বিশ্বাসী আর সংশয়বাদীদের মাঝে এই বিশাল মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য শুধুই “বিশ্বাসে"।
-------------------------
কয়েকবছর আগে আস্তিকতা-নাস্তিকতা বিষয়ক একটি গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। কমেন্ট বক্সে একজন নাস্তিকের একটি বাক্য এখনও আমার মনে গেঁথে আছে। সে বলেছিলো, “কাউকে নাস্তিক বানানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি করা”।
কথাটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। গভীর এক মনস্তাত্ত্বিক অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে এই বাক্যের মাঝে। যখন মানুষের অন্তরে সংশয় ও সন্দেহের স্লো-পয়জন একবার প্রবেশ করে তখন ঈমান (বিশ্বাস) সেখানে থেকে অগোচরেই বিদায় নিতে থাকে। সংশয় ও ঈমান এতটাই সাংঘর্ষিক যে উভয়কে একসাথে হৃদয়ে ধারণ করা অসম্ভব।
ঈমান হলো সন্দেহাতীত বিশ্বাস, যুক্তির উর্ধ্বে বিশ্বাস। এজন্য সূরা বাকারার শুরুতেই আল্লাহ কোরআনকে “সন্দেহের উর্ধ্বে” উল্লেখ করে “না দেখে অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাসকে” হেদায়েত পাওয়ার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যেহেতু ঈমান আনার ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রথম শর্ত “সংশয় ত্যাগ করা” এজন্যই শয়তান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মূল লক্ষ্য “সংশয়/সন্দেহ” তৈরী করা।।
‘সন্দেহ’ শুধুমাত্র প্রশান্ত চিত্তে ঈমান ধারণের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ নয় দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনের জন্যও মারাত্মক হুমকি বটে। ছোট্ট ছোট্ট সন্দেহ, ভুলবোঝাবুঝিকে প্রশ্রয় দিলে এটাই শেষ পর্যন্ত সম্পর্ককে অশুভ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
নারীদের মধ্যে সন্দেহের প্রবণতা অধিক। বিশেষ করে যারা গৃহিণী তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। পারিবারিক দায়িত্ব, বাচ্চা লালনপালনের বাড়তি চাপ, সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে দাম্পত্য সঙ্গীর সাথে ‘স্বাভাবিক দূরত্ব’ ইত্যাদি কারণে নারীরা খানিকটা একা হয়ে পড়ে। আর এই একাকীত্বই মস্তিষ্কে সন্দেহ তৈরীর উর্বর সময়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সন্দেহ প্রবণতার জন্ম হয় অতি অধিকারবোধ থেকে। মনোবিদদের মতে, অতিরিক্ত অধিকারবোধ আসলে সন্দেহপ্রবণতারই প্রথম ধাপ। এভাবেই স্বামীর প্রতি বাড়তি ভালোবাসা, প্রেমবোধ ও অতি ঈর্ষার কারণে অনেক সময় মনের কোণে সন্দেহ বাসা বাঁধে।
আত্মসম্মানের ক্ষেত্রে পুরুষদের রক্ষণশীল স্বভাব অধিক প্রকট। কোন পুরুষ স্ত্রীর অহেতুক সন্দেহের তীরে বিদ্ধ হলে স্বভাবতই সে আক্রমণাত্মক হয়। স্ত্রীর অতি ঈর্ষাবোধ/সন্দেহ আর পুরুষের রাগ যখন একত্রিত হয় স্বাভাবিকভাবেই এর ফলাফল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকেই যায়।
দাম্পত্য জীবনের প্রাণশক্তিই হলো বিশ্বাস। অবিশ্বাস, সংশয়, সন্দেহ যে মানুষের হৃদয়ে থাকে সে নিজেও সুখী নয় এবং তার আশেপাশের মানুষরাও তার সন্দেহের আগুনে পুড়তে থাকে। এজন্য কোরআনেও মহান আল্লাহ ‘সন্দেহ’ থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। (সূরা হুজরাত: ১২)
নাস্তিকতা থেকে ফিরে আসা একজন আমাকে বলেছিলেন, “নাস্তিকরা সুখী নয়”। কারণ একটাই, তাদের হৃদয় বিশ্বাসশূন্য। আত্মার খোরাকই হলো বিশ্বাস। তাই তাদের বিশ্বাসহীন আত্মার অতৃপ্তি আজীবন রয়ে যায়। পক্ষান্তরে মুসলিমরা শত আঘাতে জর্জরিত হয়েও বলতে পারে ‘আলহামদুলিল্লাহ’। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডের ৪০% মানুষ নাস্তিক, ২৬% মানুষ God সম্পর্কে অবগত নয়৷ তার মানে প্রায় ৬৬% মানুষ God এ বিশ্বাসী নয়। ৩৪% মানুষ God এ বিশ্বাসী। তাও আবার প্রকৃত ইলাহ নয়। এজন্য সবচেয়ে সুখী দেশ হলেও সেখানে আত্মহত্যার হার প্রতি এক লক্ষ্যে ১৫.৩০%। যা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া কিংবা আফগানিস্তানের চেয়ে কয়েকগুণ। বাংলাদেশে এই হার ৩.৭০%। যারা নিজেদের সবচেয়ে সুখী দাবী করে সেই ফিনল্যান্ডে বিবাহবিচ্ছেদের হার ৪০-৫০% উঠানাম করে!! ভাবুন, কী ভয়াবহ অবস্থা!! মুসলিম দেশগুলো এখনও তূলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। তবে ইসলাম থেকে দূরে যাওয়ার এই হার বাড়ছে।
বিশ্বাসী আর সংশয়বাদীদের মাঝে এই বিশাল মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য শুধুই “বিশ্বাসে"। বিশ্বাসের সুখ শুধু মু‘মিনরাই বুঝবে। অবিশ্বাসী ও সংশয়বাদীদের পক্ষে এই সুখ বোঝা অসম্ভব। বিশ্বাসী হৃদয় নিশ্চিন্তে থাকতে পারে আর অবিশ্বাস প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয়ে দুঃখ-কষ্টের হরেকরকম বীজ বোনে।
তাই আল্লাহ ও কাছের মানুষদের প্রতি ‘যথাযথ’ বিশ্বাস এবং নিজেকে “অন্যের বিশ্বাসের উপযুক্ত” করে গড়ে তুলতে পারলেই ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সুখী হওয়া সহজতর। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
#Abdullah_Arman
08/12/2023
0 Comments