে দেই ছাড়ি ।
চাইলেই আল্লাহ দিতে পারেন স্বর্গ পারের হুরী ॥
কাল ফজরের নামাজ পড়ে বলব খোদার তরে,
কপাল পোড়ার ভাগ্য ফেরাও তুমি দয়া করে।
ভাগ্যে তাহার ঘটলো আরেক, ঠিক সাত দিন পর ।
বালক-সুলভ টেলি গেল সেই না উড়ীর চর।
সাহেব বাবু নেই গাড়ীতে ব্যস্ত অন্য কাজে,
তাইতো আজি টেলির মনে নারিং বিরিং বাজে।
ফিরতে পথে হঠাৎ দেখে হৈ-হুল্লোড়, হৈ,
জন পঞ্চাশ আম জনতা তাড়ায় কারে ঐ।
বেশ তফাতে দৌড়ে ছুটে পোটলা হাতে মেয়ে ।
ধরতে তারে বখাটে দল ছুটছে পাছে ধেয়ে।
যেই ভাবা সেই মাত্রই কাজ, হাঁকায় গাড়ী জোরে ।
হোকনা সে চোর, বিপন্ন তো, সাহায্য করব তারে।
চোরের পাশে থামিয়ে গাড়ী, বললো উঠো আগে।
লাফিয়ে উটে বললো মেয়ে, বাঁচতে ভাগ্য লাগে।
এক্সেলেটার চাপ দিল যেই, গর্জে উটলো গাড়ী।
এক নিমিসে হারিয়ে গেল দৃষ্টি সীমা ছাড়ি ॥
টেলি ভাবে পড়লে ধরা ঐ ছোড়াদের হাতে ।
পিটিয়ে তারে মিশিয়ে দেবে খোদ সড়কের সাথে।
ভাবছে মেয়ে, করলাম একি ! শুদ্ধ নাকি ভুল ?
বাঁচলো কি প্রাণ? নাকি বাঁধলো আরেক গণ্ডগোল।
ফন্দি একটা করতেই হবে নিখুঁত অভিনয় ।
নইলে এবার থানা-পুলিশ করবে সে নিঃশ্চয় ।
জান বাঁচালেন ও ভাই চালক, মান বাঁচে কোন পথে ।
কপাল ফেরে পড়তে হল দুষ্ট লোকের হাতে।
সড়ক ধারে রাখা ছিল একটা মোটা থলে,
দেখতে গেলাম- কি আছে তায় ? নিছক কৌতূহলে।
অমনি শুনি সুর চিৎকার, চোর গেলো ঐ চোর ।
কি আর করা ? যায় কি ভাবা ? প্রাণ বাঁচাতেই দৌড়।
হাড় বদমাস্ ঐ গেরামে এমন ঘটনা ।
সব মাসেতে হয়যে দু'এক সব মানুষের জানা।
প্রাণ বাঁচালেন ও-ভাই চালক,মান বাঁচাবো কিসে ।
এই মুলুকে বেঁচে থাকা সত্যি সত্যিই মিছে।
ডুকরে কাঁদে ফন্দি আঁটে চোর বেচারি মেয়ে,
দু'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কয়-“বাঁচুম কোথা গিয়ে”।
টেলি বলে, কেঁদো না বোন থাকলে রাজি পরে।
তোমায় নিয়ে থাকবো আমি গেরাম মির্জাপুরে।
থাকো যদি রাণী করে রাখবো নিজের ঘরে।
রোজ বিকালে হাওয়া খাবো হাকালুকির পারে।
চাড়ুয়া বিলের সাইমুম পার্কে রাজ হংসীর সাথে,
পংকী রাজে দোল খাওয়াবো প্রতি সন্ধ্যা রাতে।
ঐ সুগন্ধা রোস্তোরাটার কোণের কেবিন জুড়ে।
মিষ্টি মুখের পর্ব সেরেই ফিরবো দু'জন ঘরে।
মিষ্টিমুখের পর্ব সেরে বললো মেয়ে -এই?
বোকার হদ্দ মোরা, কারো নাম যে জানা নেই ?
আমার নামটি সাহানা বানু, পাপড়ী বলতো মা'য় ।
থাক্ তোমারটা বলবে নাগো, পাছে পাপ হয়ে যায়।
চালক বলে শুনলে কি দোষ, নামটি আমার টেলি ।
বাবার দেয়া নামটি সামাদ, সবাই গেছে ভুলি।
পাপড়ী-টেলি ফিরলো বাসায় রাত বারোটার পরে,
টেলি তাহার কেসেট প্লেয়ার বাজায় জোরে-সোরে।
হাত-পা ধুয়ে , ক্লান্তি সেরে বললো টেলি ইস্।
মোর জীবনের ত্রিশটা বছর নিছক গেল মিছ।
অনেক দিনের স্বপ্ন স্বাধে গড়া আমার ঘরে,
এলেই যদি পূর্ণ করো আলোয় আলোয় ভরে।
আলমারিতে যত্নে রাখা স্বর্ণের অলংকার,
চকচকে এক আংটি আছে, একঠি গলার হার।
আরো দু'টি বালা আছে বছর দিনের কেনা ।
মায়ের দেয়া মোতির মালা ওজন বারো আনা।
সামনে রেখে সব আয়োজন, বসলো টেলি সাথে ।
চট জলদি পাপড়ি তাহা জোড়ায় গলায় হাতে।
একে একে সবই দেখায় জনমের জোগাড় ।
ভাইয়ের দেয়া জুস্ মেশিন আর পিসি, ভিসিআর,
খানিক পরে খোলে লেপের সেলাই করা ধার ।
তাহার মধ্যে লুকিয়ে রাখা উনষাট হাজার।
অনেক কথা অনেক গল্পে তিনটা গেল বাজি,
পাপড়ী বলে প্রাণের টেলি ঘুমোবে নাকি আজি।
ভীষণ ব্যস্ত টেলির যখন ঘুমে জোড়ায় চোখ,
পাপড়ী ভাবে জনম বৃথা না নিলে সুযোগ।
ফুর্তি স্নাত ভীষণ ক্লান্ত চালক টেলির চোখে,
রগড়িয়ে দেয় সূর্যকারণ পুর জানালার দিকে।
চোখ ছানাবড়া, মুখে বিড়বিড় বাকহারা হয় টেলি ।
টাওরাতে কিছু পারলোনা যেন প্রথম নয়ন মেলি।
এপাশ খালি ওপাশ খালি পাপড়ী কোঁথাও নাই,
আলনা খালি, টাকসা খালি, জুস মেশিনও ? হায় !!
ইন্নালিল্লাহ বলে টেলি লেপে ঢোকায় হাত।
ত্রিশ বছরের সেরা তুফান ঘটলো কি এই রাত ?
হাউ মাউ করে কান্না জুড়ে চালক বোঁকা ধন ।
বাবু হাসেন মুখটিপে, আর বউয়ের ভারী মন
ভুবন ফেরে তারাই পড়ে জগৎ জোড়ে ভাই ।
পরানুকরন প্রিয়জন আর হিংসুটে সদাই ॥
আপন বুঝে যা ধরে না তাতেই যাদের ক্ষয়
নকল ছাচের ব্যবসায়ী সে হারবে সে নিঃশ্চয় ।
কাক যদি হও কাকের মতন নাচবে নির্বিকার,
ময়ুর নাচন নাচতে গেলেই হোচট্ পুরস্কার ॥
0 Comments