Recent Tube

কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতি বলার বিধানঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতি বলার বিধানঃ
-------------------------------------------------------
আমরা কি কোনো মুসলমানকে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলে ঘোষণা দিতে পারি? না, কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যাদেরকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের ছাড়া আর কাউকে আমরা জান্নাতি বলে ঘোষণা দিতে পারি না। 

 ♥ একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আনসারী এক শিশুর নামাজে জানাজা পড়ানোর জন্য ডাকা হলো, তখন উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, 
يَا رَسُولَ اللَّهِ طُوبَى لِهَذَا عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ لَمْ يَعْمَلْ السُّوءَ وَلَمْ يُدْرِكْهُ قَالَ أَوَ غَيْرَ ذَلِكَ يَا عَائِشَةُ. 
হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এ শিশুটির জন্য সুসংবাদ, ও তো জান্নাতের একটি চড়ুই পাখি হবে। সে তো কোনো মন্দকাজ করেনি এবং তা করার সুযোগও পায়নি। এ কথা শুনে রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘হে আয়শা! এর বিপরীত কি হতে পারে না?’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৬২২; নাসায়ী হাঃ ১৯৪৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ৮২; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২৩৬১২, ২৫২১৪)

 ♥ উম্মে আলা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন ওসমান ইবনে মাযয়ুন মৃত্যুবরণ করলেন তখন তাকে গোসল দেয়া হলো এবং কাফন পরানো হলো। এমতাবস্থায় সেখানে রাসূল সা: প্রবেশ করলেন। তখন আমি বললাম, 
رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ فَشَهَادَتِي عَلَيْكَ لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللَّهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَكْرَمَهُ فَقُلْتُ بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَنْ يُكْرِمُهُ اللَّهُ فَقَالَ أَمَّا هُوَ فَقَدْ جَاءَهُ الْيَقِينُ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرْجُو لَهُ الْخَيْرَ وَاللَّهِ مَا أَدْرِي وَأَنَا رَسُولُ اللَّهِ مَا يُفْعَلُ بِي قَالَتْ فَوَاللَّهِ لَا أُزَكِّي أَحَدًا بَعْدَهُ أَبَدًا. 
হে আবু সায়েব (ওসমান ইবনে মাযয়ুন) আপনার উপর আল্লাহ্‌র রাহমাত বর্ষিত হোক! আমি আপনার ব্যাপারে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ্ আপনাকে (জান্নাতি করে) সম্মানিত করেছেন। তখন নাবী (ﷺ) বললেনঃ তুমি কি করে জানলে যে, আল্লাহ্ তাকে (জান্নাতি করে) সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আল্লাহ্ আর কাকে সম্মানিত করবেন? আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেনঃ তার ব্যাপার তো এই যে, নিশ্চয় তাঁর মৃত্যু হচ্ছে এবং আল্লাহ্‌র কসম! আমি তার জন্য কল্যাণ কামনা করি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি জানি না আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হবে, অথচ আমি আল্লাহ্‌র রাসূল। সেই আনসারী মহিলা বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! অতঃপর এরপর হতে কোন দিন আমি কোন ব্যক্তিকে সম্বন্ধে পবিত্র (জান্নাতি) বলে মন্তব্য করব না। (সহীহ বুখারী হাঃ ১২৪৩; মুসনাদে আহমদ হাঃ ২৬৯১১; ফাতহুল বারী, ৩/১১৪)

 ♥ কুরআন বা হাদীসে যাদেরকে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলতে হবে। অন্য কারো বিষয়ে নিশ্চিতরূপে বলা যাবে না যে, লোকটি জান্নাতি বা জাহান্নামি। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহঃ) বলেন:
فَإِنَّ النَّاسَ عِنْدَنَا عَلَى ثَلاَثَةِ مَنَازِلَ: الأَنْبِيَاءُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَتِ الأَنْبِيَاءُ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ. وَالْمَنْزِلَةُ الأُخْرَى لِلْمُشْرِكِيْنَ نَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَنَّهُمْ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَالْمَنْزِلَةُ الثَّالِثَةُ لِلْمُوَحِّدِيْنَ نَقِفُ عَلَيْهِمْ، فَلاَ نَشْهَدُ أَنَّهُمْ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَلاَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَلَكِنَّا نَرْجُوْ لَهُمْ وَنَخَافُ عَلَيْهِمْ... قَالَ الْمُتَعَلِّمُ .. أَخْبِرْنِيْ هَلْ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ تُوْجِبُ لَهُ الْجَنَّةَ إِنْ رَأَيْتَهُ صَوَّاماً قَوَّاماً غَيْرَ الأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِمْ وَمَنْ قَالَتْ لَهُ الأَنْبِيَاءُ؟ قَالَ الْعَالِمُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: لاَ أُوْجِبُ الْجَنَّةَ إِلاَّ لِمَنْ أَوْجَبَهُ النَّصُّ، وَكَذَلِكَ النَّارُ.
‘‘মানুষ আমাদের নিকট তিন পর্যায়ের: (১) নবীগণ জান্নাতি এবং নবীগণ যার বিষয়ে বলেছেন যে, 'সে জান্নাতি' সেও জান্নাতি। (২) দ্বিতীয় পর্যায় মুশরিকদের। আমরা তাদের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করি যে, তারা জাহান্নামি। (৩) তৃতীয় পর্যায় মুমিনগণ। তাদের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত প্রদান থেকে বিরত থাকি, তাদেরকে আমরা জাহান্নামি বলেও সাক্ষ্য দিই না এবং জান্নাতি বলেও সাক্ষ্য দিই না। কিন্তু আমরা তাদের বিষয়ে আশা পোষণ করি ও আশঙ্কাও করি। .... আবূ মুকাতিল বলেন: ... নবীগণ এবং যাদের কথা নবীগণ বলেছেন তাঁরা ছাড়া অন্য কাউকে যদি আপনি দেখেন যে, সে সদাসর্বদা অত্যধিক তাহাজ্জুদ, সিয়াম ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে রত তবে তার বিষয়ে কি আপনি জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন? ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন, না, যার বিষয়ে নস্স বা কুরআন বা হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে সে ব্যক্তি ভিন্ন আর কারো বিষয়ে আমি জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করব না। জাহান্নামের বিষয়ও অনুরূপ।’’ (ইমাম আবূ হানীফা, আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, পৃ. ২৭-২৯)

Post a Comment

0 Comments