Recent Tube

জামায়াত আমিরের "দেশ প্রেমিক" বয়ানে রিজভীয় উষ্মাদনা। ---- আব্দুল্লাহ বাশার।

জামায়াত আমিরের "দেশ প্রেমিক" বয়ানে রিজভীয় উষ্মাদনা। 
-------------------------------------------------- 

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির এর একটা বক্তব্য বেশ ভাইরাল হয়েছে, বেশ নেগেটিভ প্রতিক্রিয়াও ভাইরাল হয়েছে। তিনি বললেন, গত সরকার দেশের দুটি দেশ প্রেমিক শক্তি : সেনাবাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী - কে ধ্বংস করতে চেয়েছে। এ বক্তব্যে তাঁর মেসেজ কি? তিনি মূলত বলেছেন বিডিআর বিদ্রোহের নামে সরকার সেনাবাহিনীর কোমর ভাঙলো, সেনাবাহিনীর চৌকস নেতৃত্বকে ভারতের হাতে উঠিয়ে দিল আর দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সাথে বিচারের নামে তামাশা করে, ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে দলটি বিনাশ করতে চেয়েছে। এখানে কথা স্পষ্ট। তাঁরা দলকে নেতৃত্ব শূন্য করার সকল চেষ্টা কি ফ্যাসিবাদ করেনি?  দলের অবস্থান থেকে তিনি তো তাই বলবেন। আর, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে তাঁর দলকে তিনি ১০০% নম্বর দেবেন এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে গণ্য হয়ে আছে। এখানে "দেশপ্রেমিক" বলা উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য দমনপীড়নের দীর্ঘ সময়ে স্বৈরাচারী শাসকের আমলে নিষ্পেষিত ও জুলুমের শিকার হিসেবে দুটি ফোরামের কথা একটা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। অন্য ফোরামে অন্য প্রেক্ষাপটে অন্য ডাইমেনশনে তিনি সাদামাটা বাংলা ভাষায় কি বক্তব্য রাখেননি?  বিভিন্ন জায়গায় তিনি ফ্যাসিবাদে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষতি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। 

দুটি দেশপ্রেমিক শক্তির উপর আঘাতের বয়ানে সোসাল মিডিয়া, টকশো, রাজনৈতিক ময়দানে বেশ তোলপাড় হয়ে গেল! কী অদ্ভুত রকমের প্রতিক্রিয়া! পড়াশোনা, বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা, বিশ্লেষণী শক্তির দারিদ্র্যের কারণেই মূলত এ ধরনের অপব্যাখ্যা, ভুল ব্যখ্যা করা হয়েছে তাঁর এ বক্তব্যের। আমির মহোদয় এর বাক্যের রহস্য আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনুধাবন করবার চেষ্টা করি। তিনি দুটি দেশপ্রেমিক শক্তি - বলে কি "the only patriotic forces of the country" বলেছেন?  না। তিনি কি বলেছেন "the two patriotic forces "? না। তিনি বললেন,  two patriotic forces : army and jamaat, তিনি দেশের দুটি দেশপ্রেমিক ফোরামের নির্মূলের পন্থায় সাজুয্য দেখতে পেয়েছেন - ক. বিডিআর বিদ্রোহের নামে সরকার ও বিদেশি গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর শক্তি বিনাশ করতে চেয়েছে,  খ. বিচারের নামে তামাশা করে তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে। দুটি দেশপ্রেমিক শক্তির উপর রোষানলের চূড়ান্ত চিহ্নকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মাত্র। এতে বোকাসোকা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি, কিছু চেতনা ও স্বাধীনতা ব্যবসায়ী, কিছু বুদ্ধিমান মানুষ (শ্রদ্ধেয় নূরুল কবির, ডাক্তার জাহিদুর রহমান প্রমুখ জনপ্রিয় ব্যক্তি) অত্যন্ত বিপদজনক interpretation করে জাতির সামনে পুরানো কিছু বিষয় খামাখা টেনে এনে পরিবেশ ঘোলা করেছেন। পুরোপুরি অন্ধকারে তাঁদের সংকীর্ণ ব্যাখ্যা। সর্বনাশ!! একজন পন্ডিত ও দায়িত্বশীল আমির এর সাদামাটা বাংলা ভাষণে জোর করে একটা অপব্যাখ্যা লাগিয়ে দিয়ে আপনারা মূলত নিজেদের ছোট করেছেন। আমি তাঁর দলের কর্মী বা নেতা নই, কিন্তু দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে যে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা করতে হবে তাদের মধ্যে তার দল জামায়াতে ইসলামী ও অন্যতম। এ শক্তি, পাবলিক পারসেপশন আছে বলেই ৫ আগষ্টের আগে পরে তাদের নিষিদ্ধ করা, নিষিদ্ধ আদেশ উঠিয়ে দেয়া, গণভবনে উপস্থিত হওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাওয়া (বি এন পি সহ অন্যান্য দলের মতোই) জাতি প্রত্যক্ষ করছে। 

এবার আসি আমাদের অন্যতম একজন ভালোবাসার মানুষ / নেতার কথায়। জনাব রুহুল কবির রিজভী, এক সময়ের সাহসী ছাত্রনেতা, ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনে নিষ্পেষিত নেতা যিনি একা একা অফিস পাহারা দিয়েছেন, চরম সংকটে গোপন আস্তানা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করতেন। জামায়াত আমিরের বক্তব্যের পর তিনি হঠাৎ করেই (শহীদ জিয়ার সমাধিতে ফুল দেয়ার পরপর) কিছু আজেবাজে মন্তব্য করেছেন যা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সাথে মানানসই - ভারসাম্যপূর্ণ হয়নি। তিনি বললেন, জামায়াতের লোকজনও বিভিন্ন জায়গায় দখল করছেন, ক্ষুর পার্টি রগ কাটা দল***, মোনাফেকি ইত্যাদি ইত্যাদি, ৭১ এ জামায়াতের ভূমিকা, ডাক্তার শফিক কোন্ সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন ----- এসব কথা তিনি অপ্রাসঙ্গিক জেনেও বলেছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যেখানে এসব কথা এসেছে সেখানে মন্তব্যের ৯০% রিজভী সাহেব এর বিরুদ্ধে!  এতে করে মানুষ তাঁর মতো মানুষের প্রজ্ঞার দারিদ্র্যের দুর্দশা বুঝতে পেরেছেন। নতুন প্রজন্ম যারা নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান - ডান বাম স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ মুসলিম হিন্দু নাস্তিক আস্তিক মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার ফারাক দূরত্ব রদ করে, সেসব ভুলে একত্রিত হয়ে, ৭১ এর চেতনা ধারণ করে তবে এর নামে বিভাজন তৈরির রাজনীতি ও সমাজচিন্তা থেকে আপাততঃ বেরিয়ে এসে একটা সফল অভ্যুত্থান সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছে তারা প্রিয় নেতা রিজভী সাহেব এর বালখিল্যতায় রীতিমতো লজ্জা পেয়েছে। অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ছাত্রদের বিশাল একটা অংশ। 

জামায়াতে ইসলামী ৭১ এ যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। এটা সবাই জানেন। কেন করেছিলো সেটাও সচেতন লোকজন জানেন। আমাদের বিজয় কে "ভারতের বিজয়" বলার পর এতবড় একটা রাজনৈতিক দল- বি এন পি শক্ত কোন প্রতিবাদ প্রকাশ করার সাহস করেনি কেন? জামায়াত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি জেনেও রিজভী সাহেবরা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সময় জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সাথে ছিলেন, তাঁদের সাথে ওঠাবসা করেছেন সকাল বিকাল, জামায়াতের পরোক্ষ সমর্থন ছিল ১৯৯১ সালে বি এন পি কর্তৃক সরকার গঠনে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন রিজভী ভাইয়ারা। বিএনপি জামায়াতের সরকার বলা হয় সেটাকেই। এরপর গত ১২/১৩ বছর আপনারা দুইদল কখনো একসাথে কখনো আলাদাভাবে যুগপৎ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের নিয়োজিত ছিলেন। তখন আপনারা পরস্পরের কাছাকাছি ছিলেন। যদিও জামায়াতের নেতৃবৃন্দের চরম সংকট মূহুর্তে আপনারা রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। ঠিকমতো প্রত্যাশীত ভূমিকা পালন করতে পারেন নি। বরং কোন কোন জায়গায় প্রতিবেশী একটা রাষ্ট্রের নসিহতে জামায়াত থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। কারণ তারা আপনাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করবে- এ মধু আপনাদের খাইয়েছিল একটা গোষ্ঠী। অবশ্য পরবর্তীতে আপনাদের ভুল ভেঙেছে। গত কয়েকবছর জামায়াতের হাতে হাত ধরে আপনারা হাসিনার উৎখাতে কাজ করেছেন। 

এখন হঠাৎ ঘুৃম ভেঙে যাওয়া বালকের মতো জিজ্ঞেস করলেন '৭১ এ জামায়াতে ইসলামী কোথায় ছিল"!! ৭১ এ বি এন পি ছিল? শহীদ জিয়া ছিলেন অগ্রনায়ক। সেনাবাহিনীর নেতা হিসেবে। দেশপ্রেমিক ব্যক্তি হিসেবে। সেভাবে জামায়াতের ভেতরে ও অনেক মুক্তিযোদ্ধা  আছেন। জামায়াতের গত ২৫/৩০ বছরের ভূমিকা দেখে রায় প্রদান করা সমীচীন হবে তারা দেশপ্রেমিক কিনা তার উপর। তারা রাজনীতিতে সক্রিয়, নির্বাচনে যায়, দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা আছে, আনুগত্য আছে। সমাজের জন্য কাজ করে। ব্যবহার ও মোটামুটি ভালো করে আমাদের সাথে। ব্যতিক্রমতো আছেই সবখানে। তবে তাদের নাম পরিবর্তন করবে কিনা, ৭১ কে আরো খোলামেলা আলোচনায় আনবে কিনা, ক্যাডার সিস্টেম সহজতর করবে কিনা এসব কথা তাদের নিজস্ব পরিমন্ডলে সব সময় উচ্চারিত হয় বলে শুনেছি।।।  এসব তাদের নিজস্ব ব্যাপার। জামায়াতের সংস্কার বিষয়ে কথা আছে ভেতরে বাইরে।  তা অন্য জায়গায় আলোচনা করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments