Recent Tube

মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমুহকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে রিপোর্ট প্রদান : মোহাম্মদ নূরুল আমিন।


মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমুহকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে রিপোর্ট প্রদান করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক গঠিত ওলামাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি  👍✍️ 
------------------------- 
২০০৩ সালে আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুড়া নামক মাদ্রাসা কর্তৃক "আফতাব স্মরণিকা" নামে একটি পুস্তক প্রকাশিত হয় এবং এতে ‘মওদূদী সাহেবের মতবাদ ও ইসমাতুল আম্বিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত দু’টি প্রবন্ধে মাওলানা মওদূদী সাহেবের নামে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। যার প্রেক্ষিতে বরুড়ার একজন সত্যাশ্রয়ী আলেমে দ্বীন মাওঃ আবদুর রহমান এর কঠোর প্রতিবাদ করেন এবং এই অপবাদ ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে ৮ জনকে আসামী করে কুমিল্লা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২১৯/০৪। আদালতে বাদী মাওলানা আবদুর রহমান "আফতাব স্মরণিকা"য় মাওলানা মওদূদীর নামে প্রকাশিত তথ্য সমুহ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে আসামীদের শাস্তি প্রদানের আবেদন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় তদন্তপূর্বক বিশেষজ্ঞ মতামতসহ রিপোর্ট প্রদানের জন্য অভিযোগ নামাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিকট প্রেরণ করেন। ফাউন্ডেশন বাইতুল মুকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ নূরুদ্দীন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ইসলামী বিশ্বকোষের প্রকাশনা কর্মকর্তা মাওলানা মুহাম্মদ মুসা, মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস এর সদস্য মাওলানা মুফাজ্জল হোসাইন খান, মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী ও জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ বাকী নদভীর সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টীম গঠন করেন এবং স্মরণিকায় উল্লেখিত অভিযোগ ও মন্তব্যগুলো মাওলানা মওদূদীর পুস্তক সমূহের সাথে মিলিয়ে তার সত্যতার বিষয়ে রিপোর্ট প্রদানের অনুরোধ করেন। 
বিশেষজ্ঞ কমিটি রিপোর্টি প্রনয়ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। অবশেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক জনাব সিরাজুল ইসলাম ৯/৬/২০০৮ তারিখে ৭৯৯ নং স্মারকে কুমিল্লার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক, কুমিল্লার নিকট সংশ্লিষ্ট সাতজন বিশেষজ্ঞের স্বাক্ষর সম্বলিত তথ্য যাচাই প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মরণিকায় মাওলানা মওদূদীর নামে উল্লেখিত প্রত্যেকটি অভিযোগই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাঁরা আরো উল্লেখ করেন যে, নবী-রাসূল,খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে মাওলানা মওদূদীর কোনো মন্তব্য বা মতামত তাঁর কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায়নি। এই রিপোর্টের পর বিবাদীগণ বিপাকে পড়ে যান এবং আপোস মিমাংসার জন্য বাদী মাওলানা আবদুর রহমান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ধর্না দেন। তারা আপোষ মিমাংসার জন্য আদালতে আবেদন করেন এবং বিবাদী মাওলানা বশিরুল্লাহ, মো. ইয়াকুব, আনোয়ার হোসাইন, মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন, মো. নোমান, সালমান, আলী আশরাফ প্রমুখ আরজীর ২ নং অনুচ্ছেদে ‘আফতাব স্মরণিকার বিতর্কিত উক্তিসমূহ “ভুলবশতঃ লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং এর জন্য বিবাদীগণ মর্মাহত এবং অনুতপ্ত” এই মর্মে স্বীকারোক্তি দেন। আদালত বাদীর সায় অনুযায়ী আপোষনামা গ্রহণ করেন। এই মামলা, ইসলামী ফাউন্ডেশন গঠিত ওলামাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো মিথ্যা আখ্যায়িত করে দেয়া রিপোর্ট ও অভিযোগ কারীদের ভুল স্বীকার করে মর্মাহত ও অনুতপ্ত হয়ে আদালতে স্বীকাররোক্তি প্রদানের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।  
উল্লেখ্য যে, স্মরণিকার ৭০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়, “মিষ্টার মওদূদী সাহেব বলেন, নবীগণ মাসুম নন, প্রত্যেক নবীই গুনাহ করেছেন (তাফহীমাত, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ৪৩)। স্মরণিকার ৩৫ পৃষ্ঠায় মাওলানা মওদূদী প্রণীত তাজদীদ ও এহইয়ায়ে দ্বীন পুস্তকের ২২ নং পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি লিখেছেন “হযরত আবুবকর (রা.) খেলাফতের দায়িত্বের অযোগ্য ছিলেন।” এই পৃষ্ঠায় তরজমান রবিউস সানির সংখ্যার ৩৫৭ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে, তিনি বলেছেন, “নবী করিম (সা.) এর  ওফাতের সময় ব্যক্তি সম্মানের কুমনোবৃত্তি হযরত ওমর (রা.)কে পরাভূত করেছিল।” আফতাব স্মরণিকার ৩৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছিল যে, মওদূদী সাহেব তার খেলাফত ও মুলুকিয়াত গ্রন্থের ১২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “হযরত ওসমানের মধ্যে স্বজনপ্রীতির বদভ্যাস বিদ্যমান ছিল।” স্মরণিকার ৩৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, তাফহিমাত গ্রন্থের ৩১৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মওদূদী মুহাদ্দিসানে কিরাম হাদিস ভুল বলে মন্তব্য করেছেন। এর ৭১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে মাওলানা মওদূদী “হযরত আদম (আ.) মানবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন” বলে মন্তব্য করেছেন। আবার স্মরণিকার ৭০ ও ৭১ পৃষ্ঠায় ‘কোন কোন নবী ও রাসুল দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেননি’, এবং ‘হযরত নূহ (আ.) এর মধ্যে জাহেলিয়াতের জজবা স্থান পেয়েছিল।’ আবার ‘হযরত দাউদ (আ.) এক বিবাহিতা যুবতীর উপর তালাকের দরখাস্ত করেছিলেন’ প্রভৃতি মন্তব্যও মাওলানা মওদূদীর নামে ছাপা হয়।
#প্রাসংগিকতাঃ -
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ইসলামী অনুশাসনের ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই উপমহাদেশে ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্দেশে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা মওদূদী স্বয়ং একজন আলেমে দ্বীন, লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। তার রচিত তাফহিমুল কুরআনসহ অসংখ্য গ্রন্থ দেশে-বিদেশে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস। দলটি ইসলামী সাহিত্যের একটি বিশাল ভান্ডারও তৈরি করেছে যা জ্ঞান পিপাসু সকল শ্রেণির মানুষের তৃষ্ণা মিটাতে সহায়তা করছে। 
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে নতুন করে দলটির কাজ শুরু হয়। দলটির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য এবং নানা ঘাত প্রতিঘাত ও বিরোধিতার মুখেও বাংলাদেশে জামায়াত তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়। দুর্ভাগ্যবশত: এদেশের ধর্মীয় নেতা তথা আলেম উলামাদের একটি অংশ মাওলানা মওদূদীর সাহিত্যের বরাত দিয়ে তার ও জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এই অপবাদগুলোর জবাবও বিভিন্ন সময়ে জামায়াত নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে দেয়া হয়েছে। অনেকগুলো অভিযোগ ও জবাব পুস্তিকা আকারেও পাওয়া যায়। কিন্তু একই অভিযোগের চর্বিত চর্বণ বার বারই পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে সামাজিক মাধ্যমে এর বিস্তৃতি দেখা যায়। 
এ ব্যাপারে কয়েকজন সম্মানিত পীর ও ওলামা মাশায়েখ এবং তাদের কিছু অনুসারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। জামায়াত এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। কারণ অবান্চিত ও বিদ্বেষ প্রসূত মিথ্যাচারের জবাব দিতে গিয়ে ফেতনায় জড়ানোকে জামায়াত সবসময় অপছন্দ করে।  
তবে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া উপমহাদেশের উল্লখিত চাঞ্চল্যকর মামলা ও মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে মাওঃ মওদুদী রঃ এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার বন্ধ হওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী। উল্লেখ্য যে, "জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুড়া" মাদ্রসাটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মত বরুড়াতে একটি বিশাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাচীনতম এই মাদ্রাসাটি সুবিশাল এলাকা নিয়ে অনেকগুলো বহুতল ভবনে সুসজ্জিত। এর শিক্ষকরাও বহুগুণে গুণান্বিত আলেমে দ্বীন।
তথ্য সুত্র - দৈনিক সংগ্রামের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডক্টর Muhammad Nurul Amin সাহেবের পেইজ থেকে। কমেন্ট বক্সে লিংক দেয়া হল।
------------------------- 
প্রবন্ধ :

Post a Comment

0 Comments