বুদ্ধিজীবি ফারহাদ মাযহারের ইসলামি জ্ঞান
<<<<<>>><<<>>><<<>>><<<>>>>>
বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবি বলা হতো ইসলাম বিদ্বেষী, বিরোধি, স্বল্পজ্ঞানী, ও কিছু দর্শনের জ্ঞানধারী কোন প্রাজ্ঞ ও বাগ্মীকে। যাদের অনেকের লেখা পড়ে পেয়েছি সন্ত্রাসী ভাষণ, ও অল্পজ্ঞানের অতিকথন কিংবা ইসলামি ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের উপর গবেষণা। তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এক দল আধা-মূর্খ আধা-শিক্ষিত মনে হয়েছে। এদেরকে মিডীয়া বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আমাদের মাথায় তাদের গোবর ঢোকানোর প্রয়াস পায়। এবং সেখান থেকে আমাদেরকে অহর্নিশ বুদ্ধির চারাগাছ বের করতে উৎসাহিত করে।
এদের কাছে সৈয়দ আলী আহসান বুদ্ধিজীবি ছিলেননা, কারণ তিনি ভালো একজন ইসালামিস্ট ছিলেন। এদের কাছে কাজী নজরুল, ফররুখ, গোলাম মোস্তফাগণ উচ্চ মার্গীয় কবি সাহিত্যিক ছিলেন না, কারণ তারা ইসলামকে তাদের লেখার ঊপজীব্য করেছিলেন। এমন কি সোনালী কাবিনের মত সম্পূর্ণ ভোগবাদী সাহিত্যের অনন্য আঁকরকে মেনে নিয়েও তারা আল-মাহমুদকে দূরে সরাতে চায় কারণ তিনি নাকি শেষ বয়সে ইসলামিস্ট হয়েছিলেন।
বুদ্ধিজীবি ফারহাদ মাযহার বাংলাদেশে উপরোল্লিখিত লেভেলের বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত। তিনি বাম ঘরাণার বিপুল প্রভাবশালী একজন মানুষ। কার্ল মাক্স সহ সাম্যবাদি দর্শন তিনি গিলে গিলে হজম করেছেন। পাশ্চত্য অন্যান্য দর্শন ও তিনি নাড়াচাড়া করেছেন।
তবে তিনি ইসলাম জানতেন কিনা তা বুঝতাম না। একবার তিনি লন্ডনে এলেন, আনুকল্য পেলেন ইসলামি ব্যক্তিবর্গের। আমার মত ক্ষুদ্র পোকাও দাওয়াত পেলো তার ইসলামি ইজতিহাদের শরাব পানের পান শালায়, ইউরোপের সব চেয়ে বড় মসজিদে। দেখলাম তিনি দাড়ি রেখেছেন, এবং টুপির সদ্ব্যবহার শুরু করেছেন, এবং আগে পিছে ইসলাম পন্থীদের বেশ কয়জন এস্কর্ট করে নিয়ে যেতে পারে এমন ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য অর্জন করে ফেলেছেন।
শুনলাম তার আলোচনা। আমার চার পাশে থাকা ইসলামিস্টদের চোখে বিস্ময় দেখলাম, মনে বরফ গোলা আবহ পেলাম, আর “ও আল্লাহ এমন নাস্তিকও ইসলামে ফিরে এসে এতো বড় দার্শনিক হতে পারে?” ধরণের শ্বাস নিশ্বাসের বাষ্প স্পর্শ করলাম। আমি বা ডঃ কামরুলের মত কিছু ক্রিটিক্যাল মাইন্ডের মানুষেরা বুঝলাম তিনি যা বলছেন তা প্রয়াত আবুল হাশিমদের সেই সময়ের খেলাফতে রাব্বানিয়ার রুবুবিয়্যাতের দর্শন, যা ছিলো ইসলাম ও মার্ক্সিয় গোজামিল। আসলে সাধারণতঃ যা ঘটে থাকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতা কখনও প্রভাবক না হয়ে প্রভাবিত হয় বেশি। সেইটাও আমরা আল্লামাহ আবুল হাশিমের মধ্যেও দেখি। তিনি তার এই রুবুবিয়্যাত দর্শন পেয়েছিলেন ভারতের ইনায়েতুল্লাহ মাশরেকি (মৃ ১৯৬৩) এর খাকসার আন্দোলনের মূল দর্শন থেকে।
মাশরেকী মনে করতেন দীনের মূল কাজ হলো আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান উপায় উপকরণ অর্জন হলো দীনের একমাত্র কাজ। তিনি ইসলামের মূল ইবাদাতগুলোকে এর আলোকেই ব্যাখ্যা দেন যাতে বুঝা যায় এই সব ইবাদাত সেনাবাহিনির প্রশিক্ষণের মত একটা পদ্ধতি। দীনের ব্যাখ্যা তিন কখনো হাদীস ও নুসুসের উপর (দলীল) না দিয়ে প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও নীরিক্ষণের মাধ্যমে দিতে চেয়েছেন। (ইনায়াতুল্লাহ মাশরেকি, তাযকিরাহ দ্র)
আজকে ফারহাদ মাযহারের একটা ভিডীও দেখলাম, যা শোনার পর ঐ যে কয়েক বছর আগে তার শোনা লান্ডনের বক্তব্য আবার মনে উঠলো। এই ভিডিওতে তাকে বেশ রাগতঃ মনে হয়েছে।
তিনি এই ভিডীওতে বেশ কিছু হুকুম আহকাম নিয়ে কথা বলেছেন। যেমন মাযার ভাঙা ঠিক না, সেখানে যেয়ারাত ও গান বাজনা করা জায়েয, দাঊদ (আ) গান বাজনা করতেন, আগের জগতে মূর্তি বানানো হতো প্রভূর সমকক্ষ ভেবে আর এখন ঐ টা নেই কাজেই মূর্তি বানানো এখন যায়। ফলে যারা এখন মূর্তি ভাস্কর্য বানায় তাদের তাকফীর করা মুসলিমরা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে।
তিনি বলেছেন কুরআন নাকি হেদায়েতের গ্রন্থ (হুদান লিল মুত্তাক্বীন), এটা নির্দেশ দাতা আইন প্রণেতা নয়, বরং পরামর্শদাতা। “আমি আইন, আমার কথাই শেষ কথা” কুরআন নাকি এটা বলেনা। কাজেই হেদায়েত ছাড়া কুরআন যারা পড়ে তারা আদৌ মুসলিম কিনা তিনি জানেন না।
তিনি এখানে তার কিছু দর্শন ছেড়েছেন। তিনি বলতেছেন, “কুরআন দলীল না। বরং ওহির আকারে তাকে আল্লাহ পাঠায়েছেন। যাকে বুঝতে বুদ্ধির প্রয়োগ করতে হবে। বিবেকের কথা নিতে হবে। যুক্তির প্রয়োগ করতে হবে। আর করআন কে দলীল বললেই কুরআনকে আপনি ছোট করছেন, ইসলাম থেকে বাহির হচ্ছেন।“
কী ভয়ংকর কথা। ইসলামের যারা বিভ্রান্ত গ্রুপ, তাদের কথারই তিনি প্রতিধ্বনি করছেন। কুরআন নিজকে দলীল বলেছে। সূরাহ নিসা এর (১৭৪) কুরআনকে বুরহান বলা হয়েছে। ইমাম আবু হিলাল আল-আস্কারি বলেনঃ
البُرهانُ : الحُجَّةُ القاطِعَةُ المُفيدَةُ لِلعِلمِ ، وأَمّا ما يُفيدُ الظَّنَّ فَهُوَ الدَّليلُ
“বুরহান হলো এমন হুজ্জাহ বা প্রমান যা অকাট্য হয়ে থাকে এবং পূর্ণ বাস্তব জ্ঞান দান করে, আর দলীল হলো যা মানুষকে “ধারণা” দান করে।“ তাহলে তার বর্ণিত দলিলের চেয়েও কুরআন আরো শক্তিশালী।
তিনি আরো বলেছেন এই অহিকে বুঝতে হবে জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে, দলীল দিয়ে নয়। তাহলে তো মূর্তি পূজার মত আপনি দলীল পূজা করতেছেন।
তিনি রাস্ট্রের ইসলামি তকমার বিরোধিতা করেছেন। রাস্ট্র নাকি ইসলামি হতে পারেনা। ইসলামি হয় মানুষ। এইজন্য রাস্ট্রের কোন ধর্ম হয়না। তিনি আরেকটি কথা বলেছেন যা আসলেই গলত। তিনি বলেছেন ইসলামে রাস্ট্র নেই, আছে সমাজ। আধুনিক রাস্ট্র বলতে জুডিও খৃস্টান চিন্তাধারার ফল। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।
তাহলে মহানবীর (সা) এর বলা “খিলাফাত আলা মানহাজিন নবুওয়াত” “খিলাফাত রাশেদাহ” “ইমামুন আদিল” পরিভাষাগুলো কি নিরর্থক? কুরআনে বর্ণিত “হুকুম” “শারীয়াত” “মিনহাজ” “খেলাফাত” “খালিফাহ” “আল-মুলক” এ সবই অনর্থক? যারা এসব পরিভাষার অধিকারি ছিলো তারা কি সবাই সমাজপতি ছিলেন না নৃপতি, বা দেশের অধিপতিও ছিলেন। তিনি এই সব কোথায় পেলেন?
তার ভিডিও দেখে যতটুকু বুঝেছি, লালনের উপর তার যত জ্ঞান আছে তার এক শভাগের এক ভাগ জ্ঞান ও ইসলাম সম্পর্কে নেই। তিনি যাদের ইন্সপায়ার করেছেন, আমি অনুরোধ করবো তার ইসলামিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে একটু সচেতন থাকবেন। না তিনি ইসলাম জানেন, না তার মধ্যে ইসলামের জ্ঞান আছে, না তিনি ইসলামের কেও।
0 Comments