ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করার হিম্মত যারা করেন না তারা এক পর্যায়ে বাতিলেরই সহায়ক প্রমাণিত হনঃ
----------------------------------------------------------
ইকামাতে দ্বীনের মূল কথা হল, নিজের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ দায়িত্ব। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ.
তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এতে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা শুরা ৪২/১৩)
আল্লাহ তা'য়ালা যাদেরকে নবী ও রাসূল হিসেবে বাছাই করেছেন তারা সবাই নিজ নিজ দেশে সৎ, বিশ্বাসী, সত্যবাদী ও অন্যান্য যাবতীয় মানবিক গুণের কারণে জনপ্রিয় ছিলেন। দ্বীনে হকের দাওয়াত দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত শেষ নবীও আল-আমীন ও আস-সাদেক বলে প্রশংসিত ছিলেন। কিন্তু أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ “আল্লার দাসত্ব কর ও তাগুতকে ত্যাগ কর। ”-(সূরা আন নাহল: ৩৬) বলে দাওয়াত দেয়ার পর নবীর সাথে তাগুতের সংঘর্ষ না হয়েই পারে না।
নবীর দাওয়াত শুনেই নমরূদ, ফিরাউন ও আবু জেহেলরা বুঝতে পারল যে, তারা দেশকে যে আইনে শাসন করছে ও সমাজকে যে নীতিতে চালাচ্ছে, তা বদলিয়ে নবী নতুন কোন ব্যবস্থা চালু করতে চান। ফিরাউন স্পষ্ট বললো: إِنِّي أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ “আমি আশংকা করি যে, (মূসা) তোমাদের দ্বীনকে বদলিয়ে দেবে। ”-(সূরা মুমিন:২৬)
যারা দেশ শাসন করে তারা আইন-কানুন এমনভাবেই বানায় যাতে শাসক শ্রেণীর স্বর্থ ঠিক থাকে। জনগণকে শোষণ করে শাসক গোষ্ঠীর প্রাধান্য বজায় রাখার উপযোগী আইন ও অর্থব্যবস্থাই চালু রাখা হয়। মানব রচিত আইনের বৈশিষ্ট্যই এটা। সুতারাং প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বহাল রাখাই শাসকদের স্বার্থ। এজন্যেই এদেরকে কায়েমী ম্বার্থ বলা হয়। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা বহাল থাকলে যাদের স্বার্থ কায়েম থাকে তারাই কায়েমী স্বার্থ (Vested Interest)।
আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেও সকল বাতিল বিধানের উপর দ্বীনে হক তথা আল্লাহর বিধান বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা তওবাঃ ০৯/৩৩; ফাতাহঃ ৪৮/২৮; সফঃ ৬১/০৯)। এবং সাহাবাগণও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে থেকে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন,
اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ رَوَاهُ رزين.
"আল্লাহ তা'আলা সাহাবাগণ কে বাছাই করে নিয়েছেন তাঁর নবীর সাথী হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য।" (মিশকাত হাঃ ১৯৩; হিলইয়াহ ১/৩০৫-৩০৬; ইবনে আব্দুল বার ২/৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সহ দুনিয়ায় যত নবী ও রাসূল এসেছেন তাঁদের সবাই তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে দ্বীনে হক কায়েম করার দায়িত্বই পালন করে গেছেন। যে দেশে দ্বীনে হক কায়েম ছিল না সেখানে অবশ্যই বাতিল কায়েম ছিল। হক কায়েমের চেষ্টা করলে বাতিলের পক্ষ থেকে বাধা আসাই স্বাভাবিক। কারণ হক ও বাতিল একই সাথে চালু থাকতে পারে না।
যে বাতিল শক্তি দ্বীনে হক কায়েমের পথে বাধা সৃষ্টি করে তা দু ধরনের হয়ে থাকে। প্রধান বাতিল শক্তি হলো সরকারী ক্ষমতাসীন শক্তি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাদের হাতে থাকে তারা ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। অনৈসলামী সমাজে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা দলের নেতৃত্বে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা যে চালু হতে পারে না সে কথা তারা ভালভাবেই জানে। ইসলামী রাষ্ট্রে তাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই তারা ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী।
সমাজে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী আরও এক ধরনের শক্তি রয়েছে যারা সরাসরি বাতিল শক্তির মধ্যে গণ্য না হলেও হক ও বাতিলের সংঘর্ষে তারা হকের পক্ষে সক্রিয় হন না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারা বাতিলের সাথেই সহযোগিতা করেন। বাতিলের বিরুদ্ধে ময়দানে যারা সক্রিয় নয় তারা ঐ সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। এমনকি দ্বীনের খাদেম হয়েও এ জাতীয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হন। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করার হিম্মত যারা করেন না তারা এক পর্যায়ে বাতিলেরই সহায়ক প্রমাণিত হন। (ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ৪২)।
-------------------------
সম্পাদনায়: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।
0 Comments